আমাদের ইজিট্যাক্সিতে শুধু চাকা নয়, বোধহয় পাখাও লাগানো৷ নয়তো এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় এত তাড়াতাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি কী করে! সুদেব মহারাজ বলেছিলেন, হাতে সময় থাকলে একবার যশোরের নীলগঞ্জ মহাশ্মশান দেখে আসতে পারেন৷ ওখানে গতকাল থেকে শ্রীশ্রীতারকব্রহ্ম মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান ও সনাতন ধর্মসভা শুরু হয়েছে৷ অষ্টকালীন লীলাকীর্তন চলছে৷ কয়েকদিন ধরে চলবে৷ খুব ভিড় হচ্ছে৷ গেলে ভালোই লাগবে৷
ইজিট্যাক্সির চালক মহম্মদ হোসেনের বয়স বছর কুড়ি৷ কিন্তু ওর হাতখানা বেশ৷ যখনই রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা পাচ্ছে ইজিট্যাক্সিখানা যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে পৌঁছেও গেলাম তাড়াতাড়ি৷
অনেকখানি জায়গা নিয়ে এই শ্মশানকে তখন শ্মশান বলে মনে হচ্ছে না৷ রং-বেরঙের কাগজের শিকলে শ্মশানের একাংশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে৷ রঙিন কাপড়ে মোড়া হয়েছে শ্মশান প্রাঙ্গণ৷ এক জায়গায় দারুণ একটা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে৷ ওই মঞ্চেই কীর্তনের আসর বসেছে৷
সেই মুহূর্তে মহানামসুধা পরিবেশন করছিল ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ার আদি অষ্টসখী সম্প্রদায়৷ এই সম্প্রদায়ের সকলেই মহিলা৷ খোল-করতাল, খঞ্জনি, বাঁশি, গান সবকিছুই আট-দশজন মহিলা দিব্যি সামলান৷
বাসন্তী রঙের শাড়ি-ব্লাউজ, গলায় তুলসীমালা তাঁদের৷ মঞ্চের চারধারে কয়েক হাজার দর্শক-শ্রোতা গোল হয়ে বসে রাধা-কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা তন্ময় হয়ে শুনছেন৷ মহিলার ভিড়ই বেশি৷ বেশ কয়েকটা সাউন্ডবক্স রয়েছে৷ কীর্তনের সুর ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে৷ উপস্থিত জনতা মাঝে মাঝে হরিধ্বনি দিয়ে উঠছে৷ মহিলাদের উলুধ্বনি৷ মোট ৯টি দল অষ্টপ্রহর নামগান পরিবেশন করবে৷ ভারত থেকে এসেছে শ্রীগোপাল দাস গোস্বামী সম্প্রদায়৷
নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি শ্রীযুক্ত অসীমকুমার কুণ্ডু যশোরের নামকরা ব্যবসায়ী৷ বললেন, ‘কৃষ্ণনাম প্রচারের জন্যই এই মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান ও ধর্মসভার আয়োজন৷ প্যান্ডেল ও আলোর পিছনেই আমাদের প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে৷ ছয়দিনের এই অনুষ্ঠানের মোট বাজেট এবারে ২৫ লক্ষ টাকা৷ এই কদিনে এখানে লক্ষাধিক মানুষ আসবেন৷ দিন-রাতে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়৷ মুসলমানরাও আসেন৷’
—এত টাকা বাজেট! ওঠে কী করে?
অশোকবাবু বললেন, ‘এই নীলগঞ্জ এলাকা যশোরের শিল্পনগরী নামে পরিচিত৷ এখানে পাটকল, ওষুধ ও বিস্কুটের ফ্যাক্টরি আছে৷ হিন্দুদের আর্থিক অবস্থাও ভালো৷ চাঁদা, বিজ্ঞাপন এসব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উঠে আসে৷’ শুনলাম, এই ধর্মসভার শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন পাবনার হেমায়েতপুরের শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের সভাপতি বিমল রায়চৌধুরি, যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ৷
এদিকে ক্রমশ বেলা বাড়ছে৷ আমার একটাই চিন্তা তখন, বিকেল বিকেল রওনা হতে না পারলে, ফরিদপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে৷ তাছাড়া অচেনা জায়গা৷
জয়দেব বলল, ‘শুধু একটা মন্দির আপনাকে একটু দেখিয়ে নিয়ে যাব৷’
‘কোন জায়গায়?’
‘যশোর শহরের হাটখোলা রোডে শ্রীরাধাকৃষ্ণ মাড়োয়ারি মন্দির৷’
বললাম, ‘তুমি যখন আমার গাইড, তোমার ইচ্ছা অমান্য করি কী করে বলো?’
সত্যি, দেখার মতোই মন্দির বটে! পরিচয় হল, মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সাধন রায়ের সঙ্গে৷ দুশো-আড়াইশো বছর আগে এখানে রাম-সীতার মন্দির ছিল৷ ১৯৭১ সালে রাম-সীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমানজির কষ্টিপাথরের বিগ্রহগুলো চুরি যায়৷
ইজিট্যাক্সির চালক মহম্মদ হোসেনের বয়স বছর কুড়ি৷ কিন্তু ওর হাতখানা বেশ৷ যখনই রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা পাচ্ছে ইজিট্যাক্সিখানা যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে পৌঁছেও গেলাম তাড়াতাড়ি৷
অনেকখানি জায়গা নিয়ে এই শ্মশানকে তখন শ্মশান বলে মনে হচ্ছে না৷ রং-বেরঙের কাগজের শিকলে শ্মশানের একাংশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে৷ রঙিন কাপড়ে মোড়া হয়েছে শ্মশান প্রাঙ্গণ৷ এক জায়গায় দারুণ একটা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে৷ ওই মঞ্চেই কীর্তনের আসর বসেছে৷
সেই মুহূর্তে মহানামসুধা পরিবেশন করছিল ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ার আদি অষ্টসখী সম্প্রদায়৷ এই সম্প্রদায়ের সকলেই মহিলা৷ খোল-করতাল, খঞ্জনি, বাঁশি, গান সবকিছুই আট-দশজন মহিলা দিব্যি সামলান৷
বাসন্তী রঙের শাড়ি-ব্লাউজ, গলায় তুলসীমালা তাঁদের৷ মঞ্চের চারধারে কয়েক হাজার দর্শক-শ্রোতা গোল হয়ে বসে রাধা-কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা তন্ময় হয়ে শুনছেন৷ মহিলার ভিড়ই বেশি৷ বেশ কয়েকটা সাউন্ডবক্স রয়েছে৷ কীর্তনের সুর ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে৷ উপস্থিত জনতা মাঝে মাঝে হরিধ্বনি দিয়ে উঠছে৷ মহিলাদের উলুধ্বনি৷ মোট ৯টি দল অষ্টপ্রহর নামগান পরিবেশন করবে৷ ভারত থেকে এসেছে শ্রীগোপাল দাস গোস্বামী সম্প্রদায়৷
নীলগঞ্জ মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি শ্রীযুক্ত অসীমকুমার কুণ্ডু যশোরের নামকরা ব্যবসায়ী৷ বললেন, ‘কৃষ্ণনাম প্রচারের জন্যই এই মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান ও ধর্মসভার আয়োজন৷ প্যান্ডেল ও আলোর পিছনেই আমাদের প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে৷ ছয়দিনের এই অনুষ্ঠানের মোট বাজেট এবারে ২৫ লক্ষ টাকা৷ এই কদিনে এখানে লক্ষাধিক মানুষ আসবেন৷ দিন-রাতে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়৷ মুসলমানরাও আসেন৷’
—এত টাকা বাজেট! ওঠে কী করে?
অশোকবাবু বললেন, ‘এই নীলগঞ্জ এলাকা যশোরের শিল্পনগরী নামে পরিচিত৷ এখানে পাটকল, ওষুধ ও বিস্কুটের ফ্যাক্টরি আছে৷ হিন্দুদের আর্থিক অবস্থাও ভালো৷ চাঁদা, বিজ্ঞাপন এসব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ উঠে আসে৷’ শুনলাম, এই ধর্মসভার শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন পাবনার হেমায়েতপুরের শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের সভাপতি বিমল রায়চৌধুরি, যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ৷
এদিকে ক্রমশ বেলা বাড়ছে৷ আমার একটাই চিন্তা তখন, বিকেল বিকেল রওনা হতে না পারলে, ফরিদপুরের রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যাবে৷ তাছাড়া অচেনা জায়গা৷
জয়দেব বলল, ‘শুধু একটা মন্দির আপনাকে একটু দেখিয়ে নিয়ে যাব৷’
‘কোন জায়গায়?’
‘যশোর শহরের হাটখোলা রোডে শ্রীরাধাকৃষ্ণ মাড়োয়ারি মন্দির৷’
বললাম, ‘তুমি যখন আমার গাইড, তোমার ইচ্ছা অমান্য করি কী করে বলো?’
সত্যি, দেখার মতোই মন্দির বটে! পরিচয় হল, মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সাধন রায়ের সঙ্গে৷ দুশো-আড়াইশো বছর আগে এখানে রাম-সীতার মন্দির ছিল৷ ১৯৭১ সালে রাম-সীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমানজির কষ্টিপাথরের বিগ্রহগুলো চুরি যায়৷
’৮০ সালে সিমেন্ট-বালি ও কুঁচিপাথর দিয়ে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি তৈরি করা হয়৷ ’৮৬-তে মূর্তি ভাঙার পাশাপাশি এই মন্দিরেরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল৷ এরপর মাটির রাধা-কৃষ্ণমূর্তি তৈরি হল৷ নতুন করে মন্দির নির্মাণ৷ বছর তিনেক আগে সিমেন্ট-বালি ও কুঁচিপাথরের রাধা-কৃষ্ণমূর্তি তৈরি করেন নিখিল সরকার৷ সেই মূর্তিযুগলই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ বছরখানেক আগে একটি কালীমূর্তিও প্রতিষ্ঠা করা হয় এই মন্দিরে৷
বেজপাড়ার সিদ্ধেশ্বরীকালী মন্দিরটিও বিখ্যাত৷
মাড়োয়ারি মন্দিরের সামনে গাছের ছায়ায় বসে খড় বাঁধছিলেন নিখিল সরকার৷ গৌর-নিতাইয়ের মূর্তি তৈরি হবে৷ নিখিলবাবুর বয়স ৭০-এর কাছাকাছি৷ এখনও মজবুত গড়ন৷ এই মন্দিরের কিছু কিছু কথা তাঁর কাছেও জানতে পারলাম৷ এটি এখন দেবোত্তর সম্পত্তি৷ মূল মন্দিরটি যাঁরা নির্মাণ করেন সেই মাড়োয়ারি বংশ একসময় যশোরে থাকত৷ তাঁদের উত্তরসূরিরা এখন খুলনায় থাকেন৷
বেজপাড়ার সিদ্ধেশ্বরীকালী মন্দিরটিও বিখ্যাত৷
মাড়োয়ারি মন্দিরের সামনে গাছের ছায়ায় বসে খড় বাঁধছিলেন নিখিল সরকার৷ গৌর-নিতাইয়ের মূর্তি তৈরি হবে৷ নিখিলবাবুর বয়স ৭০-এর কাছাকাছি৷ এখনও মজবুত গড়ন৷ এই মন্দিরের কিছু কিছু কথা তাঁর কাছেও জানতে পারলাম৷ এটি এখন দেবোত্তর সম্পত্তি৷ মূল মন্দিরটি যাঁরা নির্মাণ করেন সেই মাড়োয়ারি বংশ একসময় যশোরে থাকত৷ তাঁদের উত্তরসূরিরা এখন খুলনায় থাকেন৷
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের গুলি থেকে বাঁচতে নিখিলবাবুও কলকাতায় পালিয়ে যান৷ ’৭১ থেকে ’৭৪ টানা তিন বছর তিনি কুমোরটুলিতে ছিলেন৷ বললেন, ‘দ্যাশের টানে আবার ফিরা আইলাম৷ যশোর ছাইড়া থাকোনের কথা ভাবতেই পারি না৷’
শ্রীরাধাকৃষ্ণ মাড়োয়ারি মন্দিরের কাছেই যশোরের বিখ্যাত সোনাপট্টি৷ বেশিরভাগ সোনার দোকান হিন্দুদের৷ হিন্দু কারিগরের সংখ্যাই বেশি৷ সেরকমই একটা দোকান সজীব জুয়েলার্সে গিয়ে মালিকের সঙ্গে গল্প-গুজবও করলাম খানিকক্ষণ৷ তবে ভদ্রলোক নিজের নাম-ধাম কেন গোপন রাখতে চান বলতে পারব না৷
বাংলাদেশে আসার আগে কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা শ্রীযুক্ত চিত্তরঞ্জন বাইনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ ভদ্রলোক একসময় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বপূর্ণ পদে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত কিছু তথ্য আগাম জেনেছিলাম৷ উনি বলেছিলেন, ‘আপনি যখন যশোরে যাচ্ছেন একবার শহরের চৌরাস্তার মোড়ে মধু সাহার রেস্তরাঁর খোঁজ করবেন৷ চালু রেস্তরাঁ৷ ওই দোকানের মিষ্টি খাবেন৷ মুখে লেগে থাকে৷ মধুবাবুর ছেলে তাপস এখন দোকানটা দেখাশোনা করছে৷ ও খুব হেল্পফুল৷ কোনো অসুবিধায় পড়লে আপনাকে সবরকম সাহায্য করবে৷’
রামকৃষ্ণ মিশনে ফেরার পথে ‘মণিহার’ সিনেমাহলের কাছেই ওই রেস্তরাঁয় গিয়ে তাপসবাবুর খোঁজ করতেই শুনলাম, তিনি ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় গিয়েছেন৷ দোকানের ম্যানেজার যখন শুনলেন যে, আমি কলকাতার লোক, বললেন, ‘আমাগো দ্যাশের মিষ্টি খাইয়া যান৷ ভালো যে লাগবো হেকথা আমি গ্যারান্টি দিয়া কইতে পারি৷’
আতিথেয়তার জন্য ওই যুবককে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘এখন মিষ্টি খেলে দুপুরে আর ভাত খেতে পারব না৷’
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার খানিকক্ষণ পরেই সুদেব মহারাজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেখান থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে, সেখানে জয়দেবই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে বাসে তুলে দিল৷ সকাল থেকে নিজের সব কাজকর্ম শিকেয় তুলে জয়দেব আমার সঙ্গে রয়েছে৷ ওর এই সহযোগিতার কথা আমার মনে থাকবে চিরকাল৷ —চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
শ্রীরাধাকৃষ্ণ মাড়োয়ারি মন্দিরের কাছেই যশোরের বিখ্যাত সোনাপট্টি৷ বেশিরভাগ সোনার দোকান হিন্দুদের৷ হিন্দু কারিগরের সংখ্যাই বেশি৷ সেরকমই একটা দোকান সজীব জুয়েলার্সে গিয়ে মালিকের সঙ্গে গল্প-গুজবও করলাম খানিকক্ষণ৷ তবে ভদ্রলোক নিজের নাম-ধাম কেন গোপন রাখতে চান বলতে পারব না৷
বাংলাদেশে আসার আগে কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা শ্রীযুক্ত চিত্তরঞ্জন বাইনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ ভদ্রলোক একসময় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দায়িত্বপূর্ণ পদে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত কিছু তথ্য আগাম জেনেছিলাম৷ উনি বলেছিলেন, ‘আপনি যখন যশোরে যাচ্ছেন একবার শহরের চৌরাস্তার মোড়ে মধু সাহার রেস্তরাঁর খোঁজ করবেন৷ চালু রেস্তরাঁ৷ ওই দোকানের মিষ্টি খাবেন৷ মুখে লেগে থাকে৷ মধুবাবুর ছেলে তাপস এখন দোকানটা দেখাশোনা করছে৷ ও খুব হেল্পফুল৷ কোনো অসুবিধায় পড়লে আপনাকে সবরকম সাহায্য করবে৷’
রামকৃষ্ণ মিশনে ফেরার পথে ‘মণিহার’ সিনেমাহলের কাছেই ওই রেস্তরাঁয় গিয়ে তাপসবাবুর খোঁজ করতেই শুনলাম, তিনি ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় গিয়েছেন৷ দোকানের ম্যানেজার যখন শুনলেন যে, আমি কলকাতার লোক, বললেন, ‘আমাগো দ্যাশের মিষ্টি খাইয়া যান৷ ভালো যে লাগবো হেকথা আমি গ্যারান্টি দিয়া কইতে পারি৷’
আতিথেয়তার জন্য ওই যুবককে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘এখন মিষ্টি খেলে দুপুরে আর ভাত খেতে পারব না৷’
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার খানিকক্ষণ পরেই সুদেব মহারাজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেখান থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে, সেখানে জয়দেবই আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে বাসে তুলে দিল৷ সকাল থেকে নিজের সব কাজকর্ম শিকেয় তুলে জয়দেব আমার সঙ্গে রয়েছে৷ ওর এই সহযোগিতার কথা আমার মনে থাকবে চিরকাল৷ —চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন