শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


‘তোমার দীর্ঘশ্বাসের নাম চণ্ডীদাস
শতাব্দী কাঁপানো উল্লাসের নাম মধুসূদন
তোমার থরোথরো প্রেমের নাম রবীন্দ্রনাথ
বিজন অশ্রুবিন্দুর নাম জীবনানন্দ
তোমার বিদ্রোহের নাম নজরুল ইসলাম।’

সত্যি তো! বাঙালির দীর্ঘশ্বাস থেকে উচ্ছ্বাস সবেতেই
মিশে রয়েছে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণের আবেগ। সহজপাঠের সরল যাপনের ছন্দই হোক বা মধুসূদনের অমিত্রাক্ষরের বজ্রগম্ভীর অভিব্যক্তি, যাত্রাপথের আপাদমস্তক জুড়ে কেবল আমাদের যেন আদরে, আবেগে বেঁধে রাখে আমাদের স্বপ্ন দেখার ভাষা, বাংলা ভাষা। বাঙালির এই আদিম আবেগ যে কতটা সহজাত তা বুঝতে ভুল করে ফেলেছিল স্বাধীনতা পরবর্তী জাত পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন পাক-সরকার। আসলে এই ভুলের শিকড় যে বড় বেশি গভীরে প্রোথিত, আর সেই ভুলের আদত কথাই হল কেবলমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে একটা দেশের হৃৎপিণ্ডের ব্যবচ্ছেদ ঘটানোর মতো এক নির্মম সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। এই ভুলের খেসারত ইতিহাসকে দিতে হয়েছে বারবার। কেবলমাত্র ভাষার জন্যে বাঁচবে বলে সেদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণের বিনিময়ে লড়ে গিয়েছিল। আশা, কেবল নিজের ভাষায় স্বাধীনভাবে বাঁচা। এই আশা থেকেই জন্ম নিয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা’।

‘বাংলাদেশ’-এর জন্মের পেছনে যে মানুষটির নিঃস্বার্থ অবদান রয়েছে তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের দাবিতে সোচ্চার মুজিব ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ১১ বছর কারাবন্দি ছিলেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ সাফল্যের মুখ দেখেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে। শেখ মুজিবর রহমানের আত্মজীবনী নিয়ে এবার রুপোলি পর্দায় আসতে চলেছেন বিশিষ্ট পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হতে চলেছে এই ছবি। বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০২২ মুম্বইতে ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এনএফডিসি-তে পোস্টার প্রকাশ করলেন কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। পরিচালকের আন্তরিক উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই৷ ‘পর্দায় শেখ মুজিবর রহমানের মহান জীবন তুলে ধরা কঠিন কাজ ছিল। ‘মুজিব—দ্য মেকিং অব এ নেশন’ আমার কাছে একটি হৃদয়স্পর্শী চলচ্চিত্র। বঙ্গবন্ধুর জীবন রিলে ধরে রাখা একটি অন্যতম কঠিন কাজ, আমরা সেই কাজে কোনওরকম সমঝোতা করিনি। মুজিব ভারতের মহান বন্ধু ছিলেন। আশা করছি পোস্টারটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।’ পাশাপাশি সফলভাবে কাজটি করতে পারার জন্য পরিচালক এনএফডিসির প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। ‘দ্য মেকিং অব এ নেশন’ নিয়ে উচ্ছ্বসিত এনএফডিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুজহাত ইয়াসমিনও।
এই ছবিতে শেখ মুজিবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রাভিনেতা এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আরিফিন সুভি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে নুসরত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী এবং নুসরত হারিয়াকে। ছবির কাহিনিটি রচনা করেছেন অতুল তিওয়ারি এবং শ্যামা জায়দি।

ছবিটির আলোকচিত্রের দায়িত্বে ছিলেন আকাশদীপ এবং সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন অসীম সিনহা। ‘দ্য মেকিং অব নেশন’-এর সংগীত পরিচালনা করেছেন শান্তনু মৈত্র। অতিমারির সময় সমস্ত সরকারি নিয়ম মেনেই ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই ছবির শ্যুটিং হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘দ্য মেকিং অব নেশন’ তার নির্মাণকালীন কাজ শেষ করেছে।

Skip to content