শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


১৮৭৭ সালের জুলাই মাসে ‘গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার’ লিজ নিয়ে গিরিশচন্দ্র থিয়েটারের নামটাকে পরিবর্তন করলেন। নাম রাখলেন আগের সেই ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’। অভিনয়ের জন্য তিনি মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’কে নির্বাচন করলেন। ‘মেঘনাদবধ’ নাটক আকারে পরিবর্তিত হয়ে এর অনেক আগেই বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল। কিন্তু বেঙ্গল থিয়েটারের নাটক আকারে কাব্যটি যেভাবে নাটকাকারে গঠিত হয়েছিল তাতে নাট্য কৌশলের ত্রুটি গিরিশচন্দ্র দেখেছিলেন। পাশাপাশি অভিনয় শিক্ষা দানও তাঁর মনঃপুত হয়নি। তিনি সম্পূর্ণ নতুনভাবে ‘মেঘনাদবধ’ অভিনয় সংকল্প নিয়েছিলেন।
গিরিশচন্দ্র নিপুনতার সঙ্গে এই মহাকাব্য নাটক আকারে পরিবর্তন করে শিল্পীদের এর শিক্ষাদান করিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে অভিনয়ের জন্য কয়েকটি গানও রচনা করে দিয়েছিলেন নাটকটিতে। সমগ্র বিষয়টি তিনি আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন। ফলে এর আগে মেঘনাদবধ কাব্য যাঁরা দেখেছিলেন তাঁরা এই দৃশ্যকাব্যের অভিনয় দর্শনে মাইকেলের ভাব ও ভাষার জীবন্ত মূর্তি প্রত্যক্ষ করেন। দর্শকেরা বিস্ময়ে ও আনন্দে অভিভূত হন। শিক্ষিত সাহিত্যিক মহলে এই নাটকটি নিয়ে বেশ কিছুদিন চর্চা চলেছিল।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব -২৩: প্রায় সাত মাস ধরে ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের রিহার্সাল চলেছিল

হোমিওপ্যাথি: অর্শে কষ্ট পাচ্ছেন? রেহাই পেতে জেনে নিন কী করবেন, কী করবেন না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২০: মাধবী ও অনিল ফ্লোরে সংলাপ ঠিক করার সময় হঠাৎ কানে এল বিকট এক শব্দ, সবাই চমকে উঠলেন

খাই খাই: বেগুন ভর্তা তো খেয়েছেন, এবার ঝটপট তৈরি করে ফেলুন লাউপাতার ভর্তা, রইল রেসিপি

মেঘনাদবধ, লক্ষণের শক্তিশেল এবং প্রমীলার চিতা রোহন এই তিনটি বিষয় নিয়ে গিরিশচন্দ্র মেঘনাদবধ নাটকাকারে অভিনয় করিয়েছিলেন। এখন যেসব শিল্পীরা এই মেঘনাদবধ কাব্যে অভিনয় করেছিলেন তাঁদের নামের উল্লেখ করা যাক। শ্রীরামচন্দ্র ও মেঘনাদ এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। রাবণের ভূমিকায় অমৃতলাল মিত্র। বিভীষণ ও মহাদেব এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করলেন মতিলাল সুর। মদনের ভূমিকায় রামতারণ সান্যাল। মন্দোদরীর চরিত্রে অভিনয় করলেন কাদম্বিনী দাসী। প্রমীলার চরিত্রে অভিনয় করলেন নটী বিনোদিনী। শচীর চরিত্রে বসন্তকুমারী। রতি ও বাসন্তী এই দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করলেন কুসুমকুমারী (খোঁড়া)। নৃমুণ্ডমালিনী ও প্রভাসা এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করলেন ক্ষেত্রমণি।
রামচন্দ্রের ভূমিকা বেঙ্গল থিয়েটারে একরকম পরিত্যক্তই হয়েছিল। কিন্তু ন্যাশনাল থিয়েটারে রামের ভূমিকা একটি উচ্চ ভূমিকায় পরিগণিত হয়েছিল। রামচন্দ্র এবং মেঘনাদ এই দুইরূপে নাট্যাধ্যক্ষ গিরিশচন্দ্র ঘোষ অভিনয় করেছেন। পাত্রদায়ের চরিত্র, কার্য এবং ভাব সমস্তই ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং একই ব্যক্তির দু’রকম রূপ পরিগ্রহ করা বিশাল কঠিন ব্যাপার ঠিকই, সেটাকে অস্বীকারও করা যায় না। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের অভিনয় দক্ষতায় তাঁরা এতটাই মুগ্ধ যে এই দোষ দেখেও দর্শকদের মনে কিছুই হয়নি। তাঁরা গিরিশচন্দ্রের অভিনয় দেখে চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন:

শুধু জঙ্গল সাফারি নয়, এবার ডুয়ার্সে ছ্যাকা-সিদল-ঘুঙ্গির স্বাদও নিতে পারবেন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪১: ঠাকুরবাড়িতে এসে সাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি

দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৫: বনবাসের সঙ্গী সীতা

লক্ষ্মণ যখন পূজাগারে প্রবেশ করেন তখন গিরিশচন্দ্রের মেঘনাদের রূপ দর্শনে আমরা মুগ্ধ হই। আবার তারপরেই যখন মেঘনাদ সহসা রোষকষায়িত চোখে বীর মূর্তি ধারণ করে লক্ষণের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে প্রবৃদ্ধ হওয়ার উপক্রম করলেন, তখন গিরিশচন্দ্র অভিনয় পটুতায় চরমসীমা দেখালেন। তাঁর সেই ভাব অদ্ভুত বিস্ময়কর। প্রতিটি দর্শকই মুগ্ধ হয়েছিলেন এই অভিনয় দেখে। ১৮৭৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘সাধারণী’ পত্রিকায় মেঘনাদ কাব্যের নাট্যরূপের অভিনয়ের দীর্ঘ সমালোচনা বেরিয়েছিল। সেখানেই এই উল্লেখ করা হচ্ছে “ইংল্যান্ডের প্রথিত নামা গ্যারিকের ক্ষমতার পরিচয় পুস্তকে পাঠ করিয়াছি, কিন্তু বঙ্গের গিরিশ অপেক্ষা কোনও গ্যারিক যে অধিকতর ক্ষমতা প্রদর্শন করিতে পারেন, ইহা আমাদের ধারণা হয় না। গিরিশচন্দ্র দীর্ঘজীবী হউন, আর এইরূপে আমাদের সুখবর্ধন করিয়া সাধুবাদ গ্রহণ করিতে থাকুন। গিরিশ বঙ্গের অলংকার।”

Skip to content