![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates_1-1.jpg)
গুপ্তনিবাস।
ডানলপ ব্রিজ পেরিয়ে একটু এগোলেই ‘গুপ্তনিবাস’। দ্বারকানাথ গুপ্তের বাগানবাড়ি। সবাই একডাকে চিনত। ম্যালেরিয়ার ওষুধ বার করেছিলেন, ডাঃ ডি গুপ্তের সে-ওষুধের কথা সকলেই জানত। দ্বারকানাথ থাকতেন জোড়াসাঁকোর অদূরে। পাথুরিয়াঘাটের কাছে। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সূত্রেই অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ। অবনীন্দ্রনাথের শেষ-জীবন তো ওই বাড়িতেই কেটেছে। অবনীন্দ্রনাথ সপরিবারে গুপ্তনিবাসে বসবাস করার আগে কিছুকাল থেকেছেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি এ দেশে শুধু নয়, ওদেশেও বিস্তৃত ছিল। রবীন্দ্রনাথের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী নির্মলকুমারীও রবীন্দ্রনাথের অন্তত স্নেহভাজন ছিলেন। গুপ্তনিবাস কেন ভাড়া নিয়েছিলেন প্রশান্তচন্দ্র? কারণ, নিকটেই নিজের বাড়ি ‘আম্রপালী’-র বানানোর কাজ শুরু করেছিলেন। বাড়ি তৈরির কাজ দেখাশোনার জন্যই সপরিবারে গুপ্তনিবাসে থাকতেন।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates_5.jpg)
দক্ষিণের বারান্দা, এই বারান্দার নিকটে ছিল সেই ঘর, যে ঘর থেকে কলম চুরি হয়েছিল।
বাড়িটি ছিল সত্যিই মনোরম। গাছগাছালি আর পাখপাখালিতে ভরা। বড় প্রকৃতিময়। ফলে এ-বাড়ি যে রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হবে, খুশি হবেন গুরুদেব, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। প্রশান্তচন্দ্র ও নির্মলকুমারী তাই গুরুদেবের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, আসতে হবে, ক’টা দিন থাকতে হবে গুপ্তনিবাসে।
একজনের দাবি নয়। দাবি করেছেন যুগলে, সমবেতভাবে। ভালোবাসার জনের সে-দাবি অগ্ৰাহ্য করবেন কী করে! রবীন্দ্রনাথ রাজি হয়ে গেলেন।
গুপ্তনিবাসে পৌঁছে শুধুই কবির মুগ্ধতা। চারদিকে সবুজ। সবুজের মাঝে খোলামেলা দোতলা বাড়ি। একটু দূরেই ট্রেনপথ, দক্ষিণেশ্বর মন্দির। লক্ষ করা যায়, ডানকুনি লোকালের যাতায়াত। এসব দেখে, পাখির গান শুনে, পড়ায় লেখায় মন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের আনন্দে দিন কাটছিল। তারই মাঝে এক অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল। একদিন গভীর রাতে চোর আসে গুপ্তনিবাসে। ফাঁকা-ফাঁকা, চারদিকে গাছপালার আড়াল-আবডাল, নিশ্চিন্তে চোরবাবাজি ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতরে। পা-টিপে টিপে সিঁড়ির পর সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায়।
একজনের দাবি নয়। দাবি করেছেন যুগলে, সমবেতভাবে। ভালোবাসার জনের সে-দাবি অগ্ৰাহ্য করবেন কী করে! রবীন্দ্রনাথ রাজি হয়ে গেলেন।
গুপ্তনিবাসে পৌঁছে শুধুই কবির মুগ্ধতা। চারদিকে সবুজ। সবুজের মাঝে খোলামেলা দোতলা বাড়ি। একটু দূরেই ট্রেনপথ, দক্ষিণেশ্বর মন্দির। লক্ষ করা যায়, ডানকুনি লোকালের যাতায়াত। এসব দেখে, পাখির গান শুনে, পড়ায় লেখায় মন দিয়ে রবীন্দ্রনাথের আনন্দে দিন কাটছিল। তারই মাঝে এক অভাবনীয় কাণ্ড ঘটল। একদিন গভীর রাতে চোর আসে গুপ্তনিবাসে। ফাঁকা-ফাঁকা, চারদিকে গাছপালার আড়াল-আবডাল, নিশ্চিন্তে চোরবাবাজি ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতরে। পা-টিপে টিপে সিঁড়ির পর সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায়।
রবীন্দ্রনাথকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল দোতলায়। সামনেই পুকুর। বেশ ফুরফুরে বাতাস বইছিল। রবীন্দ্রনাথ ঘুমোচ্ছিলেন। কীসের যেন খুটখাট শব্দ, ঘুম ভাঙতেই মিঠে বাতাস কবিকে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের চোখে যে ঘুমের রেশ ছিল, তা মুহূর্তে উবে গেল। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। কান পেতে শুনলেন, বোঝার চেষ্টা করলেন কোথা থেকে শব্দ আসছে। শব্দ যে পাশের ঘর থেকে আসছে, তা বুঝতে দেরি হয়নি তাঁর। দরজা খুলে দ্রুত-পায়ে পাশের ঘরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে শেষে পাশের ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকলেন। বারান্দায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরের ভেজানো দরজা ঠেলতেই আলো-আঁধারি, জানলা গলে একটুকরো জোৎস্না পড়েছে এই আলো-আঁধারি অন্ধকারে। জোৎস্না-আলোয় অন্ধকার মিলেমিশে আবছা-ঝাপসা এক ছমছমে পরিবেশ। হাতের তল্পিতল্পা ঝপাং করে পড়ে যায় মাটিতে। চোরের চোখে সর্ষেফুল। নির্ঘাৎ বাড়ির শিখ দারোয়ান। হায়, রবীন্দ্রনাথকে দেখে তার তেমনই মনে হয়। বড় বড় চুল-দাড়ি, কেমন পোশাকআশাক, নিশ্চিত দারোয়ান। বিপদ অনিবার্য, এমন ভেবে নিয়ে চোর চুরি করা জিনিসপত্র ফেলে দৌড় দেয়। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও একটু পরেই রবীন্দ্রনাথের কাছে দৌড়নোর কারণ জলের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে শেষে পাশের ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকলেন। বারান্দায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরের ভেজানো দরজা ঠেলতেই আলো-আঁধারি, জানলা গলে একটুকরো জোৎস্না পড়েছে এই আলো-আঁধারি অন্ধকারে। জোৎস্না-আলোয় অন্ধকার মিলেমিশে আবছা-ঝাপসা এক ছমছমে পরিবেশ। হাতের তল্পিতল্পা ঝপাং করে পড়ে যায় মাটিতে। চোরের চোখে সর্ষেফুল। নির্ঘাৎ বাড়ির শিখ দারোয়ান। হায়, রবীন্দ্রনাথকে দেখে তার তেমনই মনে হয়। বড় বড় চুল-দাড়ি, কেমন পোশাকআশাক, নিশ্চিত দারোয়ান। বিপদ অনিবার্য, এমন ভেবে নিয়ে চোর চুরি করা জিনিসপত্র ফেলে দৌড় দেয়। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও একটু পরেই রবীন্দ্রনাথের কাছে দৌড়নোর কারণ জলের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Rabindranatha-Tagore-5-1.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৯: ঠাকুরবাড়ির বিয়েতে এমন জাঁকজমক আর হয়নি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/12/christmas-cake.jpg)
বড়দিনের ডিম ছাড়া স্পেশাল ফ্রুট কেক এ বার বাড়িতেই! কী ভাবে বানাবেন? রইল সহজ রেসিপি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/Mahabharat-1.jpg)
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪১: অবশেষে কালেয়দমন চিন্তায় অগস্ত্যমুনির শরণাপন্ন হলেন দেবতারা
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/UTTAM-KuMAR3.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৮: মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বে ‘বসু পরিবার’ [১১/০৪/১৯৫২]
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/Girish-Chandra-Ghosh.jpg)
নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব -২২: প্রথম ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্ড’-এর মাধ্যমে নিজের প্রতিভা তুলে ধরেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ
এ চোর গুপ্তনিবাসের। জোড়াসাঁকোতেও চুরি হয়েছে। চোরের জ্বালায় ঠাকুরবাড়ির মানসম্মান বিপন্ন হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। বামালসহ চোর ধরা পড়েছে। ঘটনাটি একটু খুলে বলা যেতে পারে।
ঠাকুরবাড়িতে মান্যগণ্য মানুষজনের আনাগোনা লেগেই থাকত। রবীন্দ্রনাথের কাছে তাঁরা আসতেন। গগনেন্দ্রনাথের কাছে, অবনীন্দ্রনাথের কাছেও কম মানুষ আসতেন না। এ দেশের মানুষ, ওদেশের মানুষ, এমনকি শাসক সাহেবসুবোরা অনেকেই আসতেন। একবার ভারতবিদ ও কলা-সমালোচক আনন্দকুমার স্বামী এসে কিছুদিন ছিলেন জোড়াসাঁকোয়। তিনি গগনেন্দ্রনাথের লেখার টেবিলে বসে পড়াশোনা করতেন, লেখালেখি করতেন। একদিন সকালে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে হতাশ গলায় গগনেন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, চিঠি লিখতে লিখতে উঠে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখলেন, যে কলমে লিখেছিলেন, সে কলমটা নেই।
ঠাকুরবাড়িতে মান্যগণ্য মানুষজনের আনাগোনা লেগেই থাকত। রবীন্দ্রনাথের কাছে তাঁরা আসতেন। গগনেন্দ্রনাথের কাছে, অবনীন্দ্রনাথের কাছেও কম মানুষ আসতেন না। এ দেশের মানুষ, ওদেশের মানুষ, এমনকি শাসক সাহেবসুবোরা অনেকেই আসতেন। একবার ভারতবিদ ও কলা-সমালোচক আনন্দকুমার স্বামী এসে কিছুদিন ছিলেন জোড়াসাঁকোয়। তিনি গগনেন্দ্রনাথের লেখার টেবিলে বসে পড়াশোনা করতেন, লেখালেখি করতেন। একদিন সকালে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে হতাশ গলায় গগনেন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, চিঠি লিখতে লিখতে উঠে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখলেন, যে কলমে লিখেছিলেন, সে কলমটা নেই।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates_2-1.jpg)
প্রতিমা দেবী, রবীন্দ্রনাথ ও নির্মল কুমারী মহলানবিশ।
কে নিল, কী হল, চোখেমুখে কুমারস্বামীর বিস্ময় খেলে যায়। সব শুনে গগনেন্দ্রনাথ ভারী লজ্জায় পড়লেন। বিশিষ্ট মানুষ তিনি, মাননীয় অতিথি। কী আর বলবেন তাঁকে, গগনেন্দ্রনাথ স্তব্ধ হয়ে দু’দণ্ড ভাবলেন। সোনায় মোড়া দামি কলম, সে কলম কে নিয়ে পালালো! খারাপ লাগলেও গগনেন্দ্রনাথ অবাক হননি।
এমন তো প্রায়শই ঘটছে। জোড়াসাঁকোয় সত্যি চোরের উপদ্রব হয়েছে! অবশ্য সব কিছু চুরি করে না। কলমের প্রতিই যত লোভ। গগনেন্দ্রনাথ নিজেও তো ভুক্তভোগী। এই ক’দিনে বেশ ক’টি কলম খোয়া গিয়েছে তাঁর।
কত রকমের, কত ধরনের কলম। ফাউন্টেন পেন সংগ্ৰহের নেশা গগনেন্দ্রনাথকে পেয়ে বসেছিল। প্রথমে ছবি আঁকার টেবিল থেকে খোয়া গিয়েছিল খুব দামি এক কলম। কেউ যে চুরি করতে পারে ঘুনাক্ষরেও মনে হয়নি তাঁর। অন্যমনস্কভাবে কোথাও রেখেছেন ভেবে কত খোঁজাখুঁজি। তুলির বাক্স, রঙের বাক্স, বইয়ের আলমারি কোথায় না দেখলেন। না, কোথাও পেলেন না। না পেয়ে ওই রকমই আরেকটা কলম কিনে আনলেন। দু’দিন পর সেটাও চুরি গেল। টেবিলের উপর চিরকালই তো তিনি কলম রাখেন। এমন ভাবে তো অদৃশ্য হয়ে যায় না। গগনেন্দ্রনাথের তাই মনে হয়, হারাচ্ছে না, নিশ্চিত চুরি যাচ্ছে। কেউ নিয়ে পালাচ্ছে।
এমন তো প্রায়শই ঘটছে। জোড়াসাঁকোয় সত্যি চোরের উপদ্রব হয়েছে! অবশ্য সব কিছু চুরি করে না। কলমের প্রতিই যত লোভ। গগনেন্দ্রনাথ নিজেও তো ভুক্তভোগী। এই ক’দিনে বেশ ক’টি কলম খোয়া গিয়েছে তাঁর।
কত রকমের, কত ধরনের কলম। ফাউন্টেন পেন সংগ্ৰহের নেশা গগনেন্দ্রনাথকে পেয়ে বসেছিল। প্রথমে ছবি আঁকার টেবিল থেকে খোয়া গিয়েছিল খুব দামি এক কলম। কেউ যে চুরি করতে পারে ঘুনাক্ষরেও মনে হয়নি তাঁর। অন্যমনস্কভাবে কোথাও রেখেছেন ভেবে কত খোঁজাখুঁজি। তুলির বাক্স, রঙের বাক্স, বইয়ের আলমারি কোথায় না দেখলেন। না, কোথাও পেলেন না। না পেয়ে ওই রকমই আরেকটা কলম কিনে আনলেন। দু’দিন পর সেটাও চুরি গেল। টেবিলের উপর চিরকালই তো তিনি কলম রাখেন। এমন ভাবে তো অদৃশ্য হয়ে যায় না। গগনেন্দ্রনাথের তাই মনে হয়, হারাচ্ছে না, নিশ্চিত চুরি যাচ্ছে। কেউ নিয়ে পালাচ্ছে।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates_3-1.jpg)
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।
দাবা খেলতেন গগনেন্দ্রনাথ। দাবাতে যেমন টোপ দেওয়া হয়,তেমনই চোর ধরার জন্য টোপ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন তিনি। টোপ দিয়ে চোর পাকড়ানোর জন্য সারাক্ষণ নজরও রাখতেন। দক্ষিণের বারান্দায় বসে ছবি আঁকতেন তিনি। সেই বারান্দার ডানদিকে একটি ছোট্ট ঘর ছিল। ঘরে লেখার টেবিল-চেয়ার। টেবিলে টোপ হিসেবে কলম রাখা হয়েছিল। দোয়াতে ডুবিয়ে লেখার দামি কলম। ক’দিন যেতে না যেতেই সে-কলমও উধাও।
এই ভাবে একটার পর একটা টোপ রাখতেন গগনেন্দ্রনাথ। টোপ হিসেবে রাখা কলম উধাও হতে দেরি হত না। নজর রাখতেন, ঘরে কে আসে, যায়! নজরদারি করেও কিছুতে চোরটাকে ধরতে পারছিলেন না। দু-একজনকে অবশ্য সন্দেহজনক মনে হয়েছিল গগনেন্দ্রনাথের। তাদের উপর আরও বেশি করে নজর রাখছিলেন। সন্দেহের তালিকায় সবার আগে ছিল খুদিনবাবুর নাম। বিদঘুটে নামের ওই লোকটি কে? তেমন কেউ নয়, ঠিকাদার। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তখন মেরামতির কাজ চলছিল। মেরামতির কাজে যুক্ত ছিল সে।
এই ভাবে একটার পর একটা টোপ রাখতেন গগনেন্দ্রনাথ। টোপ হিসেবে রাখা কলম উধাও হতে দেরি হত না। নজর রাখতেন, ঘরে কে আসে, যায়! নজরদারি করেও কিছুতে চোরটাকে ধরতে পারছিলেন না। দু-একজনকে অবশ্য সন্দেহজনক মনে হয়েছিল গগনেন্দ্রনাথের। তাদের উপর আরও বেশি করে নজর রাখছিলেন। সন্দেহের তালিকায় সবার আগে ছিল খুদিনবাবুর নাম। বিদঘুটে নামের ওই লোকটি কে? তেমন কেউ নয়, ঠিকাদার। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে তখন মেরামতির কাজ চলছিল। মেরামতির কাজে যুক্ত ছিল সে।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates_4.jpg)
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কুমারস্বামীর কলম খোয়া যাওয়ার পর গগনেন্দ্রনাথ তাঁকে বসতে বলে সোজা চলে গিয়েছিলেন সেখানে, যেখানে খুদিন মেরামতির কাজ দেখভাল করছিল। গগনেন্দ্রনাথ এগোলেন চুপিসারে। কুলিদের নিয়ে লোকটি তখন খুব ব্যস্ত। গগনেন্দ্রনাথ পেছন থেকে গিয়ে খুদিনকে চেপে ধরেছিলেন। চেপে ধরেই তার পকেট হাতড়াতে শুরু করেছিলেন। খুদিন সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। জায়গাটা ছিল বেশ পিচ্ছিল। তাল সামলাতে না পেরে শেষে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সে। পকেটের ছেঁড়া অংশ, সেই সঙ্গে চুরি যাওয়া কলম রয়ে গিয়েছিল গগনেন্দ্রনাথের হাতে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/tonsil-disease.jpg)
ছোটদের যত্নে: শিশুকে টনসিলের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে চান? মেনে চলুন শিশু বিশেষজ্ঞের এই সব টিপস
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/08/Professor-Chilukuri-Santhamma.jpg)
দশভুজা: তিনিই সারস্বত সাধনার প্রতিরূপা সত্যিকারের দশভুজা
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/06/Fish-C.jpg)
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১৮: ডাকটিকিটে মৎস্য সন্ধান
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/09/samayupdates-Mathura-6-1.jpg)
উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /১
কুমারস্বামীকে কলম ফেরত দিয়েই গগনেন্দ্রনাথ থামলেন না, হারানো সব কলম উদ্ধারও করেছিলেন। যাঁর তত্ত্বাবধানে শ্রমিকরা ঠাকুরবাড়িতে কাজ করছিল, সেই নির্মলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গগনেন্দ্রনাথ পাশের মদন চ্যাটার্জি লেনের এক বাড়িতে গিয়েছিলেন। সে বাড়ির একটি ঘরে খুদিন থাকত। ঘরে ঢুকেই ভাঙা হয়েছিল ডেক্স। ভাঙতেই নজরে পড়েছিল অন্তত খানকুড়ি ফাউন্টেন পেন।
গগনেন্দ্রনাথকে সবাই বলেছিল, দাও, পুলিশে দাও। কোথায় সে, দিনভর তার দেখা নেই। অনেক রাতে খুদিন ফিরে এসেছিল। তখন আর তার দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। আকণ্ঠ মদ্যপান করেছে। ক্ষমা চেয়ে তখুনি সে লুটিয়ে পড়েছিল গগনেন্দ্রনাথের পায়ে।
কাকে আর পুলিশে দেবে, হদ্দ মাতাল। আশেপাশে যারা ছিল, তাদের গগনেন্দ্রনাথ বলে দিয়েছিলেন, ‘নির্মলকে বলে দিস পুলিশ-টুলিশে যেন না দেয়।’ না, তাকে আর পুলিশে দেওয়া হয়নি। দুই চোরই চুরি করে পার পেয়ে গিয়েছিল। না, চুরির জিনিস নিয়ে পালাতে পারেনি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
গগনেন্দ্রনাথকে সবাই বলেছিল, দাও, পুলিশে দাও। কোথায় সে, দিনভর তার দেখা নেই। অনেক রাতে খুদিন ফিরে এসেছিল। তখন আর তার দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। আকণ্ঠ মদ্যপান করেছে। ক্ষমা চেয়ে তখুনি সে লুটিয়ে পড়েছিল গগনেন্দ্রনাথের পায়ে।
কাকে আর পুলিশে দেবে, হদ্দ মাতাল। আশেপাশে যারা ছিল, তাদের গগনেন্দ্রনাথ বলে দিয়েছিলেন, ‘নির্মলকে বলে দিস পুলিশ-টুলিশে যেন না দেয়।’ না, তাকে আর পুলিশে দেওয়া হয়নি। দুই চোরই চুরি করে পার পেয়ে গিয়েছিল। না, চুরির জিনিস নিয়ে পালাতে পারেনি।
ছবি সৌজন্যে: লেখক
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (tagore-stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।