বাঘরোল সংরক্ষণে জোর দিতে হবে।
সাধারণভাবে বন্যপ্রাণী বলতে আমরা বাঘ, সিংহ, গন্ডার, ভাল্লুক ও হাতি ইত্যাদিকেই বুঝি। বন্যপ্রাণের সন্ধানে আমরা বারে বারে ছুটে যাই বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে। কিন্তু কিছু বন্যপ্রাণ এখনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরাজমান আমাদের চতুষ্পার্শ্বে, গ্রামবাংলায় ও শহুরে সবুজতায়। খেকশিয়াল, শিয়াল, বেজি, মেছো বিড়াল ও বাদুড় এখনও ঘুরে বেড়ায় আমাদের বাড়ি, খামারবাড়ি, গোয়ালবাড়ি ও পুকুরের পাড়ে পাড়ে। এরা অবহেলার জীব নয়, পরিবেশগত দিক থেকে বা বাস্তুতন্ত্রে এদের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি আর শিয়ালের ডাক শুনতে শুনতে বাংলার চাষির দল বা রাখালবালক গরুর পাল নিয়ে গ্রামে নিজের গৃহে ফিরছে—এ দৃশ্যয আর খুব বেশি দেখা যায় না। তবে পরিপূর্ণভাবে হারিয়ে যায়নি বাংলার নিজস্ব বন্যপশুর দল। আমাদের রাজ্যপশু বাঘরোল একদা প্রচুর সংখ্যায় ঘুরে বেড়াতো বাংলার প্রান্তে প্রান্তে, জলাশয়ে পারে পারে ইত্যাদি। এরা বাঘ নয় কিন্তু বাঘের মতোই দেখতে তাই এদের নাম বাঘরোল।
সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি আর শিয়ালের ডাক শুনতে শুনতে বাংলার চাষির দল বা রাখালবালক গরুর পাল নিয়ে গ্রামে নিজের গৃহে ফিরছে—এ দৃশ্যয আর খুব বেশি দেখা যায় না। তবে পরিপূর্ণভাবে হারিয়ে যায়নি বাংলার নিজস্ব বন্যপশুর দল। আমাদের রাজ্যপশু বাঘরোল একদা প্রচুর সংখ্যায় ঘুরে বেড়াতো বাংলার প্রান্তে প্রান্তে, জলাশয়ে পারে পারে ইত্যাদি। এরা বাঘ নয় কিন্তু বাঘের মতোই দেখতে তাই এদের নাম বাঘরোল।
গৃহপালিত নয়, তবু এদের নাম গোভাগা। একদা এদের প্রচুর সংখ্যায় পাওয়া যেত খড়িবোনের জঙ্গলে। আজ তারা আইইউসিএন-এর রেড ডাটা লিস্ট-এর অন্তর্গত বিপন্ন প্রাণী। বিড়ালের থেকে কিছুটা বড়, ওজন প্রায় ৭-৮ কেজি এবং লম্বায় ২-৩ ফুট এই প্রাণীটির দেহে কালো-হলুদ ডোরাকাটা দাগ ও দু চোখের পাশ দিয়ে গাল বেয়ে নেমে যায় দুটি কালো দাগ। এদের চার পা তে চারটি থাবা বর্তমান। আমাদের কাছে এদের পরিচিত মেছোবিড়াল হলেও মাছ ছাড়াও এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে গেঁড়ি-গুগলি, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া ও ইঁদুর।
ইঁদুর শিকার করে এরা পরোক্ষভাবে আমাদের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যের উপকার করে। প্রাণীটির জননকাল সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস ও তাদের বাচ্চার জন্ম সময় মার্চ-এপ্রিল মাস। বর্তমান সময়ে তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে জলাভূমি হ্রাস। মাত্র ১৫ বছরে ৪৪ শতাংশ জলাভূমি হ্রাস পেয়েছে। জলদূষণ হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে, বাসযোগ্য স্থান ও খাদ্য-জলের পরিমান্ কমে যাওয়া এবং চোরাশিকারীদের হাতে বহু সংখ্যক বাগরোলের মৃত্যু, বাসস্থানকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া বা হ্যাবিট্যাট ফ্রাগমেন্টস্টেশন ইত্যাদি রাজ্য পশুর সংখ্যা হ্রাসের জন্য বিশেষ দায়ী।
ইঁদুর শিকার করে এরা পরোক্ষভাবে আমাদের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যের উপকার করে। প্রাণীটির জননকাল সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস ও তাদের বাচ্চার জন্ম সময় মার্চ-এপ্রিল মাস। বর্তমান সময়ে তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে জলাভূমি হ্রাস। মাত্র ১৫ বছরে ৪৪ শতাংশ জলাভূমি হ্রাস পেয়েছে। জলদূষণ হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে, বাসযোগ্য স্থান ও খাদ্য-জলের পরিমান্ কমে যাওয়া এবং চোরাশিকারীদের হাতে বহু সংখ্যক বাগরোলের মৃত্যু, বাসস্থানকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া বা হ্যাবিট্যাট ফ্রাগমেন্টস্টেশন ইত্যাদি রাজ্য পশুর সংখ্যা হ্রাসের জন্য বিশেষ দায়ী।
আরও পড়ুন:
প্রাণঘাতী হতে পারে ধূপের ধোঁয়া
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩১: সুন্দরবনের ঐতিহ্য গঙ্গাসাগরমেলা ও কপিল মুনির আশ্রম
পৃথিবীতে এদের সংখ্যা বর্তমানে দশ হাজারে নেমে এসেছে। এই প্রাণীগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেলেও ভারতবর্ষই তাদের আদি বাসস্থান। তার মধ্যে হাওড়া এবং হুগলি জেলাতে সর্বাধিক মাত্রায় বাগরোল পাওয়া যেত। কিন্তু হাওড়া জেলাতেই কেবল সাতাশটি বাঘরোল হত্যা করা হয়েছিল ২০১০-১১ সালে। নানান কুসংস্কার ও বাঘের ভীতি থেকেই বাঘরোল হত্যা করা হচ্ছে নির্বিচারে। ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে কোন বন্যপ্রাণ হত্যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজারড স্পিসিস’ বা ‘সাইটস’ প্রাণীটিকে অ্যাপেন্ডিক্স-২ তে স্থান দিয়েছে। প্রাণীটিকে কোনও দেশই ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৮: শান্তা দেবী— এক মহীয়সী!
বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি কলকাতার সল্টলেকে একদল মানুষ বাঘরোল বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। রেড পান্ডার মতো বিশ্বব্যাপী ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ পদ্ধতিতে তাদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে ‘ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ জ্যু এন্ড অ্যাকোয়ারিয়া অ্যান্ড আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ জ্যু এন্ড অ্যাকোয়ারিয়াম’। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এক্স সিটু ও ইন সিটু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার ন্যায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্থানে তাদের দত্তক নেওয়া হচ্ছে। যে সকল মহানুভব ব্যক্তি দত্তক নেন, তাঁরা প্রাণীটির সকল প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৬: যুগান্তরেও সম্মানিতা হন সীতা, তাঁর বনবাস গমনের সিদ্ধান্তে কী তার কোনও প্রভাব আছে?
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১০: রেমন্ড কোপা এক কিংবদন্তি ফুটবল বাদশা
আনন্দের ব্যাপার হল, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত তথা প্রায় সমগ্র পৃথিবীতেই পশুপ্রেমীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিয়ম আরও কঠিন হোক। বাঘরোল হত্যার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সেই সঙ্গে অপরাধী জেলও হোক। বাগরোল এর প্রিয় বাসস্থান হোগলা বন বা খড়ি বন, এই এগুলি বৃদ্ধির ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হোক বনদপ্তর। আশার বাণী হলো, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বনদপ্তর ও ফিশিং ক্যাট প্রজেক্ট নানা প্রচারের আয়োজন করছে। এর উদ্দেশ্য একটি যাতে কোন স্থানে যদি প্রাণীটি ধরা পড়ে তাহলে যাতে আহত ও হত্যা না করা হয় এবং বনদপ্তর যথাসময়ে খবর দেওয়া হয় প্রাণীটিকে উদ্ধারের জন্য। এই প্রক্রিয়া সাড়া মিলছে ভাঙ্গড়, সোনারপুর, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা ইত্যাদি এলাকায়। এইভাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সমগ্র্র বাংলা তথা ভারতব্যাপী বাঘরোল বৃদ্ধি পাবে এই আশা করা যায়।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।