শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


মঞ্জু দে ও বিকাশ রায়।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামকে মাথায় রেখে যে দুটি অসাধারণ ছবি নির্মিত হয়েছিল তার একটি হল ‘ভুলিনাই’, অপরটি ‘৪২’। দুটোরই পরিচালক হেমেন গুপ্ত, যিনি পরবর্তীকালে মুম্বইতে গিয়ে হিন্দিতে আনন্দমঠ, কাবুলিওয়ালা, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস-এর মতো ছবি নির্মাণ করে দর্শকদেরকে মুগ্ধ করেছিলেন। তিনি যখন ‘৪২’ করতে শুরু করলেন তখন তার গল্প তিনি নিজেই লিখেছিলেন।
চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক তিনি নিজে। বিয়াল্লিশের ভারতছাড়ো আন্দোলন তখন ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। ইতিহাস হয়েছেন মাতঙ্গিনী হাজরা এবং শত শত ছেলেমেয়েরা। এদের দমন করতে কী দুঃসহ অত্যাচার করেছিল ইংরেজি সরকার মিলিটারির সাহায্য নিয়ে, তা নিয়ে ছবি হয়েছিল ‘৪২’। ঘর জ্বালিয়ে, নারী ধর্ষণ করে, বেপরোয়া গুলি চালিয়ে শিশু, বৃদ্ধ খুন করেও ইংরেজ সরকার স্বাধীনতাকামীদের রুখতে পারেনি। ওদের মেজর জেনারেল ত্রিবেদী মানুষের পায়ের তলায় চেপটে মারা গিয়েছিলেন।
এই ছবিতে নায়ক অজিতের চরিত্রে অভিনয় করলেন প্রদীপ কুমার। তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় মঞ্জু দে। মঞ্জু দে-র এটি প্রথম ছবি। কামারের চরিত্রে শম্ভু মিত্র। মেজর ত্রিবেদীর চরিত্রে বিকাশ রায়। একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্য ছিল যেখানে প্রদীপ কুমারকে বেত দিয়ে পেটাতে হবে। সেখানে তুলো দিয়ে জুড়ে তার উপর রং করে অফিসারের বেটন তৈরি হল। তাই দিয়ে বিকাশ রায় প্রদীপ কুমারের পিঠে মারলেন। প্রদীপ কুমারের ফর্সা রং পিঠে আধ ইঞ্চি অন্তর মোটা মোটা কালসিটে পড়ে গেল। হাসিমুখে প্রদীপ কুমার সব সহ্য করলেন।
শম্ভু মিত্রকে হাত-পা বেঁধে ট্রাকের পেছনে বেঁধে দেওয়ার হুকুম দিলেন বিকাশ রায়। শম্ভু মিত্র ধুতির তলায় একটি চটের থলে বেঁধে নিলেন। পা বাঁধা। হাত দুটি দড়ির সঙ্গে বাঁধা। ক্যামেরা চলল। শম্ভু মিত্র ‘বন্দেমাতরম’, ইংরেজ ভারত ছাড়ো” ইত্যাদি বলতে বলতে ক্যামেরা এলাকার বাইরে চলে গেলেন। দুটো নেপালি দারোয়ান মঞ্জু দে’কে হাত-পা ধরে দোলাতে দোলাতে রাস্তার উঁচু বাঁধের ধারে ফেলে দিলেন। গড়াতে গড়াতে মঞ্জু দে নিচে গিয়ে পড়লেন। সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে গুলি করার হুকুম দিচ্ছিলেন বিকাশ রায়। জনতার চাপে ওখানে পিছলে পড়লেন তিনি। জনতা তখন বিকাশ রায়ের মুখের উপর পা দিয়ে দিয়ে ওপরে উঠে গেল।
হেমেন গুপ্ত আবার এই শট অনেকক্ষণ ধরে ক্লোজআপে ধরে রাখলেন। হলে যখন এই দৃশ্য পর্দায় দেখা যেত তখন হাততালির চোটে হল ভেঙে পড়বার মতো হতো। এই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল ‘৪২’ ছবিকে কেন্দ্র করে। বিকাশ রায় রাতারাতি সবার নজরে পড়লেন। বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়েছিল। বসুশ্রী প্রেক্ষাগৃহে দর্শকেরা চটি ছুঁড়ে মারতেন বলে জনশ্রুতি আছে। রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফ তখন একাকার।
সামনেই পনেরোই আগস্ট। সেই ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে এই ‘৪২’ ছবির কথা তুলে ধরা হল, যেখানে দেশপ্রেমিকরা হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন নিজের দেশকে স্বাধীন করার ব্যাপারে।

Skip to content