শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

জীবন গতিময়, জটিল ও উদ্বিগ্নতায় পূর্ণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষ এক স্বাচ্ছন্দ ও শান্তিময় জীবনের পরিমণ্ডলে নিজেকে খুঁজে পেতে চায়। এই প্রতিবেদনে যে উপায়গুলি আলোচনা করা হয়েছে, তা দিন কয়েক করলেই কিন্তু ফলোলাভ হবে না। সেই টিপসগুলি নিয়মিত মেনে চললে তবেই একটা সময়ের পর ফলের সত্যতা উপলব্ধি হবে। সেগুলি কী কী?
 

অন্নগ্রহণ

পূর্ব দিকে মুখ করে খেলে আয়ু বৃদ্ধি হয়। দক্ষিণ দিকে মুখ করে খেলে নাম-যশ, আর প্রকৃত ধর্ম উন্নতি চাইলে উত্তর দিকে মুখ করে খেতে বসা উচিত। খুব ভোরে আর সন্ধেবেলায় খেলে রোগ ব্যাধি হয়, মনে অশান্তি বাড়ে। খাওয়ার সময় অন্নের উপরে এক ফোঁটা হলেও গব্য ঘিয়ের ছিটে দিয়ে খেলে আর্থিক দৈন ধীরে ধীরে কেটে যাবে। জীবনের অভাব কখনও হবে না। বিছানায় বসে খেলে রোগ ব্যাধিকে আহ্বান করা হয়। দিনের যেকোনও আহার (প্রাতরাশ বা মধ্যাহ্নভোজন বা নৈশভোজন) পরিবারের সকলের মিলে একসঙ্গে করা উচিত, তাতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ ও শ্রীবৃদ্ধি হয়।

 

নামকরণ

নামই হল মানুষের ভবিষ্যৎ। নামের জোরেই বরাত ফেরে। এমনকি কোন সংস্থা কিংবা পণ্যদ্রব্যের নামকরণের পিছনেও কাজ করে এমনই বিশ্বাস। মেয়েদের নামকরণের ক্ষেত্রে নাম এমন হওয়া উচিত যা উচ্চারণ করা সহজ, শ্রুতিমধুর, অর্থবহ এবং শুভ ইত্যাদি। যে কোনও অবাঞ্ছিত স্থান যেমন স্নানাগার, শৌচাগার, মন্দিরগাত্র, নিজের বাড়ির দেওয়ালে নাম লিখে রাখা অত্যন্ত অশুভসূচক। এতে ব্যক্তির মানহানির আশঙ্কা থাকে। দেব-দেবীর নামে সংসারী মানুষের নাম না রাখা ভালো। উদাহরণস্বরূপ লক্ষ্মী নামের মেয়েকে সম্বোধন করে কেউ কুবাক্য প্রয়োগে গালমন্দ করলেও শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে পরোক্ষে গিয়ে কু-বাক্য আঘাত করে দেব-দেবীকে। কারণ শব্দব্রহ্ম, মানুষ লক্ষ্য হলেও পরোক্ষে রুষ্টা হন দেবী, এতে সমস্যা জীবনের শান্তি বিঘ্নিত হয়।

গৃহে মা লক্ষ্মীর আবাসস্থল ও তুলসী মাহাত্ম্য— গৃহে খাট বা বিছানার ছায়া যেখানে পড়ে আর প্রদীপ জ্বালানোর পর নিচে যেখানে অন্ধকার থাকে সেখানেই বাস করে অলক্ষ্মী। তাই এই দুই জায়গা প্রতিদিন মুছে পরিষ্কার করে রাখলে ঘরে সংসারে মঙ্গল হয়।

আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৫: সারদা দাদার থেকে চিল্পিঘাটি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০: তত্ত্বতালাশ

নারীর কোন অঙ্গে তিল থাকলে শুভ? তিল নাভির নীচে থাকলে কী হয়? জ্যোতিষশাস্ত্র কী বলছে?

তুলসী অতি পবিত্র গাছ। স্বয়ং নারায়ণ অধিষ্ঠান করেন এই গাছে। সমস্ত দ্রব্য ও খাদ্যবস্তু শুদ্ধ হয় তুলসী স্পর্শে, দেহ মন, চিত্ত শুদ্ধ ও পবিত্র হয় তুলসী মালা ধারণে। তুলসী মালা পূর্ণিমা তিথি আর বৃহস্পতিবারে ধারণ করাই শ্রেয়। প্রার্থনা কালে মানুষের প্রাণের সমস্ত বেদনা যদি অশ্রুজল হয়ে তুলসী মায়ের পায়ে ঝড়ে পড়ে তাহলে কোনও বিপদ তাকে ছুঁতে পারে না।

বাড়ির বাইরে যাত্রা করার আগে তুলসী গাছে চরণে বন্দনা করে বেরলে পথে কোনও বিপদের ভয় থাকে না। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তুলসী গাছ দর্শন করলে সমস্ত তীর্থ দর্শনের সমান ফল লাভ হয়। প্রতিদিন সকালে স্নান করে দুধ বা শুদ্ধ জল দিয়ে তুলসী গাছকে অর্চনা করলে (নিম্নলিখিত মন্ত্র সহকারে তিনবার) লক্ষ্মী কখনওই গৃহত্যাগ করেন না।
●মন্ত্র:
ওঁ গোবিন্দ বল্লভং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীং
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং হরিভক্তি প্রদায়িনীম্।।
ওঁ প্রসীদজননী সুখ সৌভাগ্যবর্দ্ধিনী।
আদিব্যাধি হরে নিত্য তুলসী ত্বং নমোস্তুতেঃ।।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩১: মরুভূমির উপল পারে বনতলের ‘হ্রদ’

দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’

ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে? হার্ট ভালো রাখতে রোজের রান্নায় কোন তেল কতটা ব্যবহার করবেন? দেখুন ভিডিয়ো

 

বাস্তুশাস্ত্র মতে গৃহে পুজোরস্থান ও আরাধ্য দেব-দেবী

বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিক অর্থাৎ ঈশান কোণে মাটি থেকে অন্ততপক্ষে এক ফুট উপরে ঠাকুর অথবা দেব দেবীর পুজো আরাধনা সংসারের পক্ষে সার্বিক কল্যাণকর। আর্থিক সুখ সমৃদ্ধির সহায়ক হয়। শোয়ার ঘরে ঠাকুরের সিংহাসন রেখে পূজোপাঠ শুভ হয় না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ অনিবার্য। পারিবারিক জীবন হয় শান্তিহীন। হিন্দু শাস্ত্রে, যেকোনও পুজোর শুরুতে গণেশাদি, পঞ্চ দেবদেবীর পূজার কথা বলা হয়েছে। তাহল যথাক্রমে গণেশ, সূর্যনারায়ণ, শিব ও দুর্গা। বাস্তুশস্ত্র মতে, গৃহে বিদ্রোহের সংখ্যার উপরে কিছু বাধা নিষেধ আছে একের অধিক একই দেবদেবীর মূর্তি গৃহে থাকলে অনিষ্ঠ হবে। বিশেষত গণেশ, শিবলিঙ্গ শালগ্রাম, দূর্গা, গোপাল। মন্দির ও বসতবাড়ির বিগ্ৰহ মূর্তির মধ্যে পার্থক্য থাকবে।

বাড়ির উত্তর-পূর্ব ঠাকুর ঘর সংসারের সার্বিক কল্যাণকর হয়। প্রতিটা ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণে যে কোনও দেবদেবীর ছবি রাখলে সংসারের মঙ্গল হয়। আর্থিক ও সুসমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়। সব দেবদেবীর মুখ পশ্চিম দিকে থাকাটা শুভ। পূজারী বা ভজনকারী বসবে পূর্ব মুখে। মা কালীর মুখ দক্ষিণে থাকা শুভ। বাড়ির দেওয়ালে মাটির অথবা ধাতুর তৈরি কোনও দেবদেবীর গলা পর্যন্ত মুণ্ডু, নটরাজের ছবি বা মূর্তি, উগ্র দেবদেবীর ফটো যেমন: তারা, বগলা, ছিন্নমস্তা, মাতঙ্গী, ধূমাবতী, সাদা অথবা পিঙ্গল বর্ণের শিবলিঙ্গ বা মূর্তি, সাদা গণেশ রাখা অশুভ। রাখলেও একমাত্র পশ্চিম দিকে রাখা উচিত। সারা বাড়িতে মৃত স্বজনদের ফটো টানিয়ে রাখা, ঠাকুরের সিংহাসনে একমাত্র দীক্ষাগুরু ছাড়া অন্য কোনও মৃত ব্যক্তি, এমনকি স্বর্গীয় বাবা-মায়ের ফটো রাখা সাংসারিক জীবনের ক্ষেত্রে বড়ই অকল্যাণকর। সাংসারিক জীবনে উক্ত বিষয়গুলি কোনও না কোনওভাবে শান্তি নষ্টের কারণ। এমনকি অপ্রত্যাশিত বিপদ ও দুর্ঘটনা ডেকে আনে, এ একেবারে পরীক্ষিত সত্য। একই কথা প্রযোজ্য কোনও হিংস্র জীব জন্তু ও ভয়ংকর চিত্র, এমনকি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সংক্রান্ত ছবির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬: রামচন্দ্রের আবির্ভাব ও বসুন্ধরাকন্যা সীতার অনুষঙ্গ

স্বাদে-গন্ধে: রোজকার খাবার একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে? বাড়িতে সহজেই বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালং পনির

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬: পঞ্চম-সভার তিন রত্ন বাসু-মনোহারী-মারুতি

কাঠের আসন যেমন পিঁড়েতে অথবা কাঠের চেয়ারে বসে জপ বা সাধনা করতে নেই। কোনও আসন না পেতে মাটিতে বসে জপ করলে জপকারীর মানসিক, শারীরিক ও সাংসারিক জীবনে নানা ক্লেশ জর্জরিত করে তোলে। হরিণের চামড়ার আসন ও বাঘের চামড়ার আসনে বসে জপ করলে ভৌতিক ও পারলৌকিক বিষয়ের সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয়। বেতের আসনে বসে জপ করলে মনে ও সংসারে শান্তি আসে। তন্ত্র শাস্ত্রে ভেড়ার লোম থেকে তৈরি করা কম্বলের আসনকে শুদ্ধ ও লাভ দায়ী বলা হয় এবং এই আসনে বসে জপ করলে বা ধ্যান করলে মানসিক প্রশান্তি আসে, চঞ্চলতা দূর হয়। তন্ত্র শাস্ত্র অনুসারে কুশের আসন অত্যন্ত পবিত্র ও শুদ্ধ, ভূত-প্রেতের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। পারলৌকিক ক্রিয়া, শ্রাদ্ধ ও তর্পণ ইত্যাদিতে কুশাসন প্রশস্ত।
 

দেবদেবীর পুজোয় ব্যবহৃত ফুল নির্মাল্য

দেব দেবীর গলায় পরানো ফুলের মালা, পরের দিনই খুলে ফেলতে হয়। দিনের পর দিন শুকনো মালা গলায় রাখা উচিত নয়। এতে অপ্রত্যাশিত অর্থ নষ্ট, শুভ কাজে বাধা, পারিবারিক শান্তি নষ্ট ও রোগের পিছনে অর্থ নষ্ট হয়। কোনও পুজোর ফুল জলে ধুয়ে দেব দেবীকে নিবেদন করতে নেই, জলে ধোয়া মাত্র সেই ফুল নির্মাল্য অর্থাৎ আশীর্বাদী ফুল বা প্রসাদ হয়ে যায়। অত্যন্ত উগ্র গন্ধযুক্ত বা গন্ধহীন এবং জবা প্রভৃতি ফুল দিয়ে নারায়ণ পুজো করতে নেই। তুলসী পাতা বেল পাতা এবং দুর্বা কখনও বাসি হয় না। এগুলি একবার নিবেদনের পরের দিনও নিবেদন করা যায়। বোঁটাহীন তুলসী দেব পুজোয় লাগে না। শিব পূজায় তিন ফলক, এক বা দুফলক, খণ্ডিত বা অণ্ডিত যেকোনও বেল পাতাই শুদ্ধ। সমস্ত পুজোয় দূর্বা প্রধান উপকরণ কিন্তু দুর্গাপূজায় নিষিদ্ধ দূর্বা। এই পুজোয় শুধু অর্ঘ্যে দূর্বা দেওয়া যায়। শিবলিঙ্গে কখনও জবা ফুল দিতে নেই।

যোগাযোগ: ৭০৪৪৫৫৮৭৫৬

* ভবিষ্যবাণী (astrology articles): শ্রীময়ী গঙ্গোপাধ্যায়, (Saeemayee Ganguli) বিশিষ্ট জ্যোতিষ, বাস্তু ও সংখ্যাত্ত্ব বিশেষজ্ঞ। কেপি অ্যাস্টোলোজার ও হস্তরেখাবিদ

Skip to content