সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ডাহাপাড়া শ্রীশ্রীজগদ্বন্ধু ধামে যাওয়ার ব্যাপারে প্রভুর ভক্ত উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুর নিবাসী অরবিন্দ রোডের শ্রীমতী গীতা পাল আমাকে উৎসাহিত করেন৷ আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রবেশের মুখেই প্রভুর মন্দির থেকে কীর্তনের উচ্চধ্বনি ভেসে আসছিল৷ শ্রীযুক্ত দয়ালবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের কথা আগেই শুনেছিলাম৷ তিনি এই ধামের সঙ্গে বহু বছর হল যুক্ত৷ বিনয়ী এবং শিক্ষিত মানুষ৷ খুব পড়াশুনোও করেন৷ দয়ালবাবু, গীতাদেবী, তাঁর মেয়ে ছন্দা ও কয়েকজন আশ্রমবাসীর সঙ্গে দেখা হল৷ তাঁরা আমাকে মন্দিরে নিয়ে এলেন৷ ভারত সেবাশ্রমের সন্ন্যাসীরাও রয়েছেন৷

দেখলাম, মেঝেতে শতরঞ্চির ওপর বসে জনাকয়েক ভক্ত খোল-করতাল বাজিয়ে তন্ময় হয়ে কীর্তন করছেন৷ মন্দির-বেদিতে শ্রীপ্রভু জগদ্বন্ধুসুন্দরের অতি সুন্দর চিত্রপট৷ মন্দির-বেদিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলাম৷ চিত্রপট বড়ই জীবন্ত৷ অনির্বচনীয় আনন্দে প্রাণমন ভরে ওঠে৷ মন্দিরের ভেতরও ভারী সুন্দর৷ শ্রীশ্রীপ্রভুর পুজো ও আরতি কয়েকশো ভক্ত এখানে বসে অনায়াসে দেখতে পারেন৷

মূল মন্দিরের পিছনে ছোট আরেকটি মন্দির৷ ভক্তদের থাকবার জন্য দোতলা গেস্ট হাউস৷ আরেকটি দোতলা বড় বাড়ি আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রবেশের মুখে, ডান হাতে৷ এছাড়া আরও দুটো গেস্ট হাউস রয়েছে আশ্রম চত্বরে৷ ছোট মন্দিরটি শ্রীশ্রীপ্রভুর লীলাপার্ষদ শ্রীপাদ কুঞ্জদাসজির৷ মন্দিরে ঢুকে প্রণাম করলাম৷ দয়ালবাবুর সঙ্গে মন্দিরের বারান্দায় এলাম৷ পরিচয় হল সেবাইত নরহরিদাস ব্রহ্মচারীর সঙ্গে৷ এম এস সি পাশ প্রবীণ এই মানুষটি বিনয়ী, আর সুন্দর কথাবার্তা বলেন৷ শুনলাম, এই আশ্রমের সঙ্গে বিগত ৩৬ বছর ধরে তিনি যুক্ত৷ আশ্রমের সার্বিক পরিচালনার দায়-দায়িত্ব শ্রীশ্রীজগদ্বন্ধু ধাম ট্রাস্ট কমিটির৷
এই কমিটি একজন সেবাইতকে দায়িত্ব দিয়েছে এই ধামের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য৷ ট্রাস্ট কমিটির পাঁচজন সদস্য হলেন যথাক্রমে বন্ধুশংকরদাস ব্রহ্মচারী, বন্ধু সেবাব্রতদাস ব্রহ্মচারী, হরিমঙ্গলদাস ব্রহ্মচারী, চিরবন্ধুদাস ব্রহ্মচারী এবং ধামমঙ্গলদাস ব্রহ্মচারী৷

নরহরিদাস ব্রহ্মচারীর কাছ থেকে এই আশ্রমের অনেক কথাই জানতে পারলাম৷ বাংলা ১৩৩৬-এ প্রভুর পাকা একতলা মন্দির তৈরি হয়েছিল৷ নতুন মন্দির তৈরি হল, ১৪০৭-এ৷ মার্কিন মুলুকে থাকতেন সুহাস চৌধুরি৷ এই মন্দির নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর অবদান সবথেকে বেশি৷ ৭০/৭৫ বিঘা জমি নিয়ে ডাহাপাড়ার এই শ্রীশ্রীজগদ্বন্ধু ধাম৷ অনেকটা কৃষিজমি৷ আমবাগান, লিচুবাগান, কাঁঠালবাগানও রয়েছে৷ নরহরিদাস ব্রহ্মচারী বললেন, ‘আমাদের আশ্রমে প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন ভক্ত আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ কলকাতা, পুরী, দেওঘর, বৃন্দাবন নানা জায়গায় আশ্রম আছে৷’ আশ্রমের ব্যয়ভার কীভাবে নির্বাহ হয়?
আরও পড়ুন:

দশভুজা: শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১: আলোছায়ায় ‘দৃষ্টিদান’

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৩: রবীন্দ্রনাথের মাস্টারমশায়

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৪: হরধনু ভঙ্গ করলেন দাশরথি

আরও পড়ুন:
নরহরিদাস বললেন, ‘আমাদের আশ্রমের যা কিছু উন্নতি সবই ভক্তদের আর্থিক সহায়তায়৷ সিজনে আমবাগান, লিচুবাগান লিজ দেওয়া হয়৷ তা থেকেও টাকা ওঠে৷ ডাহাপাড়া ধামে বারো মাসে তেরো পার্বণ৷ নানা উৎসব-অনুষ্ঠান৷ শ্রীপ্রভু জগদ্বন্ধুসুন্দরের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে প্রতি বছর বিরাট উৎসব এখানে৷ বৈশাখ মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার পর যে নবমী অর্থাৎ সীতানবমী তিথিতে এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২ লক্ষ ভক্তের সমাবেশ হয়৷ সাতদিন ধরে ২৪ ঘণ্টা মহানাম কীর্তন৷ একদিন অধিবাস কীর্তন সন্ধ্যাবেলায়৷ শেষদিন নগরকীর্তন সূর্যোদয়ের পর৷ এই নগরকীর্তন পুরো ডাহাপাড়া পরিক্রমা করে গঙ্গা পেরিয়ে লালবাগে শেষ হয়৷ কয়েক হাজার ভক্ত যোগদান করেন৷ শ্রীমৎ হরিদাস ব্রহ্মচারীর তিরোভাব তিথি উপলক্ষে উদয়াস্ত শ্রীশ্রীমহানাম কীর্তন৷

আষাঢ় মাসে গুরুপূর্ণিমায় আরেকটি বড় উৎসব৷ রয়েছে ঝুলন পূর্ণিমা৷ বিজয়া দশমীর পর একাদশী থেকে এক মাস নিয়ম সেবা৷ শ্রীশ্রীপ্রভুর সেবা নিয়ম করে৷ উদয়াস্ত কীর্তনাদি৷ পৌষ মাসের শুক্লা প্রতিপদে শ্রীপাদ কুঞ্জদাসজির আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে শ্রীশ্রীমহানাম কীর্তন৷ শ্রীশ্রীমাঘীপূর্ণিমায় অষ্টপ্রহরব্যাপী কীর্তন৷ দোলপূর্ণিমায় অষ্টপ্রহরব্যাপী শ্রীশ্রীমহানাম কীর্তন৷

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৩৩: কর্কোটকনাগের দংশনে নলরাজার শরীর বিকৃত হল

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৩: বসুন্ধরা এবং…

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-২৯: জীবন-জীবিকায় পুণ্যসলিলা গঙ্গা, হারিয়ে যাওয়া নদীয়ালি মাছের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে আমাদেরই

ডাক্তারের ডায়েরি, পর্ব-৩৪: সেই সব মহান ডাক্তারবাবুরা / ২

প্রতিদিন আরতি ও কীর্তনের সময়সূচি এরকম—ভোর ৪টা-৬টা মঙ্গলারতি ও শ্রীশ্রীমহানাম কীর্তন৷ সকাল ১০টা-১১টা শ্রীশ্রীমহানাম কীর্তন/শ্রীশ্রীচন্দ্রপাত কীর্তন৷ বিকেল ৩টা-৪টা শ্রীশ্রীবন্ধুলীলা তরঙ্গিণী ও অন্যান্য ভক্তিগ্রন্থ পাঠ৷ সন্ধ্যা ৬-৩০ থেকে ৮-৩০ পর্যন্ত সন্ধ্যারতি কীর্তন ও মহানাম কীর্তন৷ এই ধামের প্রায় দু’বিঘা জমিতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক হাইস্কুল গড়ে উঠেছে ৪০ বছর আগে৷ সুকলের নাম ‘ডাহাপাড়া বন্ধুকুঞ্জ আদিবাসী শিক্ষা নিকেতন৷’ প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু নিকেতন ও দাতব্য চিকিৎসালয়ও আছে৷

সেবাইত নরহরিদাস ব্রহ্মচারীর সঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সংঘের দুজন সন্ন্যাসীরও খানিকক্ষণ কথাবার্তা হল৷ বলা বাহুল্য, ডাহাপাড়া শ্রীশ্রীজগদ্বন্ধু ধামে আসতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান বলে মনে হল৷ শ্রীপ্রভু জগদ্বন্ধুসুন্দর বলেছেন, ‘তোরা আমায় স্মরণ করিস আর নাই করিস, আমি তো’দিগকে নিত্য চিরকাল স্মরণ করবো৷’ তিনি আরও বলেছেন যে, যুগাবতার ছাড়াও শ্রীভগবান আসতে পারেন৷ যুগাবতাররূপী ভগবান ও স্বয়ং ভগবানে পার্থক্য আছে৷ যুগাবতার যে শক্তি নিয়ে আসেন, তাঁর থেকে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে স্বয়ং ভগবান মহাউদ্ধারণের কাজটি সম্পন্ন করেন৷ আর যখন স্বয়ং ভগবান আসেন, তখন যুগাবতাররূপী ভগবান তাতেই এসে মিলিত হন৷

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

সৌজন্যে দীপ প্রকাশন

Skip to content