শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির অন্যতম আকর্ষণ অবশ্যই বাঘ। সত্যি কারের বাঘ। এখনকার ছবির মতো কম্পিউটারে তোলা বাঘ নয়। সত্যিকারের বাঘ মানে তার ধকল অনেক। রাজার কাছে বিতাড়িত গুপি যখন গাধার পিঠে চড়ে বন বাদাড়ে এসে পৌঁছয়, তখন গুপির ভাবনা হয় ‘বন বাদাড়ে বাঘে যদি ধরে। গুপি যদি মরে?’ এমন ভাবনা যখন গুপির তখন বাঘকে আনতেই হয়। সত্যজিৎ রায় বেরিয়ে পড়লেন বাঘের সন্ধানে। তিনি জানলেন, মার্কাস স্কোয়ারে ভারত সার্কাসের খেলাতে বাঘ এসেছে। সার্কাসের ম্যানেজারের সঙ্গে এবং বাঘের যে ট্রেনার সেই মিস্টার থোরাটের সঙ্গে কথা পাকা হয়। লোকেশন শুটিং সিউড়ির বাঁশবন।
নির্দিষ্ট দিনে গাড়ির খাঁচায় চেপে বাঘ নিয়ে আসা হল। একটি বাঘ নয়, দুটি বাঘ। সত্যজিৎ রায়ের কাছে থোরাট জানালেন, একটা বাঘ যদি কথা না শোনে, তাই আরেকটা বাঘ। বাঘকে খোলা আকাশের নিচে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তা নিয়ে বিস্তার আলোচনা হল। শেষ দিকে ঠিক হল বাঘের চামড়া দিয়ে তৈরি বকলেস গলায় পরানো থাকবে। মস্ত বড় ইস্পাতের তার বকলেসের প্রান্তে আর তারের অপর প্রান্ত লোহার খুঁটিতে বেঁধে, সে খুঁটি গাথা হবে বাঁশবনের আড়ালে। শট রেডি। ক্যামেরা রেডি। ‘অ্যাকশন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে বাঘের খাঁচার মুখ খুলে দেয়া হল। বাঘ লাফ দিয়ে নেমে প্রথমে খানিক লম্ফঝম্প করে শান্ত হল। ‘ওকে’ হল। সত্যজিৎ রায় বাঘের মুখের কাছে গিয়ে আরও কিছু শট নিলেন।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২০: মাধবী ও অনিল ফ্লোরে সংলাপ ঠিক করার সময় হঠাৎ কানে এল বিকট এক শব্দ, সবাই চমকে উঠলেন

এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার বুক করলে মিলবে আকর্ষণীয় ছাড়! কীভাবে? জেনে নিন খুঁটিনাটি

কলকাতায় ফিরে প্রোজেকশন দেখে সত্যজিৎ রায়ের মন ভরলো না। মনে হল বাঘ এবং বাঁশবন কালো কালো এসেছে। শুটিং স্পট বদল করা হল। এ বারে লোকেশন তৈরি হল বোড়ালে, যেখানে তিনি তাঁর প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’-এর শুটিং করেছিলেন। আগের মতোই আয়োজন। বাঘেরা এল, থোরাট এলেন এবং দারুণ ভাবে শুটিং করা হয়েছিল। মন ভরে গেল পরিচালকের।

১০ বছরে ১১টি দেশ ঘোরা সব্জি বিক্রেতা বৃদ্ধার জীবনদর্শন— জীবনকে উপভোগ করতে হবে

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৭: রঙের খেলা আর উইসকনসিনের আঁকাবাঁকা ফাঁকা রাস্তা—জীবনীশক্তিকে আরও উসকে দেয়

‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ১৯৬৯ সালে মিনার, বিজলি, ছবিঘর প্রভৃতি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই ছবির চিত্রগ্রাহক সৌমেন্দু রায়। সম্পাদক দুলাল দত্ত। শিল্প নির্দেশক বংশীচন্দ্র গুপ্ত। প্রযোজকদ্বয় হলেন নেপাল দত্ত এবং অসীম দত্ত। গুপী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তপেন চট্টোপাধ্যায়। বাঘার চরিত্রে রবি ঘোষ। শুণ্ডি ও হাল্লা রাজারা যমজ দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। হাল্লা রাজার মন্ত্রীর চরিত্র জহর রায়। জাদুকর বরফির চরিত্রে হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। এই ছবির কাহিনিকার হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। ছবির চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক হলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায় স্বয়ং। ছবির গানগুলির জনপ্রিয়তা আজও অমলিন।

Skip to content