শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী দেবী।
বাংলাদেশের সাংবাদিক ও লেখক শ্রীযুক্ত বাসুদেব ধরের ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির অতীত ও বর্তমান’ গ্রন্থটি বেশ তথ্যপূর্ণ৷ উনিশ শতকের ঢাকেশ্বরী মন্দির কেমন ছিল? তারই একটি ছবি এই গ্রন্থে ভক্ত হৃদয়নাথ মজুমদারের বর্ণনায় পাওয়া যায়৷—‘তখন (খুব সম্ভবত সাতের দশকে) মন্দিরটি ছিল জঙ্গলে আবৃত৷ এর দক্ষিণে ছিল উর্দু রোড যা পশ্চিমে চলে গিয়েছিল পিলখানার দিকে৷ উত্তর-পশ্চিমে ছিল মীরপুরে যাবার রাস্তা৷ উত্তরে ছিল জঙ্গল আর পূর্বে উর্দু বাজার৷ মন্দিরটি পঞ্চরত্ন, সামনে নাটমন্দির৷ নাটমন্দিরকে ঘিরে আছে একসারি ঘর৷ আর আছে একটি বড় পুকুর, নহবতঅলা ফটক যার ভেতর দিয়ে হাতি যেত৷ পূর্বে আছে কিছু সাধুর সমাধি যাঁরা একসময় মন্দিরে পুজো বা ধ্যান করতেন৷ মন্দিরের বাইরে পাঁচটি মঠ, প্রতিটিতে একটি শিবলিঙ্গ৷ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত প্রতিদিন এর পুজো করেন৷ দেবী হলেন দশভুজা৷ কথিত আছে তা নাকি সোনার তৈরি৷…’
মন্দিরের বহিরাঙ্গণে বহু পুরোনো ধর্মশালাটির আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই৷ দু-জোড়া শিবমন্দিরের উলটোদিকে দু-পাশে রেলিং ঘেরা লন, ফুলগাছ ও বাতিস্তম্ভ৷ পুষ্করিণীর ধারে রেলিং ঘেরা মখমলের মতো সবুজ লনে চারটি ছোট দেবদারু গাছ, কয়েকটি বাতিস্তম্ভ৷ সন্ধ্যার মুখে আলো জ্বলে উঠতেই জায়গাটি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল৷
নাটমন্দিরে ঢোকার সময় দ্বারপ্রান্তের দু-দিকের কিছুটা অংশে সবুজ ঘাসের লন ও ফুলগাছ৷ দু-জোড়া শিবমন্দিরের একপাশে ঢাকেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন রেলিংঘেরা ফুলের বাগানে সেবাইত প্রয়াত হেমচন্দ্র চক্রবর্তীর সাদা আবক্ষমূর্তি৷ পশ্চিমদিকে গর্ভগৃহের দেওয়াল লাগোয়া অনেকগুলো মাটির টবে নানা ধরনের প্ল্যান্টস৷ উত্তরদিকে গর্ভগৃহের পেছনের দেওয়াল৷ তারপরেই এক বহুতলের সীমানা শুরু৷
নাটমন্দিরের শেষপ্রান্তে ২০০০ সালে এক কোটি টাকা খরচ করে একটি পাঁচতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে৷ ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন৷ তৎকালীন সরকারের সহায়তায় ওই ভবন নির্মাণের পাশাপাশি মন্দির প্রাঙ্গণ আরও নান্দনিক করে তোলার কাজ শুরু হয়৷ ভবনের নীচের তলায় প্রসাদ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ দোতলায় ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কার্যালয়৷ তিনতলায় সস্ত্রীক থাকেন সেবাইত প্রদীপকুমার চক্রবর্তী৷ এই মন্দিরের পূজারিদেরও থাকবার ব্যবস্থা রয়েছে৷ চারতলা ও পাঁচতলায় অতিথিশালা, যার নামকরণ করা হয়েছে কে. বি. রায়চৌধুরি অতিথিশালা৷ প্রয়াত কে. বি. রায়চৌধুরি মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন৷ পাঁচতলা ভবনের পাশে আরেকটি তিনতলা বাড়ি তৈরি হয়েছে৷
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নকল্পে যে জোরকদমে কাজ চলছে তা আমার নিজের চোখেই দেখা৷ মন্দিরের পুকুরটি একসময় দখল করার চেষ্টা হয়েছিল৷ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তা উদ্ধার করে সংস্কার করা হয়েছে৷ পুকুরটির উত্তর-পশ্চিমে উঁচু করে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে৷ পুকুর সংস্কার, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাঠাগার, শৌচালয়, নতুন বাড়ি তৈরির জন্য ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদকে যে মোটা টাকা দেওয়া হয়েছে সেকথা বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথের মুখেই শুনেছিলাম৷
সেদিন মন্দিরে সন্ধ্যারতির পর তাঁর সঙ্গে আমার আবার দেখা করার কথা পরিষদের কার্যালয়ে৷ কাজলবাবুর মতো খোলা মনের বিনয়ী মানুষ বেশি দেখিনি৷ ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে৷ এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কাজলবাবুই৷ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে এই ভদ্রলোকের অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না৷ ২০১৩ সালে সারা বাংলাদেশে প্রায় ২৮ হাজার বারোয়ারি পুজো হয়েছিল৷ ২০১৪-তে দুর্গাপুজোর সংখ্যা আরও বেড়েছে৷ বাংলাদেশের অনেক বারোয়ারি পুজোর বাজেটই কলকাতার বড় বড় পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে৷ ২০১৪-তে শুধু মহানগর পূজা কমিটির বাজেটই ছিল ৩০ লক্ষ টাকার (বাংলাদেশি টাকা) ওপর৷ বর্তমানে কমিটির তহবিলে জমা টাকার পরিমাণ ১ কোটির কাছাকাছি৷ প্রতি বছর পুজোর সময় তাঁরা যে বাংলা শারদসংখ্যা প্রকাশ করেন, তা কলেবর ও গুণগত মানে কলকাতার অত্যন্ত জনপ্রিয় দু-একটি শারদীয়ার পাশে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে৷
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের আলোচনা প্রসঙ্গে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কথা স্বাভাবিকভাবেই আসে৷ কারণ, এই মন্দিরের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই দুটো সংস্থা আজ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে৷ বরং একথা বলা বোধহয় সমুচিত হবে যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে সংস্থা দুটো এখন নানাভাবে সহায়তা করছে৷ —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
মন্দিরের বহিরাঙ্গণে বহু পুরোনো ধর্মশালাটির আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই৷ দু-জোড়া শিবমন্দিরের উলটোদিকে দু-পাশে রেলিং ঘেরা লন, ফুলগাছ ও বাতিস্তম্ভ৷ পুষ্করিণীর ধারে রেলিং ঘেরা মখমলের মতো সবুজ লনে চারটি ছোট দেবদারু গাছ, কয়েকটি বাতিস্তম্ভ৷ সন্ধ্যার মুখে আলো জ্বলে উঠতেই জায়গাটি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল৷
নাটমন্দিরে ঢোকার সময় দ্বারপ্রান্তের দু-দিকের কিছুটা অংশে সবুজ ঘাসের লন ও ফুলগাছ৷ দু-জোড়া শিবমন্দিরের একপাশে ঢাকেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন রেলিংঘেরা ফুলের বাগানে সেবাইত প্রয়াত হেমচন্দ্র চক্রবর্তীর সাদা আবক্ষমূর্তি৷ পশ্চিমদিকে গর্ভগৃহের দেওয়াল লাগোয়া অনেকগুলো মাটির টবে নানা ধরনের প্ল্যান্টস৷ উত্তরদিকে গর্ভগৃহের পেছনের দেওয়াল৷ তারপরেই এক বহুতলের সীমানা শুরু৷
নাটমন্দিরের শেষপ্রান্তে ২০০০ সালে এক কোটি টাকা খরচ করে একটি পাঁচতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে৷ ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন৷ তৎকালীন সরকারের সহায়তায় ওই ভবন নির্মাণের পাশাপাশি মন্দির প্রাঙ্গণ আরও নান্দনিক করে তোলার কাজ শুরু হয়৷ ভবনের নীচের তলায় প্রসাদ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ দোতলায় ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কার্যালয়৷ তিনতলায় সস্ত্রীক থাকেন সেবাইত প্রদীপকুমার চক্রবর্তী৷ এই মন্দিরের পূজারিদেরও থাকবার ব্যবস্থা রয়েছে৷ চারতলা ও পাঁচতলায় অতিথিশালা, যার নামকরণ করা হয়েছে কে. বি. রায়চৌধুরি অতিথিশালা৷ প্রয়াত কে. বি. রায়চৌধুরি মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন৷ পাঁচতলা ভবনের পাশে আরেকটি তিনতলা বাড়ি তৈরি হয়েছে৷
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নকল্পে যে জোরকদমে কাজ চলছে তা আমার নিজের চোখেই দেখা৷ মন্দিরের পুকুরটি একসময় দখল করার চেষ্টা হয়েছিল৷ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তা উদ্ধার করে সংস্কার করা হয়েছে৷ পুকুরটির উত্তর-পশ্চিমে উঁচু করে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে৷ পুকুর সংস্কার, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাঠাগার, শৌচালয়, নতুন বাড়ি তৈরির জন্য ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদকে যে মোটা টাকা দেওয়া হয়েছে সেকথা বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথের মুখেই শুনেছিলাম৷
সেদিন মন্দিরে সন্ধ্যারতির পর তাঁর সঙ্গে আমার আবার দেখা করার কথা পরিষদের কার্যালয়ে৷ কাজলবাবুর মতো খোলা মনের বিনয়ী মানুষ বেশি দেখিনি৷ ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে৷ এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কাজলবাবুই৷ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে এই ভদ্রলোকের অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না৷ ২০১৩ সালে সারা বাংলাদেশে প্রায় ২৮ হাজার বারোয়ারি পুজো হয়েছিল৷ ২০১৪-তে দুর্গাপুজোর সংখ্যা আরও বেড়েছে৷ বাংলাদেশের অনেক বারোয়ারি পুজোর বাজেটই কলকাতার বড় বড় পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে৷ ২০১৪-তে শুধু মহানগর পূজা কমিটির বাজেটই ছিল ৩০ লক্ষ টাকার (বাংলাদেশি টাকা) ওপর৷ বর্তমানে কমিটির তহবিলে জমা টাকার পরিমাণ ১ কোটির কাছাকাছি৷ প্রতি বছর পুজোর সময় তাঁরা যে বাংলা শারদসংখ্যা প্রকাশ করেন, তা কলেবর ও গুণগত মানে কলকাতার অত্যন্ত জনপ্রিয় দু-একটি শারদীয়ার পাশে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে৷
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের আলোচনা প্রসঙ্গে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কথা স্বাভাবিকভাবেই আসে৷ কারণ, এই মন্দিরের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই দুটো সংস্থা আজ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে৷ বরং একথা বলা বোধহয় সমুচিত হবে যে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে সংস্থা দুটো এখন নানাভাবে সহায়তা করছে৷ —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন