শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


পরিচালক ও নায়ক

ছায়াছবি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে যখন ‘শুধু একটি বছর’ ছবির কাজ সলিল দত্ত শুরু করেছিলেন তখন তিনিই পরিচালক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে খুবই বন্ধুত্ব ছিল মহানায়ক উত্তমকুমারের। এমপি স্টুডিওতে অগ্রদূত গোষ্ঠীর প্রধান বিভূতি লাহার সহকারী হিসেবে যখন ছিলেন সলিল দত্ত তখন থেকেই এই দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সলিল দত্ত যখন ছবি পরিচালনা করতেন নামলেন সেই ‘সূর্যশিখা’ ছবির নায়ক উত্তমকুমার। ১৯৬৩ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। দ্বিতীয় ছবিটি এই সলিল দত্তের প্রোডাকশন হাউজের ‘শুধু একটি বছর’। সলিল দত্ত উত্তমকুমারকে অনুরোধ করলেন ছবিটি পরিচালনা করার জন্য। উত্তমকুমার প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ তখন তিনি একরাশ ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন। তিনি কীভাবেই বা সময় বার করতে পারবেন ছবি পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু বন্ধু সলিল দত্তের অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করতে পারছিলেন না। তখন ‘বন্ধু’ এই ছদ্মনামে উত্তমকুমার পরিচালনা করতে শুরু করলেন ‘শুধু একটি বছর’ ছবির। এই কথা বাংলার মতো ছোট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জানাজানি হতে সময় লাগলো না যে, বন্ধু ছদ্মনামের আড়ালে উত্তমকুমারই পরিচালনা করছেন ছবিটি। পরে এই বন্ধু ছদ্মবেশ ছেড়ে উত্তমকুমার স্বনামেই পরিচালনা করতে লাগলেন ছবিটি।

নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী।

উত্তমকুমার তাঁর জীবনে তিনটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমটি হল ‘শুধু একটি বছর’, বাকি দুটি হল ‘বনপলাশির পদাবলি’ এবং ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’। উত্তমকুমারের এভাবে ছবি পরিচালনা করতে নামার ঘটনা সলিল দত্ত নিজেই আমাকে জানিয়েছিলেন, যখন কলকাতা দূরদর্শনে ‘কথায় কথায়’ অনুষ্ঠানে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম তখন।

১৯৬৬ সালের পয়লা এপ্রিল রূপবাণী, অরুণা, ভারতী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘শুধু একটি বছর’। এর কাহিনীকার ও গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। উত্তমকুমার নিজেই এই ছবির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন। রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ছবিতে গান গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শিপ্রা বসু। প্রধান চরিত্রে অবশ্যই ছিলেন উত্তমকুমার। তাঁর বিপরীতে সুপ্রিয়া দেবী। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জহর গঙ্গোপাধ্যায়, গঙ্গাপদ বসু, অমর মল্লিক, দীপিকা দাস, সর্বেন্দ্র প্রমুখ শিল্পীরা। একে উত্তমকুমার পরিচালক ফলে দর্শকদের মধ্যে একটা আগ্রহ ও উৎসাহ, কৌতূহল তো ছিলই তদুপরি এই ছবিতে একটা বড় আকর্ষণীয় অংশ হল মোটর রেস। ছবির শেষ পর্বের এই অংশটুকু টানটান উত্তেজনায় ভরপুর করে তুলেছিলেন পরিচালক উত্তমকুমার। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে মোটর রেসের ধারা বিবরণী দেবার জন্য তিনি এনেছিলেন বেরি সর্বাধিকারীকে। ধারাবিবরণী অংশটুকু অসাধারণ। সময় থেকে এগিয়ে থাকা ছবি ‘শুধু একটি বছর’ আজও দর্শকদের মন টানে, তা প্রমাণ করে যে পরিচালক হিসেবে উত্তমকুমার কতখানি সার্থক ছিলেন।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

Skip to content