শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত পশ্চিমী এবং উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন বিশ্বব্যাপী কৃষিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাব ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা, সমন্বয় এবং যোগাযোগের অভাব—বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং ভূ-মণ্ডলীয় পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ ও অর্থনীতি— উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ছাড়া কৃষির ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা করার সম্ভাবনা খুবই কম। উপরন্তু, আমরা আমাদের প্রাকৃতিক জৈবিক পরাগায়নকারীদের আশ্চর্যজনক হারে হারিয়ে ফেলছি। মধু মৌমাছি এবং দেশীয় (বন্য) মৌমাছি-সহ অন্যান্য পরাগায়নকারী পোকামাকড়, শামুক, পাখি এবং বাদুড়ের মতো ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষতি আমাদের পরিবেশ এবং অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাব ফেলে। প্রায় ৮৫ শতাংশ সপুষ্পক উদ্ভিদ বংশ বিস্তারের জন্য মৌমাছির মতো জৈবিক পরাগায়নকারীদের উপর নির্ভরশীল।
কৃষিকাজ ও চাষাবাদে ব্যবহৃত অত্যধিক কীটনাশক এবং নৃতাত্ত্বিক দূষণের কারণে বিশ্বের চারিপাশ থেকে কীটপতঙ্গ যথা মৌমাছি, প্রজাপতি, মথ, বিটল, মাছি এবং পিঁপড়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রহের প্রায় ৮৫ শতাংশ সপুষ্পক উদ্ভিদ তাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখাতে পরাগায়নকারীদের উপর নির্ভরশীল।
শুধু পোকামাকড় নয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বাদুড়, শামুক এবং স্লাগ, টিকটিকি, ইঁদুরের মতো ছোট পশমযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী, এমনকি নির্দিষ্ট কিছু বেজি, প্রজাতিকেও ভালো পরাগায়নকারী হিসাবে মনে করা হয়। বিষাক্ত কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহার, দূষণ, বিভিন্ন পরজীবী রোগের প্রাদুর্ভাব, কলোনি কোল্যাপস ডিজঅর্ডার (CCD) দুর্বল পুষ্টি, দুর্বল রোগ-প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, উপযুক্ত মেলিফেরাস উদ্ভিদের অভাব এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের মতো বেশ কিছু নৃতাত্ত্বিক কারণে সম্মিলিতভাবে মৌমাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের জনসংখ্যার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এই সমস্ত প্রজাতি পৃথিবীর চারিপাশে উদ্বেগজনক ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:

নীল চাষের উপাখ্যান

ছোটদের যত্নে: হঠাৎই জ্বর, মুখে-হাতে ঘা হচ্ছে শিশুদের! কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, জেনে নিন কোন রোগের উপসর্গ এগুলি

পরাগায়নকারীর ক্ষতি মানে আমাদের কৃষি এবং বনজ শিল্পের ধ্বংস, যা অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশগত নেতিবাচক স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে। পরাগায়নকারী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার মতো টেঁকসই ও পরিবেশ-বান্ধব পন্থাগুলি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের সঙ্গে মৌমাছি সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধকরণে কার্যকর প্রমাণিত হয়। ভারত এবং কানাডা উভয় দেশের জন্যই জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মৌমাছি সংরক্ষণের মতো পরাগায়নকারী উভয়ের জন্য কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

উভয় দেশের সমৃদ্ধ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যাপকভাবে একে অপরকে সাহায্য করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এমন কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা গত কয়েক বছর ধরে সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। নিম্নে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে উভয় দেশের সম্পৃক্ততা এবং একসঙ্গে কাজ করার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে:
দুই দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা।
নৌ ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
অসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক, বায়ু, ভূ-তাপীয় এবং জলবিদ্যুৎ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার।
বন সংরক্ষণ।
সব জায়গায় উচ্চমানের রাস্তা নির্মাণ এবং পরিকাঠামোর উন্নয়ন।
কৃষি আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি।
আধুনিক কৃষি, সেচ প্রযুক্তি এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহযোগিতা সম্প্রসারণ।
সামুদ্রিক প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি, পরিকল্পনা মতো খনির কাজকর্ম এবং শিল্প-পণ্য এবং উপজাত-পণ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করা। বিভিন্ন আধুনিক বিকল্প শক্তির সংস্থানগুলির ব্যবহার অন্বেষণ করতে একসঙ্গে কাজ করা।
স্থানীয় গবাদি পশুকে উত্সাহিত করতে উভয় দেশকেই চারা শস্য শিল্পের অন্বেষণ এবং ফসল উৎপাদনে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
পশুসম্পদ ও দুগ্ধ শিল্প সম্প্রসারণে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়।
উভয় দেশেই প্রচলিত এবং অপ্রচলিত পর্যটনের (ইকো ট্যুরিজম) প্রচার করা।
ভারত ও কানাডার মধ্যে সাধারণ শক্তি বিনিময়কে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে স্থায়ী পদ্ধতিতে উভয় পক্ষের জন্য একে লাভজনক হিসেবে করে তোলা।
দুই দেশের মধ্যে তুষার ও বরফ ভিত্তিক প্রযুক্তি বিনিময় করা। কারণ, কানাডা এই ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং ভারতের জন্য একটি বড় সাহায্য হিসাবে কাজ করতে পারে।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হতে পারে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৮: মেয়ের জন্য হেমন্তবালা কবির পরা জোব্বা নিয়েছিলেন

বাইরে দূরেঃ অযোধ্যা: প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রাণকেন্দ্র/১

প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জীবাণু পদার্থের জেনেটিক এবং জৈবিক আদান-প্রদান কৃষি ও বন শিল্পকে উত্সাহিত করবে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাবে এবং কর্মসংস্থানও বাড়াবে।
লোহা, ইস্পাত, সার এবং পেট্রোলিয়াম-রাসায়নিক শিল্প সম্পর্কিত পণ্য ব্যবহার এবং প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
উভয় দেশের জন্য নতুন সামরিক প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম বিনিময় বৃদ্ধি করতে হবে।
উভয় পক্ষের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য উন্মুক্ত সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তির কথা ভাবতে হবে।
দুই দেশের মধ্যে আরও শক্তিশালী সামাজিক-সাংস্কৃতিক, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক সম্পৃক্ততা এখন অপরিহার্য।

কৃষিকাজ ও চাষাবাদে ব্যবহৃত অত্যধিক কীটনাশক এবং নৃতাত্ত্বিক দূষণের কারণে বিশ্বের চারিপাশ থেকে কীটপতঙ্গ যথা মৌমাছি, প্রজাপতি, মথ, বিটল, মাছি এবং পিঁপড়া বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একজন সক্রিয় নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব — কৃষক-বান্ধব এবং পরিবেশ-বান্ধব পোকা পরাগায়নকারীকে সফলভাবে সংরক্ষণ করে আমাদের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে বিপদমুক্ত করা। এই পরাগায়নকারীরা বিলুপ্ত হলে আমাদের কৃষি এবং বনজ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। অতএব বাস্তুশাস্ত্র এবং অর্থনীতিকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে এবং উন্নতির পথে এগিয়ে চলতে হবে।

ছবি: সৈকতকুমার বসু

Skip to content