মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


বাংলা ছবির প্রখ্যাত প্রচারবিদ ফনীন্দ্র পাল তন্দ্রা বর্মনকে নিয়ে গেলেন বিকাশ রায়ের কাছে। বিকাশ রায় তখন প্রমথনাথ বিশীর কাহিনি অবলম্বনে ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ ছবিটি নির্মাণ করতে চলেছেন। বিকাশ রায় নিজে মুন্সী রামরাম বসুর চরিত্রে, কেরী সাহেবের চরিত্রে ছবি বিশ্বাস। এছাড়া মঞ্জু দে, পাহাড়ি সান্যাল, নীতীশ মুখোপাধ্যায়-সহ অনেক শিল্পী ছিলেন।

উপন্যাসটির একটি স্মরণীয় চরিত্রের নাম রেশমি। বিধবা হলেও তাঁকে যেতে হবে সহমরণে। সব আয়োজন সম্পন্ন। তখন তাঁকে উদ্ধার করে ইংরেজ যুবক জন। এই চরিত্রের জন্য একটি নতুন মুখ বিকাশ রায় খুঁজছিলেন। সেই সময়ে যোগাযোগ হল তন্দ্রা বর্মনের সঙ্গে। স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হল। উত্তীর্ণ হলেন। রেশমি চরিত্রে তন্দ্রা বর্মনের অভিনয় দর্শকের মনের দাগ কাটলো।
সত্যজিৎ রায় প্রোডাকশনের লোক গিয়ে তন্দ্রা বর্মনের বাড়িতে যোগাযোগ করলেন। তাঁরা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করতে বললেন তন্দ্রা বর্মনকে। তাঁর বাবার সঙ্গে গেলেন তন্দ্রা। দেখা করলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। সত্যজিৎ রায় তখন তাঁর নির্মীয়মান ‘অপরাজিত’ ছবির জন্য তন্দ্রা বর্মনকে নিলেন। ‘পথের পাঁচালী’ ছবির ট্রিলজি দ্বিতীয় পর্ব ‘অপরাজিত’তে মূল চরিত্র হচ্ছে কিশোর অপু। সেই কিশোর অপুর প্রেমিকার চরিত্রের নাম মিলি। সেই চরিত্রের জন্যই তন্দ্রা বর্মনকে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। পুরো শুটিংও তিনি শেষ করলেন। কিন্তু যখন তিনি এডিটিং টেবিলে বসলেন তখন তাঁর মনে হল এই মিলি চরিত্রটির কোনও প্রয়োজন নেই এই ছবির ক্ষেত্রে। সেই কারণে তিনি পুরো চরিত্রটাকে বাদ দিয়ে দিলেন। অর্থাৎ তন্দ্রা বর্মন বাদ গেলেন ছবি থেকে।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে: পর্ব-৩২: মঞ্জু ও অনুভা এসে বললেন, ‘আসুন বিকাশবাবু চু-কিত-কিত খেলি’

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন

ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৩: এরকম ভুল হল কী করে? তবে কি আমাকে কিছুতে বশ করেছে?

একমাত্র সর্বজয়া ছাড়া অন্য কোন ফিমেল ক্যারেক্টার ছবিতে রাখবেন না বলে ‘অপরাজিত’ ছবিতে তন্দ্রা বর্মন অভিনীত দৃশ্যগুলি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। খুব মুষড়ে পড়েছেন তন্দ্রা বর্মন। এমনকি তাঁদের পুরনো বাড়ি বদলে তাঁরা বাড়ি ভাড়া করলেন গণেশ অ্যাভিনিউতে। কারণ ততদিনে সব রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে যে তিনি সত্যজিতের ছবিতে নায়িকা হতে চলেছেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের‌ ঘুড়ি ওড়ানো

ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতেও ফুলতে পারে পা, জেনে নিন কী করণীয়

১০ বছরে ১১টি দেশ ঘোরা সব্জি বিক্রেতা বৃদ্ধার জীবনদর্শন— জীবনকে উপভোগ করতে হবে

এই বেদনা তাঁর অবশ্য ঘুচে ছিল কিছুদিনের মধ্যেই। কারণ তখন তিনি অজয় কর পরিচালিত ‘অতল জলের আহ্বান’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর বিপরীতে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সহশিল্পীদের মধ্যে পেয়েছিলেন ছায়া দেবী, ছবি বিশ্বাসের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের। যদিও সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে কাজ করতে না পারার বেদনা তো রয়েই গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার

চলো যাই ঘুরে আসি: অযোধ্যা— ইতিহাস ও জনশ্রুতি /২

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৫: বলবয় থেকে বিশ্বসেরা

‘অপরাজিত’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৬ সালে বসুশ্রী, বীনা, প্রাচী প্রেক্ষাগৃহে। এই ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, চারুপ্রকাশ ঘোষ এবং ওই কিশোর অপুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন স্মরণ ঘোষাল। বিভূতিভূষণের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিতই অপরাজিত ছবিতে সুরকার রবিশঙ্কর, ক্যামেরার দায়িত্ব ছিলেন সুব্রত মিত্র, শিল্পনির্দেশনায় বংশী চন্দ্রগুপ্ত, সম্পাদনার দায়িত্বে দুলাল দত্ত। ছবিটি যথারীতি বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।

Skip to content