সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


জাহাদ-জিয়া।

আমরা সবসময় জানতেও পারি না যে আমাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক ভাবে নারী হলেও মনেপ্রাণে পুরুষসত্তা নিয়ে বেঁচে আছেন। আবার পুরুষদের ক্ষেত্রেও আকছারই এই ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তবে সেই সত্তাকে বাস্তব রূপ দিতে নিজেকে আমূল পরিবর্তন করার দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, এমন উদাহরণও এখন প্রায়ই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মনের বাঁধন সব সময়েই সমাজ এবং সংস্কারের অনেক ঊর্ধ্বে। সে কথাই আরও একবার প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন কেরলের এক রূপান্তরকামী প্রেমিক যুগল।
কেরলের রূপান্তরকামী যুগল জাহাদ পাভাল ও জিয়া পাভাল এখন তাঁদের প্রথম সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। ২৩ বছর বয়সি জাহাদ রূপান্তরিত পুরুষ। ২১ বছর বয়সি রূপান্তরিত মহিলা জিয়া নিজেই ইনস্টাগ্রামে স্বামীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা বলেন। দেশে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে। ইনস্টাগ্রামে জিয়া লেখেছেন, ‘‘আমার মা হওয়ার ও জাহাদের বাবা হওয়ার স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হতে চলেছে।’’

জাহাদ-জিয়া তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন। দেখা হওয়ার পরেও তাঁরা হরমোন থেরাপি করিয়েছিলেন। তারপর তাঁরা অভিভাবক হতে চান। তাই কিছু দিনের জন্য তাঁরা তাঁদের হরমোন থেরাপি বন্ধ রেখেছিলেন। শিশুর জন্মের পর আবার তাঁরা হরমোন থেরাপি শুরু করবেন।
আরও পড়ুন:

তীব্র ঝাঁকুনিতে বিধ্বস্ত তুরস্ক, ১০ ঘণ্টার মধ্যে ফের ভয়াবহ কাঁপুনি, সকালের ভূকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৩০০ পার

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৯: অমর একুশে গ্রন্থমেলা: বাংলাভাষী লেখকদের আবেগ ও স্বপ্নের বইমেলা

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়া বলেন, ‘‘বেশির ভাগ রূপান্তরকামীদেরই সমাজ একঘরে করে রাখে। অনেকের ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনও তাঁদের পাশে থাকেন না। আমরা প্রথম থেকেই একটি সন্তান চেয়েছিলাম, যাকে আঁকড়ে ধরে আনন্দে সারা জীবন বেঁচে থাকতে পারি। আমাদের আশা, আমাদের পরেও আমাদের অস্তিত্বও এই পৃথিবীতে যেন থেকে যায়। তিনি এও বলেন, অনেক রূপান্তরকামীরা বাবা-মা হতে চান। তবে সমাজের চোখরাঙানির ভয়, তাঁরা সেই সিদ্ধান্তটি নিতে সাহস পান না। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, রূপান্তরকামীরাও সাধারণ নিয়মেই অভিভাবক হতে পারেন। সেই উদাহরণই সকলের সামনে তুলে ধরছি আমরা। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সমস্ত চোখরাঙানি উপেক্ষা করে নিজেরাই বাবা-মা হব।’’
আরও পড়ুন:

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪১: মৎস্যজীবীদের মীন সংগ্রহে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে প্রচুর অপচয় কমবে, রক্ষা পাবে মাছের জীব বৈচিত্র্যও

অভিভাবক হতে পেরে জাহাদ-জিয়া দু’জনেই খুবই আনন্দিত। আর পাঁচ জন সাধারণ অভিভাবকদের মতো তাঁরাও উপভোগ করছেন জীবনের এই নতুন প্রজায়ের অভিজ্ঞতা। এমনকি, অন্তঃসত্ত্বাকালীন ফটোশুটও করিয়েছেন তাঁরা। জিয়া সেই সব ছবি ইনস্টাগ্রামে ভাগ করে নিয়েছেন। ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হতেই বেশ চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, খালি গায়ে স্ফীত উদরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন জাহাদ। চোখেমুখে খুশির জেল্লা! শাড়ি পরে দক্ষিণী সাজে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন জিয়া।
<>নেটিজেনরা কেউ কেউ ছবি দেখে শুভেচ্ছা জানান রূপান্তরকামী যুগলকে। অনেকে আবার ফটোগুলি দেখে নিন্দা করেছেন। তবে নিন্দকদের পাত্তা দিচ্ছেন না এই যুগল। জাহাদ আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মার্চেই তাঁদের জীবনে আগমন ঘটবে নতুন অতিথির।

Skip to content