রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ কোকোয়া সমৃদ্ধ চকলেটকে ডার্ক চকলেট বলা হয়। ডার্ক চকলেট সত্যি একটি জাদুকরি গুণের অধিকারী। বিশেষ করে ভালো মানের ডাক চকলেটে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে। এতে মূলত আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।

ডার্ক চকলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় জৈব উপাদান আছে। ডার্ক চকলেটে প্রধানত পলিফেনাল ও ফ্ল্যাভানল থাকে, যে সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে রোধ করে ক্যানসার রোধে সাহায্য করে।

চকলেটের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছর পুরোনো। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকার নিম্নভূমির স্থানীয় উদ্ভিদ কোকো অন্তত তিনশো বছর মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে চাষ করা হচ্ছে। এর ব্যবহারের সবচেয়ে পুরনো লিখিত প্রমাণ হল ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে চিকলেটের কদর বহুগুণ বেড়ে যায়। ১৮৬৮ সালে প্রথম ক্যাডবেরি চকলেট ইংল্যান্ডের বাজারে আসে।
 

ডার্ক চকলেট খেলে কী কী উপকার মিলবে?

ত্বকের রক্ষাকবজ

ডার্ক চকলেটের মূল উপাদান ককোয়া, যা ফ্ল্যাভানল ভরপুর। এটি ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে।
 

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে

চকলেটে থাকা ফ্ল্যাগোনয়েড স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও মনোযোগের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
 

ডার্ক চকলেটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

নিয়মিত ডাক চকলেট খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রাড় বৃদ্ধি ঘটায়। শরীর থেকে টক্সিনও সহজেই বার করে দেয়।

 

ক্যানসার প্রতিরোধে

এতে উপস্থিত আন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে ভীষণভাবে সাহায্য করে।
 

চুলের স্বাস্থ্যে

নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
 

কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক রাখতে

ডার্ক চকলেটের পলিফেনাল উপাদান রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরলকে বার করে দেয়। সেই সঙ্গে ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচডিএল-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে।
 

হার্টের স্বাস্থ্য

এতে থাকা ফ্লাবনয়েড রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনাকেও কমায়। ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? সুস্থ থাকতে কোন ১০টি ফল খাবেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৫: বলবয় থেকে বিশ্বসেরা

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩০: গিরিশ ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার মনের বাঁক যাবে তো?” ঠাকুর বললেন, “যাবে, ঠিক যাবে”

 

মন খারাপ দূর করতে

ডার্ক চকলেট মন খারাপ দূর করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত পলিফেনাল বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে টানা দু’মাস ডার্ক চকলেট খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

চকলেট আমাদের শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতির সৃষ্টি করে। চকলেটে থাকা ট্রিপটোফ্যান বিষণ্ণতা রোধে বিশেষ সাহায্য করে। এটা মস্তিষ্কের ডোপামিন বাড়িয়ে শরীরে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করতে ভীষণ সাহায্য করে।
 

সুখী জীবন

চকলেটে ফিনাইলইথাইলামাইন নামক উপাদান থাকে, বিভিন্ন গবেষকদের মতে যার নাম দিয়েছেন ‘লাভ কেমিক্যাল’। তাই সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্যও নিয়মিত ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।।
 

ভালো ইমিউন সিস্টেম

ডার্ক চকলেট শরীরে রক্ত প্রবাহকে বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর চকঠাক শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে আরও মজবুত করে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: স্যালাডে স্বাস্থ্যরক্ষা, কী ভাবে তৈরি করবেন সেই সব পুষ্টিকর খাবার? দেখে নিন একঝলকে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫১: বিয়েশাদির ঠাকুরবাড়ি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪২: সুন্দরবনের কিছু মূল্যবান মাছ যেগুলো আজ লুপ্তপ্রায়

 

ভালো মানের চকলেট চেনার সহজ উপায়

চকলেট প্রসেস করলে তার গুণমান কমে যায়। তাছাড়া কোকোয়া বাটার চিনি চর্বি যুক্ত চকলেট শরীরের জন্য একদমই ভালো নয়। তাই চকলেট কেনার সময় সবচেয়ে কম মিষ্টি যুক্ত চকলেট কিনতে হবে। সর্বোচ্চ মাত্রায় সমৃদ্ধ হলে সেই চকলেট আরও ভালো। অর্গানিক চকলেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। চকলেটের লেবেলে যদি লেখা থাকে ‘প্রসেসড উইথ অ্যালকালি’ তবে তা পরিহার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে তৈরি চকলেটে কোকোয়ার প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভানলঅ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ভেঙে ফেলা হয়। কোকোয়া বাটারবিহীন চকলেট কিনুন।

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১: একটি ক্লান্তিকর বাসযাত্রা এবং…

হোমিওপ্যাথি: খেয়ালি ঋতুর ফাঁদে সর্দি-কাশি-জ্বর? সুস্থ থাকতে এগুলি মেনে চলুন

চলো যাই ঘুরে আসি: ইতিহাস যেখানে ঘুমিয়ে আছে

 

মনে রাখতে হবে

চকলেটের গুণাগুণ প্রচুর। তবে যেমন খুশি চকলেট খেলে হবে না। নিয়মিত নির্দিষ্ট মাত্রায় চকলেট খেতে হবে। তবে কখন, কীভাবে কতটা পরিমাণ খাওয়া উচিত, এ নিয়ে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিলে ভালো। সেই সঙ্গে বিশেষ কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাওয়া উচিত।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content