রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

অনেক মা-বাবাদের বলতে শোনা যায়— আমার বাচ্চার টনসিল হয়েছে। টনসিল তো সবার শরীরে এমনিতেই থাকে। টনসিল হল কতগুলো গ্রন্থির সমষ্টি, যেগুলো গলা এবং মুখ গহবরের তালুতে অবস্থান করে। মুখের ভিতরে আংটির মতো পরিবেষ্টিত হয়ে বলয় তৈরি করে অবস্থান করে বলে একসঙ্গে এগুলিকে ‘ওয়াল্ডায়ার রিং’ বলা হয়। এই টনসিল গ্রন্থি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য অংশ। যে সমস্ত সংক্রমণ মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে সেগুলো প্রতিরোধ বা ধ্বংস করা টনসিল গ্রন্থির কাজ।
 

আমাদের শরীরে কী কী টনসিল থাকে

প্যালেটাইন টনসিল
মুখের ভিতরে তালুর পিছনের দিকে দু’পাশে থাকে।
অ্যাডিনয়েড বা ফ্যারিনজিয়াল টনসিল
গলার ওপরে নাকের পিছনের দিকে থাকে এবং ‘রাইনোস্কোপি’ ছাড়া দেখা যায় না।
লিঙ্গুয়ায়াল টনসিল
গলার ভিতরে পিছনে জিভের গোড়ায় ডান এবং বাঁদিকে থাকে। এটি একমাত্র টনসিল যা মুখ হ্যাঁ করলে দেখা যায়।

অ্যাডিনয়েড বা ফারিনজিয়াল টনসিল সংক্রমণের ফলে এতটাই বেড়ে যায়— মুখগহ্বর প্রায় পুরো ভরে যায়। যার ফলে শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে গলা ব্যথা নয়, শিশুদের শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। শিশু নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না বলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। এমনকি দিনের বেলায়ও মুখ হ্যাঁ করে ঘুমায়। এর সঙ্গে সঙ্গে মুখ শুকিয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে জল পড়া, ঘুমের মধ্যে না ডাকা, শ্বাসে দুর্গন্ধ, জিভের স্বাদ চলে যাওয়া, সাংঘাতিক কাশি, কানে কম শোনা, কানে ব্যথা এবং কানের সংক্রমণও ঘটে।

যেকোনও টনসিল গ্রন্থির সংক্রমণ হলেই সেটাকে ‘টনসিলাইটিস’ বলে। সে ক্ষেত্রে টনসিল লাল হয়ে যায়, ফুলে ওঠে। প্যালেটাইন টনসিল ও অ্যাডিনয়েড টনসিল সংক্রমণের ফলে বড় হয়ে যাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এটাকে মা-বাবারা বলেন, শিশুর টনসিল হয়েছে। এর প্রকৃত অর্থ, শিশুর টনসিল রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে।

 

টনসিলাইটিসের উপসর্গ

গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর।
খেতে কষ্ট।
টনসিলে পুঁজ হতে পারে —যাকে বলা হয় টনসিল পেকে গিয়েছে।
কানে ও ঘাড়েও ব্যথা হতে পারে।
মুখের ভিতর থেকে সংক্রমণ কানে পৌঁছে কান ব্যথা, কানে পুঁজও হতে পারে। কান থেকে সংক্রমণ মস্তিষ্কে পৌঁছে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
টনসিলাইটিসে মুখে দুর্গন্ধ হয়, গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন:

ছোটদের যত্নে: হঠাৎই জ্বর, মুখে-হাতে ঘা হচ্ছে শিশুদের! কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, জেনে নিন কোন রোগের উপসর্গ এগুলি

হোমিওপ্যাথি: আঁচিল নিয়ে অস্বস্তি? চিন্তা নেই, হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে সহজ সমাধান

ত্বকের পরিচর্যায়: যখন তখন হানা দিতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, কী ভাবে বাঁচবেন? রইল উপায়

অ্যালঝাইমার্সের যত্ন বেশ চ্যালেঞ্জের, সঠিক পরিচর্যায় ধৈর্যশীল, সহনশীল, সংবেদনশীল এবং কৌশলী হতে হবে

 

টনসিলাইটিসের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা

কোনও শিশু বিশেষজ্ঞ বা ইএনটি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ ১৪ দিন খাওয়ালে টনসিলাইটিসের কষ্ট কমবে। তাছাড়া জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট শিশুদের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম করে খাওয়ানো যায়, দিনে তিনবার বা চারবার। শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ এক চামচ বা ৫এমএল-এ ১২০, ১২৫, ২৫০ বা ৫০০ মিলিগ্রাম এবং ট্যাবলেট ১২৫, ২৫০, ৩২৫, ৫০০ বা ৬৫০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। প্যারাসিটামল কোনও ডাক্তার না দেখিয়েও খাওয়ানো যায়।
শিশুকে পুরো বিশ্রামে রাখতে হবে।
বড় শিশুদের গরম নুন জল দিয়ে গার্গল করাতে হবে।
স্টিম ইনহেলেশনও খুব উপকারী।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের ‘স্ট্রেপটোকক্কাল’ সংক্রমণের ক্যারিয়ারের স্টেজে, টনসিলাইটিস প্রতিরোধের জন্য বেঞ্জাথিন পেনিসিলিন ব্যবহার করলে শিশু ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত টনসিলাইটিস থেকে মুক্ত থাকবে।
হারবাল ওষুধ যেমন সেপটিলিন সিরাপ বা ট্যাবলেট তিন মাস খাওয়ালে টনসিল ভালো থাকে।

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২২: সত্যের শৃঙ্খলে বন্দি রাজা দশরথ

যা দেখছি, যেমন দেখছি: জাপানে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে গেল ইন্দো-জাপান সাংস্কৃতিক উৎসব

বাইরে দূরে: অযোধ্যা: ইতিহাস ও জনশ্রুতি /২

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৯: ঠাকুরবাড়ির বিয়েতে এমন জাঁকজমক আর হয়নি

 

টনসিলে কখন অস্ত্রোপচার প্রয়োজন

বছরে ছ’ বারের বেশি টনসিলের সংক্রমণ হলে।
টনসিলে পুঁজ হয়ে যাওয়া।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content