বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

হঠাৎ করে গোড়ালি, হাঁটু, কনুই, কব্জি বা হাত ও পায়ের আঙ্গুলের গাঁটে গাঁটে ব্যথা, সেই সঙ্গে আক্রান্ত স্থানে জ্বালাভাব, ফোলা বা চুলকানি, কখনও কখনও হালকা জ্বর— এইসব সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা চেক করে নিয়মমাফিক চিকিৎসা, ডায়েট ও লাইফস্টাইলে বদল আনা প্রয়োজন। সাধারণত দেহের বিভিন্ন সন্ধিস্থল এবং অন্যান্য নরম কলাতন্ত্রে মোনোসোডিয়াম ইউরেট বা ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল অধঃক্ষিপ্ত হতে থাকলে আক্রান্ত স্থানে যে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করে তাকেই গাউট বা গেঁটে বাত বলে সনাক্ত করা হয়। ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার না হলে ক্রনিক গাউড আর্থ্রাইটিসে কখনও কখনও চামড়ার নিচে বা কিডনি ও ব্লাডারে ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল জমে গিয়ে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
 

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা

পুরুষ: ৩.৬ -৭ মিগ্রা/ডেসিলিটার
মহিলা: ২.৪-৬ মিগ্রা/ডেসিলিটার

 

কাদের বেশি হয়?

সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের গাউট আর্থ্রাইটিসের আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান কম হলেও পোস্ট মেনোপজাল স্টেজে পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে বংশগত কারণে অল্পবয়সীদের মধ্যেও গাউটে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: স্যালাডে স্বাস্থ্যরক্ষা, কী ভাবে তৈরি করবেন সেই সব পুষ্টিকর খাবার? দেখে নিন একঝলকে

হেলদি ডায়েট: ডার্ক চকোলেট হার্টের অসুখ-সহ নানা রোগের দাওয়াই, কতটা খাবেন, কেন?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৮: জ্বরে ভাত খাবেন?

 

রোগের কারণ ও ঝুঁকি

স্থূলত্ব, অলস জীবনযাত্রা ও বংশগত কারণ বা পারিবারিক ইতিহাস।

অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া।

দীর্ঘক্ষণ উপবাসে থাকা।

বয়স বৃদ্ধি

ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ডিজিজ ইত্যাদি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকলে বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিড লেভেল।

জল কম খাবার অভ্যাস।

সাধারণত নিউক্লিও প্রোটিন বিপাকের ফলে যে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হয় তা লিভারে সঞ্চিত থাকে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তা ভেঙ্গে গিয়ে পিউরিন তৈরি হয়। এই পিউরিন বিপাকের পর তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড, যা স্বাভাবিকভাবে মূত্র মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই পিউরিন বিপাকে গোলমাল দেখা দিলে তা গাউটের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও বাড়তে পারে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা।

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২: এসেছে দৈব পিকনিকে

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৫: “এই যে যন্ত্র দেখছিস, এটা সেগুন কাঠের, এখান থেকেই সুর আসে…”

 

ডায়েটারি ম্যানেজমেন্ট

গাউট আর্থ্রাইটিসের তীব্র যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মোকাবিলায় সঠিক ডায়েটারি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। দৈনিক মোট গৃহীত প্রোটিনের পরিমাণ ০.৫ থেকে ১ গ্রাম প্রতি কেজি আদর্শ দেহভারের মধ্যে রাখা উচিত। প্রাণিজ প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ওপর জোর দিতে হবে। চলবে না উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবারদাবার। দেখা গিয়েছে দিনে পিউরিনযুক্ত খাদ্যগ্রহণের মাত্রা ১০০ থেকে ১৫০ মিলিগ্রামে সীমাবদ্ধ করতে পারলে প্রকোপ অনেক কম থাকে। পাশাপাশি দেহের বাড়তি ওজন কমাতেই হবে। তাই অতিরিক্ত ক্যালরি, রিফাইন্ড কার্বোহাইডেট এবং হাইফ্যাটযুক্ত খাবারদাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে যেন ডায়েটে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিন যথাযথ মাত্রায় থাকে।

সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জলপানের মাধ্যমে সর্বদা দেহকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।

অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া বা দীর্ঘক্ষণ উপবাস— দুইই গাউট আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে আহার করা উচিত।

হালকা ব্যায়াম, হাঁটা, সাঁতার, নাচ, যোগাসন ইত্যাদি শরীরচর্চার ওপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন হলেও অতিরিক্ত বা দীর্ঘসময়ব্যাপী ভিগোরাস এক্সারসাইজ কিন্তু এক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৭: একটার পর একটা রেস্তরাঁয় ফোন করে জানতে পারলাম ৫ মাইল দূরে একটি খোলা আছে

আজ একটু ভিন্ন স্বাদের রান্না করতে চান? তাহলে ঝটপট বানিয়ে ফেলুন বিলেতি ধনেপাতা দিয়ে ভোলা মাছ

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে

 

কী কী খাবার খাবেন?

তাজা শাক-সব্জি এবং আনাজপাতি যেমন— রাঙালু, আলু, গাজর, পিঁয়াজ, রসুন, কুমড়ো, ঝিঙে, থোড়, মোচা, বেগুন, পটল, লাউ, চাল কুমড়ো, চিচিঙ্গা, মুলো, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, লঙ্কা, পেঁয়াজকলি, নোটে, হিংচে, গিমে কলমি, লাউ কুমড়ো, শাক, পলতা পাতা, ডাঁটা, পেপে ইত্যাদি।

বিভিন্ন ধরনের তাজা ফল ও সাইট্রাস ফ্রুটস যেমন— মুসাম্বি, লেবু, কমলালেবু, পাতিলেবু, আমলকি, আনারস, বাতাবিলেবু, আপেল, জামরুল, আম, পেঁপে, কলা, তরমুজ, শসা, বেরি, ফ্রুটিম অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।

স্কিন মিল্ক, ডাবল টোনড মিল্ক এবং এই দুধের তৈরি দই, ছানা, পনির, চিজ ইত্যাদি।

লিটমিট ও পোল্ট্রি যেমন তাজা মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, টার্কি ইত্যাদি।

ওটস, বার্লি, মাল্টিগ্রেন আটা, ডালিয়া, ভুট্টা, পপকর্ন, সাবু, অ্যারারুট, চাল, খই, চিড়ে, সুজি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫২: বইয়ের সব কপি কবির নির্দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩০: গিরিশ ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার মনের বাঁক যাবে তো?” ঠাকুর বললেন, “যাবে, ঠিক যাবে”

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৮: মাতৃভাষায় লিঙ্গ বৈষম্য-বিরোধ জবানি

 

কী কী খাবার খাবেন না?

প্রাণীর দেহাংশ, যেমন— ব্রেন, লিভার, হার্ট, গ্ল্যাডিউলার পার্ট, কিডনি ইত্যাদি।

সার্ডিন, ম্যাকরেল, হেরিং, টুনা, অ্যাঙ্কভি, ওয়েস্টার ইত্যাদি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণী।

কাঁকড়া, চিংড়ি, শামুক, গেঁড়ি, গুগলি ইত্যাদি।

হ্যাম, বেফন, পর্ক, ল্যাম্ব, ডাক, স্যসেজ ইত্যাদি রেডমিট।

সয়াবিন ও সয়াবিন জাতীয় খাবার, ছোলা, মটর, রাজমা, শিমবীজ, কুমড়োবীজ ইত্যাদি।

পিউরিন বেশি আছে এমন কিছু শাক-সব্জি যেমন ফুলকপি, ব্রকোলি, পালংশাক, পুঁইশাক, মটরশুঁটি ইত্যাদি।

আইসক্রিম, সফট ড্রিংকস, ক্যানড ফ্রুট জুস, শরবত, ক্যানডি, প্রসেস মাছ ও মাংস, অতিরিক্ত লবণদার খাবার, চিনি, মিষ্টি ইত্যাদি।

ইস্টযুক্ত খাবার, বার্গার, বান, নান, পিৎজা, ব্রেড, কেক ইত্যাদি।

ইউরিয়াযুক্ত মুড়ি, সল্টেড ও প্রসেসড ফুড, চিনা বাদাম, কাজুবাদাম, ভুজিয়া ইত্যাদি।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content