ছবি প্রতীকী।
শ্রমের মূল্য
ত্রিশ বছরের টানাপোড়েনের
সংসার জীবনকে একদিন
ধুত্তেরি বলে ইতি টেনেছিল
রমা, সোমা, ইতুরা।
এতদিন ধরে বয়ে, টেনে আনা স্বামীদের তারা
বলতে পেরেছিল, অনেক দিন গেছে তাদের জীবনের,
বাকি কটা দিন না হয়
কাটালাম নিজেদের মতো করে।
সমাজ নাকি কেঁদে বলেছিল, এরকম একদম হয় না।
এত বছরের আপসের দাম্পত্যের অভ্যেস যায় না যে সহজে ছেঁড়া।
ইতু সোমারা তাই মোচা ছাড়ানো কালো আঙ্গুল তুলে যুক্তি দিয়েছিল বহু ব্যবহারে জীর্ণ রান্নাঘরের কাপড়ের টুকরো তুলে,
দাম্পত্য আজ নানা ব্যবহারে, ভাঁজে ওই কাপড়ের মতো জীর্ণ।
টান দিলে হুড় হুড় করে বেনো জল ঢোকার মতো ছিঁড়ে যায়,
আর জোড়া লাগে না।
রান্না ঘরের দেয়ালে ক্রমে পলেস্তারা খসে, কল পাড়ে শেওলা।
দাম্পত্য তাদের শুধু ব্যবহার করে গেছে
মাসের খরচ সীমিত উপায়ে চালানোর জন্য,
বৃদ্ধ মা বাবাদের দিন রাত এক করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেখার জন্য,
বাচ্চাদের সমাজের মানুষের মতো মানুষ করার জন্য,
রাতের বিছানায় দিনের পর দিন দাম্পত্য কে তুষ্ট রাখার জন্য,
যেন মনে হয় আকাশের চাঁদ, তারা, সূর্যদের ও যাতে দেখা যায়,
সকলের কাছে পরিষ্কার, এই নারীদের করে যেতে হবে
ওই ছেঁড়া কাপড় দিয়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার।
রমা সোমা ইতুরা
দাঁড়ায় আদালতে,
বলে ধর্মাবতার কেন আমরা পাবো না অধিকার?
আমাদের শ্রমের কি নেই কোনও সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মূল্য?
মার্ক্স বলে গেছেন মাথা আর শরীর দিয়ে অর্থ উপার্জন না করলে হবে না সে কাজ!
তা হলে ধর্মাবতার,
আমাদের শ্রম কি বৃথা? হারিয়ে যাওয়া রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া কাপড়ের মতো?
শুধুই কি সেগুলো সময়ে সময়ে ব্যবহার হবে তারপর গরমজল, সাবানে কেচে ধুয়ে ফেলে দিতে হবে পাপ বিদায়ের মতো?
উত্তর এখনও আসেনি।
বাজারের নমিতা,
তার স্বামী চলে গেছে কবে।
কোথায় চলে গেছে নতুন বিয়ে করে, খবর রাখে না সে।
জানে শুধু তাকে খেতে দিতে হবে শাবকদের,
যাদের সে এই পৃথিবীতে কীভাবে এনেছিল, জানে না পরিষ্কার করে।
খেতে দিতে হবে সে জানে মোটা চালের ভাত, শাক পাতা।
বাজারের এক ভাঙাচোরা কোণে কোনওমতে লড়াই করে একটা ফুলের দোকান দিয়েছে সে।
সারাদিন কাজ করে, সন্ধ্যেতে দোকানে ঝিম মেরে বসে থাকে।
শরীর আর মন দুই ক্ষয়ে যায় সাবানের আগে।
শুনে যায় বড়, ছোট, মেজো মানুষের কারবার।
যায় না সে ধর্মাবতারের কাছে।
চায় না সে মূল্য ফেরৎ তার নিগড়ে নেওয়া শ্রমের।
লড়াই কি তাহলে সে লড়ে না এই জগৎ সংসারে?
সে কি এক গোলে যাওয়া অবয়বহীন যন্ত্রণা?
সমাজ বলছে না সে কথা একবারও,
মানছে না কোনও আবেদন,
ক্ষারীয় দ্রবণে ক্ষয়ে যাচ্ছে সমাজের কাঠামো,
ধর্মাবতার খুজেঁ চলেছেন সমাধান,
এখনও উত্তর অসমাপ্ত।
ত্রিশ বছরের টানাপোড়েনের
সংসার জীবনকে একদিন
ধুত্তেরি বলে ইতি টেনেছিল
রমা, সোমা, ইতুরা।
এতদিন ধরে বয়ে, টেনে আনা স্বামীদের তারা
বলতে পেরেছিল, অনেক দিন গেছে তাদের জীবনের,
বাকি কটা দিন না হয়
কাটালাম নিজেদের মতো করে।
সমাজ নাকি কেঁদে বলেছিল, এরকম একদম হয় না।
এত বছরের আপসের দাম্পত্যের অভ্যেস যায় না যে সহজে ছেঁড়া।
ইতু সোমারা তাই মোচা ছাড়ানো কালো আঙ্গুল তুলে যুক্তি দিয়েছিল বহু ব্যবহারে জীর্ণ রান্নাঘরের কাপড়ের টুকরো তুলে,
দাম্পত্য আজ নানা ব্যবহারে, ভাঁজে ওই কাপড়ের মতো জীর্ণ।
টান দিলে হুড় হুড় করে বেনো জল ঢোকার মতো ছিঁড়ে যায়,
আর জোড়া লাগে না।
রান্না ঘরের দেয়ালে ক্রমে পলেস্তারা খসে, কল পাড়ে শেওলা।
দাম্পত্য তাদের শুধু ব্যবহার করে গেছে
মাসের খরচ সীমিত উপায়ে চালানোর জন্য,
বৃদ্ধ মা বাবাদের দিন রাত এক করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেখার জন্য,
বাচ্চাদের সমাজের মানুষের মতো মানুষ করার জন্য,
রাতের বিছানায় দিনের পর দিন দাম্পত্য কে তুষ্ট রাখার জন্য,
যেন মনে হয় আকাশের চাঁদ, তারা, সূর্যদের ও যাতে দেখা যায়,
সকলের কাছে পরিষ্কার, এই নারীদের করে যেতে হবে
ওই ছেঁড়া কাপড় দিয়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার।
রমা সোমা ইতুরা
দাঁড়ায় আদালতে,
বলে ধর্মাবতার কেন আমরা পাবো না অধিকার?
আমাদের শ্রমের কি নেই কোনও সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মূল্য?
মার্ক্স বলে গেছেন মাথা আর শরীর দিয়ে অর্থ উপার্জন না করলে হবে না সে কাজ!
তা হলে ধর্মাবতার,
আমাদের শ্রম কি বৃথা? হারিয়ে যাওয়া রান্নাঘরের ফেলে দেওয়া কাপড়ের মতো?
শুধুই কি সেগুলো সময়ে সময়ে ব্যবহার হবে তারপর গরমজল, সাবানে কেচে ধুয়ে ফেলে দিতে হবে পাপ বিদায়ের মতো?
উত্তর এখনও আসেনি।
বাজারের নমিতা,
তার স্বামী চলে গেছে কবে।
কোথায় চলে গেছে নতুন বিয়ে করে, খবর রাখে না সে।
জানে শুধু তাকে খেতে দিতে হবে শাবকদের,
যাদের সে এই পৃথিবীতে কীভাবে এনেছিল, জানে না পরিষ্কার করে।
খেতে দিতে হবে সে জানে মোটা চালের ভাত, শাক পাতা।
বাজারের এক ভাঙাচোরা কোণে কোনওমতে লড়াই করে একটা ফুলের দোকান দিয়েছে সে।
সারাদিন কাজ করে, সন্ধ্যেতে দোকানে ঝিম মেরে বসে থাকে।
শরীর আর মন দুই ক্ষয়ে যায় সাবানের আগে।
শুনে যায় বড়, ছোট, মেজো মানুষের কারবার।
যায় না সে ধর্মাবতারের কাছে।
চায় না সে মূল্য ফেরৎ তার নিগড়ে নেওয়া শ্রমের।
লড়াই কি তাহলে সে লড়ে না এই জগৎ সংসারে?
সে কি এক গোলে যাওয়া অবয়বহীন যন্ত্রণা?
সমাজ বলছে না সে কথা একবারও,
মানছে না কোনও আবেদন,
ক্ষারীয় দ্রবণে ক্ষয়ে যাচ্ছে সমাজের কাঠামো,
ধর্মাবতার খুজেঁ চলেছেন সমাধান,
এখনও উত্তর অসমাপ্ত।
এ বছরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এই কবিতাটি লিখেছিলাম। আমার বারে বারেই নিজের সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে মনে হয়েছিল আমাদের সমাজে কিছু নারী হয়তো নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে বা পিতৃ তান্ত্রিক কাঠামোতে কিছুটা ফাটল ধরাতে পেরেছে কিন্তু বেশীর ভাগ নারীরাই সেটা পারেনি। এই না পারার কারণও অনেক ধরনের। সবচেয়ে বেশি যে ক্ষেত্রতে নারীদের এই মুহূর্তে পিছিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, তা হল অর্থনৈতিক ক্ষেত্র। অর্থাৎ মেয়েরা একজন দক্ষ বা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারছেন না। নারীকে দেখা হচ্ছেনা একজন প্রয়োজনীয় কর্মী হিসেবে। সমাজে নারীকে সাম্যতা পেতে হলে প্রাকৃতিক সম্পদে যেমন অধিকার থাকতে হবে তেমনি তার কর্মী পরিচয়কেও স্বীকৃতি দিতে হবে। এই কর্মী পরিচয় তখনই পাওয়া যাবে যখন সে নিজের বুদ্ধি এবং শ্রমকে কাজে লাগিয়ে কিছু উৎপাদন করবে অথবা পরিষেবামূলক উৎপাদনের বিনিময়স্বরূপ কিছু অর্থ পাবে।
নারীরা যেহেতু বাড়ির মধ্যে পরিবারের দেখভালের কাজ করে থাকেন যা মূলত ধরা হয় আবেগপূর্ণ, স্বাভাবিক কাজ, তাই আমাদের সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা এই কাজকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। এই অর্থনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায় তা মূলত পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার আস্ফালনের প্রতিফলন সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় ইচ্ছে, আর পুঁজিবাদের কাছে নারীর বুদ্ধি এবং শরীর দুয়ের অর্থনৈতিক কোনও মূল্য নেই। এই মুল্য না দেওয়ার পিছনে আছে আরও গভীর ষড়যন্ত্র। নারী কে শ্রমিক হিসেবে কাজে নিলে পুরুষের সেবা পেতে সমস্যা হবে, ভবিষ্যতের শ্রমিকের জন্ম দিতে অপারগ হতে পারে নারী, ফলে সমস্যা হবে সমাজের তাই খুব সহজেই বলে দেওয়া হয় নারীকে কাজে নিলেই ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ দিতে হবে, ‘মেটারনিটি লিভ দিতে হবে, এতে উৎপাদন মার খাবে। ফলে নারীদের মধ্যে নিজেদের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেও অনীহা দেখা যায় যা মূলত সমাজের একান্ত ইচ্ছে অনুসারে হয়ে থাকে।
নারীরা যেহেতু বাড়ির মধ্যে পরিবারের দেখভালের কাজ করে থাকেন যা মূলত ধরা হয় আবেগপূর্ণ, স্বাভাবিক কাজ, তাই আমাদের সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা এই কাজকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। এই অর্থনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায় তা মূলত পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার আস্ফালনের প্রতিফলন সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় ইচ্ছে, আর পুঁজিবাদের কাছে নারীর বুদ্ধি এবং শরীর দুয়ের অর্থনৈতিক কোনও মূল্য নেই। এই মুল্য না দেওয়ার পিছনে আছে আরও গভীর ষড়যন্ত্র। নারী কে শ্রমিক হিসেবে কাজে নিলে পুরুষের সেবা পেতে সমস্যা হবে, ভবিষ্যতের শ্রমিকের জন্ম দিতে অপারগ হতে পারে নারী, ফলে সমস্যা হবে সমাজের তাই খুব সহজেই বলে দেওয়া হয় নারীকে কাজে নিলেই ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ দিতে হবে, ‘মেটারনিটি লিভ দিতে হবে, এতে উৎপাদন মার খাবে। ফলে নারীদের মধ্যে নিজেদের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেও অনীহা দেখা যায় যা মূলত সমাজের একান্ত ইচ্ছে অনুসারে হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারস’ আমার দেশের কথা বলে
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১০: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন, ইতিহাস এবং কিছু প্রশ্ন
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫: কালাদেওর কিস্সা
আজকেই এক জন নারীর সঙ্গে আলাপ হল। কিছুদিন হল তিনি ফুলের ব্যবসা করা শুরু করেছেন। হন্তদন্ত হয়ে তিনি প্লাস্টিকের প্যাকেট কিনছেন আর বলছেন একা হাতে সব কাজ করতে গিয়ে বাড়িতেই প্লাস্টিকের প্যাকেটগুলো ফেলে এসেছেন। এখন আবার বাড়ি ফিরে সেই প্যাকেট নিয়ে আসার উপায় নেই। তাহলে বিক্রি করবে কখন? তারপর ঘাম মুছতে মুছতে জানালেন, যে তার স্বামী সেন্টারিং এর কাজ করেন। কাজ ভালো করেন কিন্তু একার রোজগারে পেট ভরছে না চার জনের পরিবারের। তাই তিনি বেরিয়ে পড়েছেন তিনটে ব্যাগ নিয়ে ফুল কিনবেন বলে। তিনি বলে চলেছেন এখন ফুলের দাম একটু চড়া আছে। তাই তিনি ফুল কিনে বড় মালা করে বিক্রি করছেন রাস্তার পাশে বসে।
এখন জোর যার মুলুক তার। যে কেউ তাকে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সেই দুশ্চিন্তার কালো পর্দা এক ঝলক দেখা গেল। আবার একটু পরেই আরেক দুশ্চিন্তার কালো মেঘ এল প্রতিযোগিতা নিয়ে। তিনি ভাবছেন ফুলের দাম কমে গেলেই আরও অনেকে ব্যবসা করতে শুরু করবে তখন তিনি যদি না পারেন প্রতিযোগিতায়? বুঝলাম বাজার অর্থনীতির দোদুল্যমানতা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার সঙ্গে এখনও নারীরা খুব বেশি লড়াই করে উঠতে পারছে না। এই অর্থনীতির দোদুল্যমানতার বিষয়টি হল এরকম যে, এখানে নারীদের যোগদান করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু যখন সে যোগদান করতে যাচ্ছে তখন তাকে বলা হচ্ছে কাজ করার ফাঁকে টয়লেট করতে যেতে হলে পুরুষের টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। বহু নারী এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে জল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মুখ ফুটে দাবি করতে পারছে না যে তাকে তার উপযোগী টয়লেট বানিয়ে দেওয়া হোক।
এখন জোর যার মুলুক তার। যে কেউ তাকে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সেই দুশ্চিন্তার কালো পর্দা এক ঝলক দেখা গেল। আবার একটু পরেই আরেক দুশ্চিন্তার কালো মেঘ এল প্রতিযোগিতা নিয়ে। তিনি ভাবছেন ফুলের দাম কমে গেলেই আরও অনেকে ব্যবসা করতে শুরু করবে তখন তিনি যদি না পারেন প্রতিযোগিতায়? বুঝলাম বাজার অর্থনীতির দোদুল্যমানতা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার সঙ্গে এখনও নারীরা খুব বেশি লড়াই করে উঠতে পারছে না। এই অর্থনীতির দোদুল্যমানতার বিষয়টি হল এরকম যে, এখানে নারীদের যোগদান করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু যখন সে যোগদান করতে যাচ্ছে তখন তাকে বলা হচ্ছে কাজ করার ফাঁকে টয়লেট করতে যেতে হলে পুরুষের টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। বহু নারী এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে জল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মুখ ফুটে দাবি করতে পারছে না যে তাকে তার উপযোগী টয়লেট বানিয়ে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৬: প্রাণী জগতের অন্যতম দায়িত্বশীল বাবা হল ড্রাগন ফিশ
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১১: সমস্ত বাধা সরে গেলে প্রকৃতিও তখন রাস্তা ছেড়ে দেয়
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-২: রামকথার পটভূমি এবং মহাভারতে কথকের কথাসূত্র
এছাড়াও রাস্তা ঘাটগুলোতে পাবলিক টয়লেট থাকলেও সেগুলো অনেক সময় ব্যবহারের অনুপযোগী থাকে। তাই জলের প্রয়োজন মেটানোর জন্য পান, গুটখা প্রভৃতি নেশা করতে দেখা যায়। বাড়িতেও দেখা গেছে এই নারীরা সারাক্ষণ বাচ্চাদের বড় করে তোলার কথাই ভাবতে থাকে। অনেকেই আছে যারা মদ্যপ স্বামীদের থেকে বাঁচার জন্য নানা ধরনের কাজ খুঁজে নিয়েছেন এবং একা সংসার চালাতে গিয়ে অনেক বেশি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। এরা নিজেদের শরীর, পুষ্টিকর খাবার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভাবার সময় পান না, কারণ তাঁদের সবসময় সমাজের কাছে প্রমাণ দিয়ে বেড়াতে হয় যে তাঁরা একা সংসার চালালেও নিজেদের সতীত্ব বজায় রেখেছেন। এই রকম মানসিক সমঝোতার সঙ্গে আর একটি বিষয় নিয়ে যুঝতে হয় সেটা হল, বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে যে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয় সেগুলো তৈরি হয়েছে পুরুষদের সুবিধে মতো।
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১০: স্থাপত্য ছাড়িয়ে অভয়ারণ্য
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১১: লিকার চা খাওয়া কি সত্যই শরীরের পক্ষে ভালো?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল
তবে সেলাই মেশিনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে মহিলাদের জন্য কোম্পানি বসে হাত দিয়ে চালানোর মতো বানিয়েছে। মহিলাদের বলা হয়ে থাকে যে বসে সেলাই করাটাই তাদের জন্য উপযোগী। বাকি সব যন্ত্রপাতি এমনকি চাষ করার যন্ত্র নারীদের শারীরিক কাঠামোর বিপরীতধর্মী। এই যন্ত্রের ডিজাইনের সঙ্গে নারী পুরুষের শারীরিক ক্ষমতার পার্থক্য করা বৃথা। নারীরা এই পুরুষ উপযোগী যন্ত্র ব্যবহার করে নিচ্ছেন কিন্তু তাঁদের উপযোগী করে নিয়ে তৈরি করলে তাঁরাও যে দক্ষ শ্রমিক হতে পারেন সেই বিষয়টি আইনি রক্ষাকবচ পেত।
শেষ পাতে যখন আইনের কথা তুললাম তখন অনেকেই চোয়াল শক্ত করে ফেলেছেন হয়তো। বিষয়টি হল, মহিলারা যারা জীবনের একটা বড় সময় আবেগের শ্রম মানে সন্তান, স্বামী, পরিবারের দেখভালের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা যখন সেই পরিশ্রমের মূল্য চাইছেন তখন আমরা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছি কেন? আমরা বাজারে গিয়ে এক আঁটি ধনেপাতা, এটা সেটা ফ্রি তে নিতে গিয়ে সম্মান দেওয়া দূরে থাক নারীদের অবদানকে বলছি ৪৯৮এ এর ধারাতে মিথ্যে কেস করা সুবিধাভোগী এক প্রাণী। সমাজ নিয়মের বিচ্যুতকারীদের জন্য কারাগার, মানসিক হাসপাতাল, আইন এত কিছুর ব্যবস্থা রেখেছে তাহলে তাঁদের শ্রমের দাম দিতে এত অনীহা কেন?
শেষ পাতে যখন আইনের কথা তুললাম তখন অনেকেই চোয়াল শক্ত করে ফেলেছেন হয়তো। বিষয়টি হল, মহিলারা যারা জীবনের একটা বড় সময় আবেগের শ্রম মানে সন্তান, স্বামী, পরিবারের দেখভালের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁরা যখন সেই পরিশ্রমের মূল্য চাইছেন তখন আমরা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছি কেন? আমরা বাজারে গিয়ে এক আঁটি ধনেপাতা, এটা সেটা ফ্রি তে নিতে গিয়ে সম্মান দেওয়া দূরে থাক নারীদের অবদানকে বলছি ৪৯৮এ এর ধারাতে মিথ্যে কেস করা সুবিধাভোগী এক প্রাণী। সমাজ নিয়মের বিচ্যুতকারীদের জন্য কারাগার, মানসিক হাসপাতাল, আইন এত কিছুর ব্যবস্থা রেখেছে তাহলে তাঁদের শ্রমের দাম দিতে এত অনীহা কেন?
* বৈষম্যের বিরোধ-জবানি (Gender Discourse): নিবেদিতা বায়েন (Nibedita Bayen), অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পি আর ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ।