শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


 

প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা

অত্যন্ত অনালোচিত একটি ছায়াছবি যেখানে বাঁধিয়ে রাখার মতো অভিনয় করেছিলেন উত্তম। কিন্তু বিধি বাম। অনেক ঠাকুরের মানত করে “বসু পরিবার”-এ সুখের মুখ দেখা হল তো কি হয়েছে কপালের ফের কাটলো না। সদ্য পারিবারিক ছবি “বসু পরিবার”-এর পর “কার পাপে”-র অমন চ্যালেঞ্জিং রোল দর্শকদের বদহজম হয়েছিল।

উত্তমের সাফল্যের খতিয়ান যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে ‘চার দেওয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে’ দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। অগ্নিপরীক্ষা, শাপমোচন, সবার উপরে, সাগরিকা, শিল্পী, চন্দ্রনাথ, পথে হল দেরী, হারানো সুর, সন্ন্যাসীরাজা, ধন্যি মেয়ে আরও অসংখ্য পরিবারের ইতিকথায় উত্তমের সাফল্য হিমালয় স্পর্শ করেছে।
কাজেই প্রোডাকশন হাউস যখনই পারিবারিক গণ্ডী টপকে ব্যতিক্রম বিষয়কে ছবির সাবজেক্ট করেছেন তখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। “কার পাপে”-র বেলায়ও তার অন্যথা হয়নি। সেখানে বেচারা উত্তম বিনা কারণে নিঃস্ব হয়েছেন। বাংলা ভাষায় ফিল্মের নির্মাণ হয়েছে কিন্তু উত্তমবাবুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়। বরং জীবনের শেষ শট পর্যন্ত উনি কতটা ছবির সাথে একাত্ম হতে পেরেছেন, সে পরীক্ষাই সবাই নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৮: মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বে ‘বসু পরিবার’ [১১/০৪/১৯৫২]

জীবনযুদ্ধে হার মেনে চলে গেলেন অভিনেত্রী সোনালি চক্রবর্তী

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-১৮: সাধের বাড়ি জন্য কেমন জমি ভালো? জেনে নিন বাস্তুশাস্ত্র মতে আদর্শ জমির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২১: মন্থরার মন্ত্রণাবিষ—নয় রাজসিংহাসন, হোক নির্বাসন

উত্তম কুমার নামক ক্ষণজন্মা একজন অভিনেতা যে সময়ে ছবির জগতে এসেছেন প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ অনেকটা তখন ফিকে হতে শুরু করেছে। ব্যক্তিগত তথা একক প্রযোজনা সংখ্যায় বেশি দেখা দিচ্ছিল। একটু সালতামামির দিকে নজর দিলে ব্যাপারটা খোলতাই হবে।
অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন-র ব্যানারে মাত্র একটা ছবিতে (“রাইকমল”) উত্তম কুমার সুযোগ পেয়েছেন। নিউ থিয়েটার্স-র ব্যানারে দুটি (“নবীন যাত্রা” ও “বকুল”)। বাকি ভারতলক্ষ্মী পিকচার্স, রাধা ফিল্মস উত্তমবাবুকে কোনও সুযোগই দেননি। অন্যদিকে কালী ফিল্মস ম্যাডান থিয়েটার উত্তমবাবু ফিল্ম লাইনে আসার আগে ছবি প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়েছে।
সুতরাং সে সময়ের এক ও অদ্বিতীয় এমপি প্রোডাকশন কেরিয়ারের শুরুতে উত্তমবাবুকে সুযোগ দিয়েছেন এবং হাউসের সেরা সময়ে উত্তমবাবুর ছবি সুপার ফ্লপ করলেও আশা হারাননি। সে রকমই পরীক্ষা করতে গিয়ে “কার পাপে” ছবির নির্মাণ পটভূমি।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৯: ঠাকুরবাড়ির বিয়েতে এমন জাঁকজমক আর হয়নি

সামনেই বিয়েবাড়ি? গয়নার বাক্সে থাকুক এই ৫ ধরনের গয়না

ছোটদের যত্নে: বাচ্চা খেতেই চায় না? কী করে খিদে বাড়াবেন? কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের মতামত

ষাট পেরিয়ে, পর্ব-১২: প্রবীণদের টিকা—আপনি নিয়েছেন তো? দ্বিতীয় পর্ব

পরিচালনায় কালীপ্রসাদ ঘোষ দায়িত্ব পালন করলেও পিছনে সর্বক্ষণ তত্ত্বাবধান করেছিলেন অগ্রদূত গোষ্ঠী।
সিফিলিস নামক একটা রোগকে নিয়ে সেসময়ে ছবি তৈরি রীতি মতো দুঃসাহসিক। রক্ষণশীল সমাজকাঠামোয় বহু দর্শক নীল ছবির আশঙ্কায় হলমূখো হলেন না। মহিলামহলের উপর নেমে এল চলমান নিষেধাজ্ঞা। ফল ফলল হাতে নাতে। হল ফাঁকা। শৈলেন রায়ের লেখা গান, অনুপম ঘটকের সুর, বিভূতি লাহার ক্যামেরার কারসাজি, শব্দযন্ত্রী যতীন দত্ত—মুন্সীয়ানা সব মাঠে মারা গেল।
সবচেয়ে বড় কথা এতদিন যে অসিত বরণের অনুপস্থিতিতে, সময়ের অভাবে ছেড়ে দেওয়া ছবিতে উত্তমের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে; এ ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ, উত্তম খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু যে বছরে “মহাপ্রস্থানের পথে”, “চিতা বহ্ণিমান”-র ছবি রিলিজ করেছে, দর্শক বুঁদ হয়ে থেকেছে সেখানে “কার পাপে”! মানুষে দেখে!

বসু পরিবারের সুখেন হারিয়ে গেলেন অজানা ঠিকানায়। সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কুমার নামক হিরো।—চলবে

ছবি সৌজন্য: জয়দীপ ভট্টাচার্য
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content