শ্রী জগন্নাথ মিশ্রের পৈতৃক ভিটেয় শ্রীচৈতন্য মন্দির।
চট্টগ্রাম জেলার কন্যাশ্রমে একটি সতীপীঠের কথা জানা যায়৷ চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিমি দূরে৷ তন্ত্রচূড়ামণিতে রয়েছে—‘কন্যাশ্রমে দেবীর পৃষ্ঠ পড়েছে৷ এখানে দেবীর নাম সর্ব্বাণী এবং ভৈরব হলেন নিমিষ৷’ অধ্যাপক ডঃ দীনেশ চন্দ্র সরকারের মতে, চট্টগ্রাম জেলার কুমিরা রেল স্টেশনের কাছে কুমারীকুণ্ডই কন্যাশ্রম৷ তবে এই পীঠ নিতে মতদ্বৈত আছে৷ কোনো কোনো গবেষকের মতে এই তীর্থ দিল্লির কুরুক্ষেত্রের কাছাকাছি কোনো একস্থানে অবস্থিত৷
চট্টগ্রামের পর এবার চলেছি সিলেটের পথে৷ ‘সৌদিয়া’ কোম্পানির লাক্সারি বাস রাতে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সিলেটে যায়৷ মার্সিডিজ বেঞ্চ বড় বাস৷ বাস ছাড়ল রাত ১০ টায়৷ রাত আড়াইটায় কুমিল্লা পেরলাম৷ গোটা শহর তখন ঘুমিয়ে৷ শাসনগাছা রেইল (রেল) গেট পেরিয়ে কুমিল্লা সরকারি কলেজ৷ ডাঃ রামকৃষ্ণ পালের হোমিও ক্লিনিক৷ তারপর শংকরপুর এলাকা৷
কুমিল্লার পর ময়নামতি সেনা ক্যান্টনমেন্ট৷ ময়নামতি রেস্তরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টারে বাস আধঘণ্টা দাঁড়াল৷ যাত্রীরা চা-কফি খেল৷ গাড়ি বেশ জোরেই ছুটছে৷ ব্রাহ্মণবেড়িয়ার রাস্তাটুকু বেশ খারাপ৷ সরু কাঠের ব্রিজ৷ বাস যে রাস্তার এপাশে ওপাশে টাল খায়! ভোরে জগদীশপুর৷ মোট দু-বার স্টপেজ৷
জগদীশপুরের নূরজাহান রেস্তরাঁয় খানিকক্ষণ বাস দাঁড়াল৷ একসময় এই জগদীশপুরের বর্ধিষ্ণু ‘দত্ত চৌধুরি’ পরিবারের কত গল্পই না শুনেছি আমার জামাইবাবু অমিয় (মানিকদা) দত্ত চৌধুরির মুখে৷ গড়িয়াহাটের মোড়ে প্রতি বছর ধুমধাম করে জগদীশপুর দত্ত চৌধুরি বাড়ির দুর্গাপুজো হয়৷ দেশের বাড়ির কথা বলতে গিয়ে ৯৩ বছর বয়সী মানিকদা আজও স্মৃতিভারে আচ্ছন্ন হন৷ সিলেট শহরে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গেল৷ সকাল ৯টা৷ সুর্মা নদীর সেতু পেরিয়ে শহর৷
সিলেট রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি (মানিক মহারাজ)৷ এই আশ্রমেরই রাম মহারাজকে কোন দিন সিলেটে আসব জানিয়ে রেখেছিলাম৷ ওদিকে চট্টগ্রামের তাপস হোড় মহাশয় সিলেট ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি শ্রীযুক্ত অসিত ভট্টাচার্যের মোবাইল নম্বর আমাকে দিয়েছিলেন৷ তাঁকে আমার সিলেটে আসার কথা জানিয়েও রেখেছিলেন৷ তাই সব মিলিয়ে নো ভাবনাচিন্তা৷
সিলেট শহরের পুলিশ কমিশনারের অফিসের উলটোদিকেই মীরাবাজার রামকৃষ্ণ মিশন রোডে রামকৃষ্ণ মিশন৷ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি এবং রাম মহারাজের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হল৷ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি খুব স্নেহপ্রবণ৷ নিজেই গোটা আশ্রম ঘুরিয়ে দেখালেন৷ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সুন্দর মন্দির৷ পিছনে ডাইনিং হল৷ একপাশে সন্ন্যাসীদের থাকার জায়গা৷ মন্দিরের উলটোদিকে তিনতলা বিরাট গেস্টহাউস৷ ভক্তরা এখানেই ওঠেন৷ মন্দিরের পাশে আশ্রমেরই বড় পুকুর৷ গেস্ট হাউসে আমারও থাকার একটা জায়গা হল৷
সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক ভিটা ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে৷ মহাপণ্ডিত শ্রীজগন্নাথ মিশ্র এখানে জন্মগ্রহণ করেন৷ মহাপ্রভু একবার এখানে এসেছিলেন৷ এই প্রসঙ্গে আরেকটু আলোকপাত করতে চাই৷ মহাপ্রভুর ঠাকুর্দা ও ঠাকুমা কৈলাস টিলাইয়ের কাছে ঢাকা গ্রামে (ফুরকাবাদ পরগণা) বসতি স্থাপন করেন৷
চট্টগ্রামের পর এবার চলেছি সিলেটের পথে৷ ‘সৌদিয়া’ কোম্পানির লাক্সারি বাস রাতে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সিলেটে যায়৷ মার্সিডিজ বেঞ্চ বড় বাস৷ বাস ছাড়ল রাত ১০ টায়৷ রাত আড়াইটায় কুমিল্লা পেরলাম৷ গোটা শহর তখন ঘুমিয়ে৷ শাসনগাছা রেইল (রেল) গেট পেরিয়ে কুমিল্লা সরকারি কলেজ৷ ডাঃ রামকৃষ্ণ পালের হোমিও ক্লিনিক৷ তারপর শংকরপুর এলাকা৷
কুমিল্লার পর ময়নামতি সেনা ক্যান্টনমেন্ট৷ ময়নামতি রেস্তরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টারে বাস আধঘণ্টা দাঁড়াল৷ যাত্রীরা চা-কফি খেল৷ গাড়ি বেশ জোরেই ছুটছে৷ ব্রাহ্মণবেড়িয়ার রাস্তাটুকু বেশ খারাপ৷ সরু কাঠের ব্রিজ৷ বাস যে রাস্তার এপাশে ওপাশে টাল খায়! ভোরে জগদীশপুর৷ মোট দু-বার স্টপেজ৷
জগদীশপুরের নূরজাহান রেস্তরাঁয় খানিকক্ষণ বাস দাঁড়াল৷ একসময় এই জগদীশপুরের বর্ধিষ্ণু ‘দত্ত চৌধুরি’ পরিবারের কত গল্পই না শুনেছি আমার জামাইবাবু অমিয় (মানিকদা) দত্ত চৌধুরির মুখে৷ গড়িয়াহাটের মোড়ে প্রতি বছর ধুমধাম করে জগদীশপুর দত্ত চৌধুরি বাড়ির দুর্গাপুজো হয়৷ দেশের বাড়ির কথা বলতে গিয়ে ৯৩ বছর বয়সী মানিকদা আজও স্মৃতিভারে আচ্ছন্ন হন৷ সিলেট শহরে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গেল৷ সকাল ৯টা৷ সুর্মা নদীর সেতু পেরিয়ে শহর৷
সিলেট রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি (মানিক মহারাজ)৷ এই আশ্রমেরই রাম মহারাজকে কোন দিন সিলেটে আসব জানিয়ে রেখেছিলাম৷ ওদিকে চট্টগ্রামের তাপস হোড় মহাশয় সিলেট ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি শ্রীযুক্ত অসিত ভট্টাচার্যের মোবাইল নম্বর আমাকে দিয়েছিলেন৷ তাঁকে আমার সিলেটে আসার কথা জানিয়েও রেখেছিলেন৷ তাই সব মিলিয়ে নো ভাবনাচিন্তা৷
সিলেট শহরের পুলিশ কমিশনারের অফিসের উলটোদিকেই মীরাবাজার রামকৃষ্ণ মিশন রোডে রামকৃষ্ণ মিশন৷ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি এবং রাম মহারাজের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হল৷ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজি খুব স্নেহপ্রবণ৷ নিজেই গোটা আশ্রম ঘুরিয়ে দেখালেন৷ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সুন্দর মন্দির৷ পিছনে ডাইনিং হল৷ একপাশে সন্ন্যাসীদের থাকার জায়গা৷ মন্দিরের উলটোদিকে তিনতলা বিরাট গেস্টহাউস৷ ভক্তরা এখানেই ওঠেন৷ মন্দিরের পাশে আশ্রমেরই বড় পুকুর৷ গেস্ট হাউসে আমারও থাকার একটা জায়গা হল৷
সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক ভিটা ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে৷ মহাপণ্ডিত শ্রীজগন্নাথ মিশ্র এখানে জন্মগ্রহণ করেন৷ মহাপ্রভু একবার এখানে এসেছিলেন৷ এই প্রসঙ্গে আরেকটু আলোকপাত করতে চাই৷ মহাপ্রভুর ঠাকুর্দা ও ঠাকুমা কৈলাস টিলাইয়ের কাছে ঢাকা গ্রামে (ফুরকাবাদ পরগণা) বসতি স্থাপন করেন৷
এই গ্রাম তখন জঙ্গলে পরিপূর্ণ৷ পর্ণকুটিরে উপেন্দ্র মিশ্র ও পত্নী শোভাদেবী বসবাস করতে লাগলেন৷ শোভাদেবী ধর্মপরায়ণা৷ পতিকে ধর্ম-কর্মে সহায়তা করেন৷ সাধন-ভজনের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত হয় স্বামী-স্ত্রীর৷ তাঁদের গর্বের সন্তান শ্রীজগন্নাথ মিশ্র৷ বাল্যাবধি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি৷
সেই সময় বঙ্গদেশে শিক্ষা-সংসৃকতির অন্যতম পীঠস্থান নবদ্বীপ৷ সংসৃকত পঠন-পাঠনের উপযুক্ত জায়গা৷ টোলের সংখ্যাও কম ছিল না৷ জগন্নাথ মিশ্র নবদ্বীপে এলেন৷ পরে নবদ্বীপের পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ হিসাবে খ্যাতিলাভ করলেন৷ উপযুক্ত পাত্র জগন্নাথ মিশ্রের সঙ্গে শচীদেবীর বিবাহ হয়৷ তাঁদের জ্যেষ্ঠপুত্র বিশ্বরূপ৷ তারপর বিশ্বম্ভর৷
সুদূর এক গ্রামে রয়েছেন বাবা-মা৷ নবদ্বীপে সপরিবারে জগন্নাথ মিশ্র৷ মা-বাবার চিন্তায় অধীর হয়ে ওঠেন তিনি৷ তাঁদের সেবা করার মানসে জগন্নাথ মিশ্র আবার ফিরে এলেন ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে৷ শ্বশুরের ভিটাতেই অন্তঃসত্ত্বা হলেন শচীদেবী৷ তিনি স্বপ্ণে দেখলেন, ত্রিভঙ্গমুরারী এক শিশুসন্তানের রূপ পরিগ্রহ করে তাঁর দেহের সঙ্গে মিশে গেলেন৷ স্বপ্ণাদিষ্ট হয়ে নবদ্বীপে ফিরে এলেন শচীদেবী৷ যথাসময়ে নিমাইয়ের জন্ম৷ এই ধরাধামে মানব উদ্ধারে এলেন শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু৷
শাশুড়ির কাছে প্রতিজ্ঞা করেন শচীদেবী, নিমাইকে ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে একবারের জন্য হলেও পাঠাবেন৷ ঠাকুর্দা ও ঠাকুমাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেবেন নিমাই৷ তবে সন্ন্যাস গ্রহণের পর চৈত্রমাসের কোনো এক রবিবার এখানে এসেছিলেন শ্রীচৈতন্য৷ তখন তাঁর ঠাকুদা, বাবা, কাকা, জ্যাঠা কেউ বেঁচে নেই৷ ঠাকুমা নাতিকে দেখে আনন্দে অধীর৷ মহাপ্রভুকে স্পর্শ করলেন৷ ঠাকুমার মমতায় এক সন্ন্যাসীও তখন ভাষাহীন৷ পৈতৃক ভিটাতে চারদিন অতিবাহিত করেন চৈতন্যদেব৷
অসিত ভট্টাচার্য আমাকে ফোনে বলেছিলেন যে, তিনি বিকেলের দিকে রামকৃষ্ণ মিশনে আসবেন৷ ঠিক ঘড়ি ধরে বিকেল সাড়ে চারটায় গেস্ট হাউসের একতলা থেকে তাঁর আসার খবর আমাকে মোবাইলে জানালেন৷ অসিতবাবু এবং তাঁর সঙ্গী ভদ্রলোক বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় হল৷ তখনই আলোচনায় স্থির হল, আজই শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের ভিটাবাড়ি ও গৌরাঙ্গ মন্দির দেখে আসব৷ বিজয়বাবু আমার সঙ্গে যাবেন৷ প্রায় সন্ধ্যার মুখে অটোরিকশয় ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে পৌঁছলাম৷ জগন্নাথ মিশ্রের পৈতৃক ভিটাতেই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে৷ মন্দিরটি দেখতে খুবই সুন্দর৷ বাংলাদেশ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে৷ জগন্নাথ মিশ্রের দ্বিতীয় ভ্রাতা শ্রীপরমানন্দ মিশ্রের চতুর্দশ বংশধর শ্রীরাধাগোবিন্দ মিশ্রের সঙ্গে পরিচয় হল৷ স্থানীয় কলেজের বাংলার অধ্যাপক৷ তিনিই এখন এই মন্দির দেখাশোনা করেন৷ কলকাতা ও আগরতলায় অনেক শিষ্য-শিষ্যা তাঁর৷ শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের ভিটাবাড়ির একাংশ যাকে বলা হয়, সেটি এখন ধ্বংসস্তূপ৷ চৈত্রমাস জুড়ে মন্দিরে উৎসব৷ এই উপলক্ষে মন্দিরের সামনের মাঠে মেলা বসবে৷ আশ্রমে ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা৷
বেলুড় মঠের তিনজন সন্ন্যাসী মহারাজ যথাক্রমে স্বামী অমৃতেশানন্দ, স্বামী অমূল্যানন্দ এবং স্বামী অমৃতানন্দ বাংলাদেশের বিভিন্ন রামকৃষ্ণ মিশন দেখবেন বলে বেরিয়েছেন৷ সেদিন সকালেই ওঁরা সিলেটে এসেছেন৷ তাঁদের সঙ্গে চট্টগ্রামের সেবাশ্রমেও আমার দেখা হয়েছিল৷ সেদিন রাতেই মানিক মহারাজ আমাকে বললেন, আমরা কয়েকজন আগামীকাল সকালে সতীপীঠ দেবী জয়ন্তী দর্শন করতে যাব৷ ইচ্ছা হলে আপনি আমাদের সঙ্গে যেতে পারেন৷
সেই সময় বঙ্গদেশে শিক্ষা-সংসৃকতির অন্যতম পীঠস্থান নবদ্বীপ৷ সংসৃকত পঠন-পাঠনের উপযুক্ত জায়গা৷ টোলের সংখ্যাও কম ছিল না৷ জগন্নাথ মিশ্র নবদ্বীপে এলেন৷ পরে নবদ্বীপের পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ হিসাবে খ্যাতিলাভ করলেন৷ উপযুক্ত পাত্র জগন্নাথ মিশ্রের সঙ্গে শচীদেবীর বিবাহ হয়৷ তাঁদের জ্যেষ্ঠপুত্র বিশ্বরূপ৷ তারপর বিশ্বম্ভর৷
সুদূর এক গ্রামে রয়েছেন বাবা-মা৷ নবদ্বীপে সপরিবারে জগন্নাথ মিশ্র৷ মা-বাবার চিন্তায় অধীর হয়ে ওঠেন তিনি৷ তাঁদের সেবা করার মানসে জগন্নাথ মিশ্র আবার ফিরে এলেন ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে৷ শ্বশুরের ভিটাতেই অন্তঃসত্ত্বা হলেন শচীদেবী৷ তিনি স্বপ্ণে দেখলেন, ত্রিভঙ্গমুরারী এক শিশুসন্তানের রূপ পরিগ্রহ করে তাঁর দেহের সঙ্গে মিশে গেলেন৷ স্বপ্ণাদিষ্ট হয়ে নবদ্বীপে ফিরে এলেন শচীদেবী৷ যথাসময়ে নিমাইয়ের জন্ম৷ এই ধরাধামে মানব উদ্ধারে এলেন শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু৷
শাশুড়ির কাছে প্রতিজ্ঞা করেন শচীদেবী, নিমাইকে ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে একবারের জন্য হলেও পাঠাবেন৷ ঠাকুর্দা ও ঠাকুমাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেবেন নিমাই৷ তবে সন্ন্যাস গ্রহণের পর চৈত্রমাসের কোনো এক রবিবার এখানে এসেছিলেন শ্রীচৈতন্য৷ তখন তাঁর ঠাকুদা, বাবা, কাকা, জ্যাঠা কেউ বেঁচে নেই৷ ঠাকুমা নাতিকে দেখে আনন্দে অধীর৷ মহাপ্রভুকে স্পর্শ করলেন৷ ঠাকুমার মমতায় এক সন্ন্যাসীও তখন ভাষাহীন৷ পৈতৃক ভিটাতে চারদিন অতিবাহিত করেন চৈতন্যদেব৷
অসিত ভট্টাচার্য আমাকে ফোনে বলেছিলেন যে, তিনি বিকেলের দিকে রামকৃষ্ণ মিশনে আসবেন৷ ঠিক ঘড়ি ধরে বিকেল সাড়ে চারটায় গেস্ট হাউসের একতলা থেকে তাঁর আসার খবর আমাকে মোবাইলে জানালেন৷ অসিতবাবু এবং তাঁর সঙ্গী ভদ্রলোক বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় হল৷ তখনই আলোচনায় স্থির হল, আজই শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের ভিটাবাড়ি ও গৌরাঙ্গ মন্দির দেখে আসব৷ বিজয়বাবু আমার সঙ্গে যাবেন৷ প্রায় সন্ধ্যার মুখে অটোরিকশয় ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে পৌঁছলাম৷ জগন্নাথ মিশ্রের পৈতৃক ভিটাতেই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে৷ মন্দিরটি দেখতে খুবই সুন্দর৷ বাংলাদেশ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরটি তৈরি হয়েছে৷ জগন্নাথ মিশ্রের দ্বিতীয় ভ্রাতা শ্রীপরমানন্দ মিশ্রের চতুর্দশ বংশধর শ্রীরাধাগোবিন্দ মিশ্রের সঙ্গে পরিচয় হল৷ স্থানীয় কলেজের বাংলার অধ্যাপক৷ তিনিই এখন এই মন্দির দেখাশোনা করেন৷ কলকাতা ও আগরতলায় অনেক শিষ্য-শিষ্যা তাঁর৷ শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের ভিটাবাড়ির একাংশ যাকে বলা হয়, সেটি এখন ধ্বংসস্তূপ৷ চৈত্রমাস জুড়ে মন্দিরে উৎসব৷ এই উপলক্ষে মন্দিরের সামনের মাঠে মেলা বসবে৷ আশ্রমে ফিরতে ফিরতে রাত ৯টা৷
বেলুড় মঠের তিনজন সন্ন্যাসী মহারাজ যথাক্রমে স্বামী অমৃতেশানন্দ, স্বামী অমূল্যানন্দ এবং স্বামী অমৃতানন্দ বাংলাদেশের বিভিন্ন রামকৃষ্ণ মিশন দেখবেন বলে বেরিয়েছেন৷ সেদিন সকালেই ওঁরা সিলেটে এসেছেন৷ তাঁদের সঙ্গে চট্টগ্রামের সেবাশ্রমেও আমার দেখা হয়েছিল৷ সেদিন রাতেই মানিক মহারাজ আমাকে বললেন, আমরা কয়েকজন আগামীকাল সকালে সতীপীঠ দেবী জয়ন্তী দর্শন করতে যাব৷ ইচ্ছা হলে আপনি আমাদের সঙ্গে যেতে পারেন৷
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে, পর্ব-৪৭: স্বামীজির ছবি প্রীতিলতার শাড়ির সঙ্গে ‘ব্যাজ’ হিসাবে আঁটা থাকত
সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৮: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতীয় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা আমরা ভুলবো না
এর থেকে ভালো প্রস্তাব হয় না৷ পরদিন সকালে মানিক মহারাজের নেতৃত্বে ওই মহাপীঠের উদ্দেশে দুটো প্রাইভেট গাড়িতে যাত্রা শুরু আমাদের৷ জাফলং-এর দিকে তামাবিল রোড চলে গিয়েছে৷ এই জাফলং উজিয়েই খানিকটা দূরে শিলং৷ সিলেটের সীমান্ত যেমন ভারতের মেঘালয়, তেমনি করিমগঞ্জও বটে৷ অবশ্য আমরা ওদিকে যাব না৷
শাস্ত্রে বর্ণিত ৫১ পীঠের অন্যতম দেবী জয়ন্তী৷ এই পীঠে দেবীর বাম জঙ্ঘা পড়েছিল৷ দেবীর ভৈরব হলেন ক্রমদীশ্বর৷ তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে ‘জয়ন্তাং বাম জঙ্ঘা চ জয়ন্ত ক্রমদীশ্বর৷’
অন্নদামঙ্গল কাব্যে কবি ভারতচন্দ্র বলেছেন ‘জয়ন্তায় বাম জঙ্ঘা ফেলিল কেশব/জয়ন্তী দেবতা ক্রমদীশ্বর ভৈরব৷৷’ এই মহাপীঠের বর্ণনায় তন্ত্রশাস্ত্র বলে, শিবের বাসভূমি কৈলাসে দশলক্ষ মন্ত্র জপ করলে সিদ্ধিলাভ হয়৷ কিন্তু জয়ন্তীতে পাঁচলক্ষ মন্ত্রের জপের মাধ্যমেই সিদ্ধিলাভ করা যায়৷
সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রায় ৫৭ কিমি উত্তর-পূর্বে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক মনোরম জায়গায় এই সতীপীঠ৷ দেবীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম জয়ন্তী বা জয়ন্তীয়া৷ সুরাইঘাট বাজারে এসে আমাদের গাড়িদুটো দাঁড়িয়ে পড়ল৷ কর্দমাক্ত রাস্তা৷ গাড়ি এগোবে না৷ মানিক মহারাজ বললেন, আরও আড়াই কিমি হেঁটে পীঠে পৌঁছব৷ অগত্যা হাঁটা শুরু৷ দূরে দু-তিন সারি পাহাড়৷ মানিক মহারাজ আমাকে বললেন, ওই একদম পিছনের পাহাড়টা দেখুন৷ তারপরেই মেঘালয় রাজ্য৷ এখান থেকে মাত্র ২ কিমি৷ বেলুড়ের এক মহারাজ গল্প করতে করতে বললেন যে, বাংলাদেশের দুটো জিনিস তাঁর খুব ভালো লেগেছে৷ প্রথমত, এই দেশে মদের দোকান নেই৷ দ্বিতীয়ত, মহিলাদের বেশভূষা যথেষ্ট মার্জিত রুচির৷
আমরা যখন সতীপীঠে পৌঁছলাম মন্দিরের দ্বার খোলা৷ গর্ভগৃহে দেবী পূর্বমুখী৷ চারপাশ বাঁধানো ছোট একটি কুণ্ডে মায়ের শিলীভূত জঙ্ঘা৷ মন্দির চত্বর টাইলসে বাঁধানো৷ একসময় এই মন্দিরটি যে বেশ বড় ছিল, তার প্রমাণ পাশেই ইটের পাঁজর বের করা ধ্বংসস্তূপ৷ মন্দিরের সামনে পুষ্করিণী৷ নাম কালীগঙ্গা৷ আজ ২৮ মার্চ বারুণী স্নান৷ সুনামগঞ্জ জেলার লাউরের গড়ে জাদুকাটা নদীতে এই বারুণী স্নান ভোর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে৷ নদীর ধারেই শ্রীদ্বৈত মহাপ্রভুর মন্দির৷ কয়েক লক্ষ হিন্দুর পুণ্যস্নান৷ এই অঞ্চলেরই বাসিন্দা নোবেল রঞ্জন দাস বললেন, আমাদের এই কালীগঙ্গায় আজ সকাল থেকে অনেকেই বারুণী স্নান করেছেন৷ এখানে তর্পণও হয়৷ প্রতি রবিবার এই পীঠে ভোগ, আরতি ও কীর্তন হয়৷ মা এখানে রক্ষাকালী হিসাবে পূজিতা৷ একটি কুয়োও রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে৷
মহারাজরা গর্ভগৃহে বসে খানিকক্ষণ জপ-ধ্যান করলেন৷ মাকে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হল৷ শুনলাম, মন্দিরের দেড়-দুই কিমি ব্যাসার্ধে ৩০/৩৫টি হিন্দু পরিবারের বসবাস৷ এবার ফেরার পালা৷ সুরাইঘাট থেকে কানাইঘাট বাজার৷ গাড়ির গতি একটু বেড়েছে৷ হঠাৎ উচ্চ কীর্তন কানে এল৷ খোল-করতালের সঙ্গে কীর্তনের সুর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে৷
সেদিন সন্ধ্যায় শ্রীশৈলের (সিলেট শহর) দেবী মহালক্ষ্মী মন্দিরে এলাম৷ এটি আরেকটি সতীপীঠ৷ ভৈরব সর্বানন্দ৷ মতান্তরে সম্বরানন্দ৷ সিলেট জেলাতেই দুটো সতীপীঠ রয়েছে৷ সতীর গ্রীবা পড়েছিল এখানে৷ জায়গাটি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বেশি দূরে নয়৷ সিলেট শহর থেকে প্রায় আড়াই-তিন কিমি দক্ষিণে, গোটাটিকর জৈন্তাপুর৷ তন্ত্রশাস্ত্রে এই পীঠের গুরুত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে—‘গ্রীবা পপাতঃ শ্রীহট্টে সর্বসিদ্ধি প্রদায়িনী৷/দেবী তত্র মহালক্ষ্মী সর্বানন্দশ্চ ভৈরবঃ৷৷’ অন্নদামঙ্গল কাব্যে রয়েছে—‘শ্রীহট্টে পড়িল গ্রীবা মহালক্ষ্মী দেবী৷/সর্বানন্দ ভৈরব বৈভব যাহা সেবি৷৷’
শাস্ত্রে বর্ণিত ৫১ পীঠের অন্যতম দেবী জয়ন্তী৷ এই পীঠে দেবীর বাম জঙ্ঘা পড়েছিল৷ দেবীর ভৈরব হলেন ক্রমদীশ্বর৷ তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে ‘জয়ন্তাং বাম জঙ্ঘা চ জয়ন্ত ক্রমদীশ্বর৷’
অন্নদামঙ্গল কাব্যে কবি ভারতচন্দ্র বলেছেন ‘জয়ন্তায় বাম জঙ্ঘা ফেলিল কেশব/জয়ন্তী দেবতা ক্রমদীশ্বর ভৈরব৷৷’ এই মহাপীঠের বর্ণনায় তন্ত্রশাস্ত্র বলে, শিবের বাসভূমি কৈলাসে দশলক্ষ মন্ত্র জপ করলে সিদ্ধিলাভ হয়৷ কিন্তু জয়ন্তীতে পাঁচলক্ষ মন্ত্রের জপের মাধ্যমেই সিদ্ধিলাভ করা যায়৷
সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রায় ৫৭ কিমি উত্তর-পূর্বে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক মনোরম জায়গায় এই সতীপীঠ৷ দেবীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম জয়ন্তী বা জয়ন্তীয়া৷ সুরাইঘাট বাজারে এসে আমাদের গাড়িদুটো দাঁড়িয়ে পড়ল৷ কর্দমাক্ত রাস্তা৷ গাড়ি এগোবে না৷ মানিক মহারাজ বললেন, আরও আড়াই কিমি হেঁটে পীঠে পৌঁছব৷ অগত্যা হাঁটা শুরু৷ দূরে দু-তিন সারি পাহাড়৷ মানিক মহারাজ আমাকে বললেন, ওই একদম পিছনের পাহাড়টা দেখুন৷ তারপরেই মেঘালয় রাজ্য৷ এখান থেকে মাত্র ২ কিমি৷ বেলুড়ের এক মহারাজ গল্প করতে করতে বললেন যে, বাংলাদেশের দুটো জিনিস তাঁর খুব ভালো লেগেছে৷ প্রথমত, এই দেশে মদের দোকান নেই৷ দ্বিতীয়ত, মহিলাদের বেশভূষা যথেষ্ট মার্জিত রুচির৷
আমরা যখন সতীপীঠে পৌঁছলাম মন্দিরের দ্বার খোলা৷ গর্ভগৃহে দেবী পূর্বমুখী৷ চারপাশ বাঁধানো ছোট একটি কুণ্ডে মায়ের শিলীভূত জঙ্ঘা৷ মন্দির চত্বর টাইলসে বাঁধানো৷ একসময় এই মন্দিরটি যে বেশ বড় ছিল, তার প্রমাণ পাশেই ইটের পাঁজর বের করা ধ্বংসস্তূপ৷ মন্দিরের সামনে পুষ্করিণী৷ নাম কালীগঙ্গা৷ আজ ২৮ মার্চ বারুণী স্নান৷ সুনামগঞ্জ জেলার লাউরের গড়ে জাদুকাটা নদীতে এই বারুণী স্নান ভোর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে৷ নদীর ধারেই শ্রীদ্বৈত মহাপ্রভুর মন্দির৷ কয়েক লক্ষ হিন্দুর পুণ্যস্নান৷ এই অঞ্চলেরই বাসিন্দা নোবেল রঞ্জন দাস বললেন, আমাদের এই কালীগঙ্গায় আজ সকাল থেকে অনেকেই বারুণী স্নান করেছেন৷ এখানে তর্পণও হয়৷ প্রতি রবিবার এই পীঠে ভোগ, আরতি ও কীর্তন হয়৷ মা এখানে রক্ষাকালী হিসাবে পূজিতা৷ একটি কুয়োও রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে৷
মহারাজরা গর্ভগৃহে বসে খানিকক্ষণ জপ-ধ্যান করলেন৷ মাকে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হল৷ শুনলাম, মন্দিরের দেড়-দুই কিমি ব্যাসার্ধে ৩০/৩৫টি হিন্দু পরিবারের বসবাস৷ এবার ফেরার পালা৷ সুরাইঘাট থেকে কানাইঘাট বাজার৷ গাড়ির গতি একটু বেড়েছে৷ হঠাৎ উচ্চ কীর্তন কানে এল৷ খোল-করতালের সঙ্গে কীর্তনের সুর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে৷
সেদিন সন্ধ্যায় শ্রীশৈলের (সিলেট শহর) দেবী মহালক্ষ্মী মন্দিরে এলাম৷ এটি আরেকটি সতীপীঠ৷ ভৈরব সর্বানন্দ৷ মতান্তরে সম্বরানন্দ৷ সিলেট জেলাতেই দুটো সতীপীঠ রয়েছে৷ সতীর গ্রীবা পড়েছিল এখানে৷ জায়গাটি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে বেশি দূরে নয়৷ সিলেট শহর থেকে প্রায় আড়াই-তিন কিমি দক্ষিণে, গোটাটিকর জৈন্তাপুর৷ তন্ত্রশাস্ত্রে এই পীঠের গুরুত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে—‘গ্রীবা পপাতঃ শ্রীহট্টে সর্বসিদ্ধি প্রদায়িনী৷/দেবী তত্র মহালক্ষ্মী সর্বানন্দশ্চ ভৈরবঃ৷৷’ অন্নদামঙ্গল কাব্যে রয়েছে—‘শ্রীহট্টে পড়িল গ্রীবা মহালক্ষ্মী দেবী৷/সর্বানন্দ ভৈরব বৈভব যাহা সেবি৷৷’
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?
শ্রীশ্রীমহালক্ষ্মী ভৈরবী গ্রীবা মহাপীঠের ক্যাশিয়ার অলোক দাশগুপ্ত তখন মন্দিরেই ছিলেন৷ পূজারি অনিলভূষণ চক্রবর্তী সন্ধ্যাপুজো শেষ করেছেন৷ ওঁদের কাছেই শুনলাম, এখানে একটি নতুন বড় মন্দির তৈরি হচ্ছে৷
সিলেট শহরের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি প্রখ্যাত আইনজীবী সুজয় সিংহ মজুমদারের চৌহাট্টার বাড়িতে সুনির্মল গুপ্তর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়৷ সিলেট শহরেই আরও একটি সতীপীঠের কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন৷ অবশ্য সেখানে আমার যাওয়া হয়নি৷ সুজয়বাবুর এই পৈতৃক বাড়িতে একবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন৷
শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাসের প্রেক্ষিতে কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ সম্বন্ধে সুনির্মল গুপ্তের একটি প্রয়োজনীয় নিবন্ধ এখানে উল্লেখ করলাম৷— ‘প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাশহর বা অঞ্চল থেকে ভৌগোলিকভাবে শ্রীহট্ট বা সিলেটের চতুর্দিকে দেবতাদের পদচারণা এবং দৃপ্ত অবস্থানে বিভিন্ন মঠ, মন্দির দৃষ্ট হয়৷ সিলেটবাসীর সবচেয়ে গৌরবের বিষয় যে, সতীর পবিত্র অঙ্গ তথা ভারতবর্ষীয় ৫১ মহাপীঠের একটি বামজঙ্ঘা জৈন্তিয়া ফালজুড়ে (অধুনা বাউরবাগ) কানাইঘাট সংলগ্ণ অঞ্চলে পতিত হয়েছে, অপরটি গ্রীবামহাপীঠ কালাগুলস্থ চা বাগানের অরণ্যে পতিত হয়েছে৷ মূলত কালাগুল পীঠস্থান ৬০০ বছর প্রচ্ছন্ন ছিল৷ মুসলিম শাসনপূর্ব সময়ে প্রাচীনকালের ধারাবাহিকতায় আদিবাসীগণ (পাত্তরগণ) দ্বারা জাগ্রত দেবস্থান ভেবে স্মরণাতীতকাল হতে পূজিত অন্যান্য পীঠলক্ষণ কিংবদন্তি ইত্যাদি দ্বারা সমর্থিত৷
১৯৩৮ সালে খ্যাতিমান প্রত্নতত্ত্ববিদ কমলাকান্ত গুপ্ত ‘গ্রীবা মহাপীঠ পুনঃ প্রকাশিত এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ’ ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন৷ গণেশরাম শিরোমণি কর্তৃক হট্টনাথের পাঁচালীর নষ্টোদ্বার থেকে পাঠোদ্ধার (যাহা ভাটেরায় প্রাপ্ত তাম্র ফলকের সঙ্গে উপরোক্ত মুদ্রার ভিত্তি হট্টনাথের পাঁচালী নষ্টোদ্বারের বিশেষ সামঞ্জস্য আছে) অবলম্বনে লেখেন৷
প্রয়াত কমলাকান্ত গুপ্ত ১৯৪০ সালে ‘শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস’ নামক গবেষণামূলক পুস্তক প্রকাশ করেন৷ উপরোক্ত পুস্তকে গ্রীবাপীঠ সম্পর্কিত বিশ্লেষণমূলক ও তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে৷ প্রয়াত কমলাকান্ত গুপ্ত সরেজমিনে কালগুল গমনপূর্বক পীঠশিলা পীঠলক্ষণ পীঠভৈরব অবস্থান, জলস্রোত পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে অনবরত জলধারা পীঠসিক্ত ইত্যাদির বিবরণ সবিস্তারে তাঁর পুস্তিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন৷ যাহা প্রমাণপূর্বক তথ্যতত্ত্ব ও সত্য সম্বলিত৷
‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ প্রকাশের পর শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস বিশেষভাবে ভাটেরা তাম্রফলক সম্বন্ধে ডাঃ কিশোরীমোহন গুপ্ত মহাশয় গবেষণা করেন৷ ডাঃ গুপ্ত ১৯৩৬-৩৭ ইংরেজিতে ‘প্রতিভা দেবী স্মৃতি বত্তৃণতা’ করেন৷ ঐ তিনটি বত্তৃণতার বিষয় ছিল শ্রীহট্টের হিন্দুরাজ্য সকল৷ তৎপর আমরা গ্রীবাপীঠের পুনঃপ্রকাশ এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ প্রকাশ করি৷ ডাঃ গুপ্ত হট্টনাথের পাঁচালী দ্বারা শ্রীহট্টের ইতিহাসের অন্ধকার যুগ সকলের উপর প্রচুর আলোকপাত সম্ভব এবং ‘‘ইহাকে ভাটের তাম্রফলকদ্বয় সমর্থন করিতেছে বলিয়া অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন৷’’ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)
সিলেট শহরের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি প্রখ্যাত আইনজীবী সুজয় সিংহ মজুমদারের চৌহাট্টার বাড়িতে সুনির্মল গুপ্তর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়৷ সিলেট শহরেই আরও একটি সতীপীঠের কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন৷ অবশ্য সেখানে আমার যাওয়া হয়নি৷ সুজয়বাবুর এই পৈতৃক বাড়িতে একবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন৷
শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাসের প্রেক্ষিতে কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ সম্বন্ধে সুনির্মল গুপ্তের একটি প্রয়োজনীয় নিবন্ধ এখানে উল্লেখ করলাম৷— ‘প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাশহর বা অঞ্চল থেকে ভৌগোলিকভাবে শ্রীহট্ট বা সিলেটের চতুর্দিকে দেবতাদের পদচারণা এবং দৃপ্ত অবস্থানে বিভিন্ন মঠ, মন্দির দৃষ্ট হয়৷ সিলেটবাসীর সবচেয়ে গৌরবের বিষয় যে, সতীর পবিত্র অঙ্গ তথা ভারতবর্ষীয় ৫১ মহাপীঠের একটি বামজঙ্ঘা জৈন্তিয়া ফালজুড়ে (অধুনা বাউরবাগ) কানাইঘাট সংলগ্ণ অঞ্চলে পতিত হয়েছে, অপরটি গ্রীবামহাপীঠ কালাগুলস্থ চা বাগানের অরণ্যে পতিত হয়েছে৷ মূলত কালাগুল পীঠস্থান ৬০০ বছর প্রচ্ছন্ন ছিল৷ মুসলিম শাসনপূর্ব সময়ে প্রাচীনকালের ধারাবাহিকতায় আদিবাসীগণ (পাত্তরগণ) দ্বারা জাগ্রত দেবস্থান ভেবে স্মরণাতীতকাল হতে পূজিত অন্যান্য পীঠলক্ষণ কিংবদন্তি ইত্যাদি দ্বারা সমর্থিত৷
১৯৩৮ সালে খ্যাতিমান প্রত্নতত্ত্ববিদ কমলাকান্ত গুপ্ত ‘গ্রীবা মহাপীঠ পুনঃ প্রকাশিত এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ’ ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন৷ গণেশরাম শিরোমণি কর্তৃক হট্টনাথের পাঁচালীর নষ্টোদ্বার থেকে পাঠোদ্ধার (যাহা ভাটেরায় প্রাপ্ত তাম্র ফলকের সঙ্গে উপরোক্ত মুদ্রার ভিত্তি হট্টনাথের পাঁচালী নষ্টোদ্বারের বিশেষ সামঞ্জস্য আছে) অবলম্বনে লেখেন৷
প্রয়াত কমলাকান্ত গুপ্ত ১৯৪০ সালে ‘শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস’ নামক গবেষণামূলক পুস্তক প্রকাশ করেন৷ উপরোক্ত পুস্তকে গ্রীবাপীঠ সম্পর্কিত বিশ্লেষণমূলক ও তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে৷ প্রয়াত কমলাকান্ত গুপ্ত সরেজমিনে কালগুল গমনপূর্বক পীঠশিলা পীঠলক্ষণ পীঠভৈরব অবস্থান, জলস্রোত পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে অনবরত জলধারা পীঠসিক্ত ইত্যাদির বিবরণ সবিস্তারে তাঁর পুস্তিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন৷ যাহা প্রমাণপূর্বক তথ্যতত্ত্ব ও সত্য সম্বলিত৷
‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ প্রকাশের পর শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস বিশেষভাবে ভাটেরা তাম্রফলক সম্বন্ধে ডাঃ কিশোরীমোহন গুপ্ত মহাশয় গবেষণা করেন৷ ডাঃ গুপ্ত ১৯৩৬-৩৭ ইংরেজিতে ‘প্রতিভা দেবী স্মৃতি বত্তৃণতা’ করেন৷ ঐ তিনটি বত্তৃণতার বিষয় ছিল শ্রীহট্টের হিন্দুরাজ্য সকল৷ তৎপর আমরা গ্রীবাপীঠের পুনঃপ্রকাশ এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ প্রকাশ করি৷ ডাঃ গুপ্ত হট্টনাথের পাঁচালী দ্বারা শ্রীহট্টের ইতিহাসের অন্ধকার যুগ সকলের উপর প্রচুর আলোকপাত সম্ভব এবং ‘‘ইহাকে ভাটের তাম্রফলকদ্বয় সমর্থন করিতেছে বলিয়া অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন৷’’ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)
আরও পড়ুন:
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন: ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?
ডায়েট ফটাফট: সব খাবারের সেরা সুপারফুড কিনোয়া খান, ওজন কমান
সন ১৯৪০ ইংরেজিতে শ্রীশ্রী গ্রীবাপীঠ পুনঃপ্রকাশ পাওয়ায় শ্রীহট্টবাসী হিন্দু সাধারণ মহোল্লাসে শ্রীশ্রী মায়ের গ্রীবা ধৌত পরম পবিত্র জল মস্তকে তুলিয়া নিয়াছে৷ সেই সময় হইতে কালাগুলে প্রত্যহ বহু যাত্রীর সমাগম হইয়া থাকে৷ শ্রীশ্রী গ্রীবাপীঠের নিত্য সেবাপূজা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ দ্বারা চলিয়া আসিতেছে৷ এই মহাপীঠ প্রকাশের সময় পীঠস্থানের চতুর্পার্শ্বস্থ চা বাগানের ইংরেজ ম্যানেজারগণ অনেক সাহায্য করেন, যাত্রীগণের যাতায়াতের জন্য ‘‘রাস্তা তৈয়ার করিয়া দিয়াছেন,’’ (সূত্রঃ শ্রীহট্ট বৈদ্যসমাজ পৃষ্ঠা ১১ নরেন্দ্র গুপ্ত চৌধুরি)৷
‘‘১৯৪৫-৪৬ ইংরেজিতে ‘‘মরুতীর্থ হিংলাজ, কালীতীর্থ কালীঘাট, উদ্ধারণপুরের ঘাট, প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পুস্তকের লেখক কালিকানন্দ অবধূত ও শ্রীশ্রী মাতা ষোড়শী ভৈরবী শ্রীহট্টে আসিয়া শ্রীশ্রী গ্রীবাপীঠে অবস্থানক্রমে, ২/১/৪৬ তারিখে ১০০টি মৃদঙ্গ ও অন্যান্য গীত বাদ্যাদিসহ কালগুল হইতে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি শোভাযাত্রা শ্রীহট্ট শহর পরিক্রমা উপলক্ষে প্রায় ২১ মাইল পথ অতিক্রম করে’’৷ (সূত্রঃ শ্রীহট্ট সাহিত্য প্রতিভা, পৃষ্ঠা ২২)৷
‘‘মহাপীঠের প্রকৃত অবস্থান তাৎপর্য নিয়ে নানাজনে নানাভাবে বিতর্ক করিতে পারেন তবে, যে সকল স্থানে ঐ সকল মহাপীঠ বর্তমান, সেই সকল স্থানে যে প্রাচীনকাল হইতে হিন্দুধর্ম ও সভ্যতার এক একটি কেন্দ্র ছিল সে সম্বন্ধে মতদ্বৈততা নেই, যেমন শ্রীহট্ট বড়শালা মৌজার আশেপাশে তৎসময়ে বিভিন্ন মন্দির, অট্টালিকা এবং রাজা গৌড়গোবিন্দের আবাসস্থল ছিল৷ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)’’ যেহেতু উপরোক্ত স্থান উঁচু ও পাহাড়স্থানে ছিল সেহেতু সেই প্রাচীনকাল থেকে শ্রীহট্টের অন্যান্য স্থান বর্তমানের ন্যায় বিস্তৃত কলেবর ছিল না৷ তৎকালে সমুন্নত উচ্চতর ভূমি সকল ছাড়া শ্রীহট্ট জিলার বিস্তৃত সমতল ও নিম্নভূমি সকল (সদর মহকুমার দক্ষিণাংশ, দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমার উত্তর পশ্চিমাংশ…) বঙ্গোপসাগরের একটি শাখা সাগরের অথবা একটি বৃহৎ হ্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ সুতরাং স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, প্রাচীন ইতিহাসের নিরীখে বিচার করলে কালাগুল এবং বাউরবাগ উভয় স্থানেই স্থানীক ভৌগোলিক প্রমাণে প্রকৃতিগতভাবে সতী অঙ্গপীঠের পীঠলক্ষণ ও কিংবদন্তি বহন করে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে৷ এখানে কোনো স্বপ্ণ বৃত্তান্ত বা কাল্পনিক কাহিনি দিয়ে সত্য প্রমাণের প্রয়োজন আদৌ নেই৷
‘‘শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদে শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ সম্বন্ধে ১১/১২/৩৮ ইং তারিখে যে আলোচনা সভা হয়, তাহার বিবরণ পরিষদ পত্রিকায় ৩-য় বর্ষ ৪থ সংখ্যা ৬৪-৬৬ পৃষ্ঠায় উঠিয়াছে৷ সম্পাদকীয়র ৬৬ পৃষ্ঠায় কালগুল গ্রীবাপীঠকে সমর্থন করা হইয়াছে৷ তাছাড়া শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় অনেকগুলো সংখ্যায় কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ অবস্থান সম্পর্কিত তথা গণেশরাম শিরোমণির হট্টনাথ পাঁচালী নষ্টোদ্বার অবলম্বনে কমলাকান্ত গুপ্তের ‘‘গ্রীবাপীঠ পুনঃপ্রকাশিত এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ’’ ক্ষুদ্র পুস্তিকা ও ‘‘শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস’’ পুস্তকটির পীঠ বিষয়ক তথ্য ও তত্ত্বকে সত্য বলিয়া সমর্থন করা হইয়াছে৷’’ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)
উপরে উল্লিখিত আলোচনায় সংক্ষিপ্তসারে কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ অবস্থান সম্পর্কিত তথ্যতত্ত্ব সংযোজন করা হয়েছে৷
‘‘১৯৪৫-৪৬ ইংরেজিতে ‘‘মরুতীর্থ হিংলাজ, কালীতীর্থ কালীঘাট, উদ্ধারণপুরের ঘাট, প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পুস্তকের লেখক কালিকানন্দ অবধূত ও শ্রীশ্রী মাতা ষোড়শী ভৈরবী শ্রীহট্টে আসিয়া শ্রীশ্রী গ্রীবাপীঠে অবস্থানক্রমে, ২/১/৪৬ তারিখে ১০০টি মৃদঙ্গ ও অন্যান্য গীত বাদ্যাদিসহ কালগুল হইতে প্রায় ১০ হাজার লোকের একটি শোভাযাত্রা শ্রীহট্ট শহর পরিক্রমা উপলক্ষে প্রায় ২১ মাইল পথ অতিক্রম করে’’৷ (সূত্রঃ শ্রীহট্ট সাহিত্য প্রতিভা, পৃষ্ঠা ২২)৷
‘‘মহাপীঠের প্রকৃত অবস্থান তাৎপর্য নিয়ে নানাজনে নানাভাবে বিতর্ক করিতে পারেন তবে, যে সকল স্থানে ঐ সকল মহাপীঠ বর্তমান, সেই সকল স্থানে যে প্রাচীনকাল হইতে হিন্দুধর্ম ও সভ্যতার এক একটি কেন্দ্র ছিল সে সম্বন্ধে মতদ্বৈততা নেই, যেমন শ্রীহট্ট বড়শালা মৌজার আশেপাশে তৎসময়ে বিভিন্ন মন্দির, অট্টালিকা এবং রাজা গৌড়গোবিন্দের আবাসস্থল ছিল৷ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)’’ যেহেতু উপরোক্ত স্থান উঁচু ও পাহাড়স্থানে ছিল সেহেতু সেই প্রাচীনকাল থেকে শ্রীহট্টের অন্যান্য স্থান বর্তমানের ন্যায় বিস্তৃত কলেবর ছিল না৷ তৎকালে সমুন্নত উচ্চতর ভূমি সকল ছাড়া শ্রীহট্ট জিলার বিস্তৃত সমতল ও নিম্নভূমি সকল (সদর মহকুমার দক্ষিণাংশ, দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমার উত্তর পশ্চিমাংশ…) বঙ্গোপসাগরের একটি শাখা সাগরের অথবা একটি বৃহৎ হ্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ সুতরাং স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, প্রাচীন ইতিহাসের নিরীখে বিচার করলে কালাগুল এবং বাউরবাগ উভয় স্থানেই স্থানীক ভৌগোলিক প্রমাণে প্রকৃতিগতভাবে সতী অঙ্গপীঠের পীঠলক্ষণ ও কিংবদন্তি বহন করে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে৷ এখানে কোনো স্বপ্ণ বৃত্তান্ত বা কাল্পনিক কাহিনি দিয়ে সত্য প্রমাণের প্রয়োজন আদৌ নেই৷
‘‘শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদে শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ সম্বন্ধে ১১/১২/৩৮ ইং তারিখে যে আলোচনা সভা হয়, তাহার বিবরণ পরিষদ পত্রিকায় ৩-য় বর্ষ ৪থ সংখ্যা ৬৪-৬৬ পৃষ্ঠায় উঠিয়াছে৷ সম্পাদকীয়র ৬৬ পৃষ্ঠায় কালগুল গ্রীবাপীঠকে সমর্থন করা হইয়াছে৷ তাছাড়া শ্রীহট্ট সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় অনেকগুলো সংখ্যায় কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ অবস্থান সম্পর্কিত তথা গণেশরাম শিরোমণির হট্টনাথ পাঁচালী নষ্টোদ্বার অবলম্বনে কমলাকান্ত গুপ্তের ‘‘গ্রীবাপীঠ পুনঃপ্রকাশিত এবং শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজবংশ’’ ক্ষুদ্র পুস্তিকা ও ‘‘শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস’’ পুস্তকটির পীঠ বিষয়ক তথ্য ও তত্ত্বকে সত্য বলিয়া সমর্থন করা হইয়াছে৷’’ (সূত্রঃ শ্রীহট্টের প্রাচীন ইতিহাস)
উপরে উল্লিখিত আলোচনায় সংক্ষিপ্তসারে কালাগুল গ্রীবা মহাপীঠ অবস্থান সম্পর্কিত তথ্যতত্ত্ব সংযোজন করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪: ভাবলাম এ যাত্রায় কোনও রকমে বাঁচা গেল, কিন্তু এতো সবে সন্ধ্যে! রাত তখনও অনেক বাকি…
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৫: ভক্তের আন্তরিকতা ও প্রার্থনা, ভগবানকে রেশম সুতোয় বেঁধে রাখে
গ্রীবা মহাপীঠ কালাগুল পুনঃ প্রকাশিত হওয়ার পর কালিকানন্দ অবধূত মহাসমারোহে অনুষ্ঠান করার পর শ্রীহট্ট বা সিলেটের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি কালাগুল পীঠ দর্শন করেন৷ সেই সময়ে সিলেটের উমেশচন্দ্র নির্মলাবালা ছাত্রী নিবাসের প্রতিষ্ঠাতা ও খ্যাতিমান ধর্মতত্ত্ববিদ প্রয়াত নিকুঞ্জবিহারী গোস্বামী মহাশয় অনেক গুণীজন নিয়ে উক্ত কালাগুল পীঠ দর্শনে গিয়েছিলেন৷ তাছাড়া অনেক সাধু সজ্জন ও সন্ন্যাসী এখানে নিঃশব্দে ধ্যান করে পরম শান্তি অনুভব করেছেন৷ বিগত ডিসেম্বর ২০১০ ইং ভারতের হরিদ্বার থেকে আগত স্বামী প্রকটজি মহারাজ কালাগুল পীঠস্থান দর্শন করে পরম শান্তি অনুভব করেছেন বলে স্বমত পোষণ করেন৷
বিগত ২০০৬ সালে ভারতের বিখ্যাত রেলওয়ে কোম্পানি ‘ইরকন’ কালাগুল গ্রীবা পীঠস্থানে নূতন করে নাটমন্দির, ভৈবরবেদি, অগভীর নলকূপ, মন্দির সংস্কার, রান্নাঘরসহ আরো উন্নয়নমূলক কাজ করে প্রায় ৭/৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে৷ এখনও অনেক ভক্ত বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অকাতরে সহযোগিতা করছেন৷ বর্তমানে অরণ্যে পরিবেষ্টিত চা বাগানে নিভৃতে অনেক ভক্তকলেবর সমৃদ্ধ এই তীর্থস্থানে হয়েছে সাধু-সজ্জনদের মহামিলন স্থান৷
‘‘কালাগুলে, পীঠপ্রস্তর বালুকা মধ্যে প্রোথিত ও নিম্নগামী, উত্তর দক্ষিণে লম্বমান একটা কালো প্রস্তর৷ ইহাতে গ্রীবা চিহ্ণ আছে৷ উক্ত পীঠপ্রস্তরের উপর দিয়া দক্ষিণ হইতে উত্তরাভিমুখী শিরশিরি নামক একটি পার্বত্য স্রোত প্রবহমান ছিল৷ অল্পদিন হইল পীঠস্থানের উভয় দিক ভরাটক্রমে ঐ স্রোতের কিঞ্চিৎ গতি পরিবর্তন হইয়াছে৷ তবুও বৎসরের প্রায় সময়েই পীঠ গহ্বর মধ্যে জল থাকে৷ পাঞ্জাবের সুপ্রসিদ্ধ জ্বালামুখী মহাপীঠ কালাগুলের ন্যায় পর্বত পার্শ্বে একটা পার্বত্য নির্ঝরিণীর মধ্যে অবস্থিত৷ (ধরণীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী মহাশয়ের ‘ভারত ভ্রমণ’)৷
কালাগুলে পীঠস্থানের অতি সন্নিকটে, ঈশান কোনে শিব প্রস্তর (পীঠ ভৈরব) বিদ্যমান৷ কালাগুলের কালীথানকে স্মরণাতীত কাল হইতে নিকটস্থ প্রাচীন অধিবাসী (পাত্তরগণ) পূর্ব্বেকার অস্পষ্ট স্মৃতি অনুসারে কালী ও মহাদেব নামে পূজা করে আসছে৷ সময় সময় দক্ষিণকাছ, আখালিয়া প্রভৃতি স্থানের অধিবাসীগণ মানস পূজাদি আদায় করতেন এবং ইহাই যে গ্রীবাপীঠ তাহা কারো কারো ধারণা ছিল বলে বর্তমানে প্রকাশ পাচ্ছে৷
শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ বহুকাল যাবৎ সাধারণ্যে অপ্রকাশিত৷ ৪০-৪২ বৎসর পূর্বের স্থানীয় পত্রিকাদি আলোচনায় বোঝা যায় যে শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ লুক্কায়িত৷ এটি একটি গুপ্ত পীঠ বলে অনেকেরই তৎকালে ধারণা ছিল৷ কোনো কোনো তান্ত্রিক পরিবারে ঐ গুপ্ত পীঠ শ্রীহট্টের ঈশান কোনের দিকে আছে বলে একটা ধারণা ছিল৷’ —চলবে
বিগত ২০০৬ সালে ভারতের বিখ্যাত রেলওয়ে কোম্পানি ‘ইরকন’ কালাগুল গ্রীবা পীঠস্থানে নূতন করে নাটমন্দির, ভৈবরবেদি, অগভীর নলকূপ, মন্দির সংস্কার, রান্নাঘরসহ আরো উন্নয়নমূলক কাজ করে প্রায় ৭/৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে৷ এখনও অনেক ভক্ত বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অকাতরে সহযোগিতা করছেন৷ বর্তমানে অরণ্যে পরিবেষ্টিত চা বাগানে নিভৃতে অনেক ভক্তকলেবর সমৃদ্ধ এই তীর্থস্থানে হয়েছে সাধু-সজ্জনদের মহামিলন স্থান৷
‘‘কালাগুলে, পীঠপ্রস্তর বালুকা মধ্যে প্রোথিত ও নিম্নগামী, উত্তর দক্ষিণে লম্বমান একটা কালো প্রস্তর৷ ইহাতে গ্রীবা চিহ্ণ আছে৷ উক্ত পীঠপ্রস্তরের উপর দিয়া দক্ষিণ হইতে উত্তরাভিমুখী শিরশিরি নামক একটি পার্বত্য স্রোত প্রবহমান ছিল৷ অল্পদিন হইল পীঠস্থানের উভয় দিক ভরাটক্রমে ঐ স্রোতের কিঞ্চিৎ গতি পরিবর্তন হইয়াছে৷ তবুও বৎসরের প্রায় সময়েই পীঠ গহ্বর মধ্যে জল থাকে৷ পাঞ্জাবের সুপ্রসিদ্ধ জ্বালামুখী মহাপীঠ কালাগুলের ন্যায় পর্বত পার্শ্বে একটা পার্বত্য নির্ঝরিণীর মধ্যে অবস্থিত৷ (ধরণীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী মহাশয়ের ‘ভারত ভ্রমণ’)৷
কালাগুলে পীঠস্থানের অতি সন্নিকটে, ঈশান কোনে শিব প্রস্তর (পীঠ ভৈরব) বিদ্যমান৷ কালাগুলের কালীথানকে স্মরণাতীত কাল হইতে নিকটস্থ প্রাচীন অধিবাসী (পাত্তরগণ) পূর্ব্বেকার অস্পষ্ট স্মৃতি অনুসারে কালী ও মহাদেব নামে পূজা করে আসছে৷ সময় সময় দক্ষিণকাছ, আখালিয়া প্রভৃতি স্থানের অধিবাসীগণ মানস পূজাদি আদায় করতেন এবং ইহাই যে গ্রীবাপীঠ তাহা কারো কারো ধারণা ছিল বলে বর্তমানে প্রকাশ পাচ্ছে৷
শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ বহুকাল যাবৎ সাধারণ্যে অপ্রকাশিত৷ ৪০-৪২ বৎসর পূর্বের স্থানীয় পত্রিকাদি আলোচনায় বোঝা যায় যে শ্রীহট্টের গ্রীবাপীঠ লুক্কায়িত৷ এটি একটি গুপ্ত পীঠ বলে অনেকেরই তৎকালে ধারণা ছিল৷ কোনো কোনো তান্ত্রিক পরিবারে ঐ গুপ্ত পীঠ শ্রীহট্টের ঈশান কোনের দিকে আছে বলে একটা ধারণা ছিল৷’ —চলবে
* বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে (Bangladesher Jagrata Mondire Mondire) : সুমন গুপ্ত (Suman Gupta), বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক।