চট্টগ্রামের পাহাড়তলির শ্রীশ্রীরামঠাকুরের আশ্রম।
কীভাবে পাহাড়তলির ‘শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম’ গড়ে ওঠে?
শ্রীশ্রীরামঠাকুরের সঙ্গলাভ করেছিলেন শ্রীযুক্ত শুভময় দত্ত৷ তিনি পেশায় সরকারি আইনজীবী ছিলেন৷ তাঁর রচিত ‘শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব স্মরণে’ অমূল্য গ্রন্থটি অনুসরণ করে সেই সময়ের একটি চিত্রকল্প আঁকার চেষ্টা করলাম৷
‘শ্রীশ্রীঠাকুরের চারিটি আশ্রমের মধ্যে তিনটি তাঁহারই নির্দ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এবং অপরটি তিনি দেহত্যাগের কিঞ্চিৎ অধিক ছয় বৎসর পূর্ব্ব পর্য্যন্ত যে স্থানে বাস করিতেন, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে৷
প্রথমটি পূর্ব্ববঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পাহাড়তলিতে ‘শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম’ নামে প্রতিষ্ঠিত আছে৷ দ্বিতীয়টি কলিকাতার উপকণ্ঠে যাদবপুরে ‘শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম’ নামেই অভিহিত৷ ওইটির প্রতিষ্ঠার সময় শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে বলিয়াছিলেন যে, ঐটি পাহাড়তলীর কৈবল্যধামের শাখা স্বরূপই থাকিবে৷ তৃতীয়টি শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থান পূর্ব্ববঙ্গের ফরিদপুর জিলার অন্তর্গত ডিঙ্গামাণিক গ্রামে তাঁহার পূর্ব্ব পুরুষের বসতবাটীতে ‘শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের্ সেবামন্দির’ নামে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে৷ চতুর্থ আশ্রমটি নোয়াখালী জিলার চৌমুহণী নামক স্থানে শ্রীশ্রীঠাকুরের সমাধি ক্ষেত্রে নির্ম্মিত হওয়ায় উহা ‘সমাধি আশ্রম’ নামে পরিচিত৷
যতদূর মনে পড়ে ওই সনের (১৯৩০ ইং সন) পূজার বন্ধে শ্রীশ্রীঠাকুর ফাল্গুন মাসে আশ্রম প্রবেশ করিবেন বলিয়া আমাকে জানাইয়া দিয়াছিলেন৷ সেইজন্য আশ্রম নির্ম্মাণ কার্য্যে ব্যাপৃত বন্ধুগণকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঠাকুর মন্দির ও ভক্তগণের বাসগৃহ নির্ম্মাণের জন্য আমি বারবার তাগিদ দিতেছিলাম৷ ওই সময়ের মধ্যে যদিও ঠাকুর মন্দিরাদি প্রস্তুত হইয়াছিল, টাকার কোন অভাব না থাকা সত্ত্বেও ভক্তগণের বাসস্থান নির্ম্মাণকার্য্য শেষ না হওয়ায়, মনে একটু ব্যথা পাইয়াছিলাম৷ যাহা হউক, শ্রীশ্রীঠাকুর দয়া করিয়া ওই ফাল্গুন মাসেই দোলোৎসবের কিছুদিন পূর্ব্বে নোয়াখালীতে আমার বাসায় পদার্পণ করেন এবং কয়েকদিন পরে তথা হইতে আমি, পূর্ণবাবু আদি বহু ভক্ত সপরিবারে উক্ত প্রবেশের নির্দ্ধারিত দিনের একদিন পূর্ব্বে ১৪ই ফাল্গুন প্রাতে শ্রীশ্রীঠাকুর সহ চট্টগ্রাম রওনা হই৷ ট্রেনে একখানা বেশ লম্বা তৃতীয় শ্রেণির গাড়িতে আমরা প্রায় ২০/২৫ জন ছিলাম৷ সাক্ষাৎ নরনারায়ণ সান্নিধ্যে আমরা সমস্ত দিন অনির্ব্বচনীয় আনন্দে কাটাইলাম৷ পাহাড়তলী স্টেশনে আসিয়া শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দ্দেশ অনুযায়ী আমরা সকলেই আশ্রমের দিকে চলিয়া যাই৷ তিনি ২/১ জন ভক্তগণ সহ চট্টগ্রাম শহরে বিধূভূষণ বসু মহাশয়ের বাসায় যাইয়া উঠেন৷
তৎপর দিন, অর্থাৎ ১৫ই ফাল্গুন, শুক্লা দশমী দিন প্রাতে বিধুবাবু ও চট্টগ্রামের আরও কয়েকজন ভক্ত সহ শ্রীশ্রীঠাকুর একখানা বাসে(Bus) আশ্রমের পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত হইলেন৷ তখন আশ্রমে আসাম, কলিকাতা ও অন্যান্য নানা স্থান হইতে আগত আমার যাহারা ছিলাম, পরমানন্দে বন্ধু শৈলেনের সঙ্গে কীর্ত্তন করিতে করিতে তাঁহাকে ঠাকুর মন্দিরে নিয়া আসিলাম৷ তখন ঐ মন্দিরের দুইটি মাত্র কামরা ছিল, তাহার পূর্ব্বদিকের কামরায় ঠাকুর থাকিবেন মনে করিয়া আমার একখানা খাট ও তদুপরি বিছানাদি পাতিয়া রাখিয়াছিলাম পশ্চিমের কোঠায় অর্থাৎ এখন যেখানে শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের চিত্রপট পূজিত হয়, তথায়ই শ্রীশ্রীঠাকুরের চিত্রপট প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছিল৷
শ্রীশ্রীরামঠাকুরের সঙ্গলাভ করেছিলেন শ্রীযুক্ত শুভময় দত্ত৷ তিনি পেশায় সরকারি আইনজীবী ছিলেন৷ তাঁর রচিত ‘শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব স্মরণে’ অমূল্য গ্রন্থটি অনুসরণ করে সেই সময়ের একটি চিত্রকল্প আঁকার চেষ্টা করলাম৷
‘শ্রীশ্রীঠাকুরের চারিটি আশ্রমের মধ্যে তিনটি তাঁহারই নির্দ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল এবং অপরটি তিনি দেহত্যাগের কিঞ্চিৎ অধিক ছয় বৎসর পূর্ব্ব পর্য্যন্ত যে স্থানে বাস করিতেন, সেখানে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে৷
প্রথমটি পূর্ব্ববঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পাহাড়তলিতে ‘শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম’ নামে প্রতিষ্ঠিত আছে৷ দ্বিতীয়টি কলিকাতার উপকণ্ঠে যাদবপুরে ‘শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম’ নামেই অভিহিত৷ ওইটির প্রতিষ্ঠার সময় শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে বলিয়াছিলেন যে, ঐটি পাহাড়তলীর কৈবল্যধামের শাখা স্বরূপই থাকিবে৷ তৃতীয়টি শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থান পূর্ব্ববঙ্গের ফরিদপুর জিলার অন্তর্গত ডিঙ্গামাণিক গ্রামে তাঁহার পূর্ব্ব পুরুষের বসতবাটীতে ‘শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের্ সেবামন্দির’ নামে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে৷ চতুর্থ আশ্রমটি নোয়াখালী জিলার চৌমুহণী নামক স্থানে শ্রীশ্রীঠাকুরের সমাধি ক্ষেত্রে নির্ম্মিত হওয়ায় উহা ‘সমাধি আশ্রম’ নামে পরিচিত৷
যতদূর মনে পড়ে ওই সনের (১৯৩০ ইং সন) পূজার বন্ধে শ্রীশ্রীঠাকুর ফাল্গুন মাসে আশ্রম প্রবেশ করিবেন বলিয়া আমাকে জানাইয়া দিয়াছিলেন৷ সেইজন্য আশ্রম নির্ম্মাণ কার্য্যে ব্যাপৃত বন্ধুগণকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঠাকুর মন্দির ও ভক্তগণের বাসগৃহ নির্ম্মাণের জন্য আমি বারবার তাগিদ দিতেছিলাম৷ ওই সময়ের মধ্যে যদিও ঠাকুর মন্দিরাদি প্রস্তুত হইয়াছিল, টাকার কোন অভাব না থাকা সত্ত্বেও ভক্তগণের বাসস্থান নির্ম্মাণকার্য্য শেষ না হওয়ায়, মনে একটু ব্যথা পাইয়াছিলাম৷ যাহা হউক, শ্রীশ্রীঠাকুর দয়া করিয়া ওই ফাল্গুন মাসেই দোলোৎসবের কিছুদিন পূর্ব্বে নোয়াখালীতে আমার বাসায় পদার্পণ করেন এবং কয়েকদিন পরে তথা হইতে আমি, পূর্ণবাবু আদি বহু ভক্ত সপরিবারে উক্ত প্রবেশের নির্দ্ধারিত দিনের একদিন পূর্ব্বে ১৪ই ফাল্গুন প্রাতে শ্রীশ্রীঠাকুর সহ চট্টগ্রাম রওনা হই৷ ট্রেনে একখানা বেশ লম্বা তৃতীয় শ্রেণির গাড়িতে আমরা প্রায় ২০/২৫ জন ছিলাম৷ সাক্ষাৎ নরনারায়ণ সান্নিধ্যে আমরা সমস্ত দিন অনির্ব্বচনীয় আনন্দে কাটাইলাম৷ পাহাড়তলী স্টেশনে আসিয়া শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দ্দেশ অনুযায়ী আমরা সকলেই আশ্রমের দিকে চলিয়া যাই৷ তিনি ২/১ জন ভক্তগণ সহ চট্টগ্রাম শহরে বিধূভূষণ বসু মহাশয়ের বাসায় যাইয়া উঠেন৷
তৎপর দিন, অর্থাৎ ১৫ই ফাল্গুন, শুক্লা দশমী দিন প্রাতে বিধুবাবু ও চট্টগ্রামের আরও কয়েকজন ভক্ত সহ শ্রীশ্রীঠাকুর একখানা বাসে(Bus) আশ্রমের পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত হইলেন৷ তখন আশ্রমে আসাম, কলিকাতা ও অন্যান্য নানা স্থান হইতে আগত আমার যাহারা ছিলাম, পরমানন্দে বন্ধু শৈলেনের সঙ্গে কীর্ত্তন করিতে করিতে তাঁহাকে ঠাকুর মন্দিরে নিয়া আসিলাম৷ তখন ঐ মন্দিরের দুইটি মাত্র কামরা ছিল, তাহার পূর্ব্বদিকের কামরায় ঠাকুর থাকিবেন মনে করিয়া আমার একখানা খাট ও তদুপরি বিছানাদি পাতিয়া রাখিয়াছিলাম পশ্চিমের কোঠায় অর্থাৎ এখন যেখানে শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের চিত্রপট পূজিত হয়, তথায়ই শ্রীশ্রীঠাকুরের চিত্রপট প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছিল৷
ওই সময়ে আশ্রমে একটি দোল প্রস্তুত করা হইয়াছিল ও তাহার উপরে চৌকিতে শ্রীশ্রীঠাকুরকে বসান হইয়াছিল৷ ওই দিন, অথবা তৎপর দিন শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে আশ্রমের সংলগ্ণ উপরের পাহাড়টি দেখাইয়া বলিলেন, ‘‘ওই পাহাড়টির উপর আপনি বাড়ি করিয়া বাস করিলে, ছেলেপিলে সকলেরই স্বাস্থ্য ভাল থাকিবে৷ ঐস্থানে বাড়ি করিবার চেষ্টা করিবেন৷’’
পাহাড়টি তৎকালে ‘‘কর্ণেল সাহেবের পাহাড়’’ বলিয়া খ্যাত ছিল৷ সে সময়ে তাহাতে একটি পুরাতন দালানের ভগ্ণাবশেষ ছিল৷ দালানটির নানা স্থানে ও চতুর্দ্দিকে বহু বিরাট গাছ থাকায় উহাতে বড় বড় সাপ ও বাঘ, শূকরাদি বন্যজন্তু থাকার আশঙ্কায় কেহই ঐ পাহাড়ে তখন যাইত না৷ শ্রীশ্রীঠাকুর ওই স্থানে আমার বাড়ি করার আদেশ দেওয়ায়, আমি উহা সরকার হইতে নেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হইলাম৷
অনুসন্ধান করিয়া জানিলাম, ওই পাহাড় রেলওয়ে ল্যান্ড (জমি) বলিয়া দুইবার সেটেল্মেন্টে রেকর্ড হইয়াছে৷ কিন্তু আমাদের বন্ধু রেল অফিসের কর্ম্মচারীগণ আমাকে জানাইলেন যে, উহা প্রকৃতপক্ষেRailway relinquished land, অর্থাৎ যদিও রেলওয়ের জন্য প্রথমে ঐ জমিacquire করা হইয়াছিল, পরে অনাবশ্যক বিধায়Railway কোম্পানী তাহা ছাড়িয়া দিয়াছে৷ তৎপর তৎকালীনSettlement Officer নিকট তদ্বির করিয়া ঐ জমিSettlement Record-এ সরকারের জমি বলিয়া লিপিবদ্ধ করা হয়৷ ইহা সত্ত্বেও আমার তাহা পাইতে নানা প্রকারের যথেষ্ট বাধা উপস্থিত হইয়াছিল৷ কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার কৃপায় সমস্ত বাধা উত্তীর্ণ হইয়া ঐ পাহাড় অতি অল্প মূল্যেই আমি পাইতে সমর্থ হইয়াছিলাম৷ এই পাহাড় বন্দোবস্ত পাওয়া সম্পর্কে নোয়াখালীর ভূতপূর্ব্ব ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মিঃ এ, মোমিন ও চট্টগ্রামের তৎকালীন খাসমহল অফিসার মৌলভী সাদরলওয়ালা আমাকে আশাতীতভাবে সর্ব্বপ্রকারে সাহায্য করিয়াছিলেন৷
মিঃ মোমিনকে আমি যখন প্রথম এই পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার কথা বলিয়াছিলাম, তখন এই নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায়, আমি তাঁহাকে জানাইয়াছিলাম যে, আমার গুরুদেবের আশ্রম উহার সংলগ্ণ পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমায় ঐ পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার প্রয়োজন হইয়াছে৷ এই কথা শুনিয়া তিনি নেহাৎ আপনভাবে আশ্রমের কথা যেন দরখাস্তে উল্লেখ না করি এই বিষয়ে সাবধান করিয়া দিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন যে আশ্রমের কথা লিখিলে গভর্ণমেন্ট বন্দোবস্ত দিতে রাজি হইবে না৷ কারণ, আশ্রমের উপর গভর্ণমেন্টের বিশেষ সন্দেহাত্মক নজর আছে৷ তিনি মিঃ সাদরলওয়ালাকে বলিয়া দিয়াছিলেন যে, আমি যাহাতে ঐ পাহাড় বন্দোবস্ত লইতে পারি সেই ব্যবস্থা যেন তিনি করেন৷
শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দ্দেশে পুরাতন কর্ণেল সাহেবের কুঠির ভিত্তি যতটা ছিল, ততটা লইয়াই দোতলা বাড়ি নির্ম্মাণ করাইয়াছি, যদিও প্রথমত একটি খুব ছোট বাড়িই আশ্রম বাসের জন্য নির্ম্মাণ করার আমার ইচ্ছা ছিল৷ এই বাড়িতে থাকিয়া আমার পরপুরুষেরাও শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের সেবা করিবে এই কথা এবং এই মর্ম্মে আরও কয়েকটি কথা শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে ও অন্যান্য কোন কোন ভক্তকেও জানাইয়াছিলেন৷ এই বাড়ি ও তৎসংলগ্ণ জমি এই কারণেই শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের বরাবরে দেবোত্তর করা হইলেও আমি এবং আমার অবর্ত্তমানে আমার বংশধরগণ তাঁহার সেবায়েত সূত্রে এই বাড়ি ও জমির দখলদার থাকিবে বলিয়া আমার দেবোত্তর দলিলে উল্লেখ করা হইয়াছে৷ ঐ দলিলের মুসাবিদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখান হয় এবং তিনি তাহা অনুমোদন করার পর রেজিস্ট্রি করা হয়৷
পাহাড়টি তৎকালে ‘‘কর্ণেল সাহেবের পাহাড়’’ বলিয়া খ্যাত ছিল৷ সে সময়ে তাহাতে একটি পুরাতন দালানের ভগ্ণাবশেষ ছিল৷ দালানটির নানা স্থানে ও চতুর্দ্দিকে বহু বিরাট গাছ থাকায় উহাতে বড় বড় সাপ ও বাঘ, শূকরাদি বন্যজন্তু থাকার আশঙ্কায় কেহই ঐ পাহাড়ে তখন যাইত না৷ শ্রীশ্রীঠাকুর ওই স্থানে আমার বাড়ি করার আদেশ দেওয়ায়, আমি উহা সরকার হইতে নেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হইলাম৷
অনুসন্ধান করিয়া জানিলাম, ওই পাহাড় রেলওয়ে ল্যান্ড (জমি) বলিয়া দুইবার সেটেল্মেন্টে রেকর্ড হইয়াছে৷ কিন্তু আমাদের বন্ধু রেল অফিসের কর্ম্মচারীগণ আমাকে জানাইলেন যে, উহা প্রকৃতপক্ষেRailway relinquished land, অর্থাৎ যদিও রেলওয়ের জন্য প্রথমে ঐ জমিacquire করা হইয়াছিল, পরে অনাবশ্যক বিধায়Railway কোম্পানী তাহা ছাড়িয়া দিয়াছে৷ তৎপর তৎকালীনSettlement Officer নিকট তদ্বির করিয়া ঐ জমিSettlement Record-এ সরকারের জমি বলিয়া লিপিবদ্ধ করা হয়৷ ইহা সত্ত্বেও আমার তাহা পাইতে নানা প্রকারের যথেষ্ট বাধা উপস্থিত হইয়াছিল৷ কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার কৃপায় সমস্ত বাধা উত্তীর্ণ হইয়া ঐ পাহাড় অতি অল্প মূল্যেই আমি পাইতে সমর্থ হইয়াছিলাম৷ এই পাহাড় বন্দোবস্ত পাওয়া সম্পর্কে নোয়াখালীর ভূতপূর্ব্ব ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মিঃ এ, মোমিন ও চট্টগ্রামের তৎকালীন খাসমহল অফিসার মৌলভী সাদরলওয়ালা আমাকে আশাতীতভাবে সর্ব্বপ্রকারে সাহায্য করিয়াছিলেন৷
মিঃ মোমিনকে আমি যখন প্রথম এই পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার কথা বলিয়াছিলাম, তখন এই নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায়, আমি তাঁহাকে জানাইয়াছিলাম যে, আমার গুরুদেবের আশ্রম উহার সংলগ্ণ পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমায় ঐ পাহাড় বন্দোবস্ত নেওয়ার প্রয়োজন হইয়াছে৷ এই কথা শুনিয়া তিনি নেহাৎ আপনভাবে আশ্রমের কথা যেন দরখাস্তে উল্লেখ না করি এই বিষয়ে সাবধান করিয়া দিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন যে আশ্রমের কথা লিখিলে গভর্ণমেন্ট বন্দোবস্ত দিতে রাজি হইবে না৷ কারণ, আশ্রমের উপর গভর্ণমেন্টের বিশেষ সন্দেহাত্মক নজর আছে৷ তিনি মিঃ সাদরলওয়ালাকে বলিয়া দিয়াছিলেন যে, আমি যাহাতে ঐ পাহাড় বন্দোবস্ত লইতে পারি সেই ব্যবস্থা যেন তিনি করেন৷
শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দ্দেশে পুরাতন কর্ণেল সাহেবের কুঠির ভিত্তি যতটা ছিল, ততটা লইয়াই দোতলা বাড়ি নির্ম্মাণ করাইয়াছি, যদিও প্রথমত একটি খুব ছোট বাড়িই আশ্রম বাসের জন্য নির্ম্মাণ করার আমার ইচ্ছা ছিল৷ এই বাড়িতে থাকিয়া আমার পরপুরুষেরাও শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের সেবা করিবে এই কথা এবং এই মর্ম্মে আরও কয়েকটি কথা শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে ও অন্যান্য কোন কোন ভক্তকেও জানাইয়াছিলেন৷ এই বাড়ি ও তৎসংলগ্ণ জমি এই কারণেই শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের বরাবরে দেবোত্তর করা হইলেও আমি এবং আমার অবর্ত্তমানে আমার বংশধরগণ তাঁহার সেবায়েত সূত্রে এই বাড়ি ও জমির দখলদার থাকিবে বলিয়া আমার দেবোত্তর দলিলে উল্লেখ করা হইয়াছে৷ ঐ দলিলের মুসাবিদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে দেখান হয় এবং তিনি তাহা অনুমোদন করার পর রেজিস্ট্রি করা হয়৷
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে, পর্ব-৪৩: শ্রীশ্রীরামঠাকুরের মন্দিরটি বেশ বড়, এখানে প্রতি শুক্রবার আট-দশ হাজার ভক্ত সমবেত হন
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৬: মুক্তিযুদ্ধের বিজয়— বীর বাঙালির অহংকার
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?
আশ্রমের প্রবেশ উপলক্ষে কৈবল্যধামে ছয় সাত দিন থাকিয়া ঠাকুর আশ্রম ত্যাগ করেন৷ আর দেহ নিয়া তিনি কখনও তথায় যান নাই৷
আশ্রম প্রবেশের দুই তিন বৎসর পর তাঁহারই আদিষ্ট আমার ওই বাড়ি নির্ম্মিত হইলে আমি একদিন তাঁহাকে বলিয়াছিলাম, ‘‘এখন তো আশ্রমের সান্নিধ্যে আমার বাড়ি হইয়াছে তথায় গিয়া আপনি থাকিলে সকলেই যথেষ্ট আনন্দ পাইবে৷ ওই বাড়িত’ আর আশ্রম নয়৷ সুতরাং তথায় যাইতে আপনার আপত্তি হইতে পারে না৷’’
তদুত্তরে ঠাকুর বলিলেন, ‘‘উহাও আশ্রমের গণ্ডীর মধ্যে৷ সুতরাং সেখানেও আমার থাকার জো নাই৷ জানেন ত’ কিষণলাল সম্পর্কে গুরুর আদেশ অমান্য করায় আমার এখন স্থানে স্থানে ঘুরিয়া বেড়াইতে হইতেছে৷’’ একটু হাসিয়া বলিলেন, ‘‘আবারও আদেশ অমান্য করিলে, কী হয়, তিনিই জানেন৷’’ আমি মনে মনে ভাবিলাম যে গুরুর আদেশ অমান্য করায় ভালই হইয়াছে, নচেৎ আমার ন্যায় অতি দুর্ব্বল ও পাপী তাপীদের উপায় কি হইত? কিন্তু সাহস করিয়া মুখ ফুটিয়া আর কোন কথা বাহির হইল না৷ এ সম্বন্ধে আর জিদ করার ধৃষ্টতা হইতেও তাঁহারই কৃপায় রক্ষা পাইলাম৷
আমি কয়েকজন প্রবীণ ভক্তের নিকট শুনিয়াছিলাম যে, কিষণলাল নামক কোন ব্যক্তি শ্রীশ্রীঠাকুরের অলৌকিক শক্তির বিষয় জানিতে পারিয়া মুক্তির জন্য এক সময়ে কালীঘাটে তাঁহার পদযুগল জড়াইয়া ধরিয়া অতি কাতরভাবে মুক্তির প্রার্থনা করায় ঠাকুর তাহার ঐকান্তিক বিশুদ্ধ ভক্তিতে অভিভূত হইয়া তৎক্ষণাৎ তাহাকে দেহমুক্ত করিয়াছিলেন৷ তাহাকে দীক্ষা দেওয়া মাত্র সে দেহত্যাগ করিয়া সত্যলোকে স্থান পাইয়াছিল৷
শ্রীশ্রীপরম গুরুদেব কাহাকেও এইভাবে মুক্তি দিতে ঠাকুরকে অনুমতি দেন নাই৷ তত্রাচ কি জানি কি কারণে দয়াময় ঠাকুর কিষণলালকে এইভাবে মুক্ত করায় পরম গুরুদেব একটু অসন্তুষ্ট হইয়া আদেশ দিয়াছিলেন যে, ঠাকুরকে আরও বহুকাল লোকালয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে হইবে৷
পাহাড়তলি কৈবল্যধাম আশ্রমের মাহাত্ম্য সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদিগকে অনেক সময়ই অনেক কথা বলিয়াছিলেন এবং বহু পত্রেও ওই সকল কথা লিখিয়াছেন৷ এই সম্পর্কে লেখার জন্য যোগ্যতর ব্যক্তিগণের উপরে ভার রাখিয়া আমি সংক্ষেপে তাঁহার মুখে শুনা দুই একটি কথা এখানে উল্লেখ করিব৷
শ্রীশ্রীঠাকুরকে একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি বলিয়াছিলাম, ‘‘আমাদের কৈবল্যধাম আশ্রম কি কাশীর ন্যায় বৃহৎ তীর্থস্থান হইবে?’’ তিনি তদুত্তরে বলিয়াছিলেন, ‘‘ইহা আসমুদ্র ব্যাপ্ত হইবে এবং সেখানে কুম্ভমেলা হয় সেরূপ বৃহৎ স্থান হইবে৷’’ ইতিপূর্ব্বে তিনি অনেক সময় আমাদিগকে বলিয়াছেন যে, ওই আশ্রমে শ্রীগুরু ও বহু দেবদেবী সকল সময় উপস্থিত থাকিবেন৷ শ্রীজয়ন্তী মা উহার রক্ষাকারিণীরূপে আছেন৷ কৈবল্যধামে আসিলে সমস্ত তীর্থের ফল পাওয়া যাইবে এবং বহু দূরদেশবাসী বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী, ধর্ম্মপিপাসুগণ ঐ স্থানে আসিয়া পরম শান্তি পাইবেন এবং ওই আশ্রমেই সর্ব্ব ধর্ম্ম সমন্বয় হইবে৷ বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বীদের মধ্যে ধর্ম্ম সম্পর্কে কোন বিবাদ বিসম্বাদ থাকিবে না৷ কালে কোন মহাত্মা ইহার মাহাত্ম্য প্রচার করিবেন৷…
১৩৩৮ বাং সনে ঐ আশ্রমে প্রথম দুর্গাপূজা হয়৷ ওই সনে শ্রীমান অখিলচন্দ্র রায়, শ্রী মণীন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযোগেশচন্দ্র গুহ, শ্রীযোগেশচন্দ্র গুপ্ত, আমার দাদা শ্রীসুধাময় দত্ত প্রমুখ ভক্তের উদ্যোগে এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম পোর্টের সুপার ভাইজার শ্রীসুরেশচন্দ্র গুহ মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে নাটমন্দির ও তৎপূর্ব্বদিকের পুরুষ ও মহিলাদের লম্বা যাত্রী নিবাস ও তৎপূর্ব্ব ধারের Retaining Wall (দেওয়াল) প্রস্তুত হয়৷ সেই সময় ঐ পাহাড়ের চারিধারের জঙ্গলাদি কাটিয়াও রাস্তা করিয়া অনেকটা পরিষ্কার রাখা হয়৷
ওই বৎসরই আশ্রমের পাহাড় সংলগ্ণ উপরের পাহাড়ের হিংস্র জন্তুর বাসস্থান ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া এবং কর্ণেলের কুঠী নামে পরিচিত তৎকালে বৃহৎ বৃক্ষাদিদ্বারা ঢাকা খুব পুরাতন একখানা দালানের ভগ্ণাবশেষ অতি কষ্টে পরিষ্কার করাইয়া শ্রীশ্রীঠাকুরের আদিষ্ট এখন যে দোতলা বাড়িটি অবস্থিত আছে তাহার নির্ম্মাণ কার্য আরম্ভ হয়৷
আশ্রম প্রবেশের দুই তিন বৎসর পর তাঁহারই আদিষ্ট আমার ওই বাড়ি নির্ম্মিত হইলে আমি একদিন তাঁহাকে বলিয়াছিলাম, ‘‘এখন তো আশ্রমের সান্নিধ্যে আমার বাড়ি হইয়াছে তথায় গিয়া আপনি থাকিলে সকলেই যথেষ্ট আনন্দ পাইবে৷ ওই বাড়িত’ আর আশ্রম নয়৷ সুতরাং তথায় যাইতে আপনার আপত্তি হইতে পারে না৷’’
তদুত্তরে ঠাকুর বলিলেন, ‘‘উহাও আশ্রমের গণ্ডীর মধ্যে৷ সুতরাং সেখানেও আমার থাকার জো নাই৷ জানেন ত’ কিষণলাল সম্পর্কে গুরুর আদেশ অমান্য করায় আমার এখন স্থানে স্থানে ঘুরিয়া বেড়াইতে হইতেছে৷’’ একটু হাসিয়া বলিলেন, ‘‘আবারও আদেশ অমান্য করিলে, কী হয়, তিনিই জানেন৷’’ আমি মনে মনে ভাবিলাম যে গুরুর আদেশ অমান্য করায় ভালই হইয়াছে, নচেৎ আমার ন্যায় অতি দুর্ব্বল ও পাপী তাপীদের উপায় কি হইত? কিন্তু সাহস করিয়া মুখ ফুটিয়া আর কোন কথা বাহির হইল না৷ এ সম্বন্ধে আর জিদ করার ধৃষ্টতা হইতেও তাঁহারই কৃপায় রক্ষা পাইলাম৷
আমি কয়েকজন প্রবীণ ভক্তের নিকট শুনিয়াছিলাম যে, কিষণলাল নামক কোন ব্যক্তি শ্রীশ্রীঠাকুরের অলৌকিক শক্তির বিষয় জানিতে পারিয়া মুক্তির জন্য এক সময়ে কালীঘাটে তাঁহার পদযুগল জড়াইয়া ধরিয়া অতি কাতরভাবে মুক্তির প্রার্থনা করায় ঠাকুর তাহার ঐকান্তিক বিশুদ্ধ ভক্তিতে অভিভূত হইয়া তৎক্ষণাৎ তাহাকে দেহমুক্ত করিয়াছিলেন৷ তাহাকে দীক্ষা দেওয়া মাত্র সে দেহত্যাগ করিয়া সত্যলোকে স্থান পাইয়াছিল৷
শ্রীশ্রীপরম গুরুদেব কাহাকেও এইভাবে মুক্তি দিতে ঠাকুরকে অনুমতি দেন নাই৷ তত্রাচ কি জানি কি কারণে দয়াময় ঠাকুর কিষণলালকে এইভাবে মুক্ত করায় পরম গুরুদেব একটু অসন্তুষ্ট হইয়া আদেশ দিয়াছিলেন যে, ঠাকুরকে আরও বহুকাল লোকালয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে হইবে৷
পাহাড়তলি কৈবল্যধাম আশ্রমের মাহাত্ম্য সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদিগকে অনেক সময়ই অনেক কথা বলিয়াছিলেন এবং বহু পত্রেও ওই সকল কথা লিখিয়াছেন৷ এই সম্পর্কে লেখার জন্য যোগ্যতর ব্যক্তিগণের উপরে ভার রাখিয়া আমি সংক্ষেপে তাঁহার মুখে শুনা দুই একটি কথা এখানে উল্লেখ করিব৷
শ্রীশ্রীঠাকুরকে একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি বলিয়াছিলাম, ‘‘আমাদের কৈবল্যধাম আশ্রম কি কাশীর ন্যায় বৃহৎ তীর্থস্থান হইবে?’’ তিনি তদুত্তরে বলিয়াছিলেন, ‘‘ইহা আসমুদ্র ব্যাপ্ত হইবে এবং সেখানে কুম্ভমেলা হয় সেরূপ বৃহৎ স্থান হইবে৷’’ ইতিপূর্ব্বে তিনি অনেক সময় আমাদিগকে বলিয়াছেন যে, ওই আশ্রমে শ্রীগুরু ও বহু দেবদেবী সকল সময় উপস্থিত থাকিবেন৷ শ্রীজয়ন্তী মা উহার রক্ষাকারিণীরূপে আছেন৷ কৈবল্যধামে আসিলে সমস্ত তীর্থের ফল পাওয়া যাইবে এবং বহু দূরদেশবাসী বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী, ধর্ম্মপিপাসুগণ ঐ স্থানে আসিয়া পরম শান্তি পাইবেন এবং ওই আশ্রমেই সর্ব্ব ধর্ম্ম সমন্বয় হইবে৷ বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বীদের মধ্যে ধর্ম্ম সম্পর্কে কোন বিবাদ বিসম্বাদ থাকিবে না৷ কালে কোন মহাত্মা ইহার মাহাত্ম্য প্রচার করিবেন৷…
১৩৩৮ বাং সনে ঐ আশ্রমে প্রথম দুর্গাপূজা হয়৷ ওই সনে শ্রীমান অখিলচন্দ্র রায়, শ্রী মণীন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযোগেশচন্দ্র গুহ, শ্রীযোগেশচন্দ্র গুপ্ত, আমার দাদা শ্রীসুধাময় দত্ত প্রমুখ ভক্তের উদ্যোগে এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম পোর্টের সুপার ভাইজার শ্রীসুরেশচন্দ্র গুহ মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে নাটমন্দির ও তৎপূর্ব্বদিকের পুরুষ ও মহিলাদের লম্বা যাত্রী নিবাস ও তৎপূর্ব্ব ধারের Retaining Wall (দেওয়াল) প্রস্তুত হয়৷ সেই সময় ঐ পাহাড়ের চারিধারের জঙ্গলাদি কাটিয়াও রাস্তা করিয়া অনেকটা পরিষ্কার রাখা হয়৷
ওই বৎসরই আশ্রমের পাহাড় সংলগ্ণ উপরের পাহাড়ের হিংস্র জন্তুর বাসস্থান ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া এবং কর্ণেলের কুঠী নামে পরিচিত তৎকালে বৃহৎ বৃক্ষাদিদ্বারা ঢাকা খুব পুরাতন একখানা দালানের ভগ্ণাবশেষ অতি কষ্টে পরিষ্কার করাইয়া শ্রীশ্রীঠাকুরের আদিষ্ট এখন যে দোতলা বাড়িটি অবস্থিত আছে তাহার নির্ম্মাণ কার্য আরম্ভ হয়৷
আরও পড়ুন:
খাই খাই: শীতের আমেজে লোভনীয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা? রেস্তরাঁর মতো ঝটপট বানিয়ে ফেলুন সুখা মরিচ মাটন
ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে
এক টিকিটেই কলকাতার ২১টি দর্শনীয় স্থানে প্রবেশাধিকার! বেড়ানোর মরসুমে শীতের শহরে পর্যটনমন্ত্রীর উপহার
প্রায়শই ব্যায়াম করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন? শরীরচর্চার পরে এই সব খাবার খেতে পারেন
এই পাহাড় দুইটির তিন দিকেই সেই সময়ে বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ এবং কিছু দূরে দূরে ঘন জঙ্গলাকীর্ণ ছোট ছোট পাহাড় ছিল যাহা তৎকালে বাঘ, বরাহ, বানর ও হরিণ আদির স্বচ্ছন্দে বিচরণের স্থান ছিল৷ কেবল দক্ষিণ দিকে অতি নিকটে বড় বড় গর্জন, তালসর বৃক্ষ ও ঘন জঙ্গলাবৃত একটি অপেক্ষাকৃত উচ্চ পাহাড়ের উপর চট্টগ্রামের উকিল রজনী সেন মহাশয়ের একখানা খুব ছোট টিনের বাংলো পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল৷ কয়েক বৎসর পূর্ব্বে এক ভদ্রলোক তাহা খরিদ করিয়া উপরোক্ত ছোট ঘরখানা এবং ঐ পাহাড়ের সমস্ত বৃক্ষাদি অপসারিত করিয়া পরে পাহাড় কাটিয়া উহাকে শ্রীভ্রষ্ট করিয়াছেন৷ আশ্রমের পাহাড়ের পূর্ব্ব দিকের পাহাড়গুলি পার হইয়া গেলে একটি বেশ বড় আঁকাবাঁকা হ্রদ আছে যাহাকে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘ঢেবা’ বলে৷
আমরা ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়া অতি সরুপথে সদলবলে হাঁটিয়া ঐ হ্রদ প্রথম অবস্থায় কয়েকবার দেখিয়া আসিয়াছি৷ এখনও কেহ কেহ তাহা দেখিতে যায়৷ আশ্রমের পশ্চিম দিকে প্রায় দুই মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অতি মনোরম৷ উপরের পাহাড়ের বাড়ির বারান্দায় এমনকি সমস্ত দরজা খুলিয়া দিলে যে কোনও কামরায় বসিয়া অসীম সমুদ্রের নীল জলের এবং মাঝে মাঝে জাহাজ ও নৌকা চলাচলের দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়৷ সূর্য্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশ নানা বর্ণে রঞ্জিত করিয়া আস্তে আস্তে সূর্য্যদেবের অতল সমুদ্রে অবগাহন ও নিমজ্জনের দৃশ্য বর্ণনাতীত ও মনোমুগ্ধকর৷…
কৈবল্যধাম আশ্রম পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন হইতে মাত্র ১১/৪ মাইল দূরে অবস্থিত এবং রেল রাস্তা আশ্রমের জমির সংলগ্ণ পশ্চিম দিক দিয়া উত্তর দক্ষিণে চলিয়া গিয়াছে৷
আশ্রম প্রতিষ্ঠার সাত বৎসর পরে ৩১.৮.৩৭ ইং (১৩৪৪ সনের ভাদ্রমাসের মধ্যভাগে) কৈবল্যধামে একটি স্টেশন করার জন্য আমরা নোয়াখালি হইতে তদানীন্তন A. B. Railway-এর কর্ত্তৃপক্ষের নিকট দরখাস্ত পাঠাই৷ তাহার ফলে দুর্গাপূজা উৎসব উপলক্ষে তাঁহারা ৪/৫ দিনের জন্য উভয়দিকের গাড়ি কৈবল্যধামে থামাইবার ব্যবস্থা করেন৷ তাহাতে যথেষ্ট যাত্রী গমনাগমন করিয়াছে দেখিয়া কয়েক বৎসর ‘কৈবল্যধাম’ নামে অস্থায়ী স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বিগত মহাযুদ্ধের সময় ঐ স্টেশন তুলিয়া দেওয়া হইয়াছিল৷ ১৯৫৮ ইং সনের সেপ্ঢেম্বর মাস হইতে উহা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং এখন পূর্ব্বাপেক্ষা অনেক বেশীসংখ্যক ব্যক্তি ঐ স্টেশন হইতে যাতায়াতের সুযোগ গ্রহণ করিতেছে৷…
১৩৪১ সনের ফাল্গুন মাসে আশ্রমের প্রথম মোহন্ত হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের দেহত্যাগের পর তাঁহার স্মৃতিরক্ষার্থে ১৩৪৭ সনে ‘হর-গৌরী’ নামে একটি দোতলা বাড়ি নাটমন্দিরের দক্ষিণধারে নির্ম্মাণ করা হয়৷
‘হর-গৌরী’ মন্দির হইতে উপরের পাহাড়ে উঠিবার প্রশস্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে বেল, বকুল, চঁাপাফুল, নিম, আমলকী, আমরুজ, তেলসর, কাঁঠাল ও নানা সতেজ সুন্দর বন্য বৃক্ষরাজিতে সুসজ্জিত হইয়া রহিয়াছে৷ উপরের পাহাড়ে উঠিবার সময় রাস্তার বাম পার্শ্বে পাহাড়ের পাদদেশে নীচ হইতে উত্থিত ঝরণার জলে পূর্ণ শ্রীকামশ্রীকুণ্ড অবস্থিত৷ ইহার জল খুবই পবিত্র ও সুস্বাদু৷…
প্রসঙ্গক্রমে ১৩৩৯ সনের দুর্গাপূজার দিন আশ্রমবাসীদের উপর যে এক আকস্মিক ও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত উৎপাত হইয়াছিল তাহার উল্লেখ করিতেছি৷ তখন পূজার সময় আশ্রমে যাত্রীসংখ্যা খুব কমই ছিল, তত্রাচ স্ত্রী ও পুরুষ যাত্রীদের ঘর পূর্ণ হইয়া যাওয়াতে অনেক যাত্রীকে নাটমন্দিরে মশারী খাটাইয়া রাত্রে শুইতে হইয়াছিল৷
রাত্রি প্রায় ১২ টার সময় দুইজন মিলিটারী সাহেব এবং আর একজন সাহেব যাহাকে পরে চট্টগ্রামের পুলিশ সাহেব বলিয়া জানিতে পারিয়াছি হঠাৎ অনেক গুর্খা সৈন্য ও চট্টগ্রাম থানার মুসলমান দারোগা সহ আশ্রম পাহাড়ে, তাড়াতাড়ি উঠিয়া আসিয়া আমি, আমার দাদা সুধাময় দত্ত, শ্রীখিল রায়, শ্রীক্ষয় কুমার বসু ইত্যাদি আমরা যাহারা নাটমন্দিরের দক্ষিণ পার্শ্বের পানের ও ফলের দোকানে বসিয়া গল্প করিতেছিলাম, তাহাদিগকে উচ্চৈঃস্বরে বলিল, ‘Hands up’– আমরা সকলেই হতভম্ব হইয়া দুই হাত উঁচু করিয়া দাঁড়াইলাম৷ নাটমন্দিরে নিদ্রিত ভদ্রলোকদের মশারী সৈন্যগণ ছিঁড়িয়া লণ্ডভণ্ড করিয়া তাহাদিগকে অতি রূঢ়ভাবে জাগাইয়া তুলিল৷
কয়েকজন সৈন্য ঠাকুর মন্দিরের পূর্ব্ব কোঠায় নিদ্রিত মোহন্ত হরিদাদাকে তুলিয়া আমাদের নিকট নিয়া আসিল৷ তিনি তখন একেবারে অপ্রস্তুত৷ দুই এক মিনিটের মধ্যে আশ্রম প্রাঙ্গণে একটা হুলুস্থূল পড়িয়া গেল৷ মেয়েদের ঘর হইতেও সকলকে বাহির হইতে আদেশ দেওয়ায় দুই একজন মহিলা অতি বিষণ্ণ্ বদনে ভয়বিহ্বল চিত্তে আমাদের দিকে অগ্রসর হইতেছেন দেখিয়া আমি ঐ দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুই এক পদ অগ্রসর হইলে, একটি মিলিটারী সাহেব আমার বুক সোজা হাতখানেক দূরে তাহার রিভলভার ধরিয়া সজোরে বলিয়া উঠিলWhere are you going? (তুমি কোথায় যাইতেছ?)
আমি থতমতভাবে দাঁড়াইয়া বলিলাম, ‘‘Ladies are there, I am going to see them.’’ (মেয়েরা যেখানে আছে, আমি তাহাদের দেখিতে যাইতেছি)৷ সে তৎক্ষণাৎ আবার ধমক দিয়া বলিল—‘‘Stop, Don’t Proceed further. They would be coming here.’’ (থাম, আর অগ্রসর হইও না, তাহারা এখানেই আসিবে৷) ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট রায় সাহেব সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, রায় সাহেব রাজেন্দ্রলাল ব্যানার্জী ও অন্যান্য অনেকে আমাদের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন৷ সুরেনবাবুকে দেখিয়া পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট মিঃ ক্যাম্প (Mr. Kamp) বলিয়া উঠিলেন,‘‘Hello Suren, why are you here?’’ (সুরেন, তুমি এখানে কেন?)
আমরা ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়া অতি সরুপথে সদলবলে হাঁটিয়া ঐ হ্রদ প্রথম অবস্থায় কয়েকবার দেখিয়া আসিয়াছি৷ এখনও কেহ কেহ তাহা দেখিতে যায়৷ আশ্রমের পশ্চিম দিকে প্রায় দুই মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অতি মনোরম৷ উপরের পাহাড়ের বাড়ির বারান্দায় এমনকি সমস্ত দরজা খুলিয়া দিলে যে কোনও কামরায় বসিয়া অসীম সমুদ্রের নীল জলের এবং মাঝে মাঝে জাহাজ ও নৌকা চলাচলের দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়৷ সূর্য্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশ নানা বর্ণে রঞ্জিত করিয়া আস্তে আস্তে সূর্য্যদেবের অতল সমুদ্রে অবগাহন ও নিমজ্জনের দৃশ্য বর্ণনাতীত ও মনোমুগ্ধকর৷…
কৈবল্যধাম আশ্রম পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন হইতে মাত্র ১১/৪ মাইল দূরে অবস্থিত এবং রেল রাস্তা আশ্রমের জমির সংলগ্ণ পশ্চিম দিক দিয়া উত্তর দক্ষিণে চলিয়া গিয়াছে৷
আশ্রম প্রতিষ্ঠার সাত বৎসর পরে ৩১.৮.৩৭ ইং (১৩৪৪ সনের ভাদ্রমাসের মধ্যভাগে) কৈবল্যধামে একটি স্টেশন করার জন্য আমরা নোয়াখালি হইতে তদানীন্তন A. B. Railway-এর কর্ত্তৃপক্ষের নিকট দরখাস্ত পাঠাই৷ তাহার ফলে দুর্গাপূজা উৎসব উপলক্ষে তাঁহারা ৪/৫ দিনের জন্য উভয়দিকের গাড়ি কৈবল্যধামে থামাইবার ব্যবস্থা করেন৷ তাহাতে যথেষ্ট যাত্রী গমনাগমন করিয়াছে দেখিয়া কয়েক বৎসর ‘কৈবল্যধাম’ নামে অস্থায়ী স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বিগত মহাযুদ্ধের সময় ঐ স্টেশন তুলিয়া দেওয়া হইয়াছিল৷ ১৯৫৮ ইং সনের সেপ্ঢেম্বর মাস হইতে উহা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং এখন পূর্ব্বাপেক্ষা অনেক বেশীসংখ্যক ব্যক্তি ঐ স্টেশন হইতে যাতায়াতের সুযোগ গ্রহণ করিতেছে৷…
১৩৪১ সনের ফাল্গুন মাসে আশ্রমের প্রথম মোহন্ত হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের দেহত্যাগের পর তাঁহার স্মৃতিরক্ষার্থে ১৩৪৭ সনে ‘হর-গৌরী’ নামে একটি দোতলা বাড়ি নাটমন্দিরের দক্ষিণধারে নির্ম্মাণ করা হয়৷
‘হর-গৌরী’ মন্দির হইতে উপরের পাহাড়ে উঠিবার প্রশস্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে বেল, বকুল, চঁাপাফুল, নিম, আমলকী, আমরুজ, তেলসর, কাঁঠাল ও নানা সতেজ সুন্দর বন্য বৃক্ষরাজিতে সুসজ্জিত হইয়া রহিয়াছে৷ উপরের পাহাড়ে উঠিবার সময় রাস্তার বাম পার্শ্বে পাহাড়ের পাদদেশে নীচ হইতে উত্থিত ঝরণার জলে পূর্ণ শ্রীকামশ্রীকুণ্ড অবস্থিত৷ ইহার জল খুবই পবিত্র ও সুস্বাদু৷…
প্রসঙ্গক্রমে ১৩৩৯ সনের দুর্গাপূজার দিন আশ্রমবাসীদের উপর যে এক আকস্মিক ও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত উৎপাত হইয়াছিল তাহার উল্লেখ করিতেছি৷ তখন পূজার সময় আশ্রমে যাত্রীসংখ্যা খুব কমই ছিল, তত্রাচ স্ত্রী ও পুরুষ যাত্রীদের ঘর পূর্ণ হইয়া যাওয়াতে অনেক যাত্রীকে নাটমন্দিরে মশারী খাটাইয়া রাত্রে শুইতে হইয়াছিল৷
রাত্রি প্রায় ১২ টার সময় দুইজন মিলিটারী সাহেব এবং আর একজন সাহেব যাহাকে পরে চট্টগ্রামের পুলিশ সাহেব বলিয়া জানিতে পারিয়াছি হঠাৎ অনেক গুর্খা সৈন্য ও চট্টগ্রাম থানার মুসলমান দারোগা সহ আশ্রম পাহাড়ে, তাড়াতাড়ি উঠিয়া আসিয়া আমি, আমার দাদা সুধাময় দত্ত, শ্রীখিল রায়, শ্রীক্ষয় কুমার বসু ইত্যাদি আমরা যাহারা নাটমন্দিরের দক্ষিণ পার্শ্বের পানের ও ফলের দোকানে বসিয়া গল্প করিতেছিলাম, তাহাদিগকে উচ্চৈঃস্বরে বলিল, ‘Hands up’– আমরা সকলেই হতভম্ব হইয়া দুই হাত উঁচু করিয়া দাঁড়াইলাম৷ নাটমন্দিরে নিদ্রিত ভদ্রলোকদের মশারী সৈন্যগণ ছিঁড়িয়া লণ্ডভণ্ড করিয়া তাহাদিগকে অতি রূঢ়ভাবে জাগাইয়া তুলিল৷
কয়েকজন সৈন্য ঠাকুর মন্দিরের পূর্ব্ব কোঠায় নিদ্রিত মোহন্ত হরিদাদাকে তুলিয়া আমাদের নিকট নিয়া আসিল৷ তিনি তখন একেবারে অপ্রস্তুত৷ দুই এক মিনিটের মধ্যে আশ্রম প্রাঙ্গণে একটা হুলুস্থূল পড়িয়া গেল৷ মেয়েদের ঘর হইতেও সকলকে বাহির হইতে আদেশ দেওয়ায় দুই একজন মহিলা অতি বিষণ্ণ্ বদনে ভয়বিহ্বল চিত্তে আমাদের দিকে অগ্রসর হইতেছেন দেখিয়া আমি ঐ দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুই এক পদ অগ্রসর হইলে, একটি মিলিটারী সাহেব আমার বুক সোজা হাতখানেক দূরে তাহার রিভলভার ধরিয়া সজোরে বলিয়া উঠিলWhere are you going? (তুমি কোথায় যাইতেছ?)
আমি থতমতভাবে দাঁড়াইয়া বলিলাম, ‘‘Ladies are there, I am going to see them.’’ (মেয়েরা যেখানে আছে, আমি তাহাদের দেখিতে যাইতেছি)৷ সে তৎক্ষণাৎ আবার ধমক দিয়া বলিল—‘‘Stop, Don’t Proceed further. They would be coming here.’’ (থাম, আর অগ্রসর হইও না, তাহারা এখানেই আসিবে৷) ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট রায় সাহেব সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, রায় সাহেব রাজেন্দ্রলাল ব্যানার্জী ও অন্যান্য অনেকে আমাদের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন৷ সুরেনবাবুকে দেখিয়া পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট মিঃ ক্যাম্প (Mr. Kamp) বলিয়া উঠিলেন,‘‘Hello Suren, why are you here?’’ (সুরেন, তুমি এখানে কেন?)
আরও পড়ুন:
দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২
ভারতীয় সাহিত্যের এই সাধক যখনই কলম ধরেছেন বাংলাভাষা ততই পদ্ধতিগতভাবে এগিয়েছে/২
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২১: ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ শুটিংয়ে সিউড়ির বাঁশবনে দু’ দুটি বাঘ আনিয়েছিলেন সত্যজিৎ
বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ, পর্ব-১৪: সত্যজিৎ রায়ের চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কান্তিভূষণ বক্সী
সুরেনবাবু বলিলেন,‘‘This is the Asram of my Spiritual Guide.’’ (ইহা আমাদের গুরুদেবের আশ্রম)৷ তখন পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট আমাদিগকে দেখাইয়া বলিলেন,‘‘Who are they?’’ (এরা কারা?) তিনি উত্তর না দিতেই থানার দারোগা বলিয়া ফেলিলেন—‘‘They are clerks of Railway Company.’’ (এঁরা রেল কোম্পানীর কেরাণী)৷ কিন্তু সুরেনবাবু আমাকে নোয়াখালি জিলার গভর্ণমেন্ট প্লিডার, রাজেনবাবুকে গভর্ণমেন্ট সার্ভে সুকলের প্রিন্সিপাল(Principal of Government Survey School) ইত্যাদি বলিতেই পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের ইঙ্গিতে মিলিটারীদের ধরপাকড় থামিয়া গেল, মেয়েদের ঘর হইতে আর কাহারও বাহির হইতে হইল না এবং যে দুই একজন বাহির হইয়াছিলেন, তাঁহারাও পুনঃ ঘরে প্রবেশ করিলেন৷
পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের সঙ্গে সুরেনবাবুর কথোপকথনে বুঝিতে পারিলাম যে তাঁহারা এখানে রাজবিদ্রোহীদের ষড়যন্ত্রের খবর পাইয়াছিলেন৷ আমি তখন উপরের পাহাড়ের বাড়ির দিকে দেখাইয়া বলিলাম ‘‘Apart from my position as Govt. Pleader, do you think I am constructing this building at a huge expense to be forfeited by Govt.?’’ (সরকারী উকিল হিসেবে আমার দায়িত্ব ছাড়াও, তোমার কি মনে হয় যে, এত খরচ করিয়া সরকারের দ্বারা বাজেয়াপ্ত হওয়ার জন্য আমি এই বাড়ি তৈয়ার করিতেছি?) ঐরূপ রাজেনবাবু আদিও কিছু কিছু বলিলেন৷ তাহাতে তাহারা নিশ্চিন্ত হইয়া আমাদের সঙ্গে ভদ্রভাবেই আলাপ করিতে লাগিল৷
আমরা তাহাদিগকে ডাবের জল ও ফল, মূলাদি খাওয়াইয়া বিদায় করিলাম৷ পরে জানিলাম যে, গুর্খা সৈন্যগণ উভয় পাহাড়ই রাত্রে ঘিরিয়া ফেলিয়াছিল এবং প্রাতে উপরের পাহাড়ের দালানের এক কামরার মেঝেতে নরম সিমেন্টের উপর বুটের চিহ্ণ পাওয়া গিয়াছিল৷ তখন একতলার সকল কামরার মেঝেতে ভালরূপে সিমেন্টের কাজ শেষ হয় নাই৷
কোনও দুষ্ট প্রকৃতির সরকারী গোয়েন্দার মিথ্যা রিপোর্টের উপর নির্ভর করিয়াই আমাদের উপর ঐ হামলা পুলিশ কর্ত্তৃপক্ষ মিলিটারীর সাহায্যে করিয়াছিল বলিয়া আমরা পরে জানিতে পারিয়াছিলাম৷ ঐ ঘটনার পরে আর কখনও ব্রিটিশ কি পাকিস্তান গভর্ণমেন্ট হইতে আশ্রমে কোন উপদ্রব হয় নাই৷ বরং সরকার পক্ষ হইতে আমরা সকল প্রকারের সাহায্য ও সহানুভূতি পাইয়া আসিতেছি৷
পূর্ব্বোক্ত আকস্মিক মিলিটারী উপদ্রবের কয়েকদিন পরে আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট উপস্থিত হইলে তিনি একটু মৃদু হাসিয়া বলিলেন, ‘‘এবার পূজায় বুঝি গোলমাল হইয়াছিল! আর একটু বাড়াবাড়ি করিলেই বুঝা যাইত কি হয়৷ জয়ন্তী মা ঐ আশ্রম রক্ষা করিতেছেন৷’’
শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ সময় বহু দূরে থাকা সত্ত্বেও তিনি যে ঐ সময়েই সমস্তই প্রত্যক্ষ করিয়াছেন সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহে থাকায় আমি তাঁহাকে ওই সম্বন্ধে বিস্তারিত আর কিছুই জানাই নাই৷
১৩৪৯ বাংলা সনের বৈশাখ মাসে জাপানীরা যখন এরোপ্লেন হইতে চট্টগ্রাম শহরে ও জেটিতে বোমা নিক্ষেপ করে তখন এই আশ্রমের এক বিষম সংকটের সময় গিয়াছে৷ ঐ বোমা বিস্ফোরণের ফলে ঠাকুর মন্দির আদিও কাঁপিয়া উঠায় আশ্রমবাসী মাত্রই স্থানান্তরে যাওয়ার জন্য স্বভাবতঃ ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল৷
বিশেষত সেই সময় উপরের পাহাড়ের দালান আমাদের বিশেষ আপত্তি সত্ত্বেও সরকার রিকুইজিশন করিয়া মিলিটারী ঘাঁটিতে পরিণত করিয়াছিল৷ শ্রীশ্রীঠাকুরের আশ্বাসবাণী পাওয়াতেই স্ত্রীলোকদের কয়েকজন ছাড়া আশ্রমবাসী কেহই ঐরূপ মারাত্মক আশঙ্কা সত্ত্বেও আশ্রম ত্যাগ করেন নাই৷ স্ত্রীলোকদের মধ্যে পরমশ্রদ্ধেয়া সরোজিনী দিদি আশ্রমেই থাকিয়া গেলেন৷’’
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের সঙ্গে সুরেনবাবুর কথোপকথনে বুঝিতে পারিলাম যে তাঁহারা এখানে রাজবিদ্রোহীদের ষড়যন্ত্রের খবর পাইয়াছিলেন৷ আমি তখন উপরের পাহাড়ের বাড়ির দিকে দেখাইয়া বলিলাম ‘‘Apart from my position as Govt. Pleader, do you think I am constructing this building at a huge expense to be forfeited by Govt.?’’ (সরকারী উকিল হিসেবে আমার দায়িত্ব ছাড়াও, তোমার কি মনে হয় যে, এত খরচ করিয়া সরকারের দ্বারা বাজেয়াপ্ত হওয়ার জন্য আমি এই বাড়ি তৈয়ার করিতেছি?) ঐরূপ রাজেনবাবু আদিও কিছু কিছু বলিলেন৷ তাহাতে তাহারা নিশ্চিন্ত হইয়া আমাদের সঙ্গে ভদ্রভাবেই আলাপ করিতে লাগিল৷
আমরা তাহাদিগকে ডাবের জল ও ফল, মূলাদি খাওয়াইয়া বিদায় করিলাম৷ পরে জানিলাম যে, গুর্খা সৈন্যগণ উভয় পাহাড়ই রাত্রে ঘিরিয়া ফেলিয়াছিল এবং প্রাতে উপরের পাহাড়ের দালানের এক কামরার মেঝেতে নরম সিমেন্টের উপর বুটের চিহ্ণ পাওয়া গিয়াছিল৷ তখন একতলার সকল কামরার মেঝেতে ভালরূপে সিমেন্টের কাজ শেষ হয় নাই৷
কোনও দুষ্ট প্রকৃতির সরকারী গোয়েন্দার মিথ্যা রিপোর্টের উপর নির্ভর করিয়াই আমাদের উপর ঐ হামলা পুলিশ কর্ত্তৃপক্ষ মিলিটারীর সাহায্যে করিয়াছিল বলিয়া আমরা পরে জানিতে পারিয়াছিলাম৷ ঐ ঘটনার পরে আর কখনও ব্রিটিশ কি পাকিস্তান গভর্ণমেন্ট হইতে আশ্রমে কোন উপদ্রব হয় নাই৷ বরং সরকার পক্ষ হইতে আমরা সকল প্রকারের সাহায্য ও সহানুভূতি পাইয়া আসিতেছি৷
পূর্ব্বোক্ত আকস্মিক মিলিটারী উপদ্রবের কয়েকদিন পরে আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট উপস্থিত হইলে তিনি একটু মৃদু হাসিয়া বলিলেন, ‘‘এবার পূজায় বুঝি গোলমাল হইয়াছিল! আর একটু বাড়াবাড়ি করিলেই বুঝা যাইত কি হয়৷ জয়ন্তী মা ঐ আশ্রম রক্ষা করিতেছেন৷’’
শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ সময় বহু দূরে থাকা সত্ত্বেও তিনি যে ঐ সময়েই সমস্তই প্রত্যক্ষ করিয়াছেন সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহে থাকায় আমি তাঁহাকে ওই সম্বন্ধে বিস্তারিত আর কিছুই জানাই নাই৷
১৩৪৯ বাংলা সনের বৈশাখ মাসে জাপানীরা যখন এরোপ্লেন হইতে চট্টগ্রাম শহরে ও জেটিতে বোমা নিক্ষেপ করে তখন এই আশ্রমের এক বিষম সংকটের সময় গিয়াছে৷ ঐ বোমা বিস্ফোরণের ফলে ঠাকুর মন্দির আদিও কাঁপিয়া উঠায় আশ্রমবাসী মাত্রই স্থানান্তরে যাওয়ার জন্য স্বভাবতঃ ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল৷
বিশেষত সেই সময় উপরের পাহাড়ের দালান আমাদের বিশেষ আপত্তি সত্ত্বেও সরকার রিকুইজিশন করিয়া মিলিটারী ঘাঁটিতে পরিণত করিয়াছিল৷ শ্রীশ্রীঠাকুরের আশ্বাসবাণী পাওয়াতেই স্ত্রীলোকদের কয়েকজন ছাড়া আশ্রমবাসী কেহই ঐরূপ মারাত্মক আশঙ্কা সত্ত্বেও আশ্রম ত্যাগ করেন নাই৷ স্ত্রীলোকদের মধ্যে পরমশ্রদ্ধেয়া সরোজিনী দিদি আশ্রমেই থাকিয়া গেলেন৷’’
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
* বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে (Bangladesher Jagrata Mondire Mondire) : সুমন গুপ্ত (Suman Gupta), বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক। ।