গত ২০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, গভর্নমেন্ট বেসিক কাম মাল্টিপারপাস স্কুল ৭৫তম বর্ষে পদার্পণ করল। উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়া শহরের বুকে সবুজে মোড়া একটি সুন্দর অঞ্চল, বাণীপুর, যার আগের নাম ছিল বাইগাছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে এখানে গড়ে ওঠে একটি শিক্ষক শিক্ষন কেন্দ্র এবং সেই শিক্ষন কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক বিদ্যালয় হিসেবে স্থাপিত হয় এই বিদ্যালয়। এই ভাবনার মূলে ছিল গান্ধীজির বুনিয়াদি শিক্ষা এবং কবিগুরুর প্রকৃতিপাঠের সমন্বয়।
এক্কেবারে ছোটোদের জন্য তৈরি হয় ‘খেলাঘর’ আর ক্লাস এইট পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নাম হয় ‘শিশু নিকেতন’। শুধু পড়াশোনা নয়, হলকর্ষণ থেকে শুরু করে চরকায় সুতো কাটা এবং নানান হস্তশিল্প —সবই ছিল পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। একটি শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সবই ছিল সেই বিদ্যালয়ে।
পরবর্তীতে বুনিয়াদি শিক্ষা পাঠক্রম থেকে বাদ গেলেও তা চিরস্থায়ী হয়ে রয়ে গেছে বিদ্যালয়ের নামের মধ্যে। সময়ের সরণি বেয়ে বিদ্যালয় উন্নিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, নিবেদিতা সাহার কথায়, “পায়ে পায়ে এই পচাত্তরের সফর কিন্তু খুব একটা মৃসণ ছিল না, বরং ছিল যথেষ্ট বন্ধুর ও কঠিন। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রান্ত হয়ে আজ আমরা এই পচাত্তরের দরজায় পৌঁছতে পেরেছি।”
এই পচাত্তরের পার্বণীর সূচনা হল ২০ ডিসেম্বর একটি বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরির মাধ্যমে। তার আগে ৭৫টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা সমাহর্তা শরদ কুমার দ্বিবেদী মহাশয়, বারাসত মহকুমা শাসক, সোমা সাউ, হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণ সাহা প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
স্কুলশিক্ষকদের জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি করল পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, স্কুল পরিচালনা নিয়ে রয়েছে একঝাঁক নির্দেশ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৬: সংসার সুখের হয় ‘চাঁপাডাঙার বৌ’-র গুণে
ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের যুগ্ম উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে একটি অন্য মাত্রা দিয়েছিল। প্রবীণ প্রাক্তনীরা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ছিলেন তাঁদের সময়ের স্মৃতিচারণে। তাঁরা গাইছিলেন তাঁদের সময়কার “শিশু নিকেতনের” প্রার্থনা সঙ্গীত। অতীত ও বর্তমানের এক মধুর মিলন সেতু রচিত হচ্ছিল।
নবীন ও প্রবীন পায়ে পা মিলিয়ে পথ হাঁটলেন৷ বানীপুরের মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন এক সুন্দর পদযাত্রা। “নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগামী ২০২৩ সাল জুড়ে চলবে বিদ্যালয়ের এই পচাত্তরের যাপন”— জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, প্রণতি চৌধুরী।