শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

বর্তমান যুগে ‘বাতরক্ত’ নামে এই রোয়গটিতে অসংখ্য পুরুষ ও মহিলাকে ভুক্তে দেখা যায়, এই অসুস্থতা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ‘গাউট’ বা ‘গাউটি আর্থারাইটিস’ এর সমতুল্য। এতে সাধারণত ছোট ছোট সন্ধিগুলি যেমন পা ও হাতের আঙ্গুলের সন্ধি কব্জি বা কনুইয়ের সন্ধি অথবা অন্যান্য অনেক সন্ধিতে লাল ভাব, ব্যথা, ফোলা, প্রদাহ দেখা যায়। বিশেষ ভাবে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের সন্ধি প্রায়শঃ প্রথমে ফোলে। আধুনিক মতে, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা যদি বাড়ে বা পিউরিন মেটাবলিজম যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, যার ফলে ‘ইউরেট ক্রিস্টাল’ সন্ধিস্থানে জমে যায় ও এই প্রদাহের পরিস্থিতি তৈরি করে। সারা পৃথিবী তথা ভারতে ও প্রতি হাজারে পাঁচজনের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে মহিলার থেকে পুরুষের সংখ্যা অধিক।সাধারণতঃ ভারতীয় পরিবেশে প্রতি ১০০ মিলি লিটার রক্তে যদি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা মেয়েদের ক্ষেত্রে ৬ মিলিগ্রামের বেশী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে সাড়ে ৬ গ্রামের বেশী হয় তাহলে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়।
 

রোগের কারণ বা নিদান

আয়ুর্বেদ মতে, খাদ্য খাবারের অনিয়ম, জীবনশৈলীর অসঙ্গতি ইত্যাদি কারণে বায়ু যখন প্রকুপিত হয়, সঙ্গে রক্ত দূষিত হয় তখনই প্রদূষিত ও প্রকুপিত রক্ত বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে ত্বক, মাংস, অস্থি, সন্ধি ইত্যাদি স্থানে উপস্থিত হয়ে ব্যথা, ফোলা এবং প্রদাহের ন্যায় অবস্থা তৈরি করে। বেশি ঝাল, টক, শুকনো, রুক্ষ, স্নিগ্ধ এবং উষ্ণ খাবার, মদ্য, সামুদ্রিক মাছ, দই, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, মশলাদার খাবার, তেলে ভাজা, মাংস, বাসি ও পচা বা ফার্মেন্টেড খাবার, নানারকম অস্বাস্থ্যকর আহার, সঙ্গে রাত জাগা, বেশি সফর করা, পরিশ্রম করা, অত্যধিক শীতল জলে স্নান করা, শীতল বায়ুর সংস্পর্শে থাকা, রোদে ঘোরা ইত্যাদি ত্রুটিপূর্ণ জীবনশৈলীর সংযোগ বায়ু এবং রক্ত উভয়কে প্রকুপিত ও প্রদূষিত করে এই রোগ আনে।

আরও পড়ুন:

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: আমবাতের সমস্যায় ভুগছেন? ভালো থাকবেন এই ঘরোয়া উপায়গুলি মেনে চললে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল

ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?

 

লক্ষণ

আয়ুর্বেদ মতে, এই রোগ দুই প্রকার। একটি হল, উত্তান বাতরক্ত (সুপার ফিসিয়াল গাউট)। যেখানে ত্বক ও মাংসে লাল দাগ, ফোলা ও ব্যথা থাকে। অপরটি, গম্ভীর বাতরক্ত (ডিপ গাউট)। এক্ষেত্রে ছোট ছোট অস্থিসন্ধি যেমন হাতের আঙ্গুল, পায়ের আঙুল, মনিবন্ধ সন্ধি, কনুইয়ের সন্ধি, কখনও কখনও মাঝারি এবং বড় বড় সন্ধিতেও লাল লাল দাগ-সহ ফোলা, ব্যথা, উষ্ণভাব, বেদনা, জ্বরজ্বর ভাব, চলার অক্ষমতা, অরুচি ইত্যাদি দেখা যায়।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩: ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছিল পঞ্চমের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১১: বন থেকে বনান্তরে

যেহেতু আয়ুর্বেদের চিকিৎসাতে নিদান বা রোগের কারণ গুলিকে বাদ রাখা প্রথম কর্তব্য। তাই রোগীকে উপরে বলা যে সমস্ত আহার সম্বন্ধীয় এবং জীবনশৈলী সম্পর্কিত কারণ গুলি বলা আছে তা পরিবর্জন করতে হবে। কিছু প্রলেপ যেমন, দেবদারু, যষ্টিমধু ইত্যাদি বেটে ফোলা এবং ব্যথার জায়গায় লাগালে দাহ ও ব্যথা কমে। চূর্ণ ঔষধের মধ্যে ত্রিফলা চূর্ণ, গুডুচ্যাদি চূর্ণ, চোপচিন্যাদি চূর্ণ দেড় গ্রাম করে দু’ বার দেওয়া যাবে।

পাচন ও ক্বাথ হিসাবে গুডুচ্যাদি ক্বাথ, পটোলাদি ক্বাথ, মহারাস্নাদি ক্বাথ ২০মিলি লিটার করে সকাল ও সন্ধ্যা দু’বার দেওয়া যায়।

কৈশোর গুগগুলু, অমৃতাদি গুগশুলু ইত্যাদি ৫০০ মিলিগ্রাম দু’বার গরম জল-সহ দেওয়া যায়। রস ঘটিত ওষুধের মধ্যে মহাতালেশ্বর রস, মাণিক্য রস ইত্যাদি ১২৫ মিলিগ্রাম দিনে দু’বার মধু-সহ দেওয়া যায়।

মালিশের জন্য তেল। গুডুচ্যাদি তৈল, চন্দনাদি তৈল ইত্যাদি দিনে দু’ বার দেওয়া যায়।

উপরের ঔষধিগুলি সাধারণতঃ শমন ঔষধি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আয়ুর্বেদে শরীরকে শোধন (ডিটক্সিফিকেশন) করার কিছু প্রক্রিয়া বলা আছে। যেমন, স্নেহন ( ঔষধি যুক্ত ঘি বা তেল পান করা বা মাখা) ,বিরেচন (পায়খানা করিয়ে মল নিস্কাশন) বস্তি (পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধি প্রয়োগ) ইত্যাদি উপযোগ করা যায়। তাহলে রোগীকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১১: লিকার চা খাওয়া কি সত্যই শরীরের পক্ষে ভালো?

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৭: অ্যাকোয়াপোনিক্স প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎকৃষ্টমানের মাছ এবং গাছ বেড়ে উঠতে পারে

স্বাদে-আহ্লাদে: কুলের আচারের নাম শুনলে জিভে জল আসে? রইল সহজ রেসিপি

 

পথ্য

সহজপাচ্য খাবার, পুরানো যব, গম, তেলাকুচা, পটল, নিম, নিষিন্দা, গাজর, সজনেডাঁটা, হিঞ্চে শাক, পুনর্নভা শাক ইত্যাদি।
 

অপথ্য

মদ্য, মাংস (রেড মিট), আনুপ মাংস (জলজ প্রাণীর মাংস), তেলেভাজা, দই, ফার্মেন্টেড ইক্ষু রস, খেজুর রস, সামুদ্রিক মাছ, রোদে ঘোরা ইত্যাদি।

* বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ (Ayurveda) : ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র (Dr. Pradyot Bikash Kar Mahapatra), অধ্যাপক ও চিকিৎসক, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।

Skip to content