রবিবার ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫


অনুভা গুপ্ত, বিকাশ রায় ও মঞ্জু দে।

দেবকীকুমার বসু পরিচালিত প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ‘রত্নদীপ’ বাম্পার হিট ছবি হয়েছিল। তখনকার দিনে ছবি হিট করলে একটা সাফল্যের অনুষ্ঠান করা হতো। তেমনি ভাবে দেবকীকুমার বসু তাঁর এই ছবি হিট করার জন্য টালিগঞ্জের রাধা ফিল্ম স্টুডিয়োতে সকলকে নিয়ে একটি আনন্দ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। রান্নাবান্নার তদারক করছিলেন ওই ছবির শিল্পী সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়। সেই সময় ওই ছবির মুখ্য অভিনেতা বিকাশ রায়ের কাছে ওই ছবির দুই অভিনেত্রী মঞ্জু দে এবং অনুভা গুপ্ত এসে বললেন, “আসুন বিকাশবাবু চু-কিত-কিত খেলি”। বিকাশবাবু একটু বাহাদুরি দেখাতে রাজি হয়ে গেলেন।
একদিকে তিনি রয়েছেন আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মায়া বলে একটি অভিনেত্রী যিনি ওই ছবিতে সুরবালার ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন। অন্যদিকে রয়েছেন অনুভা গুপ্ত ও মঞ্জু দে। যদিও বিকাশের স্মরণে ছিল যে মঞ্জু দে তাঁর ছেলেবেলায় ঘোড়ায় চড়ে মহিলা সেবা দলের অগ্রণী হয়ে মার্চ পাস্টে যোগ দিতেন। সুতরাং তিনি যে সে পাত্রী নন। তবু কোনওরকম সন্দেহ না করে বিকাশ রায় উল্লসিত হয়ে এই খেলায় যোগ দিলেন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩১: আচমকা ছবির নায়ক ইংরেজি ছবির ঢঙে কানন দেবীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলেন, হতবাক অভিনেত্রী

জীবন খাতার প্রতি পাতায় যতই লেখো হিসাব নিকাশ/২

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৮: গৃহ-সহায়িকার পাঁচালি এবং আমাদের ভদ্র সমাজ

প্রথম ক্ষেপেই চু বলে দৌড়ে এসে মায়াকে মোর করে অনুভা গুপ্ত তাঁদের কোর্টে ফিরে গেলেন। তারপরে বিকাশবাবু গেলেন ওদের কোর্টে। অনুভাকে মোর করে যখন ফিরে আসছেন তখন অনুভা মারলেন এক ল্যাং। তিনি তো ছিটকে পড়লেন। মঞ্জু দে দৌড়ে এসে বসলেন বিকাশ রায়ের বুকের উপর। অনুভা গুপ্ত বসবেন পা দুটোর ওপর। আর তারপর দুজনের কি হাসি, কি হাসি। আর বিকাশ রায় চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছেন ‘আমি গেল মলুম’ বলে। সুপ্রভা ধমক দিয়ে বিকাশ রায়ের সর্বাঙ্গ থেকে নামালেন ওঁদের। এঁদের প্রতি যেটুকু দুর্বলতা ছিল প্রেমও গেল ঘুচে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

ভবিষ্যবাণী, আপনার জীবনে বাস্তুশাস্ত্রের আটটি দিকের গুরুত্ব ঠিক কতটা? জেনে নিন একঝলকে

গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!

বাড়ি ফিরে বিকাশ রায় তাঁর স্ত্রীকে ওই প্রেমের অংশটুকু বাদ দিয়ে সবকিছু বললেন। স্বামীর মুখ দেখে স্ত্রী একটু মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি স্বামীর খোলা পায়ে চুন হলুদ গরম করে লাগিয়ে দিলেন। তার স্ত্রীর ধারণা যে অনুভা গুপ্ত এবং মঞ্জু দে ইচ্ছে করে ল্যাঙ মেরে বুকে বসে ছিলেন যাতে বিকাশের এই প্রেম রোগটা কেটে যায়। এমন মধুর কথা বিকাশ রায় নিজেই ‘মনে পড়ে’ সিরিজে লিখেছিলেন, যা সত্যিই স্মরণীয়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?

স্বাদে-আহ্লাদে: বিকেল হলেই জমিয়ে প্রেম বা আড্ডা, সঙ্গে যদি থাকে ভেজিটেবিল চপ

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯: কৌরবদের জন্ম এবং কুরুপাণ্ডবদের ছেলেবেলার শত্রুতা

‘রত্নদীপ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রী, ভারতী, ছায়া, প্রাচী প্রেক্ষাগৃহে। দেবকীকুমার বসু এ ছবির পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং তাঁরই প্রোডাকশন হল এই ছবি। সুরকার রবীন চট্টোপাধ্যায়। এই ছবিতে অভিনয় করলেন অনুভা গুপ্ত, মঞ্জু দে, বিকাশ রায়, সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়, নীতিশ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পীরা। জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এ ছবি। আগামী রবিবার অর্থাৎ ৭ মে মঞ্জু দে’র জন্মদিন। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এবং মঞ্জু দে-কে স্মরণ করছি তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content