ছবি বিশ্বাস ও পাহাড়ি সান্যাল।
বাংলা ছবি স্বর্ণযুগের দুই প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর মধ্যে একজন হলেন ছবি বিশ্বাস। কত অজস্র ছবিতে তিনি তাঁর প্রতিভার পরিচয় রেখে গিয়েছেন। তেমন কয়েকটি ছবি হল জলসাঘর, দেবী, কাবুলিওয়ালা, হেডমাস্টার, সবার উপরে, সপ্তপদী, দাদা ঠাকুর। পাশাপাশি পাহাড়ি সান্যাল নায়ক-গায়ক ছিলেন। তাঁর অভিনয়ধন্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যাসাগর, মহাকবি গিরিশচন্দ্র, বিদ্যাপতি, কেদার রাজা, কমললতা, সাত পাকে বাঁধা প্রভৃতি ছবি।
ছবি বিশ্বাস ও পাহাড়ি সান্যাল একসঙ্গে কাজ করেছেন এমন ছবির সংখ্যাও কম নয়। শশীবাবুর সংসার, কাঞ্চনজঙ্ঘা, একদিন রাত্রে শুভদা ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছবি বিশ্বাসের চেহারার মধ্যে যে আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে সেটা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অপরদিকে পাহাড়ি সান্যাল সর্বদা আনন্দে হই হই করা মানুষ। এই দু’ জনের একসঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে দারুণ এক মজার ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটি ঘটেছে আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ‘শশীবাবুর সংসার’ ছবির একদিনের শুটিংয়ের সময়। এই ছবিতে নাম ভূমিকায় ছবি বিশ্বাস। তাঁর শ্যালক হচ্ছেন পাহাড়ি। এছাড়াও আছেন চন্দ্রাবতী দেবী, অরুন্ধতী দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জীবন বসু, অনুপ কুমার, বসন্ত চৌধুরী প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৫: উমা নাম জপতে জপতে বাঘের কাছে গিয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন রবি ঘোষ
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-১: প্রকৃতি অসমকে সাজাতে কোনও কার্পণ্যই করেনি
সেই বিশেষ দিনের শুটিংয়ে ছবি-বিশ্বাস তাঁর মেকআপ সেরে মেকআপ রুমেই বিশ্রাম নিছিলেন। শটের জন্য ডাক পড়লে ফ্লোরে যাবেন। ছবি বিশ্বাস বিশ্রাম নিচ্ছেন দেখে মেকআপ রুমের যারা যাতায়াত করছেন তারা কোনও সাড়াশব্দ করছিলেন না, যাতে ছবি বিশ্বাসে বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটে। খানিক বাদে মেকআপ রুমের বাইরে থেকেই পাহাড়ির উচ্চকণ্ঠে গলার স্বর শোনা গেল।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৪: মাটি তোদের ডাক দিয়েছে…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৪: সে যেন অন্য এক ‘পূনর্মিলন’
প্রায় চেঁচামেচি করতে করতে করিডোর পার করে মেকআপ রুমে ঢুকলেন। পাহাড়ি সান্যাল ও ছবি বিশ্বাসের জন্য কমন মেকআপ রুম। তখনও শান্ত হননি পাহাড়ি। বলেই চলেছেন “আচ্ছা কোথাও কি একটু শান্তি নেই? সবার শুধু চোটপাট, মানুষ এত অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে কেন?” পাহাড়ি সান্যালের নজর গেল ছবি বিশ্বাসের দিকে। তাঁর উদ্দেশ্যেই তিনি বললেন, “আচ্ছা, কোথাও কি একটু শান্তি নেই মশাই?” ছবি বিশ্বাস চোখ বুজেই শুনছিলেন। তিনি চোখ বুজেই পাহাড়ির প্রশ্নের উত্তর দিলেন, “এতক্ষণ এই ঘরে শান্তি ছিল, তবে এখন নেই”। ছবি বিশ্বাসের এই কথার কি জবাব দেবেন পাহাড়ি সান্যাল। ঢোক গিলতেই হল।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৫: সুন্দরবনে বসন্ত রোগের দেবতা বসন্ত রায়
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা
এমন মজাদার ঘটনার কথা পরিচালক সুধীর মুখোপাধ্যায় আমায় বলেছিলেন যখন তাঁর বাড়িতে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম তখন। দু’জনেই দক্ষ শিল্পী। তবু নিজেদের মধ্যে এই যে মধুর খুনসুটি তা কিন্তু যথেষ্ট উপভোগ্যই বটে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।