শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


একের পর এক তীর্থ অতিক্রম করে চলেছেন যুধিষ্ঠির। তখন তিনি কলিঙ্গদেশে, বৈতরণী নদীর তীরে। লোমশমুনি তাঁকে আর এক অপূর্ব আখ্যান শোনালেন। লোমশমুনি বলে চলেন— ‘হে রাজন্ আজ আমরা যে নদীর তীরে সে স্থান ঋষি তথা ব্রাহ্মণদের অতি প্রিয়।’ যুধিষ্ঠির বলে ওঠেন, ‘হে মুনিবর! আপনি কৃপা করে এই স্থানের মাহাত্ম্য শুনিয়ে আমাদের বাধিত করুন।’ লোমশমুনি বলে চলেন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই স্থান মনুষ্যদের তো বটেই, দেবতাদেরও প্রিয়। একবার দেবতারা সকলে মিলে এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। যজ্ঞ শেষ হওয়ার পূর্বেই রুদ্র একটি যজ্ঞীয় পশু অন্য দেবতাদের সাথে আলোচনা না করেই গ্রহণ করেন। এতে দেবতারা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন।
কিন্তু রুদ্রের মহিমাকে অতিক্রম করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। তাই তাঁরা করজোড়ে রুদ্রের স্তব করেন। রুদ্রও সেই পশুকে ফিরিয়ে দেন দেবতাদের কাছে। তারপর নিজলোকে ফিরে যান। দেবতারা রুদ্রকে ভয় পেতেন। ভয় পেতেন তাঁর ভয়ঙ্করতাকে। তাই তাঁকে কতকটা বাধ্য হয়ে যজ্ঞের ভাগ দিয়েছিলেন। তারপর লোমশমুনি যুধিষ্ঠিরকে একটি প্রচলিত গাথা শোনান। এই হল সেই গাথা যা পাঠ করতে পথ চললে দেবতাদের যাত্রাপথ দৃষ্ট হয়। লোমশমুনির কথায় যুধিষ্ঠির ভাইদের সঙ্গে নিয়ে বৈতরণী নদীতে অবগাহন করেন। স্নানের পর যুধিষ্ঠিরের মনে এক অপার শান্তির উদয় হয়। রাজ্য, রাজনীতি, আত্মীয়গণের দ্বেষ, সিংহাসন নিয়ে বিবাদ এসব তো ছেড়ে এসেছেন, কতদিন হল।
আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৪: বনের পথে গল্প রাশি রাশি— যাত্রাপথ যত এগোয় তত অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে পাণ্ডবদের

ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে

অচেনা টলিউড, পর্ব-৪: স্বপনদার ছবিতে সরস্বতীর ছোঁয়া (শিল্প) না থাকলেও, লক্ষ্মীর আশীর্বাদ (মুনাফা) ছিল

আজ যখন লোমশমুনির কাছে বৈতরণীর মাহাত্ম্য শুনলেন, সেই শোনাতেই যেন পার্থিব কামনা-বাসনা-ঈর্ষা-বিবাদাদি সব তুচ্ছ বলে বোধ হচ্ছে তাঁর। যেন মনে হচ্ছে যে তিনি বহুদূরদেশের যাত্রী, দেবলোকই তাঁর একমাত্র গন্তব্য। লোমশমুনি বলে চলেন এক দিব্যকাননের কথা। দিব্যলোকের সে কাননে প্রজাপতি ব্রহ্মা এক যজ্ঞ করেন। সেই যজ্ঞে পুরোহিত ছিলেন মহর্ষি কাশ্যপ। যজ্ঞশেষে ব্রহ্মা মহর্ষি কাশ্যপকে পাহাড়, বনসহ সমগ্র পৃথিবী দান করেন। পৃথিবী একথা জানতে পেরে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘হে ভগবন্! আপনি আমাকে কোনও মানুষের হাতে দান করতে পারেন না। যদি একান্তই করেন, তবে আমি পাতালে যাত্রা করব।’ মহর্ষি কাশ্যপ সেকথা শুনে ব্যস্ত হলেন। তিনি পৃথিবীকে তুষ্ট করবার জন্য তপস্যায় প্রবৃত্ত হলেন। অবশেষে জল গলল। পৃথিবী তুষ্টা হলেন। জল থেকে উঠলেন তিনি। পাণ্ডবদের সাথে করে লোমশমুনি ধীরে ধীরে উপস্থিত হলেন সমুদ্রতটে।
আরও পড়ুন:

রান্নায় বেশি নুন দিয়ে ফেলেছেন? সামাল দেবেন কোন উপায়ে?

হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে ফের নতুন চমক! ব্যবহারকারীদের জন্য আসছে আকর্ষণীয় ফিচার

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

মুনি যুধিষ্ঠিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে মহারাজ, এই হল সেই মহাসমুদ্র, যা থেকে দেবতারাও উত্পন্ন হয়েছেন।’ জলের অধিপতি বরুণদেবকে স্মরণ করে যুধিষ্ঠির সেই মহাসমুদ্রেও অবগাহন করলেন। এরপর মহেন্দ্রপর্বতে এসে রাত্রিযাপন করলেন। পরদিন সকালে মহেন্দ্রপর্বতস্থিত আশ্রমের তপস্বীদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন যুধিষ্ঠির। সেই আশ্রমেই বাস করতেন পরশুরাম। পরশুরামের অনুচর অকৃতব্রণের দেখা পেয়ে ভৃগুবংশজাত পরশুরামের সাথে সাক্ষাৎ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অকৃতব্রণের কাছে আজ যুধিষ্ঠিরের অনেক প্রশ্ন। পরশুরামকে দেখার সৌভাগ্য হবে, এ যেন তিনি ভাবতেই পারছেন না। অকৃতব্রণকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘হে বীর!, আপনি কৃপা করে সবিস্তারে পরশুরামের পরাক্রমবিষয়ে বলুন। কেন এবং কীভাবেই বা তিনি ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধে জয় করেছিলেন, এসমস্ত কিছু আমি জানতে ইচ্ছা করি।’
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪১: ঠাকুরবাড়িতে এসে সাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-২৬: শান্তিপূর্ণ বাতাবরণে ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে রঙিন মাছ

বাইরে দূরে: উৎসব-মুখর মথুরা— জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /১

অকৃতব্রণ বলে চলেন, পরশুরামের কাহিনী। হৈহয়রাজ্যের রাজা ছিলেন কার্ত্তবীর্য্যার্জুন। তিনি সহস্রবাহু নামেও পরিচিত ছিলেন।দত্তাত্রেয়মুনির বরের প্রভাবে তাঁর রথ যত্রতত্র এমনকি দেবলোকেও যেতে পারত। রাজার সোনার বরণ রথ। সেই রথে চড়ে তিনি পৃথিবীর প্রাণীদের তো বটেই, এমনকি দেবতা ঋষিদেরও অতিষ্ঠ করে তুলতেন। একদিন যখন দেবরাজ ইন্দ্র পত্নী শচীর সঙ্গে একান্তে সময় যাপন করছেন, কার্ত্তবীর্য্যার্জুন তাঁকেও বিরক্ত করেন। স্বয়ং দেবরাজও যখন বিরক্ত হলেন. দেবগণ নড়ে চড়ে বসলেন। সকলে মিলে নারায়ণের কাছে গেলেন। উদ্দেশ্য সকলেরই এক, কিভাবে কার্ত্তবীর্য্যার্জুনকে শায়েস্তা করা যায়। এত প্রভাবশালী রাজাকে কেই বা বিনাশ করবেন?
যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে অকৃতব্রণ বলে চলেন এক আশ্চর্য কাহিনী।

Skip to content