মুক্তির তারিখ: ০২/০৪/১৯৫৪
প্রেক্ষাগৃহ: রূপবাণী, অরুণা ও ভারতী
উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: মহাতাপ
উত্তম কুমারের আরেকটি সিরিয়াস ছবি।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, পরিচালক নির্মল দে এবং নায়িকা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের আরও একবার গোল্ডেন ফ্রেম। যে সাবিত্রীর সঙ্গে স্টার থিয়েটার-এ ‘শ্যামলী’, রাতের পর রাত সুপারহিট তার সঙ্গে সেলুলয়েডি ম্যাজিক দেখতে দর্শক হলে ভিড় জমালেন।
ছবির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে একটা কথা বোধহয় অতিশয়োক্তি হয়ে যাবে, সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’ ছাড়া যদি কোন কাহিনির চিত্ররূপ দিতে সমচিন্তন করতেন তা, একমাত্র ‘চাঁপাডাঙার বৌ’।
ব্যক্তি উত্তমের জীবনে এ সময় একটা চোরাস্রোত বইতে থাকে। দীঘল চোখের সাবিত্রী ঘরে বাইরে বড় আপন হয়ে যায়। ফিল্ম লাইনে একরাশ অপযশের গ্লানিতে উত্তম যখন দিশেহারা তখন উদ্বাস্তু সাবিত্রীর আতিথেয়তা সর্বোপরি ‘ডাউন টু দ্য আর্থ’ ব্যবহার উত্তমকে বড্ড টানত। পর্দায় যখন দু’জনের এক হবার দরকার পড়ত সে দৃশ্যে যেন উত্তম বড় ছেলেমানুষী করে ফেলত। পুরুষের থেকে যে সম্মান পেলে নারীর নারীত্ব পূর্ণতা পায় তা প্রাপ্তিতে সাবুও উথলে উঠত। চোখে মুখে ফুটে উঠত সমর্পনের ইশারা। আমাদের পথ চলতে গিয়ে অনেক সময় পথে ঘাটে অনেক নিয়মবহির্ভূত, আইনবহির্ভূত নিবেদন দেখা যায় যার এক চিলতে ঝলক দেখার জন্য আমরা বেহিসেবি হই মনে মনে। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিতে এ উপরি পাওনাটুকু আমাদের বড় আপনার। ছিন্নমূল সাবিত্রীর জীবনে এদেশের মানুষের সঙ্গে কাছাকাছি আসার আকুতি, কখন যে বিনিময়ের বিনিয়োগ হয়ে গিয়েছে তা সে, নিজেও জানত না। অন্যদিকে সংগ্রামে বিধ্বস্ত উত্তমের কাছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো সাবিত্রীর নিঃস্বার্থ নিবেদন মরা গাঙে জোয়ার আনার মতো।
এত কথার উদ্দেশ্য হল, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’—ছবিতে দাম্পত্যের দাম দেওয়ার একটা দৃশ্যে বাইরে বৃষ্টিতে ভেজার সময় উত্তম সাবিত্রীকে কোলে তুলে নিয়ে চোখের যে অভিব্যক্তি দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন তা, মননের গভীরতা না থাকলে হয় না। আজকের ‘পাঠান’ ছবিতে মাংসাশী শাহরুখকে সন্তুষ্ট করতে দীপিকাকে তো সবার আগে ক্যামেরার লেন্স লিটারেরি চুষেছে। ছবির বাজার ধরতে প্রযোজক, দীপিকা পাড়ুকোনের শরীরের প্রতিটা ভাঁজ-খাঁজ, রেখা, শক্ত-নরম অংশ, টাকা দিয়ে বুকিং করে নিয়েছেন। শিল্পের উদারতার দোহাই দিয়ে নগ্নতার পসরা সাজিয়েছেন। সেদিকে কতদিন আগে উত্তম-সাবিত্রী যুগল উপস্থাপন, প্রমাণ করেছে শরীর না দেখিয়েও দর্শকের মধ্যে মিলনের কাঙ্খা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। পেলব সাবিত্রীর শরীর নিয়ে অন্ততপক্ষে এ ছবিতে উত্তম সে প্রমাণই রেখেছেন।
ছবিটির বিশেষত্ব হল, পরিচালক নির্মল দে এবং নায়িকা সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের আরও একবার গোল্ডেন ফ্রেম। যে সাবিত্রীর সঙ্গে স্টার থিয়েটার-এ ‘শ্যামলী’, রাতের পর রাত সুপারহিট তার সঙ্গে সেলুলয়েডি ম্যাজিক দেখতে দর্শক হলে ভিড় জমালেন।
ছবির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে একটা কথা বোধহয় অতিশয়োক্তি হয়ে যাবে, সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’ ছাড়া যদি কোন কাহিনির চিত্ররূপ দিতে সমচিন্তন করতেন তা, একমাত্র ‘চাঁপাডাঙার বৌ’।
ব্যক্তি উত্তমের জীবনে এ সময় একটা চোরাস্রোত বইতে থাকে। দীঘল চোখের সাবিত্রী ঘরে বাইরে বড় আপন হয়ে যায়। ফিল্ম লাইনে একরাশ অপযশের গ্লানিতে উত্তম যখন দিশেহারা তখন উদ্বাস্তু সাবিত্রীর আতিথেয়তা সর্বোপরি ‘ডাউন টু দ্য আর্থ’ ব্যবহার উত্তমকে বড্ড টানত। পর্দায় যখন দু’জনের এক হবার দরকার পড়ত সে দৃশ্যে যেন উত্তম বড় ছেলেমানুষী করে ফেলত। পুরুষের থেকে যে সম্মান পেলে নারীর নারীত্ব পূর্ণতা পায় তা প্রাপ্তিতে সাবুও উথলে উঠত। চোখে মুখে ফুটে উঠত সমর্পনের ইশারা। আমাদের পথ চলতে গিয়ে অনেক সময় পথে ঘাটে অনেক নিয়মবহির্ভূত, আইনবহির্ভূত নিবেদন দেখা যায় যার এক চিলতে ঝলক দেখার জন্য আমরা বেহিসেবি হই মনে মনে। দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিতে এ উপরি পাওনাটুকু আমাদের বড় আপনার। ছিন্নমূল সাবিত্রীর জীবনে এদেশের মানুষের সঙ্গে কাছাকাছি আসার আকুতি, কখন যে বিনিময়ের বিনিয়োগ হয়ে গিয়েছে তা সে, নিজেও জানত না। অন্যদিকে সংগ্রামে বিধ্বস্ত উত্তমের কাছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো সাবিত্রীর নিঃস্বার্থ নিবেদন মরা গাঙে জোয়ার আনার মতো।
এত কথার উদ্দেশ্য হল, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’—ছবিতে দাম্পত্যের দাম দেওয়ার একটা দৃশ্যে বাইরে বৃষ্টিতে ভেজার সময় উত্তম সাবিত্রীকে কোলে তুলে নিয়ে চোখের যে অভিব্যক্তি দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন তা, মননের গভীরতা না থাকলে হয় না। আজকের ‘পাঠান’ ছবিতে মাংসাশী শাহরুখকে সন্তুষ্ট করতে দীপিকাকে তো সবার আগে ক্যামেরার লেন্স লিটারেরি চুষেছে। ছবির বাজার ধরতে প্রযোজক, দীপিকা পাড়ুকোনের শরীরের প্রতিটা ভাঁজ-খাঁজ, রেখা, শক্ত-নরম অংশ, টাকা দিয়ে বুকিং করে নিয়েছেন। শিল্পের উদারতার দোহাই দিয়ে নগ্নতার পসরা সাজিয়েছেন। সেদিকে কতদিন আগে উত্তম-সাবিত্রী যুগল উপস্থাপন, প্রমাণ করেছে শরীর না দেখিয়েও দর্শকের মধ্যে মিলনের কাঙ্খা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। পেলব সাবিত্রীর শরীর নিয়ে অন্ততপক্ষে এ ছবিতে উত্তম সে প্রমাণই রেখেছেন।
এ ছবি নিয়ে কথা তো ফুরোবার নয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাঙালি যাঁর কলমকে চলচ্চিত্রের জন্য মাথায় তুলে নিয়েছিল তিনি হলেন তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্রেম টু ফ্রেম চলচ্চিত্রকে সাজানোর রসদ ছিল ওঁর লেখায়।
পরিচালক নির্মল দে, ব্যস্ত উত্তমকে ডে-নাইট শিফটে শুটিং করিয়ে ছবির কাজ শেষ করলেন। ছবি রিলিজ করল। সদ্য ‘ওরা থাকে ওধারে’ বাজারে সাফল্যের মুখ দেখেছে। সে ছবির প্রেক্ষাপটে যেমন শহুরে মধ্যবিত্তপনা জায়গা করে নিয়েছিল, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’ তেমনই ছিল গ্রামীণ জীবনের মেদহীন উপস্থাপক।
পরিচালক নির্মল দে, ব্যস্ত উত্তমকে ডে-নাইট শিফটে শুটিং করিয়ে ছবির কাজ শেষ করলেন। ছবি রিলিজ করল। সদ্য ‘ওরা থাকে ওধারে’ বাজারে সাফল্যের মুখ দেখেছে। সে ছবির প্রেক্ষাপটে যেমন শহুরে মধ্যবিত্তপনা জায়গা করে নিয়েছিল, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’ তেমনই ছিল গ্রামীণ জীবনের মেদহীন উপস্থাপক।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’
ইংলিশ টিংলিশ: জানেন কি ‘night owl’ বা ‘early bird’ কাকে বলে? কিংবা তিনতলাকে কেন ‘second floor’ বলে?
শীতে হেঁচে হেঁচে কুল পাচ্ছেন না? ঘরোয়া উপায়ে হাঁচি থামাবেন কী ভাবে?
বিগত কয়েক বছরের ব্যর্থতার গ্লানি টপকে উত্তমের ছবি পরপর হিট দিচ্ছে… সমালোচকদের তো ভাবিয়ে তুলবেই। আমরাও ভাবব।
প্রথমত: ছবিটির আঙ্গিক সরলতা। ছবির স্টোরি টেলিং যত কম জটিল হবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে। সংলাপের বিনিময়, কানাগলি টপকে যতই সোজা সরল রাজপথে থাকবে ততই সাফল্যের ঘোড়া তরতরিয়ে এগোবে।
প্রথমত: ছবিটির আঙ্গিক সরলতা। ছবির স্টোরি টেলিং যত কম জটিল হবে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে। সংলাপের বিনিময়, কানাগলি টপকে যতই সোজা সরল রাজপথে থাকবে ততই সাফল্যের ঘোড়া তরতরিয়ে এগোবে।
আরও পড়ুন:
দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১: গন্তব্য আমাজন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৪: কবির দরজা সাধারণজনের জন্য সারাক্ষণই খোলা থাকত
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৪: বাংলার শুঁটকি মাছের চাহিদা সর্বত্র, এখনকার বিশেষভাবে প্রস্তুত শুঁটকি অনেক বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিগুণে ভরা
দ্বিতীয়ত: মানুষের মননযোগ্য চারিত্রিক বুনন। সাবিত্রী ‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে যে নাগুরেপনা দেখিয়েছিলেন এ ছবির পরতে পরতে গ্রাম্যবধূর সলাজ উপস্থিতি মানুষকে হলমুখী করেছিল বটে। শুধু উত্তম কুমার নন, মানুষ সাবিত্রীর অভিনয় দেখার জন্য ও হলে ভিড় জমিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত: ছবির মিউজিক। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অপরিণত অবস্থা। কিন্তু শাস্ত্রীয় দক্ষতা দিয়ে তা চাপা দেওয়ার মুন্সীয়ানা, ছবিটিকে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছিল।
তৃতীয়ত: ছবির মিউজিক। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অপরিণত অবস্থা। কিন্তু শাস্ত্রীয় দক্ষতা দিয়ে তা চাপা দেওয়ার মুন্সীয়ানা, ছবিটিকে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছিল।
চতুর্থত: সহশিল্পীদের সুচারু উপস্থাপন। কানু বন্দ্যোপাধ্যায় -অনুভাগুপ্ত-র দ্বৈরথ, পাল্লা দিয়ে তুলসী চক্রবর্তী-র তাল ঠোকা, ছবিটির মান অন্য জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
সব মিলিয়ে ছবিটির প্যাকেজ, প্রাক ‘পথের পাঁচালী’-র একটা মাইলস্টোন।—চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
সব মিলিয়ে ছবিটির প্যাকেজ, প্রাক ‘পথের পাঁচালী’-র একটা মাইলস্টোন।—চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।