সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

অস্থি সন্ধির সমস্যা একটি অতি পরিচিত কষ্টকর বিকার। সারা ভারতে প্রায় ৬ কোটি মানুষ এই রোগে ভোগেন। শতকরা ১৮ জন মহিলা এবং প্রায় ১০ জন পুরুষ সন্ধিবাত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বার্ধক্য জনিত ক্ষয়ের জন্য এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। রোগটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অস্টিওআর্থারাইটিস এর সমতুল্য।
 

কেন এই রোগ হয়?

প্রতিদিনের জীবনযাপন পদ্ধতিতে যে ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে অর্থাৎ লাইফস্টাইলের যে ত্রুটিগুলি দেখা যায়, বিশেষ করে অকারণে উপোস করা, ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, শুকনো, বাসি ও রুক্ষ কড়াপাক খাবার, মশলাদার খাবার, অতি তেতো ও ঝাল জাতীয় খাবার, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এর জন্য দায়ী।

এ সবের পাশাপাশি কিছু প্রাত্যহিক কাজকর্মে ত্রুটি বিচ্যুতি যেমন— রাত জাগা, অত্যধিক সফর করা, সারাক্ষণ একনাগাড়ে বসে থাকা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, ঠান্ডা জল ও বাতাসের অতিরিক্ত উপযোগ করা, বেশিক্ষণ এসি-তে থাকা, মল-মূত্র ইত্যাদির বেগ ধারণ করা, বেশি ভার বহন করা, ভুলভাবে ব্যায়াম বা আসন করা ইত্যাদি কারণে বায়ু বৃদ্ধি পায়।

আয়ুর্বেদ মতে, বায়ু, পিত্ত ও কফের বৈষম্যই রোগের কারণ। এই প্রকূপিত বায়ু শরীরে কফ ও বিত্তের সাম্যতাকেও নষ্ট করে থাকে। সঙ্গে রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা, শুক্র অর্থাৎ সপ্ত ধাতুকে ও প্রভাবিত করে।

বিশেষভাবে বড় ও মাঝারি ধরনের ভারবাহী সন্ধিগুলোকে ক্ষয়িত করে। তাই জানুসন্ধি (নি জয়েন্ট), গুল্ফসন্ধি (অ্যাঙ্কেল জয়েন্ট), ত্রিক সন্ধি (হিপ জয়েন্ট), অংসসন্ধি (শোল্ডার জয়েন্ট), কনুই (এলবো জয়েন্ট), মনিবন্ধ (রিস্ট জয়েন্ট) ইত্যাদিতে অবস্থিত শ্লেষ্মাধরা কলা বা এক ধরনের লুব্রিকেটিং জেলকে (সাইনোভিয়াল ফ্লুইড) শুকিয়ে দেয়। এর ফলে ওই সমস্ত সন্ধির অস্থিপ্রান্তগুলির পারস্পরিক ঘর্ষণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ ফোলা ও বেদনা (ইনফ্লামেশন ও পেইন) হয়।

সাধারণত মধ্য বয়সী মায়েদের বা যেকোনও বেশি বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই অস্থি ও সন্ধির ক্ষয় দেখা যায়। কারণ, ওই সময় শরীরে ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি কম উৎপন্ন হয় এবং অস্হির পোষণ ঠিক মতো হয় না।

আরও পড়ুন:

অসুখ-বিসুখ: সাধারণ সমস্যায় বাড়িতে রাখুন এই ৮টি আয়ুর্বেদ ওষুধ

ত্বকের ক্ষতি না করে সাবধানে রং খেলার ডাক্তারবাবুর ১০টি জরুরি পরামর্শ

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৭: উত্তমের প্রশ্নে মজাদার জবাব ভানুর, হাসির বন্যা বয়ে গেল নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়ো ফ্লোরে

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৯: দাঁতে পোকা! সত্যি, নাকি নিছক ধোঁকা?

 

প্রাথমিক লক্ষণ

পূর্বোক্ত শরীরের ভারবাহী সন্ধিগুলিতে ফোলা ও বেদনা থাকে। জানু সন্ধির বিকৃতির কারণে উঠলে বসতে অসুবিধা, বসলে উঠতে অসুবিধা, অন্যান্য সন্ধিতে বেদনার ফলে কর্মক্ষমতার হ্রাস পায়। দুর্বলতা, অস্থিরতা, অবসন্নতা ক্রমশঃ রোগীকে ঘিরে ফেলে, পেট ফাঁপা, অনিয়মিত পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিদ্রা ইত্যাদি সমস্যাগুলিও রোগীকে জর্জরিত করে।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৩: রবীন্দ্রনাথের পোশাকআশাক

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৫: সুন্দরবনের মাছ বৈচিত্র্যের ক্ষতিকারক প্রজাতি হল ক্রোকোডাইল ফিশ

স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৮: যেখানে বাঘের ভয় সন্ধে ঠিক সেখানেই হয়, আমারও ঠিক তাই হল

 

প্রতিকার

জীবনশৈলীর ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি যেমন অনাহার, উপবাস, রাতজাগা, শীতল বাতাস ও জলের উপযোগ করা, বেশি পরিশ্রম করা, অতিরিক্ত সফর করা, মল-মূত্রের বেগ ধারণ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিমাণ মতো জল, শাক-সব্জি, মাছ, মাংস, দুধ, ঘি এবং মরসুমি ফল খাওয়া বাঞ্ছনীয়, যা শারীরিক ক্ষয় কে রোধ করতে পারে।

বাড়িতেই সরষের তেলে রসুনকে ফুটিয়ে সেই তেল আক্রান্ত সন্ধির ওপর হালকা মালিশ করে গরম কাপড়ের সেঁক দিলে আরাম মেলে। শাস্ত্রোক্ত কিছু তেল যেমন— মহামাষ তৈল, মধ্যম নারায়ণ তৈল, মহা নারায়ণ তৈল, বাতারি তৈল ইত্যাদি মালিশ ও তারপরে বাত নাশক কয়েকটি দ্রব্য যেমন —রাস্না, দশমূল, অশ্বগন্ধা ইত্যাদি ফোটানো জলের গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’

ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৯: জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ

শুঁট (শুকনো আদা), রাস্না, দশমূল, অশ্বগন্ধা, বলা ইত্যাদি মিলিত দ্রব্য ২৫ গ্রাম নিয়ে ৫০০ মিলি লিটার জলে ফুটিয়ে ৬০ মিলিলিটার অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পাচন সকালে অর্ধেক (৩০ মিলিলিটার) এবং বিকেলে অর্ধেক খেলে বেদনা ও ফোলা উভয়ই কমে যাবে।

শাস্ত্রে উল্লিখিত যোগরাজ গুগ্গুল, মহাযোগরাজ গুগ্গুল, ত্রয়োদশাঙ্গ গুগ্গুল সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রাম দু’বার গরম জলসহ খাওয়ানো যেতে পারে।

আয়ুর্বেদ মতে, বাতগজাঙ্কুশ রস, মহাবাত বিধ্বংস রস, বাত গজেন্দ্র সিংহ ইত্যাদি রসৌষধি ২৫০ মিলিগ্রাম করে দু’বার দেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ, অশ্বগন্ধা চূর্ণ তিন গ্রাম ও কড়িভস্ম ২৫০ মিলিগ্রাম মিলিত ভাবে দু’বার খেলে অস্হি ক্ষয় রোধ হয়। ভবিষ্যতে বাতের প্রকোপ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
* বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ (Ayurveda) : ডাঃ প্রদ্যোৎ বিকাশ কর মহাপাত্র (Dr. Pradyot Bikash Kar Mahapatra), অধ্যাপক ও চিকিৎসক, ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।

Skip to content