মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


‘আনন্দ’ থেকে শুরু করে ‘চুপকে চুপকে’— হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ন’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ।

কলকাতা এর কাজ সমাপ্ত করে পরিচালক বিমল রায় চলে এলেন বম্বেতে। বম্বেতে তিনি যখন ছবি করতে শুরু করেছেন, তখন কলকাতার একাধিক জনকে তিনি বম্বেতে তাঁর সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে এক যুবক ছিলেন। ওই যুবক বিজ্ঞানের ছাত্র এবং কিছুদিন কলকাতায় শিক্ষকতাও করেছেন কিন্তু তিনি সহকারী সম্পাদক ছিলেন। সেই সুবাদেই তিনি চলে গেলেন বিমল রায়ের সঙ্গে বম্বেতে।
বিমল রায় তখন তৈরি করছেন শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে দেবদাস। দিলীপ কুমার নাম ভূমিকায়। সুচিত্রা সেন পার্বতী। ওই যুবক শিল্পীদের স্ক্রিপ্ট পড়িয়ে দিচ্ছেন। সম্পাদনা টেবিলে বসছেন। সবাই মুগ্ধ তাঁর এই গুণপনাতে। এমন করিৎকর্মা যুবককে দিলীপ কুমার আলাদাভাবে ডেকে বললেন যে, তিনি যদি পরিচালক হিসেবে অবতীর্ণ হতে চান তবে তিনি বিনা পরিশ্রমকেই ছবিটিতে কাজ করে দেবেন। একই কথার আশ্বাস তিনি পেয়েছিলেন সুচিত্রা সেনের কাছ থেকেও। যুবকটি অত্যন্ত উৎসাহিত হলেন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪১: ‘নীল আকাশের নিচে’ ছবিতে হেমন্তের পছন্দ ছিল উত্তম, যদিও সেই প্রস্তাব সবিনয়ে নাকচ করেন মৃণাল

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩০: আ দেখে জারা কিসমে কিতনা হ্যায় দম… এই গানে পঞ্চমের বাজি ছিলেন কিশোর ও আশা

ওই যুবক এমন একটি গল্প নির্বাচন করলেন, যেখানে জীবনের নানান প্রান্তের ঘটনা রয়েছে। গল্পটির তিনটি ভাগ। জন্ম বিবাহ মৃত্যু। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন দিলীপ কুমার, নিরূপা রায়, সুচিত্রা সেন, শেখর, কিশোর কুমার প্রমুখ। ছবির নাম মুসাফির। ছবিটি তেমন ভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য হয়তো পাইনি, কিন্তু সমালোচক মহলে এই ছবিটি উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। ফলে পরিচালক খুব উৎসাহ পেলেন আরও ছবি করবার জন্য। আস্তে আস্তে দেখা গেল বম্বের এক নাম করা বাঙালি পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেন। সেই পরিচালকের নাম হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৯: যত সুর সবই তোমার…

হাত বাড়ালেই বনৌষধি, পর্ব-২৭: শরতের শিশির ভেজা শিউলি

কলকাতা তাঁর জন্ম ১৯২২ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কলকাতায়। বম্বেতে তাঁর নির্মিত বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে অনুরাধা, অনুপমা, অভিমান, আলাপ, আশীর্বাদ, আনাড়ি, আসলি নকলি, খুবসুরত, কিসিসে না কেহনা, গোলমাল, গুড্ডি, পরিণীতা, মজলিদিদি, ছায়া, সাজ অউর সাবেরা, ঝুটি, গবন, বাবুর্চি, বেমিশাল, বিবি অউর মকান, মিলি, দো দিল, চুপকে চুপকে, সত্যকাম, চৈতালি প্রভৃতি ছবিগুলি।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৯: খাবারে একদম মশলা নয়?

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৭: আমি শুধুই উদাস, জলজ্যান্ত লাশ

বাংলাতে যদিও তিনি কোনও ছবি পরিচালনা করেননি। কিন্তু দুটি বাংলা ছবি তিনি সম্পাদনার কাজ করেছিলেন। তার একটি বিশ্বজিৎ নির্মিত ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ এবং অপরটি হল রাজেন তরফদারের ছবি ‘গঙ্গা’। জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন, তার মধ্যে ভারতের চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে তিনি পেয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। পদ্মভূষণ তিনি পেয়েছেন ২০০১ সালে। সেই মানুষটিকে আমরা হারাই ২০০৬ সালের ২৭ আগস্ট। আগামীকাল তাঁর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। এই লেখনীর মধ্য দিয়ে সেই বিখ্যাত পরিচালকের উদ্দেশে রইল আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content