সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


বইমেলা সবে শেষ হয়েছে। ক’টা দিন করুণাময়ীতে কত হইচই। বই কেনা, এটা-সেটা কিনে খাওয়া, এর সঙ্গে ওর সঙ্গে দেখা হওয়া। পুরোনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া। সেলফি তোলা। বইয়ের মানুষ লেখকমশায় হেঁটে যাচ্ছেন। বিস্মিত পাঠক-মন, এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। সেলফি তোলো, অটোগ্রাফ নাও। অটোগ্ৰাফ ও ফটোগ্রাফের আনন্দ করুণাময়ীর মাঠে একাকার হয়ে গিয়েছে। নামের সঙ্গে যতই ‘করুণা’ জড়িয়ে থাকুক না কেন, ‘কারুণ্য’ নয়, এই মাঠে মেলার ক’দিন শুধুই ছিল আনন্দ। লেখক-দর্শনে কী উচ্ছ্বাস, সে উচ্ছ্বাস বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে সিরিয়ালের কেউ এলে, টলিউডের প্রাক্তন নায়ক-নায়িকা হলেও উচ্ছ্বাস আকাশ ছুঁয়েছে। রাজনীতির লোকজনও নিত্যি মাঠে এসেছেন। তাঁরাও সই বিলিয়েছেন। সেলফি তোলার সময় হাসি হাসি মুখে পোজ দিয়েছেন। এই মেলাকে সামনে রেখে নতুন বইও কম প্রকাশিত হয়নি। এই সময়ের বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও গবেষক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নয় নয় করে প্রকাশিত হয়েছে বারোটি বই। কয়েকটি বইয়ের নতুন সংস্করণ বেরিয়েছে, সে বইগুলি যে এই বারোটির বাইরে, তা বলাই বাহুল্য।
সময় আপডেটস-এর তিনি নিয়মিত লেখক। ঠাকুরবাড়ি নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক-রচনাটি খুবই জনপ্রিয়। গত রবিবার একান্নতম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত চল্লিশটি পর্ব নিয়ে ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’ বই হয়ে বেরিয়েছে। প্রকাশ করেছে ‘দীপ প্রকাশন’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সুব্রত মাজী। দে’জ থেকে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‌বই বেরিয়েছে। এ বইটিও ঠাকুরবাড়ি-সংক্রান্ত। নাম ‘স্মৃতিপটে জোড়াসাঁকো’। বইটি মেলায় যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত আরেকটি বই বিশেষভাবে পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। মেলায় বিক্রিও হয়েছে ভালো। বইমেলায় ‘মৃণাল সেন মঞ্চ’-এ বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন কথাসাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায়। এই বইটির নাম ‘আগুনের পরশমণি’, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লেখা মৌলিক সাহিত্যের এক আশ্চর্য সংগ্রহ। বইটিতে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আলোকচিত্র, সঙ্গে দীর্ঘ ভূমিকা, যে ভূমিকায় আলোকিত হয়েছে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যাঁদের প্রাণ বলিদান হয়েছিল, তাঁদের সাহিত্যিকসত্তা। বিপিনচন্দ্র পালের উপন্যাস বা চিত্তরঞ্জন দাশের ছোটগল্প আমাদের মনে নিশ্চিতভাবে বিস্ময় উদ্রক করবে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ‘পূর্ণপ্রতিমা’ থেকে।
ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্য জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে নিয়ে, প্রমথ চৌধুরীকে নিয়ে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে দুটি বই সম্পাদনা করেছেন, সে বই দুটিও মননশীল পাঠকের নজর কেড়েছে। ঠাকুরবাড়ির বধূমাতা হেমলতা দেবীর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘বঙ্গলক্ষ্মী’ পত্রিকাটি নিয়ে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদনাকর্মও পাঠকের সম্ভ্রম আদায় করেছে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫১: বিয়েশাদির ঠাকুরবাড়ি

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭: ঈশ্বরের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিলে তবেই ভক্তিরূপ মুক্তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪২: সুন্দরবনের কিছু মূল্যবান মাছ যেগুলো আজ লুপ্তপ্রায়

গবেষণাকর্মের পাশাপাশি ছোটদের লেখায় পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসিদ্ধি। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর দুটি গল্পের বই এ বইমেলায় বেরিয়েছে। ‘রাতে কারা এসেছিল’ নামের বইটিতে রয়েছে পনেরোটি গল্প। টানটান উত্তেজনাময় গল্প এ বইতে যেমন আছে, তেমনই আছে মানবিক গল্প। বইটির ভারী সুন্দর মলাট এঁকেছেন অনুপ রায়। বইটি বেরিয়েছে ‘সেন ব্রাদার্স’ থেকে। পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয় গল্পের বইটি সত্যিই কৌতূহল-জাগানিয়া। ‘রঙবেরঙ গল্প’ সত্যিই রঙচঙে, মুদ্রণ-পারিপাট্যে উজ্জ্বল। খুব ছোটদের জন্য তেমনভাবে গল্প লেখা হয় না। এ বইয়ের সব গল্পই যুক্তাক্ষর বর্জিত। খুব ছোটদের মতো করে লেখা বইটি চার রঙে ছাপা। হাতে পেলে ছোটরা‌ নিশ্চিত খুশি হবে। বইটি ‘দক্ষভারতী’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৭: যত কাশি, তত কাফ সিরাপ?

প্রিয়জনকে মিষ্টিমুখ করাতে চান? বানিয়ে ফেলুন ছানার পায়েস

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৬: বাড়িতে ঢুকে জুতো মজা দস্তানা খুলে প্রথমেই দেখলাম ‘ফ্রস্টবাইট’ হয়ে গিয়েছে কিনা!

‘সেন ব্রাদার্স’ থেকে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিজের লেখা গল্পের বই ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে ‘হারানো ভূত’ নামে একটি সংকলন, তাঁরই সম্পাদনায়। এ বইতে দু’ মলাটে বন্দি হয়েছে হারিয়ে যাওয়া যত ভূত, কত ভূত। বাংলা ভাষার লেখা বহু উল্লেখযোগ্য ভূতের গল্প হারাতে বসেছে। একালের পাঠকের অপঠিত, অপরিচিত ভূতের গল্প এ বইতে সংকলিত হয়েছে।
‘উদয়ারুণ’ নামে একটি প্রকাশন সংস্থা থেকে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি ভিন্নধর্ম বই বেরিয়েছে। সে বইয়ের নাম ‘পোস্ট এডিটোরিয়াল’। বছর তিনেক আগে ‘বর্তমান’ সংবাদপত্রে খানবারো উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখেছিলেন তিনি। সেসব লেখা নিয়ে ‘পোস্ট এডিটোরিয়াল’। ছোট্ট এ বইটি পাঠকের নজর কেড়েছে। আছে আরও দুটি সংকলন, যা বেরিয়েছে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। ছোটদের কথা ভেবে বিজ্ঞানের লেখা কম লেখা হয়নি। সেসব লেখা নিয়ে বেরিয়েছে ‘সব লেখাই বিজ্ঞানের’। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে একালের সমরজিৎ কর, দীর্ঘ সময়কালের বিজ্ঞান-রচনা সংগৃহীত হয়েছে এ বইতে। বলা যায়, ছোটদের বিজ্ঞান-সাহিত্যের এক পরোক্ষ ইতিহাস যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বইটি বেরিয়েছে ‘রুবী পাবলিশার্স’ থেকে। পুরোনো দিনের বিস্মৃত লেখকদের লেখা ছোটদের গল্পের সংকলন ‘হারানো দিনের উজ্জ্বল গল্পমালা’র অষ্টম খণ্ড বেরিয়েছে শিশু কিশোর আকাদেমি‌ থেকে। এ-সংকলনে তাঁর সঙ্গী-সম্পাদক অশোককুমার মিত্র। অষ্টম খণ্ডে আছে একটি দীর্ঘ ভূমিকা। সেটি পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরই লেখা।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১০: কান্না-হাসির দোল দোলানো ‘সাড়ে চুয়াত্তর’

ডায়েট ফটাফট: সানস্ক্রিন মাখবেন তো বটেই, এবার খেয়েও দেখুন—সিঙ্গল ইনভেস্টমেন্টে ডবল প্রফিট!

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক: পর্ব-১: একটি ক্লান্তিকর বাসযাত্রা এবং…

সময় আপডেটস-এর সূচনাকাল থেকে পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় লিখছেন। তাঁর সম্পাদিত ও রচিত গ্ৰন্থসংখ্যা দেড়শোরও বেশি। এই বইমেলায় তাঁর এক ডজন বই বেরিয়েছে, বইগুলি সমাদৃত হয়েছে, এ সংবাদ আমাদের কাছে আনন্দের। শিশুসাহিত্য থেকে ঠাকুরবাড়ি— এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বৈচিত্র্যময় তাঁর গ্ৰন্থসম্ভার সহজেই পাঠকহৃদয় জয় করবে। এমন আশা আমরা করতেই পারি।

Skip to content