শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


কানন দেবী যখন বাংলা ছবির স্বনামধন্য নায়িকা গায়িকা, তখন একদিন তাঁর ডাক পড়লো টালিগঞ্জের নৃপেন্দ্রনাথ স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে। সেখানে রাজ্যপাল ড. কাটজু ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কানন দেবীর আলাপ হল। সেই সঙ্গে আলাপ হল তাঁর নেভাল এডিসি হরিদাস ভট্টাচার্যের সঙ্গে।
নিয়মমাফিক পরিচয় আগেই হয়েছিল। তাঁর দিকে চোখ না পড়ে পারে। কানন দেবী লক্ষ্য করলেন সকলের মাথা ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এই দীর্ঘদেহী পুরুষটি। ঋজু সরল ছিপছিপে। যৌবনের প্রাণবন্ত সৌন্দর্য সমৃদ্ধে ভরপুর। তাঁর রঙের জৌলুস। প্রশস্ত ললাট। চোখ দুটো খুব বড় নয় কিন্তু ভারী উজ্জ্বল আর বুদ্ধিদীপ্ত। আর সেই সঙ্গে সপ্রতিভ চাউনি।

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৫: বাঘের কাছ থেকে চাবি আনতে গিয়ে বাঘা রুপী রবি ঘোষের অবস্থা কী হয়েছিল সহজেই অনুমেয়

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৫: হিচককের লন্ডন, হিচককের সিরিয়াল কিলার

তখন কানন দেবী তাঁর প্রোডাকশনের ‘অনন্যা’ ছবি কাজ করছেন। লোকেশন ছিল পলতায়। তার জন্য গভর্নমেন্টের কোনও পদস্থ কর্মচারীর পারমিশন দরকার। সকলেই তখন হরিদাস ভট্টাচার্যের কথা বললেন। কানন দেবী শুধু মুখে বললেন, “দেখি চেষ্টা করে”। হরিদাস ভট্টাচার্য শুধু ব্যবস্থাই করলেন না, সব কিছুরই অত্যন্ত সুব্যবস্থা করে দিলেন। নির্বিঘ্নেই সকল কাজ সম্পন্ন হল।
আরও পড়ুন:

দ্য নাইট ম্যানেজার: দেশীয় সংস্করণে চোখে চোখ রেখে লড়েছেন আদিত্য, অনিল, শাশ্বত ও শোভিতা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪১: কান্না হাসির দোল দোলানো ‘একটি রাত’

তারপর একদিন হঠাৎ কানন দেবীর ফোনে বেজে উঠল একটি রিং। তিনি প্রশ্ন করছেন “কেমন আছেন? চিনতে পারছেন?” কানন দেবী বললেন, “বোধহয় পারছি”। কিন্তু মনে মনে তিনি বলছেন ও কণ্ঠ আমি লক্ষ লোকের মধ্যে থেকেও চিনে নিতে পারি। এরপর আস্তে আস্তে ফোনের মাত্রা বাড়তে লাগলো। প্রথমে মাঝে মাঝে, তারপর প্রতিদিন। ক্রমশ একদিনে অনেকবার।
একদিন কানন দেবী বললেন, “কাল মনটা বড্ড খারাপ হয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসেনি।” ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল “আমারও”। ও প্রান্ত থেকে তখন উচ্চারিত হল “দেখাশোনার ব্যবস্থাটা পাকাপাকি করে নিলেই তো হয়।” একটা অনিবার্য আবেগে কানন দেবীর সারা শরীর কেঁপে উঠল। এই আলোচনার পর কয়েক দিনের মধ্যেই কানন দেবীর সঙ্গে হরিদাস ভট্টাচার্যের বিয়ে হয়ে গেল। রেজিস্ট্রেশান পর্ব নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৬: আমার হৃদয় কাঁপে পরিস্থিতির চাপে

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি

হরিদাসবাবু জানালেন, “কালির স্বাক্ষরে ক্ষতি নেই। কিন্তু দুটি জীবনের মহামিলনের এই পুণ্য লগ্নটি বাঁধা থাক হিন্দু প্রথার বিবাহ ডোরে। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে হরিদাস ভট্টাচার্য কানন দেবীর প্রোডাকশন হাউজ ‘শ্রীমতি পিকচারস’-এর পরিচালক হয়ে উঠলেন। তিনি পরপর পরিচালনা করলেন নববিধান, আশা, আঁধারে আলো, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ শ্রীকান্ত অন্নদাদিদি, অভয়া শ্রীকান্ত প্রভৃতি ছবিগুলি।
কানন দেবীর তৈরি ”শ্রীমতি” লেখা বাড়িতেই তাঁদের সুখের দাম্পত্য জীবন কাটছিল। টালিগঞ্জের সেই বাড়িটি সম্প্রতি প্রোমোটারের খপ্পরে পড়ে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। কানন দেবীকে যাঁরা ভালোবাসেন, চিত্রমোদী সকলেই এই কানন দেবীর ভাঙ্গা বাড়িভাঙ্গা নিয়ে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। কত ঘটনা, কত স্মৃতি জড়ানো রয়েছে এই বাড়ি জুড়ে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

আপনার রায়

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দফা বৃদ্ধি করা জরুরি?

Skip to content