ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
এক কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা বিজয় সেনের পত্নীর মনে ভারী দুঃখ৷ এত বড় এক স্বাধীন ও সমৃদ্ধিশালী রাজ্যের রানি হয়েও এক হাহাকারবোধ প্রতিনিয়তই অসুখী করে তোলে তাঁকে৷
দেবদ্বিজে প্রচণ্ড ভক্তি রানির৷ কিন্তু কোনও পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে পারেননি তিনি৷ এ নিয়ে স্বয়ং বিজয় সেনের মনেও শান্তি নেই৷ প্রিয় পত্নীর মানসিক অবস্থা দেখে রাজা নিদারুণ ব্যথিত৷ কিন্তু তাঁর পর এই বিশাল রাজ্যের রাজা কে হবেন সেই ভাবনায় বিজয় সেন বড়ই চিন্তান্বিত৷ মাঝে মাঝে রাজকার্যে যেন কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারেন না৷
প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে তীর্থযাত্রা করেন রাজমহিষী৷ সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদে পবিত্র স্নান করেন৷ সে বছরেও এই তীর্থযাত্রার ব্যতিক্রম হল না৷ কিন্তু রানি চাইলেন না তাঁর এই তীর্থযাত্রাকে কেন্দ্র করে সেবার প্রজাদের মধ্যে উৎসাহ ও আতিশয্য তৈরি হোক৷ স্বামীকেও অনুরোধ করলেন তাঁর তীর্থযাত্রা সাধারণভাবে সম্পন্ন হোক৷ পত্নীর ইচ্ছায় সানন্দে সম্মতিদান করেন বিজয় সেন৷ রানিমায়ের মনোবাসনাকে সম্মান জানাল প্রজাবর্গ৷
লাঙ্গলবন্দ থেকে স্নান শেষে ফেরার পথে এক নিবিড় অরণ্যের মধ্য দিয়ে শিবিকায় চলেছেন রানি৷ হঠাৎ ‘ঢাক’ বৃক্ষরাজির মধ্যে লুক্কায়িত এক দুর্গামূর্তি দেখতে পেলেন তিনি৷ রানিমায়ের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে শিবিকা থেমে গেল সেখানে৷ সিপাই-সান্ত্রিরা তটস্থ! হঠাৎ কী এমন হল যে এই গভীর জঙ্গলে শিবিকা থামাবার নির্দেশ দিলেন তিনি!
শিবিকা নামানো হল৷ ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলেন রাজমহিষী৷ ঠিক যে জায়গায় দুর্গামূর্তিটি তিনি দেখেছেন সেদিক লক্ষ করে এগোলেন৷ সেখান থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করলেন৷ এরপর ভক্তিপ্রণত চিত্তে দুর্গার আরাধনা করলেন৷ পুত্রসন্তান কামনা করেন৷ যেন সুযোগ্য এক বংশধরের মুখ দেখতে পারেন রাজা-রানি৷ ছোট্ট একটি দেবালয় নির্মাণ করে ওই মাতৃমূর্তিকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হল৷
দিন যায়৷ ইতিমধ্যে দেহ-মনে অদ্ভুত এক পুলক অনুভব করেন রানি৷ কালক্রমে এক পুত্রসন্তানের মা হলেন৷ সেই পুত্রই ইতিহাসে রাজা বল্লাল সেন নামে পরিচিত৷ আবার দুর্গামঙ্গল গ্রন্থে মহারাজ বল্লাল সেনের জন্ম সম্বন্ধে অন্য তথ্য রয়েছে৷ ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সন্নিকটে কোনও উপবনে অন্তঃসত্ত্বা রানিকে বনবাস দেন রাজা৷ এই সময়েই বল্লাল সেনের জন্ম৷ বনে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে মাতা পুত্রের নাম রাখেন বনলাল বা বল্লাল৷ দেবী দশভুজার আশীর্বাদে তাঁর জন্ম, অতএব বাল্যাবস্থা থেকেই মা দুর্গার ভক্ত ছিলেন বল্লাল৷
রাজসিংহাসনে আরোহণের পর আর কালক্ষেপ করেননি তিনি৷ ওই অরণ্যে মা দুর্গার একটি উপযুক্ত সু-বৃহৎ মন্দির নির্মাণ শুরু করেন৷ অঞ্চলটিকে বাসোপযোগী করে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগী হন৷ তারপর এক শুভদিন দেখে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দুর্গামূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করলেন নতুন মন্দিরে৷ দেবীর সেবাপুজোর জন্য পূজারিও নিযুক্ত করলেন বল্লাল সেন৷ মন্দির প্রাঙ্গণেই পূজারির বসবাসের ব্যবস্থা করা হল৷ ‘ঢাক’ বৃক্ষরাজির মধ্যে পাওয়া যায় বলে দেবীমূর্তির নাম হয় ঢাকেশ্বরী৷ পরে ঢাকা নামের উৎপত্তি হয় ঢাকেশ্বরী থেকে৷
ঢাকেশ্বরী মন্দির ও ‘ঢাকা’ কথাটির নামকরণ নিয়ে বিশিষ্ট গবেষক শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’-এর (সূত্র : ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির অতীত ও বর্তমান’) প্রথম খণ্ডের ত্রয়োবিংশ অধ্যায়টির উল্লেখ করা এখানে বিশেষভাবে প্রয়োজন৷—‘বর্তমান ঢাকা নগরীর পশ্চিম প্রান্তে ঢাকেশ্বরী মন্দির অবস্থিত৷ ঢাকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলিয়াই ইনি ঢাকেশ্বরী নামে অভিহিত হইতেছেন অথবা ঢাকেশ্বরী দেবীর নামানুসারেই ঢাকার নামকরণ হইয়াছে, তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন৷ ঢাকেশ্বরী কতকাল যাবৎ জনসাধারণের পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণ করিয়া আসিতেছেন তাহা জানা যায় না৷ ভবিষ্য ব্রহ্মখণ্ডের ঊনবিংশ অধ্যায়ে ঢাকেশ্বরীর উল্লেখ পরিলক্ষিত হয়৷ তাহাতে লিখিত আছে :
‘বৃদ্ধ গঙ্গা তটে বেদ বর্ষ সাহস্র ব্যত্যয়ে
স্থাপিতব্যঞ্চ যবনৈ জাঙ্গিরং পত্তনং মহৎ৷
তত্র দেবী মহাকালী ঢক্কা বাদ্যপ্রিয়া সদাঃ
গাস্যন্তি পত্তনং ঢক্কা সজ্ঞকং দেশবাসিনঃ৷’
প্রবাদ এই যে, সতীদেহ ছিন্ন হইয়া তদীয় কিরীটের ডাক এই স্থানে পতিত হইলে, এই স্থান একটি উপপীঠ মধ্যে গণ্য হয়৷ [ডাক মুকুটের উজ্জ্বল অংশবিশেষ৷ তাহাতে কারুকার্য প্রতিফলিত হইয়া উজ্জ্বলতর দেখায়৷ ডাক দেশজ শব্দ, স্থানীয় কর্মকারগণের নিকট এই শব্দটি সুপরিচিত] ডাক পতিত হওয়াতেই এই স্থানের নাম ঢাকা এবং অধিষ্ঠাত্রী দেবী ঢাকেশ্বরী নামে পরিচিত হইয়াছেন৷’
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে উপপীঠ বলেও মনে করেন কোনও কোনও গবেষক৷
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে মহারাজা মানসিংহের সম্পর্কের কথাও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যতীন্দ্রমোহন রায়ের গ্রন্থে৷ কাহিনিটি নিঃসন্দেহে মনোগ্রাহী৷—‘আরও একটি প্রবাদ এই যে, মহারাজা মানসিংহ বিক্রমপুরাধিপতি বীরাগ্রগণ্য কেদার রায়কে পরাজিত করিয়া গৃহদেবী শিলাময়ী লইয়া ঢাকায় প্রত্যাগমন করেন৷ এ সম্বন্ধে প্রবীণ ঐতিহাসিক শ্রীযুক্ত আনন্দনাথ রায় মহাশয় তদীয় বারভূঞা গ্রন্থে লিখিয়াছেন, পরে তত্রত্য কর্মকারগণকে ঠিক ওই মূর্তির অনুরূপ হিরণ্ময়মূর্তি নির্মাণের জন্য নিয়োগ করিয়া, তাহারা পাছে কোনওরূপে দ্রব্যের অসদ্ব্যবহার বা অপহরণ করে এজন্য সর্বদা রক্ষীগণকে তত্ত্বতালাশ লইতে নিযুক্ত করা হয়৷
কর্মকারেরা নিয়ত শিলাময়ীর নিকট থাকিয়া অন্য প্রতিমা নির্মাণ করে৷ যে দিবস কার্য শেষ হয়, সে দিবস তাহারা রাজসদনে উপস্থিত হইয়া বলে, মহারাজ আমরা একবার এ নবনির্মিত দেবীমূর্তিকে পুষ্করিণী হইতে স্নান করাইয়া আনিতে ইচ্ছা করি৷ রাজা তাহাদের কথায় স্বীকৃত হইলে, নির্মাতারা অলক্ষিতে তাহাদের নির্মিত মূর্তিটিকে দেবীর আসনোপরি রাখিয়া যথার্থ দেবীমূর্তিকে মাজিয়া ঘষিয়া স্নান করাইয়া লইয়া আইসে, পরে উভয় মূর্তি একত্র হইলে কোনটি বা পূর্বনির্মিত এবং কোনটি বা নবনির্মিত কেহই তাহা নির্বাচন করিতে পারিলেন না৷ পরে কারিগররা এই রহস্যজনক ব্যাপার প্রকাশ করিয়া দিলে মানসিংহ তাহাদিগকে যথাযোগ্য পুরস্কার প্রদান করিয়া চাঁদরায়ের দেবীকে জয়পুরে লইয়া যান এবং অপর মূর্তিটি ঢাকাতে সংস্থাপিত করেন৷ উহাই ঢাকেশ্বরী নামে প্রসিদ্ধ৷ কেহ কেহ উভয় মূর্তিই অষ্টধাতু নির্মিত বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন৷’ —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
দেবদ্বিজে প্রচণ্ড ভক্তি রানির৷ কিন্তু কোনও পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে পারেননি তিনি৷ এ নিয়ে স্বয়ং বিজয় সেনের মনেও শান্তি নেই৷ প্রিয় পত্নীর মানসিক অবস্থা দেখে রাজা নিদারুণ ব্যথিত৷ কিন্তু তাঁর পর এই বিশাল রাজ্যের রাজা কে হবেন সেই ভাবনায় বিজয় সেন বড়ই চিন্তান্বিত৷ মাঝে মাঝে রাজকার্যে যেন কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারেন না৷
প্রতি বছর নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে তীর্থযাত্রা করেন রাজমহিষী৷ সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদে পবিত্র স্নান করেন৷ সে বছরেও এই তীর্থযাত্রার ব্যতিক্রম হল না৷ কিন্তু রানি চাইলেন না তাঁর এই তীর্থযাত্রাকে কেন্দ্র করে সেবার প্রজাদের মধ্যে উৎসাহ ও আতিশয্য তৈরি হোক৷ স্বামীকেও অনুরোধ করলেন তাঁর তীর্থযাত্রা সাধারণভাবে সম্পন্ন হোক৷ পত্নীর ইচ্ছায় সানন্দে সম্মতিদান করেন বিজয় সেন৷ রানিমায়ের মনোবাসনাকে সম্মান জানাল প্রজাবর্গ৷
লাঙ্গলবন্দ থেকে স্নান শেষে ফেরার পথে এক নিবিড় অরণ্যের মধ্য দিয়ে শিবিকায় চলেছেন রানি৷ হঠাৎ ‘ঢাক’ বৃক্ষরাজির মধ্যে লুক্কায়িত এক দুর্গামূর্তি দেখতে পেলেন তিনি৷ রানিমায়ের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে শিবিকা থেমে গেল সেখানে৷ সিপাই-সান্ত্রিরা তটস্থ! হঠাৎ কী এমন হল যে এই গভীর জঙ্গলে শিবিকা থামাবার নির্দেশ দিলেন তিনি!
শিবিকা নামানো হল৷ ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলেন রাজমহিষী৷ ঠিক যে জায়গায় দুর্গামূর্তিটি তিনি দেখেছেন সেদিক লক্ষ করে এগোলেন৷ সেখান থেকে মূর্তিটি উদ্ধার করলেন৷ এরপর ভক্তিপ্রণত চিত্তে দুর্গার আরাধনা করলেন৷ পুত্রসন্তান কামনা করেন৷ যেন সুযোগ্য এক বংশধরের মুখ দেখতে পারেন রাজা-রানি৷ ছোট্ট একটি দেবালয় নির্মাণ করে ওই মাতৃমূর্তিকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হল৷
দিন যায়৷ ইতিমধ্যে দেহ-মনে অদ্ভুত এক পুলক অনুভব করেন রানি৷ কালক্রমে এক পুত্রসন্তানের মা হলেন৷ সেই পুত্রই ইতিহাসে রাজা বল্লাল সেন নামে পরিচিত৷ আবার দুর্গামঙ্গল গ্রন্থে মহারাজ বল্লাল সেনের জন্ম সম্বন্ধে অন্য তথ্য রয়েছে৷ ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সন্নিকটে কোনও উপবনে অন্তঃসত্ত্বা রানিকে বনবাস দেন রাজা৷ এই সময়েই বল্লাল সেনের জন্ম৷ বনে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে মাতা পুত্রের নাম রাখেন বনলাল বা বল্লাল৷ দেবী দশভুজার আশীর্বাদে তাঁর জন্ম, অতএব বাল্যাবস্থা থেকেই মা দুর্গার ভক্ত ছিলেন বল্লাল৷
রাজসিংহাসনে আরোহণের পর আর কালক্ষেপ করেননি তিনি৷ ওই অরণ্যে মা দুর্গার একটি উপযুক্ত সু-বৃহৎ মন্দির নির্মাণ শুরু করেন৷ অঞ্চলটিকে বাসোপযোগী করে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগী হন৷ তারপর এক শুভদিন দেখে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দুর্গামূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করলেন নতুন মন্দিরে৷ দেবীর সেবাপুজোর জন্য পূজারিও নিযুক্ত করলেন বল্লাল সেন৷ মন্দির প্রাঙ্গণেই পূজারির বসবাসের ব্যবস্থা করা হল৷ ‘ঢাক’ বৃক্ষরাজির মধ্যে পাওয়া যায় বলে দেবীমূর্তির নাম হয় ঢাকেশ্বরী৷ পরে ঢাকা নামের উৎপত্তি হয় ঢাকেশ্বরী থেকে৷
ঢাকেশ্বরী মন্দির ও ‘ঢাকা’ কথাটির নামকরণ নিয়ে বিশিষ্ট গবেষক শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’-এর (সূত্র : ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির অতীত ও বর্তমান’) প্রথম খণ্ডের ত্রয়োবিংশ অধ্যায়টির উল্লেখ করা এখানে বিশেষভাবে প্রয়োজন৷—‘বর্তমান ঢাকা নগরীর পশ্চিম প্রান্তে ঢাকেশ্বরী মন্দির অবস্থিত৷ ঢাকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলিয়াই ইনি ঢাকেশ্বরী নামে অভিহিত হইতেছেন অথবা ঢাকেশ্বরী দেবীর নামানুসারেই ঢাকার নামকরণ হইয়াছে, তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন৷ ঢাকেশ্বরী কতকাল যাবৎ জনসাধারণের পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণ করিয়া আসিতেছেন তাহা জানা যায় না৷ ভবিষ্য ব্রহ্মখণ্ডের ঊনবিংশ অধ্যায়ে ঢাকেশ্বরীর উল্লেখ পরিলক্ষিত হয়৷ তাহাতে লিখিত আছে :
‘বৃদ্ধ গঙ্গা তটে বেদ বর্ষ সাহস্র ব্যত্যয়ে
স্থাপিতব্যঞ্চ যবনৈ জাঙ্গিরং পত্তনং মহৎ৷
তত্র দেবী মহাকালী ঢক্কা বাদ্যপ্রিয়া সদাঃ
গাস্যন্তি পত্তনং ঢক্কা সজ্ঞকং দেশবাসিনঃ৷’
প্রবাদ এই যে, সতীদেহ ছিন্ন হইয়া তদীয় কিরীটের ডাক এই স্থানে পতিত হইলে, এই স্থান একটি উপপীঠ মধ্যে গণ্য হয়৷ [ডাক মুকুটের উজ্জ্বল অংশবিশেষ৷ তাহাতে কারুকার্য প্রতিফলিত হইয়া উজ্জ্বলতর দেখায়৷ ডাক দেশজ শব্দ, স্থানীয় কর্মকারগণের নিকট এই শব্দটি সুপরিচিত] ডাক পতিত হওয়াতেই এই স্থানের নাম ঢাকা এবং অধিষ্ঠাত্রী দেবী ঢাকেশ্বরী নামে পরিচিত হইয়াছেন৷’
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে উপপীঠ বলেও মনে করেন কোনও কোনও গবেষক৷
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে মহারাজা মানসিংহের সম্পর্কের কথাও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যতীন্দ্রমোহন রায়ের গ্রন্থে৷ কাহিনিটি নিঃসন্দেহে মনোগ্রাহী৷—‘আরও একটি প্রবাদ এই যে, মহারাজা মানসিংহ বিক্রমপুরাধিপতি বীরাগ্রগণ্য কেদার রায়কে পরাজিত করিয়া গৃহদেবী শিলাময়ী লইয়া ঢাকায় প্রত্যাগমন করেন৷ এ সম্বন্ধে প্রবীণ ঐতিহাসিক শ্রীযুক্ত আনন্দনাথ রায় মহাশয় তদীয় বারভূঞা গ্রন্থে লিখিয়াছেন, পরে তত্রত্য কর্মকারগণকে ঠিক ওই মূর্তির অনুরূপ হিরণ্ময়মূর্তি নির্মাণের জন্য নিয়োগ করিয়া, তাহারা পাছে কোনওরূপে দ্রব্যের অসদ্ব্যবহার বা অপহরণ করে এজন্য সর্বদা রক্ষীগণকে তত্ত্বতালাশ লইতে নিযুক্ত করা হয়৷
কর্মকারেরা নিয়ত শিলাময়ীর নিকট থাকিয়া অন্য প্রতিমা নির্মাণ করে৷ যে দিবস কার্য শেষ হয়, সে দিবস তাহারা রাজসদনে উপস্থিত হইয়া বলে, মহারাজ আমরা একবার এ নবনির্মিত দেবীমূর্তিকে পুষ্করিণী হইতে স্নান করাইয়া আনিতে ইচ্ছা করি৷ রাজা তাহাদের কথায় স্বীকৃত হইলে, নির্মাতারা অলক্ষিতে তাহাদের নির্মিত মূর্তিটিকে দেবীর আসনোপরি রাখিয়া যথার্থ দেবীমূর্তিকে মাজিয়া ঘষিয়া স্নান করাইয়া লইয়া আইসে, পরে উভয় মূর্তি একত্র হইলে কোনটি বা পূর্বনির্মিত এবং কোনটি বা নবনির্মিত কেহই তাহা নির্বাচন করিতে পারিলেন না৷ পরে কারিগররা এই রহস্যজনক ব্যাপার প্রকাশ করিয়া দিলে মানসিংহ তাহাদিগকে যথাযোগ্য পুরস্কার প্রদান করিয়া চাঁদরায়ের দেবীকে জয়পুরে লইয়া যান এবং অপর মূর্তিটি ঢাকাতে সংস্থাপিত করেন৷ উহাই ঢাকেশ্বরী নামে প্রসিদ্ধ৷ কেহ কেহ উভয় মূর্তিই অষ্টধাতু নির্মিত বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন৷’ —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন