শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

আমকে ভারতে ফলের রাজা বলেই মেনে থাকে সবাই। বাঙালি তো আম নিয়ে ভীষণভাবে নস্টালজিক। আমের সময় ঘরে আম ঢুকে না, এমন বাড়ি নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাটে বাজারে আমের ছড়াছড়ি। আম নিয়ে হাঁক ডাক, কবিতায়, ছড়ায়, গানে, উপন্যাসে আম, আমের বাগান, আমের আঁটি, আমসত্ত্ব, আম্র পল্লব, আম্রকাষ্ঠ, আম্র মুকুল ইত্যাদির বহুল ব্যবহার প্রমাণ করে, আম কতটা জনপ্রিয় বা গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় তথা বাঙালির রোজ নামচায়।
 

আমে কী কী খাদ্যগুণ রয়েছে?

 

কাঁচা আম

বায়ু, পিত্ত, কফ এই তিন দোষের মধ্যে বায়ু ও পিত্ত কে বাড়িয়ে দেয়। তাই যদি পরিমাণ মতো খাওয়া যায় তাহলে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে জঠরাগ্নিকেও উদ্দীপ্ত করে। ফলে ক্ষুধা-মান্দ্য থাকলে ক্ষুধা বাড়ায়, মুখে রুচি আনে। কিন্তু বেশি খেলে অম্লপিত্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমপোড়ার শরবত চিনি সহযোগে ও সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে খেলে বলবর্ধক ও মন মেজাজের স্ফূর্তি বাড়ায়।

আরও পড়ুন:

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: ডায়েরিয়াতে ভুগলে কী করণীয়? রইল আয়ুর্বেদ মতে সহজ সমাধান

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: কাঁচা মিঠে আমের এই সব গুণাগুণ জানতেন?

 

পাকা আম

পাকা আম আবার বায়ুকে শমিত করে, পিত্তকে কমায় এবং কফকে বাড়ায়। অর্থাৎ শরীরকে বায়ু প্রকোপজনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। পুষ্টি যোগায়, দুর্বলতা কমায়, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা, শুক্র ও ওজঃ কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, ফাইসেটিন, আইসোসেটিন, গেলিক্ অ্যাসিড ইত্যাদি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই আমের মধ্যে থাকার ফলে, এটির নানা রকমের ভয়ংকর রোগ যেমন কোলন ক্যানসার, প্রোস্টেট্ ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকায় ক্ষত শোকাতে সাহায্য করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে ঠিক রাখে। সেই সঙ্গে শরীরে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের‌ ঘুড়ি ওড়ানো

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৫: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবপ্রজন্ম-মীনমিত্রের পরামর্শে গ্রামগঞ্জেও মাছচাষ বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে পারে

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৯: উন্নয়নের কাণ্ডারী নির্ণয়ে পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব

যাদের ওজন বেশি, তারা ডায়েট কন্ট্রোল করে অন্যান্য খাদ্যের যেমন ফাষ্ট ফুড ইত্যাদির পরিবর্তে আম খেলে অবাঞ্ছিত ওজন কমতে পারে। আমে থাকা ভিটামিন-এ চোখের রোগে উপকারী। শরীরের অ্যাসিড তথা অ্যালকালির মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পাকা আমের রস ভীষণ কার্য্যকরী। আমে থাকা ডায়েটারি ফাইবার বা তন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে কমিয়ে দিতে পারে। অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ লবণ শরীরকে পোষণ জোগাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে পাঠক সাধারণকে জানানো দরকার যে, সুগার বা ডায়াবেটিসের রোগীরা অল্পমাত্রায় আম খাবেন। বেশি খেলে সুগারের মাত্রা রক্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৯: কুরদার ইকো রিসর্ট—অনাবিস্কৃত এক মুক্তা

স্বাদে-আহ্লাদে: ‘এগ পকেট’ পছন্দ? তা হলে বাড়িতেই বানান সহজ এই রেসিপি

বাজারে বিভিন্ন নামের, বর্ণের, গন্ধের, স্বাদের ও আকৃতির আম পাওয়া যায়। হিমসাগর বা ল্যাংড়া আম যেমন বাঙালিকে ভীষণ টানে, তেমনি ফজলি, আরশিনা, চৌষা, গোপাল ভোগ, মোহন ভোগ, লক্ষণ ভোগ, মিছরি ভোগ ইত্যাদি যে আম পাওয়া যায়, তাদের নাম থেকেই এটা সহজে অনুমেয় যে এই আম খাদ্য রসিকদের কাছে একটি বিশেষ ভোগ। সেই সঙ্গে ঠাকুর দেবতাদের কাছেও ভোগ রূপে গৃহীত হয়। তাই আপামর জনসাধারণ আমের উপর চিরকাল তাদের ভোগ দৃষ্টি রেখে চলেছেন।

সুতরাং আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমের কার্য্যকারিতা খাদ্য রূপে ও শরীর রক্ষার উপাদান হিসাবে স্বীকৃত ছিল আছে ও থাকবে। চরক সংহিতায় ‘সহকার’ হিসাবে আমকে বলা হয়েছে। আম পাতা, আম গাছের ছাল, আমের আঁটিকে ঔষধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং আম জনতা আম খাবেন ও খাওয়াবেন এতে উপকার ছাড়া অপকারিতা নেই।
* বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ (Ayurveda) : ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র (Dr. Pradyot Bikash Kar Mahapatra), অধ্যাপক ও চিকিৎসক, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।

Skip to content