পাঁচহাজার বছরের এক পুরনো শিল্প আর কিছু মানুষের অসীম উদ্যম— এই দুয়ে মিশেছে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার কাছে গড়ে উঠেছে সুন্দর এক ছোট্ট শিল্পগ্রাম দ্বরিয়াপুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্চারণে ‘দেরিয়াপুর’ আর কেতাদার শহুরে বাবুদের খোঁজপাত্তায় ‘ডোকরা গ্রাম’।
গুসকরা রেল স্টেশন থেকে সড়কপথে পাঁচ কিলোমিটার গেলেই দিগনগর দু’ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসের ঠিক বিপরীতদিকে এই গ্রামের প্রবেশদ্বার। পথের দক্ষিণে ডোকরা শিল্পের ভাঁটিখানা আর সোজাসুজি আর্টগ্যালারি-সহ সুন্দর এক অতিথিনিবাস।
গ্যালারি বলতে অবশ্য আলাদা করে কিছু নয়— একটি চত্বরে মোটামুটি দশজন শিল্পী তাঁদের হাতে তৈরি ডোকরাসামগ্রী নিয়ে বসেছেন। দেবদেবীর মূর্তি থেকে মানুষের জীবনের বিচিত্র যাপনের দৃশ্যকল্পে তৈরি সেসব মূর্তি। আছে প্যাঁচা, ঘোড়া, কচ্ছপের মতো অধুনা জনপ্রিয় গৃহসজ্জার মূর্তিও।
আরও পড়ুন:
চলো যাই ঘুরে আসি: মোহনার দিকে…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৬: ছোটদের, একান্তই ছোটদের ‘ভাই-বোন সমিতি’
বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়
সাজসজ্জার বহুল উপকরণের সামনে বিহ্বল হয়ে পড়তে পড়তেই চোখে পড়ে সামনে বসা পূজা কর্মকার, মিনতি কর্মকারদের আভরণহীন অবয়ব। হ্যাঁ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ শিল্পের বিক্রেতা এখানে মেয়েরাই প্রধানত। সেটি ঘরকন্নার হাজারো কাজের পাশাপাশিই নিপুণভাবে সামলাচ্ছেন তাঁরা। তবে গয়না পরার কথা উঠতেই বলে ওঠেন, “ওসব আপনাদের জন্য দিদি, আমরা কাদা ছানি, ছাই ঘাঁটি আমাদের কি আর মানায়!”
তা বটে! সরস্বতীর সঙ্গেই বিশ্বকর্মা যোগ দিয়েছেন যে, গয়না পরার বিলাসছল সইবে কেন!
দৃষ্টিনন্দন বসার জায়গা থেকে প্রাঙ্গণের প্রাচীর এবং অতিথিনিবাসের দেওয়াল সর্বত্রই ডোকরাশিল্পের মনোমুগ্ধকর ছোঁয়া।
দৃষ্টিনন্দন বসার জায়গা থেকে প্রাঙ্গণের প্রাচীর এবং অতিথিনিবাসের দেওয়াল সর্বত্রই ডোকরাশিল্পের মনোমুগ্ধকর ছোঁয়া।
বেশ লাগে, চমৎকার লাগে ফিরে ফিরে দেখতে মানুষের সভ্যতার এই প্রাচীন সৃষ্টিসুখকে। মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিশগড় নয়, আমার রাজ্যেই রয়েছেন এই ডোকরা শিল্পীরা। দিন-রাত বিপুল পরিশ্রমে গড়ে তুলছেন কত কত সুন্দর সামগ্রী।
নাঃ, উপযুক্ত মজুরি আর কই?
নাঃ, উপযুক্ত মজুরি আর কই?
গাড়িবিলাসী ক্রেতারা যা দু’ একজন আসেন, প্রবল দরদস্তুর করে তেমন কিছু না কিনেই ফিরে যান। আবার কেউ কেউ অস্বাভাবিক কম দামে চেয়ে বসেন হয়তো অনভিজ্ঞতাজনিত কারণেই।
তবু হাসিমুখে পথ তাকিয়েই থাকেন তাঁরা, আর চেষ্টা করেন যেন তাঁদের কোলের প্রিয়াঙ্কা, সোনালিরা নিয়মিত ইশকুলে যেতে পারে এই কাজে হাত না লাগিয়ে। আমরা চাইব—
স্কুলের পথ খোলা থাকুক, শিল্পের পথেও কাঁটা না পড়ুক, বিপণনের আরও সুব্যবস্থা হোক।
তবু হাসিমুখে পথ তাকিয়েই থাকেন তাঁরা, আর চেষ্টা করেন যেন তাঁদের কোলের প্রিয়াঙ্কা, সোনালিরা নিয়মিত ইশকুলে যেতে পারে এই কাজে হাত না লাগিয়ে। আমরা চাইব—
স্কুলের পথ খোলা থাকুক, শিল্পের পথেও কাঁটা না পড়ুক, বিপণনের আরও সুব্যবস্থা হোক।
* চলো যাই ঘুরে আসি (Travel) : সংহিতা চক্রবর্তী (Sanhita Chakraborty) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষিকা, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল।