রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


স্বনামধন্য প্রযোজক বীরেন্দ্রনাথ সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিউ থিয়েটার্স প্রাইভেট লিমিটেড। হাতিমার্কা লোগোর ব্যানারে তিনি যে ছবিগুলো প্রযোজনা করছেন, তেমনি একটি ছবির নাম হল ‘মুক্তি’। এই ছবির পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়া। কাহিনিকার প্রমথেশ বড়ুয়া, ফণী মজুমদার এবং সজনীকান্ত দাস। ছবির সংগীত পরিচালক পঙ্কজকুমার মল্লিক। প্রমথেশ বড়ুয়ার বহুদিনের সাধ ছিল রবীন্দ্রনাথের কোনও কবিতার যদি সুর করে তাঁর ছবিতে গানের জন্য ব্যবহার করতে পারা যায়, তাহলে খুব ভালো হয়। সেইমতো তিনি পঙ্কজকুমার মল্লিককে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ সুরারোপ করালেন। রেকর্ডিংও করালেন। কিন্তু ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার করার জন্য রবীন্দ্রনাথের অনুমতির দরকার। সেই মতো প্রমথেশ বড়ুয়া বীরেন্দ্রনাথ সরকারকে নিয়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে গেলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে। কী উদ্দেশ্যে তাঁরা গিয়েছেন সে কথাও জানালেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগতভাবে প্রমথেশ বড়ুয়াকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন।

প্রমথেশ বড়ুয়া

রবীন্দ্রনাথ তখন সেই গানটি শুনতে চাইলেন, যে গানটিতে সুর করেছেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। রেকর্ডিং করা গানটি রবীন্দ্রনাথের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। সকলেই দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষা করছেন যে রবীন্দ্রনাথ গানে সম্মতি দেবেন কি দেবেন না সেই ব্যাপারে। রবীন্দ্রনাথের তরফ থেকে অনুরোধ এল যে, গানটি তিনি সুরকার শিল্পীর মুখ থেকে শুনতে চান। কালবিলম্ব না করে প্রমথেশ বড়ুয়া পঙ্কজকুমার মল্লিককে নিয়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছলেন। রবীন্দ্রনাথের সামনে একটি হারমোনিয়ম পাতা ছিল। সেই হারমোনিয়াম বাজিয়ে পঙ্কজকুমার মল্লিক শোনালেন ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ গানটি। গানটি গাইবার পরে ভয়ে ভয়ে বসে আছেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। রবীন্দ্রনাথ অনুমোদন দেবেন কি না জানা নেই। রবীন্দ্রনাথ উঠে এসে পঙ্কজকুমার মল্লিককে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন তাঁর যে গান বা কবিতা পড়ে আছে সেগুলো সুর করার দায়িত্ব তিনি পঙ্কজকুমার মল্লিককেই দিলেন। এত বড় সম্মান পঙ্কজ মল্লিক আশাই করতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সেদিন ওই ছবি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল প্রমথেশ বড়ুয়া এবং পঙ্কজকুমার মল্লিকের সঙ্গে। আরও একাধিক গান ‘মুক্তি’র জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার মধ্যে রয়েছে ‘আজ সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে’, ‘তার বিদায় বেলার মালাখানি আমার’ প্রভৃতি গান।

পঙ্কজকুমার মল্লিক

‘মুক্তি’ ছবিতেই প্রথম রবীন্দ্রসংগীত ঢুকল বাংলা ছবির জগতে। এটা এক ইতিহাসই বটে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩৭ সালে চিত্রা প্রেক্ষাগৃহে। যেটি পরবর্তীকালে নাম হয়েছিল মিত্রা। এখন অবশ্য মিত্রা প্রেক্ষাগৃহের কোনও অস্তিত্ব নেই। এই ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গানগুলি গেয়েছিলেন স্বয়ং পঙ্কজকুমার মল্লিক এবং ছবির নায়িকা কাননদেবী। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কাননদেবী, পঙ্কজকুমার মল্লিক, অমর মল্লিক প্রমুখ শিল্পী। আজকে বলতে গেলে প্রায় অনেক ছবিতেই রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু শুরুটা হয়েছিল ‘মুক্তি’ ছবির মাধ্যমে সে কথা কিন্তু আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না।

ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

Skip to content