আগামীকাল রবিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস মঞ্চে অভিনীত হবে মাঙ্গলিক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘বাপু’। নাট্যরচনা জিৎ সত্রাগ্নি। নির্দেশনা এবং বাপু’র ভূমিকায় বর্ষীয়ান অভিনেতা সমীর বিশ্বাস।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ব কলকাতার সুকান্ত মঞ্চে এ নাটকের প্রথম অভিনয় হয়েছিল। সুতরাং মাঙ্গলিক নাট্যদলের এই প্রযোজনা সাফল্যের ছ’বছর পেরিয়ে সাত বছরে পা রাখল। সম্প্রতি প্রকাশিত জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্যসংকলনে ‘বাপু’ নাটকটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংকলনেই এই নাটক সম্পর্কে সাধারণ দর্শক, বিশিষ্ট নাট্যপ্রতিভার প্রতিক্রিয়া এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নাট্য-পর্যালোচনার অংশবিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সরকারের সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাট্যমেলা “ভারত রঙ্গ মহোৎসব ২০১৯”-এ দিল্লির শ্রীরাম সেন্টারে আমন্ত্রিত অভিনয় হয়েছে ‘বাপু’র। ২০২১ সালের ২ অক্টোবর কলকাতা দূরদর্শনে জাতির জনকের জন্মদিনে ‘বাপু’ নাটকের সম্প্রচার হয়েছে। এছাড়াও পুরী, ভুবনেশ্বর, ঝাড়খণ্ডের অনুষ্ঠিত জাতীয় নাট্যোৎসব, গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় ব্যারাকপুর, পশ্চিমবঙ্গ নাট্যমেলা, গান্ধীজির ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নাট্য আয়োজনে ‘বাপু’ নাটকের আমন্ত্রিত অভিনয় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জিৎ সত্রাগ্নি’র এই নাট্যসংকলনের মুখবন্ধ লিখতে গিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক বিশিষ্ট নাট্যজন অশোক মুখোপাধ্যায় ‘বাপু’ নাটক প্রসঙ্গে লিখেছেন—”বাপু নাটকটিতে বিখ্যাত জননায়ক আমাদের দেশে মহাত্মা বলে সবার ভালোবাসা পাওয়া মানুষ গান্ধীজির জীবনের অনেকগুলো অধ্যায় একটি সুনিপুণ নাট্য আলোখ্যের মধ্যে ধরা পড়েছে। …এই নাটকে খালি কারিগরি নৈপুণ্য নয়, যে আবেগের গভীরতা দেখা গিয়েছে বা বাপু চরিত্রটির শুধু মাহাত্ম্য নয়, তার জটিলতা প্রকাশ করার জন্য যে আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়, তা খুবই অভিনন্দন যোগ্য। বেশ অন্যরকমের একটা জীবনী নাট্য।”
আরও পড়ুন:
নাট্যকথা: নবকলেবরে রক্তকরবী
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২: এসেছে দৈব পিকনিকে
‘বাপু’ প্রসঙ্গে এই নাট্যসংকলনের ভূমিকায় বাংলা থিয়েটারের নাট্যদিশারী অন্যতম প্রবীণ নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিভাস চক্রবর্তী লিখেছেন— ”বাপু নাটকে এই নাট্যকার একটা প্রস্তাবনা রেখেছিলেন। নাটকের শুরুতে সে প্রস্তাবনা আবহে শোনা যায়। আজ ছটি বছর পরেও সেই প্রস্তাবনা, যাকে নিয়ে লেখা এ নাটক, সেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মতোই ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। …বাপু নাটকে অধ্যবসায়, নিরন্তর গবেষণা ও পরিশ্রমের স্পষ্ট সাক্ষর রয়েছে …এই বিরাট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবনকাহিনীকে দু’ঘণ্টার মঞ্চনাটকে নিয়ে আসাটা নিশ্চিতভাবে একটা কঠিন কাজ।… আমি বাপু দেখার পর বেশ তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম।”
আরও পড়ুন:
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৭: কুডার ছুঁয়ে শিরপুর
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৫: বলবয় থেকে বিশ্বসেরা
চেতনা নাট্য দলের প্রাণপুরুষ বিশিষ্ট অভিনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়, লোককৃষ্টি দলের পুরোধা চিত্র-মঞ্চ-টেলিভিশনের অভিনেতা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়, বহুরূপী নাট্যদলের নাট্য পরিচালক ও অসামান্য অভিনেতা দেবেশ রায়চৌধুরী বাপু নাটকের নাট্যগুণ, নির্দেশনা এবং দলগত প্রযোজনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একাধিক সংবাদমাধ্যমে ‘বাপু’ নাটকটি নিয়ে বিশেষ আলোচনার অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে। নাট্যমোদী দর্শকেরা বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন এ নাটকের সংলাপ, বিষয় নির্বাচন এবং এই প্রযোজনার অসাধারণ আকর্ষণী ক্ষমতার।
এ নাটকের অভিনেতারা সকলেই প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। কিন্তু আলাদা করে নজর কেড়ে নেন, বাপু চরিত্রে সমীর বিশ্বাস, নাথুরাম গডসের ভূমিকায় সৌভিক মজুমদার, মহাদেব দেশাই, — সৌম্য বিশ্বাস, কস্তুরবা —উপালী ঘোষ বসু, হরিলাল— দেবাশীষ গাঙ্গুলী, জিন্নাহ— সমীরণ মুখোপাধ্যায়, মীরাবেন— দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সরদার প্যাটেল—উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং আভা বেন ও মনু বেনের ভূমিকায় যথাক্রমে শতাব্দী বসু ও সঞ্চয়িতা চৌধুরী প্রমূখ। এই নাটকে সমবেত গান এবং নৃত্য আঙ্গিকের ব্যবহার রয়েছে। নৃত্যপরিকল্পনা কবীর সেন বরাট, আলোকপরিকল্পনা বাবলু সরকার, মঞ্চপরিকল্পনা বিলু দত্ত। নাটকটির অসাধারণ সংগীত আয়োজনে রয়েছেনমুরারি রায় চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৭: যত কাশি, তত কাফ সিরাপ?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৩: মোর সাধের বাসরে ঘটল ‘গৃহ প্রবেশ’
বাপু নাটকে মহাত্মা গান্ধির এক অন্যতর রূপ ধরা দেয়। জাতির জনক এখানে কারও পিতা, কারও স্বামী, দেশনায়ক বা কারও কাছে এক পরম-আরাধ্য গুরু। কিন্তু এই সবকিছুর আড়ালে তিনিও একজন রক্তমাংসের মানুষ।
চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
পোস্টার সৌজন্য: মাঙ্গলিক
চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
পোস্টার সৌজন্য: মাঙ্গলিক