সাতের দশকের গোড়ায় ধ্বংসের আগে কেমন ছিল মূল মন্দির?
এককথায় রমনা কালীমন্দির ছিল অতীব মনোহর৷ পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ ছিল উঁচু ইটের দেওয়ালে ঘেরা৷ মন্দিরে প্রবেশের জন্য দক্ষিণ দিকে একটা দরজা৷ ভেতরে ঢুকে বাঁদিকে চতুষ্কোণ এক নির্মাণের কেন্দ্রস্থলে একটি বেদি৷ এখানেই ছিল প্রাচীন মন্দিরটি৷ বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিতা মাতা ভদ্রকালী৷
মন্দিরের ছাদ চারচালা৷ বাঙালি হিন্দু স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করেই মন্দিরটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়৷ তবে এর নির্মাণশৈলীতে মোগল স্থাপত্যরীতিরও কিছুটা প্রভাব পড়েছিল৷ মূল মন্দিরের চূড়া ছিল ১২০ ফুট৷ যা বহুদূর থেকে দৃষ্টিগোচর হত৷
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দিনটির কথা এখনও কারও কারও হয়তো মনে আছে৷ ওই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে৷ সেদিন রেসকোর্স ময়দানে এক বিরাট জনসমাগম হয়েছিল৷ সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন৷ এই ভাষণদানের বহুল প্রচারিত সব আলোকচিত্রে রমনা কালীমন্দিরের চূড়াটি লক্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে৷
মন্দিরের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, সু-প্রশস্ত গর্ভগৃহে সেগুন কাঠের একটি সুদৃশ্য সিংহাসনে শ্রীশ্রীভদ্রকালীর মূর্তি স্থাপিত ছিল৷ পরে রানি বিলাসমণি দেবী রাজবাড়ি থেকে একটি কালীমূর্তি এনে ভদ্রকালী মূর্তির পাশে স্থাপন করেন৷ মন্দিরের উত্তর-পূর্বে ও পশ্চিমে পূজারি ও ভক্তদের থাকবার জন্য বেশ কয়েকটা ঘর৷ মন্দির প্রাঙ্গণেই শিবমন্দির৷ নাটমন্দির ও সিংহদরজা দুটোই দৃষ্টিনন্দন৷ মূল মন্দিরের সামনে পুষ্করিণীর কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ দর্শনার্থীরা স্নান করে ভদ্রকালীর পুজো দিতেন৷ ঐতিহাসিক ডঃ আহমেদ হাসান দানির মতে পুষ্করিণীটি কাটিয়েছিলেন রানি বিলাসমণি৷ তবে ইংরেজ আমলের কিছু নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, আশপাশের মানুষের পানির সমস্যা দূর করার জন্য ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট ডস সাহেব পুষ্করিণীটি খনন করেন৷ রানি বিলাসমণি শুধু পুষ্করিণীটি সংস্কার করেছিলেন৷
এবার বেশ খানিকটা সময় পিছিয়ে যাওয়া যাক৷ ষোড়শ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ৷ আনুমানিক ১৫৩৬-৪০ খ্রিস্টাব্দ৷ হিন্দুধর্মের তখন বড়ই দুঃসময়৷ মুসলিম শাসনের জাঁতাকলে পড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একরকম বিভ্রান্ত৷ হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার জন্য ততদিনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ধর্মযাত্রা করেছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু৷ অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষকে বুকে টেনে নিয়েছেন তিনি৷ সেরকম সময়েই রমনা কালীমন্দিরের সঙ্গে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন সিদ্ধ সাধক ব্রহ্মানন্দ গিরির গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়৷ কীভাবে?
সংসার আর ধরে রাখতে পারেনি ব্রাহ্মণ যুবককে৷ নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে শ্রীমৎ মাধবানন্দ গিরি মহারাজের আশ্রয় গ্রহণ করেন৷ দীক্ষিত হয়ে সন্ন্যাস নিলেন৷ গিরি সম্প্রদায়ে যোগদান৷ গুরুপ্রদত্ত ‘ব্রহ্মানন্দ গিরি’ নাম গ্রহণ করলেন৷ এরপর নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন ও কঠোর তপস্যা৷ সাধন মার্গে অনেকটাই উন্নতিলাভ৷ কিন্তু অদ্বৈত সাধনায় পরিতৃপ্ত হলেন না৷
এরপর গুরুর আদেশে সুপ্রসিদ্ধ আগমবাগীশ শ্রীনাগভট্টের নিকট কৌল সাধনার জন্য বামাচারী তান্ত্রিক দীক্ষালাভ করেন ব্রহ্মানন্দ গিরি৷ উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণের পর নানা তীর্থ পরিভ্রমণ করলেন ব্রহ্মানন্দ৷ অবশেষে বিক্রমপুরে আগমন৷ সেই সময় বিক্রমপুরের স্বাধীন হিন্দুরাজা অসীম প্রতাপশালী চাঁদ রায়৷ তাঁর রাজধানী শ্রীপুরে এসে ব্রহ্মানন্দের ভাবোন্মেষ হল৷ তাঁর মনে হল, এই স্থানটি সাধনার পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত৷ এদিকে ব্রহ্মানন্দ গিরির মতো অতি উচ্চ পর্যায়ের এক সাধকের দর্শনলাভে চাঁদ রায় যারপরনাই আনন্দিত৷ শ্রীপুরে কীর্তিনাশা নদীর তীরে এক বিরাট শিলাখণ্ডের ওপর ধ্যানমগ্ন হলেন ব্রহ্মানন্দ৷ তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করলেন৷ ইষ্টদেবীর দর্শন পেলেন৷
এককথায় রমনা কালীমন্দির ছিল অতীব মনোহর৷ পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ ছিল উঁচু ইটের দেওয়ালে ঘেরা৷ মন্দিরে প্রবেশের জন্য দক্ষিণ দিকে একটা দরজা৷ ভেতরে ঢুকে বাঁদিকে চতুষ্কোণ এক নির্মাণের কেন্দ্রস্থলে একটি বেদি৷ এখানেই ছিল প্রাচীন মন্দিরটি৷ বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিতা মাতা ভদ্রকালী৷
মন্দিরের ছাদ চারচালা৷ বাঙালি হিন্দু স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করেই মন্দিরটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়৷ তবে এর নির্মাণশৈলীতে মোগল স্থাপত্যরীতিরও কিছুটা প্রভাব পড়েছিল৷ মূল মন্দিরের চূড়া ছিল ১২০ ফুট৷ যা বহুদূর থেকে দৃষ্টিগোচর হত৷
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দিনটির কথা এখনও কারও কারও হয়তো মনে আছে৷ ওই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে৷ সেদিন রেসকোর্স ময়দানে এক বিরাট জনসমাগম হয়েছিল৷ সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন৷ এই ভাষণদানের বহুল প্রচারিত সব আলোকচিত্রে রমনা কালীমন্দিরের চূড়াটি লক্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পেয়েছে৷
মন্দিরের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, সু-প্রশস্ত গর্ভগৃহে সেগুন কাঠের একটি সুদৃশ্য সিংহাসনে শ্রীশ্রীভদ্রকালীর মূর্তি স্থাপিত ছিল৷ পরে রানি বিলাসমণি দেবী রাজবাড়ি থেকে একটি কালীমূর্তি এনে ভদ্রকালী মূর্তির পাশে স্থাপন করেন৷ মন্দিরের উত্তর-পূর্বে ও পশ্চিমে পূজারি ও ভক্তদের থাকবার জন্য বেশ কয়েকটা ঘর৷ মন্দির প্রাঙ্গণেই শিবমন্দির৷ নাটমন্দির ও সিংহদরজা দুটোই দৃষ্টিনন্দন৷ মূল মন্দিরের সামনে পুষ্করিণীর কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে৷ দর্শনার্থীরা স্নান করে ভদ্রকালীর পুজো দিতেন৷ ঐতিহাসিক ডঃ আহমেদ হাসান দানির মতে পুষ্করিণীটি কাটিয়েছিলেন রানি বিলাসমণি৷ তবে ইংরেজ আমলের কিছু নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, আশপাশের মানুষের পানির সমস্যা দূর করার জন্য ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট ডস সাহেব পুষ্করিণীটি খনন করেন৷ রানি বিলাসমণি শুধু পুষ্করিণীটি সংস্কার করেছিলেন৷
এবার বেশ খানিকটা সময় পিছিয়ে যাওয়া যাক৷ ষোড়শ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ৷ আনুমানিক ১৫৩৬-৪০ খ্রিস্টাব্দ৷ হিন্দুধর্মের তখন বড়ই দুঃসময়৷ মুসলিম শাসনের জাঁতাকলে পড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একরকম বিভ্রান্ত৷ হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করার জন্য ততদিনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ধর্মযাত্রা করেছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু৷ অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষকে বুকে টেনে নিয়েছেন তিনি৷ সেরকম সময়েই রমনা কালীমন্দিরের সঙ্গে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন সিদ্ধ সাধক ব্রহ্মানন্দ গিরির গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়৷ কীভাবে?
সংসার আর ধরে রাখতে পারেনি ব্রাহ্মণ যুবককে৷ নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে শ্রীমৎ মাধবানন্দ গিরি মহারাজের আশ্রয় গ্রহণ করেন৷ দীক্ষিত হয়ে সন্ন্যাস নিলেন৷ গিরি সম্প্রদায়ে যোগদান৷ গুরুপ্রদত্ত ‘ব্রহ্মানন্দ গিরি’ নাম গ্রহণ করলেন৷ এরপর নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন ও কঠোর তপস্যা৷ সাধন মার্গে অনেকটাই উন্নতিলাভ৷ কিন্তু অদ্বৈত সাধনায় পরিতৃপ্ত হলেন না৷
এরপর গুরুর আদেশে সুপ্রসিদ্ধ আগমবাগীশ শ্রীনাগভট্টের নিকট কৌল সাধনার জন্য বামাচারী তান্ত্রিক দীক্ষালাভ করেন ব্রহ্মানন্দ গিরি৷ উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণের পর নানা তীর্থ পরিভ্রমণ করলেন ব্রহ্মানন্দ৷ অবশেষে বিক্রমপুরে আগমন৷ সেই সময় বিক্রমপুরের স্বাধীন হিন্দুরাজা অসীম প্রতাপশালী চাঁদ রায়৷ তাঁর রাজধানী শ্রীপুরে এসে ব্রহ্মানন্দের ভাবোন্মেষ হল৷ তাঁর মনে হল, এই স্থানটি সাধনার পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত৷ এদিকে ব্রহ্মানন্দ গিরির মতো অতি উচ্চ পর্যায়ের এক সাধকের দর্শনলাভে চাঁদ রায় যারপরনাই আনন্দিত৷ শ্রীপুরে কীর্তিনাশা নদীর তীরে এক বিরাট শিলাখণ্ডের ওপর ধ্যানমগ্ন হলেন ব্রহ্মানন্দ৷ তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করলেন৷ ইষ্টদেবীর দর্শন পেলেন৷
এরপরের ঘটনা আরও রোমাঞ্চকর! অলৌকিকও বটে! কথিত আছে দেবী বর দিতে চাইলে ব্রহ্মানন্দ বলেন যে, তিনি দেবীদর্শন করেছেন৷ এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার নেই তাঁর৷ তবুও দেবী তাঁকে বারংবার অনুরোধ করায় ব্রহ্মানন্দ গিরি বিরাট প্রস্তরখণ্ডটি স্বয়ং দেবীকে মস্তকে বহন করে তাঁকে অনুসরণ করতে বলেন৷
দেবী রাজি হলেন৷ কিন্তু এক শর্তে৷ কী সেই শর্ত? তাঁকে থামতে বললেই তিনি চলে যাবেন৷ ক্রমশ রাত শেষ হয়ে ভোর হল৷ পথে অনেকেই দেখতে পেল যে, এক তেজোদীপ্ত সন্ন্যাসী চলেছেন৷ তাঁর পিছনেই শূন্যে ভাসমান এক বিরাট প্রস্তরখণ্ড যেন উড়ে চলেছে৷ এদিকে ব্রহ্মানন্দের কয়েকজন ভক্ত গুরুকে অনুসরণ করলেন৷
মধ্যাহ্নকালে তাঁর এক ভক্তকে সঙ্গে নিয়ে একটি কালীমন্দিরে প্রবেশ করেন ব্রহ্মানন্দ৷ কয়েক মুহূর্ত পরেই এক সুমধুর নারীকণ্ঠ শোনা গেল, ‘ব্রহ্মানন্দ, আমি আর অগ্রসর হতে পারছি না৷ আমার মস্তকোপরি শিলাখণ্ড এই মন্দিরদ্বারে ঠেকে যাচ্ছে৷’
জগজ্জননীর ইচ্ছা বোঝে কার সাধ্য৷ দেবীকে মন্দিরের বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন ব্রহ্মানন্দ৷ শর্তানুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে দেবী অন্তর্হিতা হলেন৷ সেই মুহূর্তে একটি ভারী প্রস্তরখণ্ড পতনের শব্দ শোনা গেল৷
রমনা কালীমন্দিরের অনতিদূরে বকুলতলায় ওই প্রস্তরখণ্ডকে ব্রহ্মানন্দ গিরির সিদ্ধাসন বলে বিশ্বাস করতেন ধার্মিক হিন্দুরা৷ কালীমন্দির ধ্বংসের পরও অনেকদিন প্রস্তরখণ্ডটি ওখানেই ছিল৷ সেটি এখন শাঁখারি বাজারে অত্যন্ত যত্ন সহকারে রক্ষিত আছে বলে শুনেছি৷ ব্রহ্মানন্দ ঢাকা থেকে পুনরায় শ্রীপুরে ফিরে যান৷ যেখানে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন সেই স্থানটি আজও পীঠস্থান হিসেবে পূজিত হয়৷ ব্রহ্মানন্দের পুত্র পরবর্তীকালে রমনা মঠের সেবাইতের কার্যভার গ্রহণ করেন৷ এই বংশের শেষ বংশধর শ্রীমৎ মঙ্গল গিরিও এই মঠের সেবাইত ছিলেন৷
রমনা কালীমন্দিরে পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ হয় এ কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন৷ তাই এখনও বিশেষ বিশেষ উৎসবে এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে সাধু-সন্ন্যাসী ও তীর্থযাত্রীর দল এই মন্দিরে এসে মাতা ভদ্রকালীর পুজো-অর্চনা করেন৷ ভিভিআইপি-দের মধ্যে প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি, নেপালের প্রয়াত দুই রাজা যথাক্রমে মহেন্দ্র এবং তাঁর পুত্র বীরেন্দ্র এখানে এসেছেন৷ প্রতি মঙ্গলবার পুজো দিতেন নেপালের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা৷ উল্লেখ্য, রমনা কালীমন্দিরের সদ্য সংস্কারের পর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
দেবী রাজি হলেন৷ কিন্তু এক শর্তে৷ কী সেই শর্ত? তাঁকে থামতে বললেই তিনি চলে যাবেন৷ ক্রমশ রাত শেষ হয়ে ভোর হল৷ পথে অনেকেই দেখতে পেল যে, এক তেজোদীপ্ত সন্ন্যাসী চলেছেন৷ তাঁর পিছনেই শূন্যে ভাসমান এক বিরাট প্রস্তরখণ্ড যেন উড়ে চলেছে৷ এদিকে ব্রহ্মানন্দের কয়েকজন ভক্ত গুরুকে অনুসরণ করলেন৷
মধ্যাহ্নকালে তাঁর এক ভক্তকে সঙ্গে নিয়ে একটি কালীমন্দিরে প্রবেশ করেন ব্রহ্মানন্দ৷ কয়েক মুহূর্ত পরেই এক সুমধুর নারীকণ্ঠ শোনা গেল, ‘ব্রহ্মানন্দ, আমি আর অগ্রসর হতে পারছি না৷ আমার মস্তকোপরি শিলাখণ্ড এই মন্দিরদ্বারে ঠেকে যাচ্ছে৷’
জগজ্জননীর ইচ্ছা বোঝে কার সাধ্য৷ দেবীকে মন্দিরের বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন ব্রহ্মানন্দ৷ শর্তানুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে দেবী অন্তর্হিতা হলেন৷ সেই মুহূর্তে একটি ভারী প্রস্তরখণ্ড পতনের শব্দ শোনা গেল৷
রমনা কালীমন্দিরের অনতিদূরে বকুলতলায় ওই প্রস্তরখণ্ডকে ব্রহ্মানন্দ গিরির সিদ্ধাসন বলে বিশ্বাস করতেন ধার্মিক হিন্দুরা৷ কালীমন্দির ধ্বংসের পরও অনেকদিন প্রস্তরখণ্ডটি ওখানেই ছিল৷ সেটি এখন শাঁখারি বাজারে অত্যন্ত যত্ন সহকারে রক্ষিত আছে বলে শুনেছি৷ ব্রহ্মানন্দ ঢাকা থেকে পুনরায় শ্রীপুরে ফিরে যান৷ যেখানে তিনি সিদ্ধিলাভ করেন সেই স্থানটি আজও পীঠস্থান হিসেবে পূজিত হয়৷ ব্রহ্মানন্দের পুত্র পরবর্তীকালে রমনা মঠের সেবাইতের কার্যভার গ্রহণ করেন৷ এই বংশের শেষ বংশধর শ্রীমৎ মঙ্গল গিরিও এই মঠের সেবাইত ছিলেন৷
রমনা কালীমন্দিরে পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ হয় এ কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন৷ তাই এখনও বিশেষ বিশেষ উৎসবে এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে সাধু-সন্ন্যাসী ও তীর্থযাত্রীর দল এই মন্দিরে এসে মাতা ভদ্রকালীর পুজো-অর্চনা করেন৷ ভিভিআইপি-দের মধ্যে প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি, নেপালের প্রয়াত দুই রাজা যথাক্রমে মহেন্দ্র এবং তাঁর পুত্র বীরেন্দ্র এখানে এসেছেন৷ প্রতি মঙ্গলবার পুজো দিতেন নেপালের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা৷ উল্লেখ্য, রমনা কালীমন্দিরের সদ্য সংস্কারের পর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। —চলবে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন