রবীন্দ্রনাথের বহু পঠিত ছোট গল্প ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে ছবি তৈরি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন পরিচালক অগ্রদূত গোষ্ঠীর প্রধান বিভূতি লাহা। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি খোকাদা নামেই পরিচিত। তিনি একদিন টালিগঞ্জের রাধা ফিল্ম স্টুডিয়োতে তাঁর অফিস ঘরে বসেই স্ক্রিপ্ট তৈরি করছেন। সেই সময় তাঁর ঘরে এসে হাজির হলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। উত্তমকুমারের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই বিভূতি লাহার বিরাট অবদান ছিল। কারণ ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘পথে হল দেরী’ প্রভৃতি ছবির কথা তো কেউ কোনওদিন ভুলবেন না।
বিভূতি লাহাকে উত্তমকুমার এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “খোকাদা এখন আপনি কোন ছবির স্ক্রিপ্ট লিখছেন?” তখন বিভূতি লাহা বললেন, “আমি এখন রবীন্দ্রনাথের খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তনের স্ক্রিপ্ট তৈরি করছি।” উত্তমকুমারের শুনে খুব ভালো লাগল। পাল্টা প্রশ্ন তিনি করলেন, “এখানে রাইচরণ চরিত্রের জন্য কাকে ভেবেছেন?” বিভূতি লাহা বললেন “আপাতত ভেবে রেখেছি কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা।” তখন উত্তম বিভূতি লাহাকে বললেন, “রাইচরণ চরিত্রটা আমি করতে চাই। আমাকে এই চরিত্রটা করার সুযোগ দিন।”
আরও পড়ুন:
পর্ব-২১: ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ শুটিংয়ে সিউড়ির বাঁশবনে দু’ দুটি বাঘ আনিয়েছিলেন সত্যজিৎ
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৬: মুক্তিযুদ্ধের বিজয়— বীর বাঙালির অহংকার
বিভূতি লাহা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, “তোমাকে দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তো আমার প্রডিউসারের নেই।” উত্তমকুমার স্পষ্ট করে জানালেন, “আমার টাকার দরকার নেই, আমার রোলটা দরকার”। বিভূতি লাহা উত্তমকে ফেরালেন না। সেই রোলটা উত্তম পেলেন বিভূতির লাহার কাছ থেকে। খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তনের রাইচরণের চরিত্রটিতে তিনি এত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছিলেন যে যখনই দর্শক এ ছবি দেখবেন উত্তমকুমারের অভিনয় দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হতে বাধ্য। বিশেষ করে বয়স্ক রাইচরণের ভূমিকায় তিনি যখন অভিনয় প্রদর্শন করছিলেন তখন তো তিনি রোমান্টিক নায়ক হিসেবে সকলের মনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন। সেখানে এই বৃদ্ধের ভূমিকায় তিনি যে অসাধারণ অভিনয় দেখালেন তার কোনও তুলনা নেই।
রবীন্দ্রনাথ।
আরও পড়ুন:
পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন
রোজ রোজ এক রকম খাবারে অরুচি? খুদের জন্য রইল ভিন্ন স্বাদের এই রেসিপি
এই ঘটনার কথা স্বয়ং বিভূতি লাহা আমাকে জানিয়েছিলেন। ‘প্রবাসী আনন্দবাজার”-এর তরফ থেকে যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম নিউ আলিপুরের বাড়িতে, তখন তিনি এই ঘটনার কথা বলেছিলেন। এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে উত্তরা, পূরবী, উজ্জ্বলা প্রেক্ষাগৃহে। এই ছবিতে আর যাঁরা অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অসিতবরণ, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, দীপ্তি রায়, তুলসী চক্রবর্তী, শোভা সেন, সীতা মুখোপাধ্যায়, শিশির বটব্যাল প্রমুখ শিল্পীরা। এই ছবিটি প্রথম সুমিতা সান্যাল অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তখন তাঁর অবশ্য নাম দেওয়া হয়েছিল সুচরিতা সান্যাল। ছবিটি দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসাধন্য হয়েছিল অনায়াসেই।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।