রবিবার ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫


অবধূত-এর কাহিনী অবলম্বনে বিকাশ রায় তখন তৈরি করছিলেন ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবি। এক বিরাট ইউনিট নিয়ে দীঘায় আউটডোর করেছিলেন। সেখানে থিরুমলের চরিত্রে অভিনয় করছেন উত্তম কুমার এবং কুন্তীর চরিত্রে অভিনয় করছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। আর অবধূতের চরিত্রে স্বয়ং বিকাশ রায় অভিনয় করেছিলেন। এই সময় উত্তম এবং সাবিত্রী অত্যন্ত জনপ্রিয় জুটি। এমন কি, তাঁরা দুজনে মিলে একসঙ্গে যে নাটক করেছিলেন স্টার থিয়েটারে ‘শ্যামলী’ সেটিও ৪০০ রজনী অতিক্রান্ত হয়েছিল। এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেই ‘শ্যামলী’ নাটকটি।
মূল ঘটনায় ফিরি। কুন্তী চরিত্রটি রূপায়িত করছেন সাবিত্রী। ছবিটির একটি দৃশ্য ছিল উন্মাদ থিরুমল মানে যেটি উত্তম কুমার করছেন, কুন্তীর গলা টিপে ধরবেন। এই চরিত্রের জন্য উত্তমকুমারকে দাড়ি কামাতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এই বিশেষ চরিত্রের জন্য সদাহাস্যময় উত্তমকুমার কেমন যেন উন্মাদ থিরুমল হয়ে উঠছিলেন ।আস্তে আস্তে নিজেকে সবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছিলেন। তাঁর এই হঠাৎ পরিবর্তনটা দেখে ইউনিটের মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। একমাত্র পরিচালক বিকাশ রায় এবং ক্যামেরাম্যান অনিল গুপ্ত ও জ্যোতি লাহার সঙ্গেই সামান্য কথা বলছিলেন তিনি। তাঁকে অনেক সময় দেখা যেত দীঘার সমুদ্রতটে বালির উপর আঁকিবুকি কেটে চলেছেন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৫: নচিকেতা ঘোষ দেখলেন শান্তাপ্রসাদের হাতের সঙ্গে বোল মিলছে না, সুরকার নিরুপায় হয়ে ডাকলেন তবলা বাদক রাধাকান্তকে

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, ‘অভিমন্যুবধ’ নাটকের জন্য সুখ্যাতি হয়েছিল গিরিশচন্দ্রের

ক্রমে নির্দিষ্ট দৃশ্যটি গ্রহণ করার দিন এগিয়ে আসে। সমুদ্র তটে ক্যামেরা এবং ট্রাক ট্রলি, রিফ্লেক্টর ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু হয়ে যায়। বিকাশ রায় তাঁর চাহিদা মতো সবকিছুই প্রত্যেককে বুঝিয়ে দিয়ে ক্যামেরায় লুক থ্রু করে দেখে নিলেন কীভাবে ক্যামেরাম্যান তাঁর চাহিদা অনুযায়ী দৃশ্যটি চিত্রায়িত করবেন। দু’ একবার সেই দৃশ্যটির মনিটর হল। এ বারের ফাইনাল টেকিং। বিকাশ রায় মনিটর নেওয়ার আগে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এবং উত্তম কুমারকে সব বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছিলেন। উত্তম কুমার তখন ধ্যানমগ্ন অর্থাৎ পাগলের মুড নিয়ে প্রস্তুত। বিকাশ রায় স্টার্ট ক্যামেরা বলার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অসীম রায় চৌধুরী ক্ল্যাপস্টিক দিয়ে ক্যামেরা ফিল্ডের বাইরে চলে গেলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫: মেরুর দিকে পৃথিবী কিছুটা চাপা, তাই এখানে দুটি কাছাকাছি অঞ্চলের মধ্যেও সূর্যালোকের পার্থক্য অনেকটা

দশভুজা: সুন্দরবনের অনেক শিশুর শিক্ষার অধিকার রক্ষায় ব্রতী এই শিক্ষিকা

শট শুরু হল। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে আছেন। উত্তম কুমার দুটো হাত দিয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের গলা চেপে ধরেছেন। হঠাৎ কেমন যেন সাবিত্রীর সব উলটপালট হয়ে গেল। উত্তমকুমারের হাত দুটো যেন হাত নয় ফাঁস হয়ে সাবিত্রীর গলায় চেপে বসেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে সাবিত্রীর চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সাঁড়াশি আক্রমণ থেকে মুক্ত করতে পারছিলেন না সাবিত্রী। মনে হল যেন বিরাট ভূমিকম্পের মধ্যে পড়েছেন। গল গল করে বমি করে ফেললেন সাবিত্রী। শটটা দারুণ সুন্দরভাবে একটি মাত্র টেকিং এ ‘ওকে’ হয়েছিল।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে চিকেন কারি আর ভালো লাগছে না? বাড়িতেই রেস্তোরাঁর মতো বানিয়ে ফেলুন মুর্গ মালাই হান্ডি

সেদিনের শট নেওয়ার পর প্রায় পাঁচ মিনিট অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন সাবিত্রী। উত্তমকুমারকে দারুণ ভাবে বকলেন বিকাশ রায়। বললেন, ”কিরে উত্তম তুই তো দেখছি সত্যি সত্যি মেয়েটাকে মেরে ফেলার যোগাড় করেছিলি? এর নাম ন্যাচারাল অ্যাক্টিং।” এর বেশ কিছুক্ষণ পরে উত্তমকুমার সাবিত্রীর ঠিক আছে এসে বললেন, “তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি সাবু। এ বার আমায় মাফ করে দে”।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৬: কানে খোল, তেল দেন?

ডায়েট ফটাফট: না খেয়ে নয়, বরং খেয়েই কমান ওজন! কী কী খেলে মেদ ঝরবে? দেখুন ভিডিয়ো

এই মরুতীর্থ হিংলাজ ছবিটি মুক্তি পেল ১৯৫৯ সালে। অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ছবিটি। বিকাশ রায়, সাবিত্রী এবং উত্তম কুমার ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করলেন চন্দ্রাবতী দেবী, পাহাড়ি সান্যাল, অনিল চট্টোপাধ্যায়। সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে এই ছবির গান গুলি আজও জনপ্রিয় হয়ে আছে।

Skip to content