৫১ পীঠ: সীতাকুণ্ডের শ্রীশ্রীভবানী মন্দির।
একদিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম সীতাকুণ্ডের পথে৷ সেই গল্প শোনাবার আগে এই মহাপীঠের কাহিনি সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি৷ সতীর দক্ষিণ হস্তের অর্ধাংশ এখানে পতিত হয়েছিল৷ তবে সীতাকুণ্ড নামের উৎস কী, তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়৷ কোনো কোনো গবেষকের মতে, উচ্চারণের গণ্ডগোলের কারণেই সতীকুণ্ড ‘সীতাকুণ্ড’-তে পরিণত হয়েছে৷ কেউ বলেন, জনকনন্দিনী সীতাদেবী এখানে এসেছেন বলেই এই পবিত্র পীঠের নাম সীতাকুণ্ড৷ আবার কোনো গবেষকের যুক্তি হল, এখানে রাম-সীতা কখনো আসেননি৷ রামায়ণে তার উ্েল্লখ নেই৷ যাই হোক, সীতাকুণ্ডের মাহাত্ম্য শাস্ত্রে এভাবে বর্ণিত হয়েছে—‘চট্টলে দক্ষবাহুর্মে ভৈরবশ্চন্দ্র শেখরঃ৷/ব্যক্তরূপা ভগবতী ভবানী যত্র দেবতা/বিশেষতঃ কলিযুগে বসামি চন্দ্রশেখরে৷৷’
সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনের কাছে চন্দ্রনাথ পাহাড়, সেখানে দেবী ভবানী মন্দিরের (এখানেই মহাপীঠ) সন্নিকটে শ্রীস্বয়ম্ভুনাথ শিবলিঙ্গ বিরাজমান৷ প্রায় দেড়শো বছর আগে রংপুরের এক জমিদার স্বয়ম্ভুনাথের একটি মন্দির নির্মাণ করেন৷ কালের অমোঘ নিয়মে মন্দিরটি জীর্ণ হলে সেখানেই ২০০২ সালে ভক্ত ননীগোপাল সাহা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন৷ একটি প্রশস্ত নাটমন্দিরও তৈরি হয়৷ ভাওয়ালের রাজাদেরও দান-ধ্যান রয়েছে এই মন্দিরে৷
এখানেই আর এক পাহাড়ের ওপরে রয়েছে শ্রীবিরূপাক্ষ শিবলিঙ্গ৷ সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছেন মা ভবানীর ভৈরব শ্রীচন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই শিখরের উচ্চতা প্রায় ১২০০ ফুট৷
ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে ‘রাজমালা’ গ্রন্থে৷ এই গ্রন্থ অনুসারে ৬১০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব গৌড়ের রাজা আদিশূরের বংশধর বিশ্বম্ভর শূর বিরাট নৌকা ভাসিয়ে চন্দ্রনাথ তীর্থ দর্শন করতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু নাবিকরা দিকভ্রম করে নোয়াখালির ভুুলুয়ায় পৌঁছে যায়৷
গীতগোবিন্দ প্রণেতা জয়দেব গোস্বামী বহুকাল এই তীর্থে বাস করেছেন বলে জানা যায়৷ তখন বঙ্গদেশের রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন৷ জয়দেব তীর্থভ্রমণ শেষে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় এই মহাতীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন৷ জয়দেবের ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে—
‘এইরূপে আছে কবি বঙ্গবাসী সনে৷
চট্টগ্রাম দেখিতে বাসনা হইল মনে৷৷
…অবশেষে চন্দ্রনাথে করিল গমন৷
নিকটের দেব-দেবী করিল দর্শন৷৷
ব্যাসকুণ্ড সন্নিকটে আশ্রম করিল৷
কাষ্ঠ আনি অগ্ণি জ্বালি আনন্দে রহিল৷৷’
কবি নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯০৯) তাঁর ‘রঙ্গমতী’ কাব্যে সীতাকুণ্ড তীর্থের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন—
‘পুণ্যতীর্থ সীতাকুণ্ড! শোভিছে উত্তরে
কণক চম্পকারণ্য! সজ্জিছে দক্ষিণে
হুঙ্কারী বাড়বানল মানব বিস্ময়
পশ্চিমে নিরগ্ণিকুণ্ড, ব্যাস সরোবর
বহিতেছে নিরন্তর পূর্বে কলে কল
কলকণ্ঠ মন্দাকিনী স্বর প্রবাহিনী৷
পুণ্যতীর্থ সীতাকুণ্ড অপ্সরা প্রদেশ
জ্যোতির্ময় মনোহর! পরিপূর্ণ মরি
প্রকৃতির ইন্দ্রজালে জলেতে অনল
অনল পাষাণে…৷৷’
সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনের কাছে চন্দ্রনাথ পাহাড়, সেখানে দেবী ভবানী মন্দিরের (এখানেই মহাপীঠ) সন্নিকটে শ্রীস্বয়ম্ভুনাথ শিবলিঙ্গ বিরাজমান৷ প্রায় দেড়শো বছর আগে রংপুরের এক জমিদার স্বয়ম্ভুনাথের একটি মন্দির নির্মাণ করেন৷ কালের অমোঘ নিয়মে মন্দিরটি জীর্ণ হলে সেখানেই ২০০২ সালে ভক্ত ননীগোপাল সাহা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন৷ একটি প্রশস্ত নাটমন্দিরও তৈরি হয়৷ ভাওয়ালের রাজাদেরও দান-ধ্যান রয়েছে এই মন্দিরে৷
এখানেই আর এক পাহাড়ের ওপরে রয়েছে শ্রীবিরূপাক্ষ শিবলিঙ্গ৷ সর্বোচ্চ শিখরে রয়েছেন মা ভবানীর ভৈরব শ্রীচন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই শিখরের উচ্চতা প্রায় ১২০০ ফুট৷
ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে ‘রাজমালা’ গ্রন্থে৷ এই গ্রন্থ অনুসারে ৬১০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব গৌড়ের রাজা আদিশূরের বংশধর বিশ্বম্ভর শূর বিরাট নৌকা ভাসিয়ে চন্দ্রনাথ তীর্থ দর্শন করতে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু নাবিকরা দিকভ্রম করে নোয়াখালির ভুুলুয়ায় পৌঁছে যায়৷
গীতগোবিন্দ প্রণেতা জয়দেব গোস্বামী বহুকাল এই তীর্থে বাস করেছেন বলে জানা যায়৷ তখন বঙ্গদেশের রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন৷ জয়দেব তীর্থভ্রমণ শেষে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় এই মহাতীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন৷ জয়দেবের ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে—
চট্টগ্রাম দেখিতে বাসনা হইল মনে৷৷
…অবশেষে চন্দ্রনাথে করিল গমন৷
নিকটের দেব-দেবী করিল দর্শন৷৷
ব্যাসকুণ্ড সন্নিকটে আশ্রম করিল৷
কাষ্ঠ আনি অগ্ণি জ্বালি আনন্দে রহিল৷৷’
কবি নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯০৯) তাঁর ‘রঙ্গমতী’ কাব্যে সীতাকুণ্ড তীর্থের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন—
কণক চম্পকারণ্য! সজ্জিছে দক্ষিণে
হুঙ্কারী বাড়বানল মানব বিস্ময়
পশ্চিমে নিরগ্ণিকুণ্ড, ব্যাস সরোবর
বহিতেছে নিরন্তর পূর্বে কলে কল
কলকণ্ঠ মন্দাকিনী স্বর প্রবাহিনী৷
পুণ্যতীর্থ সীতাকুণ্ড অপ্সরা প্রদেশ
জ্যোতির্ময় মনোহর! পরিপূর্ণ মরি
প্রকৃতির ইন্দ্রজালে জলেতে অনল
অনল পাষাণে…৷৷’
নবীনচন্দ্র সেন ১৮৭১-৭২-এ সীতাকুণ্ড মহামেলা অর্থাৎ চন্দ্রনাথ তীর্থের ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন৷ তাঁর লেখালেখির কারণেই চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লি সাহেব এই তীর্থ সংস্কারে যত্নবান হন৷
সীতাকুণ্ডে যাওয়ার বাস ধরেছিলাম বড় বাসস্ট্যান্ড থেকে৷ এবার আমার সঙ্গী অনার্সের ছাত্র শ্রীমান দেবব্রত দে৷ ওর বাড়ি সীতাকুণ্ডে৷ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের হস্টেলে থাকে৷ স্বামী শক্তিনাথানন্দজি বললেন, ‘দেবব্রত রাস্তাঘাট ভালো চেনে৷ ওকে আপনার সঙ্গে দিচ্ছি৷’
বাবার কথা স্পষ্ট মনে নেই দেবব্রতর৷ অনেক বছর আগে লরি অ্যাক্সিডেন্টে তিনি মারা যান৷ মা আছেন৷ তিনি স্কুলে পড়ান৷
চট্টগ্রাম শহর ছাড়ালেই সীতাকুণ্ড পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিমি অঞ্চল সীতাকুণ্ড নামেই পরিচিত৷ রাস্তার দু-ধারে জাহাজের ভাঙাচোরা বিভিন্ন অংশ টাল দেওয়া৷ বিক্রি হবে৷ কাছেই শিপইয়ার্ড৷ বঙ্গোপসাগরের খাঁড়ি৷ চট্টগ্রামের বিখ্যাত পোর্টের কথা কে না জানে৷
চাঁটগাইয়া ভাষা শুনেছি একটু খটমটো৷ তবে চেষ্টা করলে কী না হয়৷ ইতিমধ্যে আমিও দু-চারটে কথা শিখে নিয়েছি৷ দেবব্রতকে জিজ্ঞাসা করলাম, সীতাকুণ্ড ইউতুন খোদ্দুর? অর্থাৎ সীতাকুণ্ড এখান থেকে কতদূর? ও আমার মুখে চাঁটগাইয়া কথা শুনে তো অবাক! সঙ্গে সঙ্গে ওর হাসিমুখে উত্তর, না না বেশিদূর না৷ এই তো আরা সীতাকুণ্ড আইগেই৷ অর্থাৎ বেশি দূরে নয়, সীতাকুণ্ডে প্রায় এসে গিয়েছি৷
সীতাকুণ্ডেও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম আছে৷ সারিবদ্ধ মঠ ও মন্দির রাস্তার দু’পাশে৷ শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দির, লোকনাথ আশ্রম, শংকর মঠ, শ্রীশ্রীঅনুকূল ঠাকুরের আশ্রম ও নির্মীয়মাণ মন্দির, বড়পুকুরের ধারে গিরীশ ধর্মশালা৷ আমরা সাইকেল-রিকশয় যাচ্ছিলাম৷ ছোট একটা বাজারের মতো৷ রাস্তার ওপর ডাঃ সুনীলবন্ধু দাসের ক্লিনিক, শম্ভু বস্ত্রালয়৷ রেলের লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে বাঁদিকে তাকালেই সীতাকুণ্ড স্টেশন৷ শ্রী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ‘কাব্য-ব্যাকরণ স্মৃতিতীর্থ’-র বাড়ি আরেকটু এগোলেই৷
মহাপীঠে পৌঁছনোর কিছুটা আগে রাস্তার বাঁদিকে অনেকটা ঘেরা জায়গা নিয়ে ‘স্বামী বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটী৷’ সীতাকুণ্ডে যখন শুভ পদার্পণ ঘটে স্বামীজির, সেই সময় এই পঞ্চবটীতেও এসেছিলেন৷ ১৯৯২ সালের ১ মে স্বামীজির স্মৃতিধন্য এই স্থানটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী অক্ষরানন্দ মহারাজ৷
এক জায়গায় এসে রিকশ ছেড়ে দিতে হল৷ পাহাড়ি পথ৷ মহাপীঠ সীতাকুণ্ডের তোরণ৷ সুদূর কামরূপ কামাখ্যা থেকে এক সন্ন্যাসী স্বামী নির্ভয়ানন্দ এসেছেন সীতাকুণ্ড দর্শনে৷ খালি গা, খালি পা, মাথায় জটা, হাতে ত্রিশূল ও কমণ্ডলু৷ বাংলাদেশের সমস্ত সতীপীঠ দর্শনের ইচ্ছা নিয়ে এসেছেন৷ ভৈরব শ্রীচন্দ্রশেখর লিঙ্গ ও ভবানী মাতার মন্দির থেকে ফিরছেন৷ তোরণের সামনেই স্বামী নির্ভয়ানন্দজির সঙ্গে দেখা৷ বললেন, নিভৃতে সাধনা করার এরকম উপযুক্ত সতীপীঠ আর কোথায়! এখানে আরও কয়েকদিন থাকার ইচ্ছা তাঁর৷
ঢাকার নবাবপুরে থাকেন শ্রীমতী কৃষ্ণা বসাক৷ স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরে পুজো দিতে এসেছেন৷ স্বামী নারায়ণচন্দ্র বসাক অসুস্থ শরীরেও এতটা পথ এসেছেন৷ নাটমন্দিরে বসে বিশ্রাম করছিলেন৷ কৃষ্ণাদেবী বললেন, ‘খুব জাগ্রত পীঠ৷ এখানে মানত করে আমিও ফল পেয়েছি৷’ কৃষ্ণাদেবীর ননদের ছেলে দেবাশিস সাহা কলকাতার নীলরতন হাসপাতালের ডাক্তার৷
সীতাকুণ্ডে যাওয়ার বাস ধরেছিলাম বড় বাসস্ট্যান্ড থেকে৷ এবার আমার সঙ্গী অনার্সের ছাত্র শ্রীমান দেবব্রত দে৷ ওর বাড়ি সীতাকুণ্ডে৷ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের হস্টেলে থাকে৷ স্বামী শক্তিনাথানন্দজি বললেন, ‘দেবব্রত রাস্তাঘাট ভালো চেনে৷ ওকে আপনার সঙ্গে দিচ্ছি৷’
বাবার কথা স্পষ্ট মনে নেই দেবব্রতর৷ অনেক বছর আগে লরি অ্যাক্সিডেন্টে তিনি মারা যান৷ মা আছেন৷ তিনি স্কুলে পড়ান৷
চট্টগ্রাম শহর ছাড়ালেই সীতাকুণ্ড পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিমি অঞ্চল সীতাকুণ্ড নামেই পরিচিত৷ রাস্তার দু-ধারে জাহাজের ভাঙাচোরা বিভিন্ন অংশ টাল দেওয়া৷ বিক্রি হবে৷ কাছেই শিপইয়ার্ড৷ বঙ্গোপসাগরের খাঁড়ি৷ চট্টগ্রামের বিখ্যাত পোর্টের কথা কে না জানে৷
চাঁটগাইয়া ভাষা শুনেছি একটু খটমটো৷ তবে চেষ্টা করলে কী না হয়৷ ইতিমধ্যে আমিও দু-চারটে কথা শিখে নিয়েছি৷ দেবব্রতকে জিজ্ঞাসা করলাম, সীতাকুণ্ড ইউতুন খোদ্দুর? অর্থাৎ সীতাকুণ্ড এখান থেকে কতদূর? ও আমার মুখে চাঁটগাইয়া কথা শুনে তো অবাক! সঙ্গে সঙ্গে ওর হাসিমুখে উত্তর, না না বেশিদূর না৷ এই তো আরা সীতাকুণ্ড আইগেই৷ অর্থাৎ বেশি দূরে নয়, সীতাকুণ্ডে প্রায় এসে গিয়েছি৷
সীতাকুণ্ডেও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম আছে৷ সারিবদ্ধ মঠ ও মন্দির রাস্তার দু’পাশে৷ শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দির, লোকনাথ আশ্রম, শংকর মঠ, শ্রীশ্রীঅনুকূল ঠাকুরের আশ্রম ও নির্মীয়মাণ মন্দির, বড়পুকুরের ধারে গিরীশ ধর্মশালা৷ আমরা সাইকেল-রিকশয় যাচ্ছিলাম৷ ছোট একটা বাজারের মতো৷ রাস্তার ওপর ডাঃ সুনীলবন্ধু দাসের ক্লিনিক, শম্ভু বস্ত্রালয়৷ রেলের লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে বাঁদিকে তাকালেই সীতাকুণ্ড স্টেশন৷ শ্রী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ‘কাব্য-ব্যাকরণ স্মৃতিতীর্থ’-র বাড়ি আরেকটু এগোলেই৷
মহাপীঠে পৌঁছনোর কিছুটা আগে রাস্তার বাঁদিকে অনেকটা ঘেরা জায়গা নিয়ে ‘স্বামী বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটী৷’ সীতাকুণ্ডে যখন শুভ পদার্পণ ঘটে স্বামীজির, সেই সময় এই পঞ্চবটীতেও এসেছিলেন৷ ১৯৯২ সালের ১ মে স্বামীজির স্মৃতিধন্য এই স্থানটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী অক্ষরানন্দ মহারাজ৷
এক জায়গায় এসে রিকশ ছেড়ে দিতে হল৷ পাহাড়ি পথ৷ মহাপীঠ সীতাকুণ্ডের তোরণ৷ সুদূর কামরূপ কামাখ্যা থেকে এক সন্ন্যাসী স্বামী নির্ভয়ানন্দ এসেছেন সীতাকুণ্ড দর্শনে৷ খালি গা, খালি পা, মাথায় জটা, হাতে ত্রিশূল ও কমণ্ডলু৷ বাংলাদেশের সমস্ত সতীপীঠ দর্শনের ইচ্ছা নিয়ে এসেছেন৷ ভৈরব শ্রীচন্দ্রশেখর লিঙ্গ ও ভবানী মাতার মন্দির থেকে ফিরছেন৷ তোরণের সামনেই স্বামী নির্ভয়ানন্দজির সঙ্গে দেখা৷ বললেন, নিভৃতে সাধনা করার এরকম উপযুক্ত সতীপীঠ আর কোথায়! এখানে আরও কয়েকদিন থাকার ইচ্ছা তাঁর৷
ঢাকার নবাবপুরে থাকেন শ্রীমতী কৃষ্ণা বসাক৷ স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরে পুজো দিতে এসেছেন৷ স্বামী নারায়ণচন্দ্র বসাক অসুস্থ শরীরেও এতটা পথ এসেছেন৷ নাটমন্দিরে বসে বিশ্রাম করছিলেন৷ কৃষ্ণাদেবী বললেন, ‘খুব জাগ্রত পীঠ৷ এখানে মানত করে আমিও ফল পেয়েছি৷’ কৃষ্ণাদেবীর ননদের ছেলে দেবাশিস সাহা কলকাতার নীলরতন হাসপাতালের ডাক্তার৷
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে, পর্ব-৪৪: ‘‘আমাদের কৈবল্যধাম আশ্রম আসমুদ্র ব্যাপ্ত ও কুম্ভমেলার মতো বৃহৎ স্থান হইবে’’
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৬: মুক্তিযুদ্ধের বিজয়— বীর বাঙালির অহংকার
২৭ ডিসেম্বর টেটের প্রথম দফার ইন্টারভিউ, জানিয়ে দিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, সঙ্গে কী কী নথি রাখতে হবে?
চট্টগ্রাম দু-নম্বর গেটের বাসিন্দা শিখা দাস৷ মেয়ে-জামাইকে নিয়ে স্বয়ম্ভুনাথের পুজো দিতে এসেছেন৷ সঙ্গে নাতনি ছোট্ট আদ্যা৷ ওঁরা আবুধাবিতে থাকেন৷ মেয়ে তুলি ভক্তি সহকারে শিবের মাথায় কচি ডাবের জল ও কাঁচা দুধ ঢাললেন৷ তারপর ফলমূলের নৈবেদ্য দান৷ সোমবার মহাদেবের জন্মবার৷ এদিন এখানকার বিভিন্ন শিবমন্দিরে ভিড় হয়৷
সীতাকুণ্ড লোকাল কমিটির সদস্য বদনানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর যখন শুনলেন যে, আমি কলকাতা থেকে এসেছি, খুশি হয়েই বললেন, ‘আরে ভাই আমারও তো একটা ফ্ল্যাট আছে মৌলালির মোড়ে৷’
ব্যস, এরপর গল্প শুরু হল তাঁর৷
ভদ্রলোক পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার৷ ১৯৬২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করে সীতাকুণ্ডে ফিরে আসেন৷ এখানেই বাড়ি তাঁর৷ শুনলাম, শিবরাত্রিতে এখানে লক্ষাধিক মানুষ আসেন৷ গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীরাও আসেন৷ তিনদিন ধরে মেলা৷ ধর্মসভা হয়৷ এই মহাপীঠ দেখাশোনার দায়-দায়িত্ব চন্দ্রনাথ শ্রাইন বোর্ডের৷ বোর্ডের প্রশাসক জেলা জজ৷ তিনি মুসলিম৷ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধকময় ভট্টাচার্য৷ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুখময় চক্রবর্তী৷
সীতাকুণ্ড শ্রাইন কমিটির প্রায় ৫০০ একর জমি আছে৷ এইসব জায়গা-জমিতে চাষবাস হয়৷ চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাশে সবজির ক্ষেত৷ পেয়ারা, আমলকী, হরীতকী,বয়ড়া ও কলাগাছের বাগান বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে৷ স্থানীয় লোকদের লিজ দেওয়া হয়েছে৷
শ্রীস্বয়ম্ভুনাথের মন্দির থেকে শ্রীচন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গের মন্দিরে পায়ে হাঁটার রাস্তা আছে৷ জঙ্গলাকীর্ণ চড়াই ২ কিমি পথ৷ যাঁদের হৃদরোগজনিত সমস্যা আছে তাঁদের হেঁটে না ওঠাই ভালো৷ সি এন জি-তে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে৷ তবে ভাড়া বেশি৷ ৪০০ টাকার কম নয়৷
চন্দ্রনাথ পর্বতে বাবার মন্দিরটি খুব বড় না হলেও দৃষ্টিনন্দন৷ মন্দিরের চারদিকে প্রশস্ত বারান্দা৷ সামনে নাটমন্দির৷ ত্রিপুরার মহারাজা ধনমাণিক্যের পরবর্তী বংশধর রাজা গোবিন্দমাণিক্য সপ্তদশ শতাব্দীতে চন্দ্রনাথ মহাদেবের মন্দিরটি নির্মাণ করেন৷ মন্দির থেকে দূরে সমতলভূমি ও আরও দূরে বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলরাশির শোভা তীর্থযাত্রীদের চিত্ত হরণ করে৷
বদনানন্দবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম—মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সতীপীঠের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না? বললেন, ‘অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, পাকিস্তানি সেনারা কিন্তু এই তীর্থস্থানের কোনো ক্ষতি করেনি৷ সেই সময় একজন মহন্ত স্বয়ম্ভুনাথের সেবাপুজো করতেন৷ খান সেনারা দৈনন্দিন পুজোয় বাধা না দিলেও সীতাকুণ্ডে অনেক মুক্তিযোদ্ধার লাশ ছুড়ে ফেলেছে৷ বাবরি মসজিদ ভাঙচুরের সময় সীতাকুণ্ডে গোলমাল হয়৷ রাতে আমার বাড়ির সামনে কিছুদিন সজাগ পাহারাও ছিল৷’
বছর দেড়েক চিকিৎসার পর বদনানন্দবাবুর স্ত্রী ক্যানসারে মারা গিয়েছেন তিন বছর আগে৷ তাঁদের দুই ছেলে৷ দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করেন৷ একজন ঢাকায় থাকেন, আর একজন ফেনিতে৷
শ্রীস্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের একপাশ থেকে সিঁড়ি দিয়ে খানিকটা নেমে দেবী ভবানীর মন্দির৷ ভবানী মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ছোট একটি প্রাচীন শিবমন্দির৷ দেবী ভবানী চতুর্ভুজা৷ দক্ষিণাকালী৷ শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন৷ ওপরের ডান হাতে অভয়মুদ্রা, বামহাতে খড়্গ, নীচের ডান হাতখানিতে জপের ভঙ্গি, বামহাতে নরমুণ্ড৷
সীতাকুণ্ড লোকাল কমিটির সদস্য বদনানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয়ের পর যখন শুনলেন যে, আমি কলকাতা থেকে এসেছি, খুশি হয়েই বললেন, ‘আরে ভাই আমারও তো একটা ফ্ল্যাট আছে মৌলালির মোড়ে৷’
ব্যস, এরপর গল্প শুরু হল তাঁর৷
ভদ্রলোক পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার৷ ১৯৬২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করে সীতাকুণ্ডে ফিরে আসেন৷ এখানেই বাড়ি তাঁর৷ শুনলাম, শিবরাত্রিতে এখানে লক্ষাধিক মানুষ আসেন৷ গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীরাও আসেন৷ তিনদিন ধরে মেলা৷ ধর্মসভা হয়৷ এই মহাপীঠ দেখাশোনার দায়-দায়িত্ব চন্দ্রনাথ শ্রাইন বোর্ডের৷ বোর্ডের প্রশাসক জেলা জজ৷ তিনি মুসলিম৷ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাধকময় ভট্টাচার্য৷ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুখময় চক্রবর্তী৷
সীতাকুণ্ড শ্রাইন কমিটির প্রায় ৫০০ একর জমি আছে৷ এইসব জায়গা-জমিতে চাষবাস হয়৷ চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাশে সবজির ক্ষেত৷ পেয়ারা, আমলকী, হরীতকী,বয়ড়া ও কলাগাছের বাগান বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে৷ স্থানীয় লোকদের লিজ দেওয়া হয়েছে৷
শ্রীস্বয়ম্ভুনাথের মন্দির থেকে শ্রীচন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গের মন্দিরে পায়ে হাঁটার রাস্তা আছে৷ জঙ্গলাকীর্ণ চড়াই ২ কিমি পথ৷ যাঁদের হৃদরোগজনিত সমস্যা আছে তাঁদের হেঁটে না ওঠাই ভালো৷ সি এন জি-তে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে৷ তবে ভাড়া বেশি৷ ৪০০ টাকার কম নয়৷
চন্দ্রনাথ পর্বতে বাবার মন্দিরটি খুব বড় না হলেও দৃষ্টিনন্দন৷ মন্দিরের চারদিকে প্রশস্ত বারান্দা৷ সামনে নাটমন্দির৷ ত্রিপুরার মহারাজা ধনমাণিক্যের পরবর্তী বংশধর রাজা গোবিন্দমাণিক্য সপ্তদশ শতাব্দীতে চন্দ্রনাথ মহাদেবের মন্দিরটি নির্মাণ করেন৷ মন্দির থেকে দূরে সমতলভূমি ও আরও দূরে বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলরাশির শোভা তীর্থযাত্রীদের চিত্ত হরণ করে৷
বদনানন্দবাবুকে জিজ্ঞাসা করলাম—মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সতীপীঠের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না? বললেন, ‘অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, পাকিস্তানি সেনারা কিন্তু এই তীর্থস্থানের কোনো ক্ষতি করেনি৷ সেই সময় একজন মহন্ত স্বয়ম্ভুনাথের সেবাপুজো করতেন৷ খান সেনারা দৈনন্দিন পুজোয় বাধা না দিলেও সীতাকুণ্ডে অনেক মুক্তিযোদ্ধার লাশ ছুড়ে ফেলেছে৷ বাবরি মসজিদ ভাঙচুরের সময় সীতাকুণ্ডে গোলমাল হয়৷ রাতে আমার বাড়ির সামনে কিছুদিন সজাগ পাহারাও ছিল৷’
বছর দেড়েক চিকিৎসার পর বদনানন্দবাবুর স্ত্রী ক্যানসারে মারা গিয়েছেন তিন বছর আগে৷ তাঁদের দুই ছেলে৷ দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করেন৷ একজন ঢাকায় থাকেন, আর একজন ফেনিতে৷
শ্রীস্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের একপাশ থেকে সিঁড়ি দিয়ে খানিকটা নেমে দেবী ভবানীর মন্দির৷ ভবানী মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ছোট একটি প্রাচীন শিবমন্দির৷ দেবী ভবানী চতুর্ভুজা৷ দক্ষিণাকালী৷ শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন৷ ওপরের ডান হাতে অভয়মুদ্রা, বামহাতে খড়্গ, নীচের ডান হাতখানিতে জপের ভঙ্গি, বামহাতে নরমুণ্ড৷
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত
জল ঠিক মতো খাওয়া হচ্ছে না? শরীর কিন্তু নিজেই জানিয়ে দেবে, কোন ৫ উপসর্গে একদমই অবহেলা নয়?
কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-৪: ধোঁয়ার কুণ্ডলী, ভাসমান রূপোর খড়ম, সাদা সিল্কের ধুতি, সাদা দাড়ি—চোখে কালো চশমা
মন্দিরের পূজারি দুলাল ভট্টাচার্য৷ তিনি গত ৫০ বছর ধরে বংশপরম্পরায় এখানে পুজো করছেন৷ তাঁর ছেলে চন্দন ভট্টাচার্যও একসময় পুজো করতেন৷ দুলালবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘মায়ের পুজো করল, কিন্তু ছেলেটা আয়ু পেল কই! ৪০ বছর বয়সেই হঠাৎ সেরিব্রাল স্ট্রোকে চলে গেল৷’
দুলালবাবুর গলায় অভিযোগের সুর শোনা গেল, এই শ্রাইন কমিটি গত ১৫ বছর ধরে কীভাবে গোটা তীর্থক্ষেত্র দেখাশোনার অধিকার পায়? কোনো পরিবর্তন নাই৷ আগে ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজন সন্ন্যাসী শ্রাইন কমিটির সদস্য ছিলেন৷ তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
প্রতিদিন সকাল ৮টায় মন্দির খোলে৷ সারাদিন খোলা থাকার পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ বন্ধ হয়৷ মায়ের নিরামিষ অন্নভোগ৷ ভবানী মন্দিরে বছরে মোট চারবার ছাগবলি হয়, মহালয়া, দীপান্বিতা, বাংলা বছরের প্রথম ও শেষ দিন৷ আগে জোড়া বলি হত৷ ৭৭ বছর বয়সেও সংসার প্রতিপালন করে চলেছেন দুলালবাবু৷ মন্দিরের বাক্সে যা প্রণামী জমা পড়ে তার অর্ধেক পান তিনি৷ বাকি অর্ধেক শ্রাইন কমিটি নেয়৷ এবার শিব চতুর্দশীতে ১১ হাজার টাকা ও দোল পূর্ণিমায় ১৫০০ টাকা পেয়েছেন দুলালবাবু৷ আয় বলতে এটাই৷ ‘বছরের বাকি সময় মাসে টেনেটুনে তিন-চার হাজারের বেশি আমার আয় হয় না৷ কী করে যে সংসার টানছি তা আমিই জানি’— দুঃখ করে বললেন দুলাল ভট্টাচার্য৷ তিন মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন৷ গয়া, বারাণসী, কালীঘাটে গিয়েছেন৷ কালীঘাটে এক শ্রেণির পাণ্ডার জুলুমবাজি দুলালবাবুর ভালো লাগেনি৷ তবে কলকাতা শহর খুব ভালো লেগেছে তাঁর৷
মা ভবানীর মন্দির ঘুরে দেখলাম৷ প্রয়াত মহাদেব লাল মোদির স্মৃতিরক্ষার্থে ২০০০ সালে এই মন্দিরের সংস্কার করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আমডাঙা নিবাসী তাঁর পৌত্রগণ৷ তবে শ্রাইন কমিটির এই মন্দিরটির দিকে আরও ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত৷ মা ভবানীকে প্রণাম করে গেলাম সীতাকুণ্ডের লাগোয়া রাম-সীতার মন্দিরে৷
ব্যাসকুণ্ড এই তীর্থস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ ভগবান বেদব্যাস কুণ্ডের পশ্চিম প্রান্তে পাষাণমূর্তি হয়ে ধ্যানমগ্ণ৷ পুণ্যার্থীরা প্রথমে এই কুণ্ডে স্নান করে তাঁদের পুণ্য পরিক্রমা শুরু করেন৷ ব্যাসকুণ্ড সম্বন্ধে পুরাণে রয়েছে, পরাশরের পুত্র বেদব্যাস যখন ব্যাসকাশীতে ছিলেন, তখন সেই স্থানের অন্য ঋষিগণ তাঁর অদ্ভুত জন্মকাহিনি নিয়ে বিদ্রূপ করতেন৷ এরপর বেদব্যাস ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাসকাশী ছেড়ে অন্যত্র কঠোর তপস্যা শুরু করলেন৷
কাশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী অন্নপূর্ণা দেখলেন, ব্যাসদেবের তপস্যায় সত্যি সত্যিই দ্বিতীয় কাশী সৃষ্টি হবে৷ এর ফলে কাশীর মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ্ হবে৷ মা অন্নপূর্ণা ব্যাসদেবের বিরোধিতা করতে লাগলেন৷
ব্যাসদেব নিরুপায় হয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন৷ মহাদেব তাঁকে দর্শনদান করে বললেন, তুমি চন্দ্রনাথ তীর্থে যাও৷ পৃথিবীর অগ্ণিকোনে অবস্থিত এই তীর্থ অতীব মনোরম৷ অতি গোপনীয়৷ আমি কলিকালে দেবী পার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে এই তীর্থে অবস্থান করব৷ এই তীর্থে দেবগণ, যক্ষ-রক্ষ ও ভৈরবগণ কঠোর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন৷ এই চন্দ্রনাথ তীর্থে আমি লিঙ্গরূপে বিরাজিত৷ শিবলিঙ্গের নাম শ্রীচন্দ্রশেখর৷
দুলালবাবুর গলায় অভিযোগের সুর শোনা গেল, এই শ্রাইন কমিটি গত ১৫ বছর ধরে কীভাবে গোটা তীর্থক্ষেত্র দেখাশোনার অধিকার পায়? কোনো পরিবর্তন নাই৷ আগে ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজন সন্ন্যাসী শ্রাইন কমিটির সদস্য ছিলেন৷ তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
প্রতিদিন সকাল ৮টায় মন্দির খোলে৷ সারাদিন খোলা থাকার পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ বন্ধ হয়৷ মায়ের নিরামিষ অন্নভোগ৷ ভবানী মন্দিরে বছরে মোট চারবার ছাগবলি হয়, মহালয়া, দীপান্বিতা, বাংলা বছরের প্রথম ও শেষ দিন৷ আগে জোড়া বলি হত৷ ৭৭ বছর বয়সেও সংসার প্রতিপালন করে চলেছেন দুলালবাবু৷ মন্দিরের বাক্সে যা প্রণামী জমা পড়ে তার অর্ধেক পান তিনি৷ বাকি অর্ধেক শ্রাইন কমিটি নেয়৷ এবার শিব চতুর্দশীতে ১১ হাজার টাকা ও দোল পূর্ণিমায় ১৫০০ টাকা পেয়েছেন দুলালবাবু৷ আয় বলতে এটাই৷ ‘বছরের বাকি সময় মাসে টেনেটুনে তিন-চার হাজারের বেশি আমার আয় হয় না৷ কী করে যে সংসার টানছি তা আমিই জানি’— দুঃখ করে বললেন দুলাল ভট্টাচার্য৷ তিন মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন৷ গয়া, বারাণসী, কালীঘাটে গিয়েছেন৷ কালীঘাটে এক শ্রেণির পাণ্ডার জুলুমবাজি দুলালবাবুর ভালো লাগেনি৷ তবে কলকাতা শহর খুব ভালো লেগেছে তাঁর৷
মা ভবানীর মন্দির ঘুরে দেখলাম৷ প্রয়াত মহাদেব লাল মোদির স্মৃতিরক্ষার্থে ২০০০ সালে এই মন্দিরের সংস্কার করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আমডাঙা নিবাসী তাঁর পৌত্রগণ৷ তবে শ্রাইন কমিটির এই মন্দিরটির দিকে আরও ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত৷ মা ভবানীকে প্রণাম করে গেলাম সীতাকুণ্ডের লাগোয়া রাম-সীতার মন্দিরে৷
ব্যাসকুণ্ড এই তীর্থস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ ভগবান বেদব্যাস কুণ্ডের পশ্চিম প্রান্তে পাষাণমূর্তি হয়ে ধ্যানমগ্ণ৷ পুণ্যার্থীরা প্রথমে এই কুণ্ডে স্নান করে তাঁদের পুণ্য পরিক্রমা শুরু করেন৷ ব্যাসকুণ্ড সম্বন্ধে পুরাণে রয়েছে, পরাশরের পুত্র বেদব্যাস যখন ব্যাসকাশীতে ছিলেন, তখন সেই স্থানের অন্য ঋষিগণ তাঁর অদ্ভুত জন্মকাহিনি নিয়ে বিদ্রূপ করতেন৷ এরপর বেদব্যাস ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাসকাশী ছেড়ে অন্যত্র কঠোর তপস্যা শুরু করলেন৷
কাশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী অন্নপূর্ণা দেখলেন, ব্যাসদেবের তপস্যায় সত্যি সত্যিই দ্বিতীয় কাশী সৃষ্টি হবে৷ এর ফলে কাশীর মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ণ্ হবে৷ মা অন্নপূর্ণা ব্যাসদেবের বিরোধিতা করতে লাগলেন৷
ব্যাসদেব নিরুপায় হয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন৷ মহাদেব তাঁকে দর্শনদান করে বললেন, তুমি চন্দ্রনাথ তীর্থে যাও৷ পৃথিবীর অগ্ণিকোনে অবস্থিত এই তীর্থ অতীব মনোরম৷ অতি গোপনীয়৷ আমি কলিকালে দেবী পার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে এই তীর্থে অবস্থান করব৷ এই তীর্থে দেবগণ, যক্ষ-রক্ষ ও ভৈরবগণ কঠোর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন৷ এই চন্দ্রনাথ তীর্থে আমি লিঙ্গরূপে বিরাজিত৷ শিবলিঙ্গের নাম শ্রীচন্দ্রশেখর৷
আরও পড়ুন:
ছোটদের যত্নে: কোন সময় গর্ভধারণ করলে সুসন্তান লাভ সম্ভব? নব দম্পতির মা হওয়ার আগের প্রস্তুতির পরামর্শে ডাক্তারবাবু
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে
দেবাদিদেবের নির্দেশ মেনে ব্যাসদেব চন্দ্রশেখর পর্বতে গিয়ে কঠোর তপস্যা শুরু করলেন৷ তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব আবার তাঁকে দর্শন দিয়ে বলেন, হে ব্যাস, তোমার তপস্যায় তুষ্ট হয়েছি৷ এবার বর প্রার্থনা করো৷
ব্যাসদেব প্রার্থনা করে বললেন, হে দেবাদিদেব, আপনি আমাকে কাশীতে যে রূপে দর্শন দিয়েছিলেন, সেই রূপেই এই তীর্থে অবস্থান করুন৷
মহাদেব বললেন, তথাস্তু! যেমন রূপে আমাকে চাইছ, সেভাবেই এই তীর্থে থাকব৷ দেবাদিদেব তাঁর ত্রিশূলটি মাটিতে গেঁথে দিলেন৷ ত্রিশূলের প্রচণ্ড আঘাতে ব্যাসকুণ্ডের সৃষ্টি হল৷ ব্যাসদেব তখন থেকেই কুণ্ডের পশ্চিমে পাষাণ অবয়ব ধারণ করে ধ্যানমগ্ণ রইলেন৷
মন্দির ও পীঠস্থানকে ঘিরে কিংবদন্তির শেষ নেই৷ সীতাকুণ্ডের স্বয়ম্ভুশিবকে নিয়ে ‘চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে কাহিনিটি এরকম, চন্দ্রনাথ তীর্থের কিছু দূরে এক রজক বসবাস করত৷ তার একপাল গাভী ছিল৷ একদিন রজক লক্ষ করল যে, একটি গাভী দলছুট হয়ে গভীর জঙ্গলের ভেতরে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়৷ আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে৷ পরে গাভীটিকে অনুসরণ করে রজক দেখল, সে একটি শিবলিঙ্গের ওপর দুগ্দ নিঃস্বরণ করতে লাগল৷ সেখানে একটি অষ্টভুজা মূর্তিও রয়েছে৷ এরপর রজকের অনুরোধে কাছের গ্রাম থেকে এক সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ এসে পুজো শুরু করলেন৷ সেই থেকে ওই ব্রাহ্মণের বংশধররা স্বয়ম্ভুনাথের পুজো করার অধিকারী হন৷
এদিকে রজকের আবিষৃকত দেবীমূর্তি এবং শিবলিঙ্গের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল৷ এই অলৌকিক সংবাদ ত্রিপুরার রাজা ধনমাণিক্যের কর্ণগোচর হল৷ চট্টগ্রাম ছিল তখন তাঁর শাসনাধীন৷ শিবভক্ত রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন শিবলিঙ্গটিকে সেই স্থান থেকে উত্তোলন করে নিজ রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করবেন৷
রাজার আদেশে শিবলিঙ্গ তোলার জন্য লোক নিযুক্ত হল৷ অনেকদূর পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি করা হল৷ কিন্তু শিবলিঙ্গের মূল অংশ খুঁজে পাওয়া গেল না৷ এমন সময় এক গভীর রাত্রে ধনমাণিক্য স্বপ্ণ দেখলেন, মহাদেব তাঁকে বলছেন, হে রাজন এই শিবলিঙ্গকে স্থানচ্যুত করার শক্তি তোমার নেই৷ কারও নেই৷ কারণ, এটি স্বয়ম্ভুলিঙ্গ৷ এই শিবলিঙ্গকে নেওয়ার চেষ্টা না করে পাশে যে দেবীমূর্তি আছে তাই নিয়ে যেতে পারো৷
এই স্বপ্ণাদেশ অনুযায়ী ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরে দেবীমূর্তিকে নিয়ে যান রাজা৷ দেবীর নাম শ্রীত্রিপুরাসুন্দরী মাতা৷
কলিযুগে মহাদেব তাঁর ভক্তগণকে কৃপা করার জন্য চন্দ্রশেখররূপে অবস্থান করছেন৷ একই তীর্থে শিব ও শক্তির পুজো-অর্চনা করে ভক্তরা অপার শান্তিলাভ করেন৷ চন্দ্রনাথ শুধু হিন্দুধর্মের শক্তিপীঠ নয়৷ এই প্রসিদ্ধ তীর্থ বৌদ্ধদের কাছেও মহাপবিত্র স্থান৷ বৌদ্ধরা তাঁদের প্রিয়জনদের অস্থি এনে এই তীর্থের বৌদ্ধকূপে নিক্ষেপ করেন৷ প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে বৌদ্ধদের একটি মেলা বসে৷
সীতাকুণ্ড নিয়েও একটি কাহিনি রয়েছে৷ শ্রীরামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনের জন্য বনে গমন করেন৷ সীতাদেবী এবং ভাই লক্ষ্মণ তাঁকে অনুসরণ করেন৷ একদা রাম বনের ভেতরে শরভঙ্গ মুনির দর্শনাভিলাষী হন৷ সেই
আশ্রমে রামচন্দ্রের সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ হয়৷
ব্যাসদেব প্রার্থনা করে বললেন, হে দেবাদিদেব, আপনি আমাকে কাশীতে যে রূপে দর্শন দিয়েছিলেন, সেই রূপেই এই তীর্থে অবস্থান করুন৷
মহাদেব বললেন, তথাস্তু! যেমন রূপে আমাকে চাইছ, সেভাবেই এই তীর্থে থাকব৷ দেবাদিদেব তাঁর ত্রিশূলটি মাটিতে গেঁথে দিলেন৷ ত্রিশূলের প্রচণ্ড আঘাতে ব্যাসকুণ্ডের সৃষ্টি হল৷ ব্যাসদেব তখন থেকেই কুণ্ডের পশ্চিমে পাষাণ অবয়ব ধারণ করে ধ্যানমগ্ণ রইলেন৷
মন্দির ও পীঠস্থানকে ঘিরে কিংবদন্তির শেষ নেই৷ সীতাকুণ্ডের স্বয়ম্ভুশিবকে নিয়ে ‘চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে কাহিনিটি এরকম, চন্দ্রনাথ তীর্থের কিছু দূরে এক রজক বসবাস করত৷ তার একপাল গাভী ছিল৷ একদিন রজক লক্ষ করল যে, একটি গাভী দলছুট হয়ে গভীর জঙ্গলের ভেতরে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়৷ আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে৷ পরে গাভীটিকে অনুসরণ করে রজক দেখল, সে একটি শিবলিঙ্গের ওপর দুগ্দ নিঃস্বরণ করতে লাগল৷ সেখানে একটি অষ্টভুজা মূর্তিও রয়েছে৷ এরপর রজকের অনুরোধে কাছের গ্রাম থেকে এক সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ এসে পুজো শুরু করলেন৷ সেই থেকে ওই ব্রাহ্মণের বংশধররা স্বয়ম্ভুনাথের পুজো করার অধিকারী হন৷
এদিকে রজকের আবিষৃকত দেবীমূর্তি এবং শিবলিঙ্গের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল৷ এই অলৌকিক সংবাদ ত্রিপুরার রাজা ধনমাণিক্যের কর্ণগোচর হল৷ চট্টগ্রাম ছিল তখন তাঁর শাসনাধীন৷ শিবভক্ত রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন শিবলিঙ্গটিকে সেই স্থান থেকে উত্তোলন করে নিজ রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করবেন৷
রাজার আদেশে শিবলিঙ্গ তোলার জন্য লোক নিযুক্ত হল৷ অনেকদূর পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি করা হল৷ কিন্তু শিবলিঙ্গের মূল অংশ খুঁজে পাওয়া গেল না৷ এমন সময় এক গভীর রাত্রে ধনমাণিক্য স্বপ্ণ দেখলেন, মহাদেব তাঁকে বলছেন, হে রাজন এই শিবলিঙ্গকে স্থানচ্যুত করার শক্তি তোমার নেই৷ কারও নেই৷ কারণ, এটি স্বয়ম্ভুলিঙ্গ৷ এই শিবলিঙ্গকে নেওয়ার চেষ্টা না করে পাশে যে দেবীমূর্তি আছে তাই নিয়ে যেতে পারো৷
এই স্বপ্ণাদেশ অনুযায়ী ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরে দেবীমূর্তিকে নিয়ে যান রাজা৷ দেবীর নাম শ্রীত্রিপুরাসুন্দরী মাতা৷
কলিযুগে মহাদেব তাঁর ভক্তগণকে কৃপা করার জন্য চন্দ্রশেখররূপে অবস্থান করছেন৷ একই তীর্থে শিব ও শক্তির পুজো-অর্চনা করে ভক্তরা অপার শান্তিলাভ করেন৷ চন্দ্রনাথ শুধু হিন্দুধর্মের শক্তিপীঠ নয়৷ এই প্রসিদ্ধ তীর্থ বৌদ্ধদের কাছেও মহাপবিত্র স্থান৷ বৌদ্ধরা তাঁদের প্রিয়জনদের অস্থি এনে এই তীর্থের বৌদ্ধকূপে নিক্ষেপ করেন৷ প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে বৌদ্ধদের একটি মেলা বসে৷
সীতাকুণ্ড নিয়েও একটি কাহিনি রয়েছে৷ শ্রীরামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনের জন্য বনে গমন করেন৷ সীতাদেবী এবং ভাই লক্ষ্মণ তাঁকে অনুসরণ করেন৷ একদা রাম বনের ভেতরে শরভঙ্গ মুনির দর্শনাভিলাষী হন৷ সেই
আশ্রমে রামচন্দ্রের সঙ্গে এক সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎ হয়৷
আরও পড়ুন:
ইংলিশ টিংলিশ: জানেন কি ‘night owl’ বা ‘early bird’ কাকে বলে? কিংবা তিনতলাকে কেন ‘second floor’ বলে?
খাই খাই: শীতের আমেজে লোভনীয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা? রেস্তরাঁর মতো ঝটপট বানিয়ে ফেলুন সুখা মরিচ মাটন
সন্ন্যাসী রামচন্দ্রকে দর্শন করা মাত্রই বুঝতে পারেন ভগবান বিষ্ণুর নররূপী অবতার তিনি৷ সন্ন্যাসী রামচন্দ্রকে বলেন, পূর্বদেশের দক্ষিণভাগে (বাংলাদেশ) শ্রীচন্দ্রশেখর শিবের অধিষ্ঠান৷ চন্দ্রনাথ পর্বতে মহামুনি ভার্গব সীতার নামে একটি কুণ্ড সৃষ্টি করেছেন৷ আপনাকে আমি সেখানে নিয়ে যাব৷ এরপর রামচন্দ্র সকলের সঙ্গে মহামুনি ভার্গবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন৷
আশ্রমের অনতিদূরে এক অপূর্ব কুণ্ড৷ ভার্গব মুনির সঙ্গে রামচন্দ্র কথা বলছেন৷ এমন সময় সীতা সকলের অলক্ষে ওই কুণ্ডের কাকচক্ষু জলে প্রবেশ করলেন৷ জলস্পর্শ করা মাত্রই সীতাদেবীর রূপের পরিবর্তন হল৷ তিনি অষ্টভুজা ত্রিনয়নী দেবীরূপে প্রকাশিত হলেন৷ দেবী সকলের নিকট পরিচিত হলেন ‘মহাবাড়ব’ নামে৷
শ্রীরামচন্দ্রের হঠাৎ খেয়াল হল, সীতা পাশে নেই৷ মুনির কাছ থেকে জানলেন সীতা কুণ্ডের ভেতরে নেমেছেন৷ কিন্তু সীতা তাঁর আগের রূপ নিয়ে কুণ্ড থেকে উঠে আসছেন না কেন? শ্রীরামচন্দ্র অধৈর্য হয়ে মুনিবরকে বললেন হে মহামুনি ভার্গব, এই কুণ্ড আমার প্রিয় সীতাকে হরণ করেছে৷ তাই আমি অভিশাপ দিচ্ছি, কলিযুগে চার হাজার বছর পর্যন্ত প্রকাশিত থেকে এই কুণ্ড মানুষের দৃষ্টিতে অদৃশ্য থাকবে৷
শ্রীরামচন্দ্রের এই শাপবাক্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সীতা কুণ্ড থেকে উঠে আসেন৷ এই ঘটনার পর রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ স্বয়ম্ভুলিঙ্গ ও চন্দ্রশেখর দর্শন করে গোদাবরী নদী অভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন৷
আগে যেখানে সীতাকুণ্ড ছিল তা এখন প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে৷ এখানেই রাম-সীতার মন্দির৷ পর্বতের এক সু-উচ্চ স্থান থেকে জলধারা নেমে আসে৷ কুণ্ড না থাকায় সেখানে জল জমতে পারে না৷ এই জল ক্ষীণধারা হয়ে বয়ে যায়৷
সীতাকুণ্ডে অনেক হিন্দুর বাস৷ ফেরার পথে লেভেল ক্রসিংয়ের কিছুটা আগে, ত্রিনাথ মন্দিরের উলটোদিকে দুর্গাপুজোর কংক্রিটের স্থায়ী মঞ্চ দেখে পাড়ায় একটু খোঁজখবর করতেই মাথায় ঘোমটা টেনে কয়েকজন হিন্দু রমণী তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন৷ সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর৷ কপালে বড় করে সিঁদুরের টিপ৷ তাঁরা আমার পরিচয় জেনে হাসিমুখে বেশ উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ‘কলকাতায় গিয়া ভালো কইরা কাগজে লিখবেন আমরা এখানে প্রতি বচ্ছর খুব ধুমধাম কইরা পূজা করি৷ ফুলে ফুলে সাজাইয়া তোলা হয় এই মঞ্চ আর মায়েরে৷’
চৈত্রের চড়া রোদ৷ সেই রোদ অবহেলা করে মিনিবাস আকৃতির মান্ধাতা আমলের একটা বাসে চট্টগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে এসে যখন পৌঁছলাম শরীরে আর শক্তি নেই৷ পাহাড়ি পথে হাঁটার ধকল কম নয়৷ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে এসে শুনলাম, তাপসবাবু অর্থাৎ তাপস হোড় আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য বিকেলের দিকে আসবেন৷
‘বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপসবাবু৷ সত্যি বলতে কি, পরিচয়ের পর মনে হল, তাপসবাবুর মতো এত প্রাণবন্ত ও পরিশ্রমী মানুষ তো এ জীবনে বড় একটা দেখিনি৷
আশ্রমের অনতিদূরে এক অপূর্ব কুণ্ড৷ ভার্গব মুনির সঙ্গে রামচন্দ্র কথা বলছেন৷ এমন সময় সীতা সকলের অলক্ষে ওই কুণ্ডের কাকচক্ষু জলে প্রবেশ করলেন৷ জলস্পর্শ করা মাত্রই সীতাদেবীর রূপের পরিবর্তন হল৷ তিনি অষ্টভুজা ত্রিনয়নী দেবীরূপে প্রকাশিত হলেন৷ দেবী সকলের নিকট পরিচিত হলেন ‘মহাবাড়ব’ নামে৷
শ্রীরামচন্দ্রের হঠাৎ খেয়াল হল, সীতা পাশে নেই৷ মুনির কাছ থেকে জানলেন সীতা কুণ্ডের ভেতরে নেমেছেন৷ কিন্তু সীতা তাঁর আগের রূপ নিয়ে কুণ্ড থেকে উঠে আসছেন না কেন? শ্রীরামচন্দ্র অধৈর্য হয়ে মুনিবরকে বললেন হে মহামুনি ভার্গব, এই কুণ্ড আমার প্রিয় সীতাকে হরণ করেছে৷ তাই আমি অভিশাপ দিচ্ছি, কলিযুগে চার হাজার বছর পর্যন্ত প্রকাশিত থেকে এই কুণ্ড মানুষের দৃষ্টিতে অদৃশ্য থাকবে৷
শ্রীরামচন্দ্রের এই শাপবাক্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সীতা কুণ্ড থেকে উঠে আসেন৷ এই ঘটনার পর রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ স্বয়ম্ভুলিঙ্গ ও চন্দ্রশেখর দর্শন করে গোদাবরী নদী অভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন৷
আগে যেখানে সীতাকুণ্ড ছিল তা এখন প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে৷ এখানেই রাম-সীতার মন্দির৷ পর্বতের এক সু-উচ্চ স্থান থেকে জলধারা নেমে আসে৷ কুণ্ড না থাকায় সেখানে জল জমতে পারে না৷ এই জল ক্ষীণধারা হয়ে বয়ে যায়৷
সীতাকুণ্ডে অনেক হিন্দুর বাস৷ ফেরার পথে লেভেল ক্রসিংয়ের কিছুটা আগে, ত্রিনাথ মন্দিরের উলটোদিকে দুর্গাপুজোর কংক্রিটের স্থায়ী মঞ্চ দেখে পাড়ায় একটু খোঁজখবর করতেই মাথায় ঘোমটা টেনে কয়েকজন হিন্দু রমণী তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন৷ সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর৷ কপালে বড় করে সিঁদুরের টিপ৷ তাঁরা আমার পরিচয় জেনে হাসিমুখে বেশ উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ‘কলকাতায় গিয়া ভালো কইরা কাগজে লিখবেন আমরা এখানে প্রতি বচ্ছর খুব ধুমধাম কইরা পূজা করি৷ ফুলে ফুলে সাজাইয়া তোলা হয় এই মঞ্চ আর মায়েরে৷’
চৈত্রের চড়া রোদ৷ সেই রোদ অবহেলা করে মিনিবাস আকৃতির মান্ধাতা আমলের একটা বাসে চট্টগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে এসে যখন পৌঁছলাম শরীরে আর শক্তি নেই৷ পাহাড়ি পথে হাঁটার ধকল কম নয়৷ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে এসে শুনলাম, তাপসবাবু অর্থাৎ তাপস হোড় আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য বিকেলের দিকে আসবেন৷
‘বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপসবাবু৷ সত্যি বলতে কি, পরিচয়ের পর মনে হল, তাপসবাবুর মতো এত প্রাণবন্ত ও পরিশ্রমী মানুষ তো এ জীবনে বড় একটা দেখিনি৷
আরও পড়ুন:
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৪: বাংলার শুঁটকি মাছের চাহিদা সর্বত্র, এখনকার বিশেষভাবে প্রস্তুত শুঁটকি অনেক বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরা
সময় নষ্ট নয়, আলাপের পরই বললেন, ‘চলুন আমরা বেরিয়ে পড়ি৷’ কোথায় যাব সেসব জিজ্ঞাসা করার আগেই একটা সাইকেল-রিকশ ঠিক করে ফেলেছেন৷ যেতে যেতে বললেন, ‘আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে কীভাবে বেঁচে আছি মাঝে মাঝে ভাবতে অবাকই লাগে৷ আমাদের সব্বাই মিলে শোষণ করছে৷’ তাপসবাবুর মুখেই শুনলাম, বাংলাদেশে এখন ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ হিন্দু, বৌদ্ধ ৫ লক্ষ ও খ্রিস্টান দেড় লক্ষ৷
তাপসবাবু গল্প করতে করতে বললেন, ‘আমাদের ঐক্য পরিষদের সদর দপ্তর তো ঢাকায়৷ ওখানে সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সেন্ট্রাল কমিটির সেক্রেটারি কাজল দেবনাথের সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছু জানতে পারবেন৷’
শুনলাম, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঐক্য পরিষদের দুটো করে শাখা অফিস রয়েছে৷ অর্থাৎ মোট চারটে কমিটি দু’জায়গায়৷ পরিষদের সাংগঠনিক জেলা ৭০টি৷
তাপসবাবু বললেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে জেলা-উপজেলার সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে যে হিংসা ও অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়, তার বিরুদ্ধে ঐক্য পরিষদ মিছিল-মিটিং করে৷ আমাদের প্রতিবাদ চলতেই থাকে৷ চট্টগ্রাম শহরে আমাদের একেকটা মিছিলে কম করেও পাঁচ-সাত হাজার মানুষ যোগদান করে৷ এই শহরে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হিন্দু৷’
জিজ্ঞাসা করলাম, সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা বা অসমে পালিয়ে যাচ্ছে কেন?
তাপসবাবু বললেন, আমরা সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি যাতে হিন্দুরা ভয় পেয়ে ওপার বাংলায় পালিয়ে না যায়৷ রুখে দাঁড়াতে না পারলে লাভ নাই৷ আসলে আত্মবিশ্বাসটা আগে আনতে হবে৷ যেহেতু কোনো কোনো জেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া, অনেক হিন্দুই পালিয়ে বাঁচে৷
মাস্টারদা সূর্য সেন চেয়েছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষ৷ কিন্তু তা আর হল কই? দেশটা আজ কয়েক টুকরা হয়ে গ্যাছে৷ হানাহানির কোনও হিসাবনিকাশ নাই৷ সন্দেহে ভরা সক্কলের চোখ৷ এর হাত থেকে পরিত্রাণ কীভাবে মিলব কেউ জানে না৷ মাস্টারদার সঙ্গী ছিলেন শ্রদ্ধেয় বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরি মহাশয়৷ তিনি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ১০৪ বছর বয়সে ইন্ডিয়ায় মারা যান৷ তাঁর নামে একটি স্মারক গ্রন্থও প্রকাশ করেছি আমরা৷
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
তাপসবাবু গল্প করতে করতে বললেন, ‘আমাদের ঐক্য পরিষদের সদর দপ্তর তো ঢাকায়৷ ওখানে সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সেন্ট্রাল কমিটির সেক্রেটারি কাজল দেবনাথের সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছু জানতে পারবেন৷’
শুনলাম, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঐক্য পরিষদের দুটো করে শাখা অফিস রয়েছে৷ অর্থাৎ মোট চারটে কমিটি দু’জায়গায়৷ পরিষদের সাংগঠনিক জেলা ৭০টি৷
তাপসবাবু বললেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে জেলা-উপজেলার সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে যে হিংসা ও অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়, তার বিরুদ্ধে ঐক্য পরিষদ মিছিল-মিটিং করে৷ আমাদের প্রতিবাদ চলতেই থাকে৷ চট্টগ্রাম শহরে আমাদের একেকটা মিছিলে কম করেও পাঁচ-সাত হাজার মানুষ যোগদান করে৷ এই শহরে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হিন্দু৷’
জিজ্ঞাসা করলাম, সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা বা অসমে পালিয়ে যাচ্ছে কেন?
তাপসবাবু বললেন, আমরা সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি যাতে হিন্দুরা ভয় পেয়ে ওপার বাংলায় পালিয়ে না যায়৷ রুখে দাঁড়াতে না পারলে লাভ নাই৷ আসলে আত্মবিশ্বাসটা আগে আনতে হবে৷ যেহেতু কোনো কোনো জেলা ভারতের সীমান্ত লাগোয়া, অনেক হিন্দুই পালিয়ে বাঁচে৷
মাস্টারদা সূর্য সেন চেয়েছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষ৷ কিন্তু তা আর হল কই? দেশটা আজ কয়েক টুকরা হয়ে গ্যাছে৷ হানাহানির কোনও হিসাবনিকাশ নাই৷ সন্দেহে ভরা সক্কলের চোখ৷ এর হাত থেকে পরিত্রাণ কীভাবে মিলব কেউ জানে না৷ মাস্টারদার সঙ্গী ছিলেন শ্রদ্ধেয় বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরি মহাশয়৷ তিনি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ১০৪ বছর বয়সে ইন্ডিয়ায় মারা যান৷ তাঁর নামে একটি স্মারক গ্রন্থও প্রকাশ করেছি আমরা৷
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সৌজন্যে দীপ প্রকাশন
* বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে (Bangladesher Jagrata Mondire Mondire) : সুমন গুপ্ত (Suman Gupta), বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক।