দ্বারকা। ছবি: লেখক।
সিদ্ধপিঠ তারাপীঠ পুণ্যভূমির পবিত্র নদী দ্বারকা, যার অপর নাম হল বাবলা নদী। এটি ভাগীরথীর একটি উপনদী। অত্যন্ত প্রাচীন এই নদীর তীরে আটলা গ্রামে, সাধক বামাক্ষ্যাপার জন্ম, তারাপীঠে তাঁর লীলা করেছেন এবং এখানেই তাঁর লীলা সংবরণ। বামদেবের জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে এই দ্বারকা নদী।
জনশ্রুতি, বামা একদিন সকালে দ্বারকা নদীতে স্নান করতে নেমেছেন, এমন সময় হঠাৎ নদীর অপর পাড়ে তাঁর ভাই, আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে পেলেন। তাঁরা নদীর পাড়ে চিতার কাঠ সাজাচ্ছিল। দিব্যদৃষ্টিতে সাধক দেখলেন তাঁর মা রাজকুমারী দেবী আর নেই। ওখানে তাঁর মায়ের দাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও বাল্য অবস্থায় তিনি প্রায়ই এই নদীতে সাঁতার কেটে তারামায়ের কাছে চলে আসতেন।
জনশ্রুতি, বামা একদিন সকালে দ্বারকা নদীতে স্নান করতে নেমেছেন, এমন সময় হঠাৎ নদীর অপর পাড়ে তাঁর ভাই, আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে পেলেন। তাঁরা নদীর পাড়ে চিতার কাঠ সাজাচ্ছিল। দিব্যদৃষ্টিতে সাধক দেখলেন তাঁর মা রাজকুমারী দেবী আর নেই। ওখানে তাঁর মায়ের দাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও বাল্য অবস্থায় তিনি প্রায়ই এই নদীতে সাঁতার কেটে তারামায়ের কাছে চলে আসতেন।
ময়ূরাক্ষীর প্রায় ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই দ্বারকা নদী সাঁওতাল পরগনা থেকে উৎপন্ন হয়ে বীরভূমে প্রবেশ করেছে। শেষে ফতেসিং পরগনা পার করে, ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মুর্শিদাবাদে সাঁকোরঘাট নামক একটি স্থানে ব্রাহ্মণীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীটি তারাপীঠ মহাশ্মশানের সামনে দিয়ে উত্তর দিকে বয়ে গিয়েছে। ভক্তপ্রাণ হিন্দুদের মতে, এই নদীর জল নাকি গঙ্গার মতোই পবিত্র। কথিত আছে, বামাক্ষ্যাপারও বহুপূর্বে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ট, এই নদীর তীরে বসে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সুতরাং, এইদিক বিচার করলে বোঝা যায়, নদীটি বহু প্রাচীন।
আরও পড়ুন:
দামোদরের বন্যার কবল থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানকে রক্ষা করতে হলে ভেটিভার ঘাস চাষে জোর দিতে হবে
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৩: কোচ কামতেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য এক অনন্যসাধারণ মিশ্রশৈলীর উদাহরণ
একসময়ের প্রতাপশালী এই নদীর কয়েকটি উপনদী হল—কুলিয়া, বামিনী, ঘাড়মোড়া, চিলা ইত্যাদি। দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা ‘বাংলার নদ-নদী’ বইটিতে বলা হয়েছে, নদীটি পূর্বে যথেষ্ট বেগবান ছিল। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৬.৫ কিমি। বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদীর তীরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হল—বামাক্ষ্যাপার জন্মস্থান আটলা, তারাপীঠ, দেওচা, কান্দি ও কল্যাণপুর ইত্যাদি। এছাড়াও অন্যান্য গ্রামগুলি হলো চাঁন্দিপুর, বিষ্ণুপুর, মারগ্রাম ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন
নদীর গতিপথের মধ্যে ছোট-বড় নুড়ি এবং হলুদ মাটি দেখা যায়। এতে প্রমাণিত হয়, নদীর উৎপত্তি কোনও পাহাড়ি অঞ্চল এবং নদীর গতিপথ কোনও রুক্ষভূমি হতে পারে। কিন্তু, নদীর দু’পাড়ের অববাহিকার মৃত্তিকা বেশি উর্বর এবং তা চাষবাষের পক্ষেও বেশ উপযুক্ত।
নদীর জলকে ধরে রাখার জন্য সিউড়ির কাছে দেউচাতে, দেউচা ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে, যা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল এবং চাষের সময় জল সরবরাহ করে করে থাকে। এই বাঁধের জলধারণ ক্ষমতা এক লক্ষ সত্তর হাজার কিউবিক মিটার। বীরভূমের পাশে অবস্থিত জাতীয় সড়ক-৬০ এর কাছে এই প্রকল্পটি অবস্থিত, যা বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে সবুজ করতে সাহায্য করে।
বর্তমানে তারাপীঠ একটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এর ফলে নদী এবং তার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল দূষিত হচ্ছে। হোটেল, লজ এবং রেস্তোরাঁর বর্জ্য পদার্থ, প্লাস্টিক ইত্যাদি গিয়ে পড়ছে নদীর জলে। ফলে জল দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ ও প্লাস্টিক দূষণে শ্বাসরোধ হয়ে আসছে বর্তমানের ক্ষীণকায়া দ্বারকার। অবৈধভাবে নদী থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বরাবর বালি তোলা হচ্ছে, যা নদীগর্ভে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি করছে এবং নদীর গতিপথ শ্লথ হয়ে যাচ্ছে।
নদীর জলকে ধরে রাখার জন্য সিউড়ির কাছে দেউচাতে, দেউচা ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে, যা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল এবং চাষের সময় জল সরবরাহ করে করে থাকে। এই বাঁধের জলধারণ ক্ষমতা এক লক্ষ সত্তর হাজার কিউবিক মিটার। বীরভূমের পাশে অবস্থিত জাতীয় সড়ক-৬০ এর কাছে এই প্রকল্পটি অবস্থিত, যা বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে সবুজ করতে সাহায্য করে।
বর্তমানে তারাপীঠ একটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এর ফলে নদী এবং তার তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল দূষিত হচ্ছে। হোটেল, লজ এবং রেস্তোরাঁর বর্জ্য পদার্থ, প্লাস্টিক ইত্যাদি গিয়ে পড়ছে নদীর জলে। ফলে জল দূষণ, মৃত্তিকা দূষণ ও প্লাস্টিক দূষণে শ্বাসরোধ হয়ে আসছে বর্তমানের ক্ষীণকায়া দ্বারকার। অবৈধভাবে নদী থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল বরাবর বালি তোলা হচ্ছে, যা নদীগর্ভে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি করছে এবং নদীর গতিপথ শ্লথ হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০: সুন্দরবনের রক্ষয়িত্রী বনবিবি
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন
মানুষের অবৈধ নির্মাণে নদীর পাড় বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর বুকে যেমন জীববৈচিত্র থাকে, ঠিক তেমনিই নদীর পার্শ্ববর্তী পাড়গুলিও অসংখ্য গাছপালা এবং পশুপাখিকে সজ্জিত থাকে। কিন্তু এই অবৈধ নির্মাণের ফলে সমূলে লোপাট হচ্ছে জীববৈচিত্র, ভারসাম্য এবং শ্রী হারাচ্ছে এই পরমা প্রকৃতি।
নিহার মজুমদারের লেখা ‘এবং বাংলার লৌকিক জলযান’ থেকে জানা যাচ্ছে নদীর গতিপথের প্রায় পুরোটাই হচ্ছে নাব্য অর্থাৎ ছোটবড় নৌ চলাচলের উপযুক্ত। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্র এই নদীটির উন্নতিকল্পে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তবে তিনি ব্যতীত কেউই প্রায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য কাজ করে উঠতে পারেননি। নদীটির জীববৈচিত্র এবং তার স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য আরও অনেক কাজের প্রয়োজন। মজে যাওয়া নদীকে ড্রেসিং করতে হবে, বালিখাত বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শীর্ণকায়া এই নদী ক্রমে মজে গিয়ে খাল-বিল নালায় পরিণত হবে, যা মানব সভ্যতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
ঋণ স্বীকার:
● ‘বাংলার ননদী’, দিলীপ কুমার বন্দোপাধ্যায়; দে’জ পাবলিশিং হাউস, কলকাতা।
● ‘এবং বাংলার লৌকিক জলযান’- নিহার মজুমদার; আত্মজা পাবলিকেশন, কলকাতা।
● South Asia Net work on Dams, River and People- A report by Kalyan Rudra, 2016
● O Malley, L.S.S; ICS, Birbhum, Bengal District Gazetteers, P.5, 1995 reprint, Government of West Bengal
● www.anandabazar.com/district/nodia-murshidabbad/river-water-and their-mingling-eyes-for-present-condition-/418674
● murshidabad- District administration ২০০৯-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৯
নিহার মজুমদারের লেখা ‘এবং বাংলার লৌকিক জলযান’ থেকে জানা যাচ্ছে নদীর গতিপথের প্রায় পুরোটাই হচ্ছে নাব্য অর্থাৎ ছোটবড় নৌ চলাচলের উপযুক্ত। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্র এই নদীটির উন্নতিকল্পে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তবে তিনি ব্যতীত কেউই প্রায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য কাজ করে উঠতে পারেননি। নদীটির জীববৈচিত্র এবং তার স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য আরও অনেক কাজের প্রয়োজন। মজে যাওয়া নদীকে ড্রেসিং করতে হবে, বালিখাত বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে শীর্ণকায়া এই নদী ক্রমে মজে গিয়ে খাল-বিল নালায় পরিণত হবে, যা মানব সভ্যতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
ঋণ স্বীকার:
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান। ড. সুনাম চট্টোপাধ্যায়, সহ-শিক্ষক, সাঁচড়া হাই স্কুল, সাঁচড়া, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।