শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি।
ফরিদপুর থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে মাদারিপুর উপজেলার (জেলা গোপালগঞ্জ) বাজিতপুরে ১৮৯৬ সালে ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ জন্মগ্রহণ করেন৷ যখন এত কাছে এসেছি প্রণবানন্দজির জন্মভিটা দেখার বড় সাধ জেগেছিল৷ বাসের কনডাকটরের কাছে জানতে পারলাম আমাকে ‘সাধুর ব্রিজ’-এ নেমে প্রণবানন্দজির জন্মভিটা ও প্রণব মঠে যেতে হবে৷ প্রণবানন্দজিকে ওই অঞ্চলের মানুষরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ‘সাধু’ সম্বোধন করতেই অভ্যস্ত৷ তাই কুমার নদের ওপর সেতুটি ‘সাধুর ব্রিজ’ নামে পরিচিত৷
আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি৷ এই গোপালগঞ্জ জেলারই ‘টুঙ্গিপাড়া’ নামে এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে কবর দেওয়া হয়৷ এ গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ সেখানে একটি সুন্দর স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করা হয়েছে৷
পথে যেতে যেতে দু’চোখে এই ভুবনের কত ছবিই না ধরা দেয়৷ সবুজ মাঠের নয়নকাড়া বিন্যাস দেখতে দেখতে ফরিদপুর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ‘ভাঙা’ নামে এক জায়গায় পৌঁছলাম৷ ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে তেষ্টা মেটালাম৷ আজ তুলনামূলকভাবে গরম একটু বেশি৷ কনডাকটর বলল, এখানে আমাদের বাস দশ-পনেরো মিনিট দাঁড়াবে৷ কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে অনায়াসে মিষ্টির দোকানে গিয়ে খেয়ে আসতে পারি৷ হাত-পা একটু খেলানোর জন্যই বাস থেকে নেমে মিনিট পাঁচ-সাত কাছেই একটু হাঁটাহাঁটি করে আবার বাসে এসে বসলাম৷
হঠাৎ দেখলাম, শাখা-সিঁদুর পরা মাঝবয়সি এক মহিলা আমাদের বাসে উঠে অর্থসাহায্য চাইছে৷ দেখে মনে হল, ভদ্রঘরের বউ৷ নাম জিজ্ঞাসা করলাম৷ বলল, দুর্গারানি ভট্টাচার্য৷ এরপর মহিলা আমাকে হেসে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমাগো সম্প্রদায়ের লোক বইলাই তো আপনারে মনে হইতাছে৷ বাড়ি কোথায় আপনার?’ বললাম, ‘কলকাতায় থাকি’৷ এবার একটু অবাক হয়ে বলল, ‘সে তো মেলা দূরদেশ৷ আমিও শুনছি কলিকাতার কথা৷’
কেন আজ রাস্তায় নেমে ভিক্ষে করতে হচ্ছে দুর্গারানি ভট্টাচার্যকে? সে যে বড়ই বেদনার কথা৷ ভদ্রমহিলার স্বামী পরিতোষ ভট্টাচার্য অসুস্থ৷ মাথায় আঘাত পেয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন৷ স্বামীর চিকিৎসার জন্য তাদের ভিটাবাড়িও বন্ধক রাখতে হয়েছে৷ দুটো ছেলে-মেয়েই ছোট৷ গ্রামের স্কুলে পড়াশুনো করে৷ সংসার চালানোর জন্য আর কোনো পথ না পেয়ে শেষপর্যন্ত ভিক্ষের পথ ধরতে হয়েছে দুর্গারানিকে৷ করুণ মুখে বলল, ‘লাজ-লজ্জার মাথা খাইয়া পথে নামতে বাধ্য হইছি দাদা৷ কী করুম কন? কে খাওয়াইব?’ শুনলাম, মহিলার এক দেওর কলকাতায় থাকে৷ কিন্তু দাদা-বউদির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি৷
সেই মুহূর্তে মনে হল, এক ভিনদেশি বোন আমারই সামনে সাহায্যের হাত পেতে দাঁড়িয়ে৷ পকেট থেকে গোটা পঞ্চাশেক টাকা বের করে দুর্গারানির হাতে দিয়ে বললাম, ‘আপনার স্বামী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনাই করি৷’
বাসের কোনও কোনও যাত্রী দুর্গারানিকে সামান্য কিছু অর্থসাহায্য করলেন৷ কেউ আবার ফিরেও তাকালেন না৷ সমস্ত দেশেই কি হৃদয়হীন মানুষদের একইরকম হাবভাব? বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় ছলছল চোখে দুর্গারানি ভট্টাচার্য আমাকে বলেছিল, ‘আপনার সাহায্যের কথা দাদা কোনোদিন ভুলুম না৷’
এক অভাবী গৃহবধূর কতখানি কৃতজ্ঞতাবোধ!
আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি৷ এই গোপালগঞ্জ জেলারই ‘টুঙ্গিপাড়া’ নামে এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে কবর দেওয়া হয়৷ এ গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ সেখানে একটি সুন্দর স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করা হয়েছে৷
পথে যেতে যেতে দু’চোখে এই ভুবনের কত ছবিই না ধরা দেয়৷ সবুজ মাঠের নয়নকাড়া বিন্যাস দেখতে দেখতে ফরিদপুর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ‘ভাঙা’ নামে এক জায়গায় পৌঁছলাম৷ ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে তেষ্টা মেটালাম৷ আজ তুলনামূলকভাবে গরম একটু বেশি৷ কনডাকটর বলল, এখানে আমাদের বাস দশ-পনেরো মিনিট দাঁড়াবে৷ কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে অনায়াসে মিষ্টির দোকানে গিয়ে খেয়ে আসতে পারি৷ হাত-পা একটু খেলানোর জন্যই বাস থেকে নেমে মিনিট পাঁচ-সাত কাছেই একটু হাঁটাহাঁটি করে আবার বাসে এসে বসলাম৷
হঠাৎ দেখলাম, শাখা-সিঁদুর পরা মাঝবয়সি এক মহিলা আমাদের বাসে উঠে অর্থসাহায্য চাইছে৷ দেখে মনে হল, ভদ্রঘরের বউ৷ নাম জিজ্ঞাসা করলাম৷ বলল, দুর্গারানি ভট্টাচার্য৷ এরপর মহিলা আমাকে হেসে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমাগো সম্প্রদায়ের লোক বইলাই তো আপনারে মনে হইতাছে৷ বাড়ি কোথায় আপনার?’ বললাম, ‘কলকাতায় থাকি’৷ এবার একটু অবাক হয়ে বলল, ‘সে তো মেলা দূরদেশ৷ আমিও শুনছি কলিকাতার কথা৷’
কেন আজ রাস্তায় নেমে ভিক্ষে করতে হচ্ছে দুর্গারানি ভট্টাচার্যকে? সে যে বড়ই বেদনার কথা৷ ভদ্রমহিলার স্বামী পরিতোষ ভট্টাচার্য অসুস্থ৷ মাথায় আঘাত পেয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন৷ স্বামীর চিকিৎসার জন্য তাদের ভিটাবাড়িও বন্ধক রাখতে হয়েছে৷ দুটো ছেলে-মেয়েই ছোট৷ গ্রামের স্কুলে পড়াশুনো করে৷ সংসার চালানোর জন্য আর কোনো পথ না পেয়ে শেষপর্যন্ত ভিক্ষের পথ ধরতে হয়েছে দুর্গারানিকে৷ করুণ মুখে বলল, ‘লাজ-লজ্জার মাথা খাইয়া পথে নামতে বাধ্য হইছি দাদা৷ কী করুম কন? কে খাওয়াইব?’ শুনলাম, মহিলার এক দেওর কলকাতায় থাকে৷ কিন্তু দাদা-বউদির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি৷
সেই মুহূর্তে মনে হল, এক ভিনদেশি বোন আমারই সামনে সাহায্যের হাত পেতে দাঁড়িয়ে৷ পকেট থেকে গোটা পঞ্চাশেক টাকা বের করে দুর্গারানির হাতে দিয়ে বললাম, ‘আপনার স্বামী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই কামনাই করি৷’
বাসের কোনও কোনও যাত্রী দুর্গারানিকে সামান্য কিছু অর্থসাহায্য করলেন৷ কেউ আবার ফিরেও তাকালেন না৷ সমস্ত দেশেই কি হৃদয়হীন মানুষদের একইরকম হাবভাব? বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় ছলছল চোখে দুর্গারানি ভট্টাচার্য আমাকে বলেছিল, ‘আপনার সাহায্যের কথা দাদা কোনোদিন ভুলুম না৷’
এক অভাবী গৃহবধূর কতখানি কৃতজ্ঞতাবোধ!
‘সাধুর ব্রিজ’-এ পৌঁছনোর সময় গড়িয়ে গিয়েছে দেখে কনডাকটরকে একবার জিজ্ঞাসা করলাম — আর কতদূর ভাই? সে আমাকে অভয়দানের ভঙ্গিতে বলল, ‘বসেন’৷ এরপর আরও দু-একবার সাধুর ব্রিজের কথা জিজ্ঞাসা করলে কনডাকটরের মুখে একই উত্তর ‘বসেন’৷
মনে মনে বললাম, বসেই তো আছি৷ এই দেশের বাস-কনডাকটরদের মুখে যদি ‘বসেন’ কথাটি শোনেন, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনাকে অপেক্ষা করার জন্য বলা হচ্ছে৷
বাংলাদেশে চলার পথে কখনও সহযাত্রী বা সহযাত্রিণী অথবা নতুন কারও সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের পর তাঁদের মুখে ‘সমস্যা নাই’ কথাটা মাঝেমাঝেই শুনেছি৷ এর অর্থ-‘নো প্রবলেম’৷ বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি শব্দ উচ্চারণই করেন না৷
‘টেকেরহাট’ নামে এক জায়গায় বাস দাঁড়াল৷ রাস্তার ডানদিকে বেশ কয়েকটা ওষুধের দোকান—কলিকাতা হারবাল মেডিকেল, মাদ্রাজ হারবাল সেন্টার প্রভৃতি৷ কাঠের ফার্নিচারের দোকান ‘স্বপন উড মেকার’৷ মনে হল, এসব অঞ্চলে হিন্দু ব্যবসায়ীর সংখ্যা মন্দ নয়৷
টেকেরহাটে ঢোকার আগে ‘সাহা ব্রাদার্স’-এর সিমেন্টের বিরাট গোডাউন নদীর ধারে৷ দুলালের ভুটভুটি থেকে সিমেন্টের বস্তা নামানো হচ্ছে৷ টেকেরহাট বেশ জমজমাট জায়গা৷ সেখান থেকে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কনডাকটর আমাকে বলল, ‘উইঠ্যা আসেন৷ আপনার সাধুর ব্রিজ আইয়া পড়ল৷’ ড্রাইভারকে বলল, ‘সাধুর ব্রিজে গাড়ি রাখেন (গাড়ি বাঁধুন)৷’
ব্রিজে ওঠার মুখেই বাসস্ট্যান্ড৷ রাস্তা পার হয়ে একটা মোড়৷ সেখানেই শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজির নামাঙ্কিত একটি উঁচু তোরণ৷ প্রণব মঠের কথা বলতেই এক ইজিট্যাক্সিচালক সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘আমার গাড়িতে উইঠ্যা আসেন৷ আমি আপনারে আশ্রমে পৌঁছাইয়া দিমু৷’
ওই ইজিট্যাক্সিতে এক যুবতী বসেছিলেন৷ শ্যামলা রং৷ মিষ্টি দেখতে৷ হাতে বই-খাতা৷ যুবতী নিজে থেকেই আমাকে বললেন, ‘আমি প্রায়ই প্রণব মঠে যাই৷ আপনারে দেখাইয়া দিমু৷ এখান থিক্যা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছাইয়া যাইবেন৷’
আমি যুবতীকে ‘আপনি’ সম্বোধন করায় বললেন, ‘আমারে ‘তুমি’ কইরা কইলেই ভালো লাগব৷ আপনি আমার থিক্যা অনেক বড়৷’
ওর নাম দোলন ভক্ত৷ প্রণব মঠ থেকে আরও এক-দেড় কিমি দূরে চৌরসি মধ্যপাড়ায় দোলনদের বাড়ি৷ বাবা প্রদীপ ভক্তের শাঁখার ব্যাবসা৷ ওরা তিন বোন, এক ভাই৷ মা আছেন৷ চৌরশি মধ্যপাড়ায় ৫০০ ঘর হিন্দুর বাস৷
একজন অচেনা লোকের সঙ্গে খোলা মনে কথাবার্তা বলছে মেয়েটি৷ দোলনকে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগল৷ ওর এক দিদি প্রভা ঢাকায় হস্টেলে থেকে পড়াশুনো করে৷ দোলনেরও ঢাকার কোনো কলেজে পড়াশুনোর ইচ্ছা৷
উত্তরবাহিনী কুমার নদের একটি শাখা প্রণব আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে৷ বাজিতপুরের এই অঞ্চলে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ৷ দিনদুপুরেও একটানা ঝিল্লিরব৷ ঝিল্লি ডাকে ঝোপে-ঝাড়ে৷ মোটামুটি ক্ষতহীন সরু পিচের রাস্তার ডান হাতে একটু লালচে রঙের বাংলো ধরনের একতলা বাড়ি৷ সেদিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রথমে করজোড়ে মাথা নিচু করল দোলন৷ বলল, ‘ওই দ্যাখেন শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের জন্মভিটা৷’ আমিও প্রণাম করলাম৷
মনে মনে বললাম, বসেই তো আছি৷ এই দেশের বাস-কনডাকটরদের মুখে যদি ‘বসেন’ কথাটি শোনেন, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনাকে অপেক্ষা করার জন্য বলা হচ্ছে৷
বাংলাদেশে চলার পথে কখনও সহযাত্রী বা সহযাত্রিণী অথবা নতুন কারও সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের পর তাঁদের মুখে ‘সমস্যা নাই’ কথাটা মাঝেমাঝেই শুনেছি৷ এর অর্থ-‘নো প্রবলেম’৷ বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি শব্দ উচ্চারণই করেন না৷
‘টেকেরহাট’ নামে এক জায়গায় বাস দাঁড়াল৷ রাস্তার ডানদিকে বেশ কয়েকটা ওষুধের দোকান—কলিকাতা হারবাল মেডিকেল, মাদ্রাজ হারবাল সেন্টার প্রভৃতি৷ কাঠের ফার্নিচারের দোকান ‘স্বপন উড মেকার’৷ মনে হল, এসব অঞ্চলে হিন্দু ব্যবসায়ীর সংখ্যা মন্দ নয়৷
টেকেরহাটে ঢোকার আগে ‘সাহা ব্রাদার্স’-এর সিমেন্টের বিরাট গোডাউন নদীর ধারে৷ দুলালের ভুটভুটি থেকে সিমেন্টের বস্তা নামানো হচ্ছে৷ টেকেরহাট বেশ জমজমাট জায়গা৷ সেখান থেকে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কনডাকটর আমাকে বলল, ‘উইঠ্যা আসেন৷ আপনার সাধুর ব্রিজ আইয়া পড়ল৷’ ড্রাইভারকে বলল, ‘সাধুর ব্রিজে গাড়ি রাখেন (গাড়ি বাঁধুন)৷’
ব্রিজে ওঠার মুখেই বাসস্ট্যান্ড৷ রাস্তা পার হয়ে একটা মোড়৷ সেখানেই শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজির নামাঙ্কিত একটি উঁচু তোরণ৷ প্রণব মঠের কথা বলতেই এক ইজিট্যাক্সিচালক সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘আমার গাড়িতে উইঠ্যা আসেন৷ আমি আপনারে আশ্রমে পৌঁছাইয়া দিমু৷’
ওই ইজিট্যাক্সিতে এক যুবতী বসেছিলেন৷ শ্যামলা রং৷ মিষ্টি দেখতে৷ হাতে বই-খাতা৷ যুবতী নিজে থেকেই আমাকে বললেন, ‘আমি প্রায়ই প্রণব মঠে যাই৷ আপনারে দেখাইয়া দিমু৷ এখান থিক্যা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছাইয়া যাইবেন৷’
আমি যুবতীকে ‘আপনি’ সম্বোধন করায় বললেন, ‘আমারে ‘তুমি’ কইরা কইলেই ভালো লাগব৷ আপনি আমার থিক্যা অনেক বড়৷’
ওর নাম দোলন ভক্ত৷ প্রণব মঠ থেকে আরও এক-দেড় কিমি দূরে চৌরসি মধ্যপাড়ায় দোলনদের বাড়ি৷ বাবা প্রদীপ ভক্তের শাঁখার ব্যাবসা৷ ওরা তিন বোন, এক ভাই৷ মা আছেন৷ চৌরশি মধ্যপাড়ায় ৫০০ ঘর হিন্দুর বাস৷
একজন অচেনা লোকের সঙ্গে খোলা মনে কথাবার্তা বলছে মেয়েটি৷ দোলনকে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগল৷ ওর এক দিদি প্রভা ঢাকায় হস্টেলে থেকে পড়াশুনো করে৷ দোলনেরও ঢাকার কোনো কলেজে পড়াশুনোর ইচ্ছা৷
উত্তরবাহিনী কুমার নদের একটি শাখা প্রণব আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে৷ বাজিতপুরের এই অঞ্চলে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ৷ দিনদুপুরেও একটানা ঝিল্লিরব৷ ঝিল্লি ডাকে ঝোপে-ঝাড়ে৷ মোটামুটি ক্ষতহীন সরু পিচের রাস্তার ডান হাতে একটু লালচে রঙের বাংলো ধরনের একতলা বাড়ি৷ সেদিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রথমে করজোড়ে মাথা নিচু করল দোলন৷ বলল, ‘ওই দ্যাখেন শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজের জন্মভিটা৷’ আমিও প্রণাম করলাম৷
আরও পড়ুন:
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৩: বসুন্ধরা এবং…
মাস্কারা লাগিয়েও কাজের কাজ হচ্ছে না? তাহলে চোখের পাতা ঘন করতে ঘরোয়া উপায়ে এগুলি করতে পারেন
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১১: মুক্তি প্রতীক্ষায় তপস্বিনী অহল্যা
দোলন বলল, ‘আর একটু আউগাইলেই প্রণব মঠ৷ বরং আপনি আগে মঠে যাইয়া ফিরবার পথে স্বামীজি মহারাজের জন্মস্থান দর্শন করেন৷’
বাঁদিকে ছোট একটা কংক্রিটের সেতু পেরলেই প্রণব মঠ৷ দোলনও ইজিট্যাক্সি থেকে নেমে হাসিমুখে বলল, ‘চলেন আপনারে মঠে পৌঁছাইয়া দিয়া আসি৷’
দশ-বারো একর জায়গা নিয়ে মঠ৷ উঁচু প্রাচীরে ঘেরা৷ স্বামী প্রণবানন্দজি (সন্ন্যাসপূর্ব নাম বিনোদ ব্রহ্মচারী) যে পুষ্করিণীতে স্নান করতেন সেটি বেশ ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে৷ সমাধি মন্দিরের দোতলায় স্বামী প্রণবানন্দজিকে সমাধি দেওয়া হয়৷ সমাধি মন্দিরটি দেখার মতো৷ তাঁর ব্যবহৃত খাট-বিছানা ও নানা জিনিসপত্র রয়েছে দোতলার একটি ঘরে৷
একতলায় যজ্ঞস্থল, ধ্যানমন্দির, সন্ন্যাসীদের থাকবার জায়গা ও অতিথি- নিবাস৷ নতুন আরেকটি বড় অতিথি-নিবাস তৈরি করা হয়েছে৷ আর একদিকে দেখলাম, চাষবাস হচ্ছে৷ মঠের ব্রহ্মচারী শংকরই আমাকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখালেন৷ দুপুরে তৃপ্তি করে প্রসাদ খেলাম৷ ভাত-ডাল আর একটা সবজি৷ দোলনও খেল৷ কিন্তু খাওয়ার পর কিছুতেই আমাকে খাবারের থালা ধুতে দিল না৷ নিজেই খুশিমনে দুটো থালা ধুয়ে দিল৷
মঠের প্রধান স্বামী মানবানন্দজি মহারাজ আশ্রমের কাজে বাজিতপুরের বাইরে৷ একতলায় পুষ্করিণীর পাশে বড় নাটমন্দির৷ সেখানে পাথরের বেদির ওপর স্বামী প্রণবানন্দজির বিরাট তৈলচিত্র৷ এই তৈলচিত্রের খানিকটা তফাতে বড় একটা নৌকা ও লম্বা ভারী একটা বইঠা৷ নৌকার নাম ‘কান্ডারি’৷ এই নৌকায় কয়েকজন
সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে নদী-নালা, খাল-বিলের পূর্ববঙ্গে হিন্দু ধর্ম প্রচার করতেন স্বামী প্রণবানন্দজি৷ পরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের বেলডাঙা শাখার প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দের কাছে শুনেছিলাম, গুরু মহারাজের নৌকার ওই বইঠা বাইত এক বলবান মুসলমান যুবক৷ প্রণবানন্দজির খুব বিশ্বস্ত ছিল সে৷
দেখলাম, বোরখা পরা কয়েকটি মেয়ে সমাধি মন্দিরের পাশে ঘোরাঘুরি করছে৷ তবে মনে হল, কারও বয়স খুব একটা বেশি নয়৷ কয়েকটি মুসলমান ছেলেও ওদের সঙ্গে৷ নাম জিজ্ঞাসা করায় একটি মেয়ে বলল, ওর নাম সঞ্জিদা খাতুন৷ সকলে বন্ধুবান্ধব৷ ওরা মস্তাফাপুর থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে বাজিতপুরে এসেছে৷ সুকল সার্ভিসেসের পরীক্ষা ছিল৷ সাধুর ব্রিজের কাছে প্রণব মঠের কথা ওরা জানে৷ তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এই মঠ দেখতে এসেছে৷
আমার অনুরোধে সমাধি মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে ওরা আপত্তি করল না৷ ব্রহ্মচারী শংকর ওদের একটু ইতস্তত করতে দেখে বললেন, ‘গুরু মহারাজের সমাধি মন্দিরে যে কেউ যাইতে পারেন৷ কোনো বাধানিষেধ নাই৷’ ওরা দলবেঁধে সমাধি মন্দির দেখতে গেল৷
বাঁদিকে ছোট একটা কংক্রিটের সেতু পেরলেই প্রণব মঠ৷ দোলনও ইজিট্যাক্সি থেকে নেমে হাসিমুখে বলল, ‘চলেন আপনারে মঠে পৌঁছাইয়া দিয়া আসি৷’
দশ-বারো একর জায়গা নিয়ে মঠ৷ উঁচু প্রাচীরে ঘেরা৷ স্বামী প্রণবানন্দজি (সন্ন্যাসপূর্ব নাম বিনোদ ব্রহ্মচারী) যে পুষ্করিণীতে স্নান করতেন সেটি বেশ ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে৷ সমাধি মন্দিরের দোতলায় স্বামী প্রণবানন্দজিকে সমাধি দেওয়া হয়৷ সমাধি মন্দিরটি দেখার মতো৷ তাঁর ব্যবহৃত খাট-বিছানা ও নানা জিনিসপত্র রয়েছে দোতলার একটি ঘরে৷
একতলায় যজ্ঞস্থল, ধ্যানমন্দির, সন্ন্যাসীদের থাকবার জায়গা ও অতিথি- নিবাস৷ নতুন আরেকটি বড় অতিথি-নিবাস তৈরি করা হয়েছে৷ আর একদিকে দেখলাম, চাষবাস হচ্ছে৷ মঠের ব্রহ্মচারী শংকরই আমাকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখালেন৷ দুপুরে তৃপ্তি করে প্রসাদ খেলাম৷ ভাত-ডাল আর একটা সবজি৷ দোলনও খেল৷ কিন্তু খাওয়ার পর কিছুতেই আমাকে খাবারের থালা ধুতে দিল না৷ নিজেই খুশিমনে দুটো থালা ধুয়ে দিল৷
মঠের প্রধান স্বামী মানবানন্দজি মহারাজ আশ্রমের কাজে বাজিতপুরের বাইরে৷ একতলায় পুষ্করিণীর পাশে বড় নাটমন্দির৷ সেখানে পাথরের বেদির ওপর স্বামী প্রণবানন্দজির বিরাট তৈলচিত্র৷ এই তৈলচিত্রের খানিকটা তফাতে বড় একটা নৌকা ও লম্বা ভারী একটা বইঠা৷ নৌকার নাম ‘কান্ডারি’৷ এই নৌকায় কয়েকজন
সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে নদী-নালা, খাল-বিলের পূর্ববঙ্গে হিন্দু ধর্ম প্রচার করতেন স্বামী প্রণবানন্দজি৷ পরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের বেলডাঙা শাখার প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দের কাছে শুনেছিলাম, গুরু মহারাজের নৌকার ওই বইঠা বাইত এক বলবান মুসলমান যুবক৷ প্রণবানন্দজির খুব বিশ্বস্ত ছিল সে৷
দেখলাম, বোরখা পরা কয়েকটি মেয়ে সমাধি মন্দিরের পাশে ঘোরাঘুরি করছে৷ তবে মনে হল, কারও বয়স খুব একটা বেশি নয়৷ কয়েকটি মুসলমান ছেলেও ওদের সঙ্গে৷ নাম জিজ্ঞাসা করায় একটি মেয়ে বলল, ওর নাম সঞ্জিদা খাতুন৷ সকলে বন্ধুবান্ধব৷ ওরা মস্তাফাপুর থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে বাজিতপুরে এসেছে৷ সুকল সার্ভিসেসের পরীক্ষা ছিল৷ সাধুর ব্রিজের কাছে প্রণব মঠের কথা ওরা জানে৷ তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এই মঠ দেখতে এসেছে৷
আমার অনুরোধে সমাধি মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তুলতে ওরা আপত্তি করল না৷ ব্রহ্মচারী শংকর ওদের একটু ইতস্তত করতে দেখে বললেন, ‘গুরু মহারাজের সমাধি মন্দিরে যে কেউ যাইতে পারেন৷ কোনো বাধানিষেধ নাই৷’ ওরা দলবেঁধে সমাধি মন্দির দেখতে গেল৷
আরও পড়ুন:
ছোটদের যত্নে: সুস্থ ও পরিপুষ্ট সন্তানের জন্য এগুলি মেনে চলছেন তো? সন্তানসম্ভবাদের জরুরি পরামর্শে শিশু বিশেষজ্ঞ
ত্বকের পরিচর্যায়: চুল পড়ার কারণগুলো জানলেই তা রুখে দেওয়া যায়, রইল ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
হোমিওপ্যাথি: টনসিলের ব্যথায় নাজেহাল? এই সব উপায়ে মিলবে আরাম
ব্রহ্মচারী শংকর ভালোই চেনেন দোলন ভক্তকে৷ বললেন, ‘দোলনদের পরিবার প্রায়ই মঠে আসেন৷ ওঁরা খুব ভক্ত৷’ শুনলাম, দোলন পড়াশুনোতেও ভালো৷ এবার চলন-বলনে স্মার্ট মেয়েটি সত্যিই লজ্জা পেল৷ দোলনকে জিজ্ঞাসা করলাম—তোমার বয়সি মেয়েদের চলাফেরা করতে কোনও অসুবিধা হয় না তো? দোলন সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল যে, ওকে ইভটিজিং জাতীয় সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করছি৷ ও এবার বেশ দাপটের সঙ্গে বলল, ‘আমাদের এখানে এইরকম ব্যাপার আজ অবধি ঘটে নাই৷ হিন্দু হোক বা মুসলমান, কোনও ছেলে একবার আমারে কিছু কইয়া দেখুক তো! দুই গালে দুইটা থাপ্পড় লাগাইয়া দিমু না!’
কথাগুলো বলার সময় দোলনের দু’চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছিল৷ ওর মুখেই শুনলাম, ২০১৩-র নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নানা জায়গায় ব্যাপক গন্ডগোল হলেও মাদারিপুর-বাজিতপুর অঞ্চলে কিছু হয়নি৷
দোলন বলল, ‘আমাগো বাজিতপুর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার খুব ভালা মানুষ৷ তাঁর লাইগ্যাই বাজিতপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রইছে৷’ পাশাপাশি প্রণব মঠ ও এখানকার সন্ন্যাসীদের সর্বস্তরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিল ও৷
দোলনদের পাড়ায় বেশ ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয় শুনলাম৷ মুসলমানরাও আসে পুজো দেখতে৷ মাঘী পূর্ণিমা থেকে শিবরাত্রি, টানা ১৫ দিন ধরে প্রণব মঠের ব্যবস্থাপনায় যে বিরাট মেলা হয়, তাতে হিন্দু-মুসলমান সকলেই আসে৷ প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি যে, খুলনায় প্রণব মঠের আয়তন বিরাট৷ প্রায় ১২২ বিঘা জমি রয়েছে মঠের৷
এদিকে বেলা বাড়ছে৷ সম্ভবত আমাকে ওর আংকেল মনে করেই দোলন ওর মনের একটা গোপন প্রত্যাশার কথা আমাকে জানিয়েছিল৷ যদি সম্ভব হয় ভবিষ্যতে কলকাতার কোনো বাঙালি ছেলেকেই বিয়ে করার ইচ্ছা ওর৷ দোলনের এক মামা বালিগঞ্জে থাকেন৷ এক মামা বর্ধমানে৷ আরও দুই মামা ও দুই মাসি থাকেন কালনায়৷
দোলন বাড়ির দিকে পা বাড়াল৷ শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজির জন্মভিটায় ব্রহ্মচারী শংকর আমাকে নিয়ে গেলেন৷ তাঁর কাছে শুনলাম, আশ্রমের ভেতরে একটি ছাত্রাবাস আছে৷ জনা কুড়ি ছাত্র থাকে৷ তাদের কাছ থেকে থাকা-খাওয়ার কোনও খরচ নেওয়া হয় না৷ ওরা রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে পড়াশুনো করে৷
জন্মভিটার সামনে-পিছনে অনেকখানি জায়গা৷ প্রচুর গাছপালা৷ কিছুদিন আগে বহু অর্থ ব্যয়ে গুরু মহারাজের এই পৈতৃক ভবনের সংস্কার করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির এক বাঙালি চিকিৎসক দম্পতি ডাঃ মণীন্দ্র মোহন চৌধুরি এবং ডাঃ শ্রীমতী নীলিমা রানি চৌধুরি৷ স্বামী প্রণবানন্দজির ভক্ত তাঁরা৷
ভবনের পিছনদিকে দোতলার চিলেকোঠায় স্বামী প্রণবানন্দজি বসে ধ্যান করতেন৷ তুলসী মঞ্চটিও সুন্দর৷ এরকম এক পুণ্যস্থানে এলে মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়৷
স্বামী প্রণবানন্দজির জন্মভিটার পবিত্র একটু মাটিও শ্রদ্ধাভরে সংগ্রহ করলাম৷
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
কথাগুলো বলার সময় দোলনের দু’চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছিল৷ ওর মুখেই শুনলাম, ২০১৩-র নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নানা জায়গায় ব্যাপক গন্ডগোল হলেও মাদারিপুর-বাজিতপুর অঞ্চলে কিছু হয়নি৷
দোলন বলল, ‘আমাগো বাজিতপুর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার খুব ভালা মানুষ৷ তাঁর লাইগ্যাই বাজিতপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রইছে৷’ পাশাপাশি প্রণব মঠ ও এখানকার সন্ন্যাসীদের সর্বস্তরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিল ও৷
দোলনদের পাড়ায় বেশ ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয় শুনলাম৷ মুসলমানরাও আসে পুজো দেখতে৷ মাঘী পূর্ণিমা থেকে শিবরাত্রি, টানা ১৫ দিন ধরে প্রণব মঠের ব্যবস্থাপনায় যে বিরাট মেলা হয়, তাতে হিন্দু-মুসলমান সকলেই আসে৷ প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি যে, খুলনায় প্রণব মঠের আয়তন বিরাট৷ প্রায় ১২২ বিঘা জমি রয়েছে মঠের৷
এদিকে বেলা বাড়ছে৷ সম্ভবত আমাকে ওর আংকেল মনে করেই দোলন ওর মনের একটা গোপন প্রত্যাশার কথা আমাকে জানিয়েছিল৷ যদি সম্ভব হয় ভবিষ্যতে কলকাতার কোনো বাঙালি ছেলেকেই বিয়ে করার ইচ্ছা ওর৷ দোলনের এক মামা বালিগঞ্জে থাকেন৷ এক মামা বর্ধমানে৷ আরও দুই মামা ও দুই মাসি থাকেন কালনায়৷
দোলন বাড়ির দিকে পা বাড়াল৷ শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজির জন্মভিটায় ব্রহ্মচারী শংকর আমাকে নিয়ে গেলেন৷ তাঁর কাছে শুনলাম, আশ্রমের ভেতরে একটি ছাত্রাবাস আছে৷ জনা কুড়ি ছাত্র থাকে৷ তাদের কাছ থেকে থাকা-খাওয়ার কোনও খরচ নেওয়া হয় না৷ ওরা রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে পড়াশুনো করে৷
জন্মভিটার সামনে-পিছনে অনেকখানি জায়গা৷ প্রচুর গাছপালা৷ কিছুদিন আগে বহু অর্থ ব্যয়ে গুরু মহারাজের এই পৈতৃক ভবনের সংস্কার করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির এক বাঙালি চিকিৎসক দম্পতি ডাঃ মণীন্দ্র মোহন চৌধুরি এবং ডাঃ শ্রীমতী নীলিমা রানি চৌধুরি৷ স্বামী প্রণবানন্দজির ভক্ত তাঁরা৷
ভবনের পিছনদিকে দোতলার চিলেকোঠায় স্বামী প্রণবানন্দজি বসে ধ্যান করতেন৷ তুলসী মঞ্চটিও সুন্দর৷ এরকম এক পুণ্যস্থানে এলে মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হয়৷
স্বামী প্রণবানন্দজির জন্মভিটার পবিত্র একটু মাটিও শ্রদ্ধাভরে সংগ্রহ করলাম৷
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন