বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

অম্ল গ্যাস বদ হজম কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি পেটজনিত সমস্যায় বেশিরভাগ মানুষই জর্জরিত। ‘গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাস ডিজিস’ একটি অতি পরিচিত সমস্যা জনক পেটের সাধারণ রোগ, যাতে প্রায় কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ মানুষ ভারতে ভুগে থাকেন। এর প্রধান লক্ষণই হল হাইপারঅ্যাসিডিটি বা অতিরিক্ত অ্যাসিড হওয়া। আয়ুর্বেদ মতে, অম্লপিত্ত নামক রোগটি এই হাইপারঅ্যাসিডিটির লক্ষণের সমতুল্য। যখন বায়ু, পিত্ত ও কফ— এই তিন দোষ এর মধ্যে পিত্ত দোষের আধিক্য ঘটে বা পিত্ত দোষটি অস্বাভাবিকভাবে অম্লত্ব প্রাপ্ত হয় তখনই তাকে অম্ল পিত্ত বলা হয়। এটি একটি ক্রনিক পেটের সমস্যা।
 

রোগের কারণ বা নিদান

বেশি টক এবং গরম জিনিস খাওয়া, মদ্যপান, পিঠে, পায়েস ইত্যাদি খাওয়া, আগের খাবার হজম না হওয়া সত্বেও খেয়ে নেওয়া।বেশি ঝাল, তেল, কড়াপাক খাবার খাওয়া , তেলেভাজা ইত্যাদি খাওয়া, অসাত্ম্যকর খাবার যেমন মাছ-মাংসের সঙ্গে দই বা পায়েস খাওয়া, কুলথি কলাই ইত্যাদি বেশি খাওয়া।

মলমূত্রের স্বাভাবিক বেগকে চেপে রাখা, বিষাক্ত বা দূষিত আহার বা পানীয় নেওয়া, অতি চিন্তা বা ক্ষোভ, রাগ, শোক ইত্যাদি কারণে যখন পিত্ত দোষ বেড়ে যায় এবং পিত্তের অন্যান্য গুণ অপেক্ষা অম্ল গুণটি বেশি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। এর ফলে তা পাকস্থলী তথা খাদ্য নালীকে প্রদাহান্বিত করে, তখনই অম্লপিত্ত রোগ হয়ে থাকে।

 

অম্লপিত্ত রোগের প্রকার

অম্ল পিত্ত গতিভেদ অনুসারে দুই প্রকার— এক, উর্দ্ধগ অম্লপিত্ত এবং দুই, অধোগ অম্লপিত্ত। উদ্ধর্গ অম্লপিত্তের মূল লক্ষণ হল হলুদ নীল পিত্তবর্ণ কালো হরহরে জলের মতো পিত্ত বমি মুখ দিয়ে নির্গত হয়। অম্লোদগার হয়, গলা জ্বালা করে, খালি পেটে কিংবা ভরা পেটে যেকোনও সময় বমি হওয়া, বুকে জ্বালা, মাথাব্যথা, হাতে-পায়ে জ্বালা, অরুচি, জ্বর ত্বকে র্যােশ বের হওয়া প্রভৃতি যখন শরীরের ঊর্ধ্ব ভাগে এই বিকার বিশেষ প্রভাব ফেলে তাকে উর্দ্ধগ অম্লপিত্ত বলে।

অধোগ অম্লপিত্তে অতি জল তেষ্টা, দাহ, মাথা ঘোরা, মূর্ছা যাওয়া, ভুল বকা, ইত্যাদি লক্ষণের সাথে হলদে, লাল, কালো, পীত বর্ণের মল নিঃসরণ, অরুচি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ থাকে। এছাড়াও দোষ ভেদে বাতাধিক অম্লপিত্ত, বাতোকফাধিক অম্লপিত্ত এবং কফাধিক অম্লপিত্তের নির্দেশ ও শাস্ত্রে আছে।

আরও পড়ুন:

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল? ঘরে বসেই আয়ুর্বেদ অনুসারে ভালো থাকুন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

ভবিষ্যবাণী, আপনার জীবনে বাস্তুশাস্ত্রের আটটি দিকের গুরুত্ব ঠিক কতটা? জেনে নিন একঝলকে

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৮: ফ্রানজ বেকেনবাওয়ার: মহাকাল তাঁকে মনে রাখবে

 

পরিণতি

যদি অম্ল পিত্ত অল্প দিনের বা নতুন হয় তবে সেটি সাধ্য, অনেক দিনের হলে কষ্টসাধ্য হয। রোগীর নিয়ম মেনে খাদ্য খাবার খাওয়া, চালচলন ঠিকমত পালন করলে অম্ল পিত্ত সারানো সহজ।

আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮: রামচন্দ্রের কৈশোর, ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র: এক অনন্য উত্তরণ

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১২: সকালবেলার আগন্তুক

 

চিকিৎসা

আয়ুর্বেদ মতে, অন্য সব রোগের মতো নিদান বা কারণগুলিকে বাদ দেওয়া বাঞ্ছনীয় অর্থাৎ বেশি ঝাল, টক, গরম খাবার, তেলেভাজা, মশলাদার খাবার, খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকা, বেশি উদ্বেগ, চিন্তা, শোক, রাগ ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। বাড়ির আশেপাশে পাওয়া ঔষধিগুলি যেমন— হরিতকি চূর্ণ, যষ্টিমধু চূর্ণ, ত্রিফলা চূর্ণ, শতাবরী চূর্ণ, নিমপাতা চূর্ণ ইত্যাদি দু’ গ্রাম করে দু’বার খাওয়া যায়। এছাড়া ক্বাথ বা পাচন হিসেবে পটলাদিক্বাথ, পঞ্চতিক্তক্বাথ, বাসাদিক্বাথ ইত্যাদি ১৫ মিলি লিটার করে দিনে দু’বার সমপরিমাণ জল-সহ সকাল ও সন্ধ্যায় খালি পেটে খাওয়া যায়।
 

রসৌষধি হিসাবে

সুতশেখর রস, লীলা বিলাস রস, অম্ল-পিত্তান্তক লৌহ, কামদুধা রস ইত্যাদি ২৫০ মিলিগ্রাম দিনে দুবার খাওয়ানো যেতে পারে।
 

লৌহ

ধাত্রী লৌহ নামে আমলকি ও লৌহভস্ম দিয়ে তৈরি ওষুধ ৫০০ মিলিগ্রাম করে দিনে দু’বার আহারের পূর্বে অথবা আহার চলাকালীন ভাতের সঙ্গে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
 

ঘৃত হিসাবে

শতাবরী ঘৃত, দ্রাক্ষাদ্য ঘৃত, পিপ্পল ঘৃত ইত্যাদি ১০ মিলি লিটার করে দিনে দু’বার উষ্ণ জল-সহ খাওয়া যায়। এছাড়া নারিকেল খণ্ড, পিপলিখণ্ড শুণ্ঠী খন্ড দুধ-সহ পাঁচগ্রাম করে দিনে দু’বার খাওয়া যায়। প্রবাল পিষ্টি, মুক্তা পিষ্টি, শঙ্খ ভস্ম ইত্যাদি ওষুধ ২৫০ মিলিগ্রাম করে দিনে দু’বার মধু-সহ খেলে অম্লপিত্ত সারে।

উপরিউক্ত ঔষধি ছাড়াও আয়ুর্বেদে বমন, বিরেচন ইত্যাদি শোধন চিকিৎসা (ডিটক্সিপ্লিকেশন থেরাপি) অত্যন্ত ফলদায়ী।

আরও পড়ুন:

সাধারণ রোগব্যাধিতে সহজলভ্য আয়ুর্বেদিক ক্বাথ চিকিৎসা

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৯: ‘মেরা কুছ সামান…’ গানে সুর দেওয়ার প্রস্তাবে গুলজারকে পত্রপাঠ বিদায় জানান পঞ্চম

চলো যাই ঘুরে আসি: চুপি চুপি ঘুরে আসি

 

পথ্য

খই, মুগ, যব ইত্যাদির ছাতু, দুধ, মাংসের স্যুপ, পটল, করলা, নিম, শতাবরী, আমলকি হরিতকি, শীতল জল ইত্যাদি।
 

অপথ্য

গুরুপাক, কড়াপাক খাবার, মদ, কচুরি, শিঙাড়া, বেসন, গরম পানীয়, দুপুরে ঘুম, রাত জাগা, মল-মূত্রের সাধারণ বেগ ধারণ।

* বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ (Ayurveda) : ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র (Dr. Pradyot Bikash Kar Mahapatra), অধ্যাপক ও চিকিৎসক, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।

Skip to content