শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


তারকবাবুর মেসের সিঁড়ি।

।।কালপুরুষ।।

বিনয়ের কামরায় কেউ দেখা করতে এলে মিনিট পাঁচেক পরেই কাচের গ্লাসে খাবার জল দেবার রীতি ছিল। তারপর সুদৃশ্য কাপে ভালো চা-বিস্কিট। এসব দেখে যুবক একটু বিস্মিত হল। সে অনেক জায়গায় ঘুরেছে। এমন আপ্যায়ন তাকে কেউ কখনও করেনি। বিনয় হাত দেখিয়ে চা-জল নিতে অনুরোধ করল। যুবক আপত্তি করল না। একটু থেমে সে আবার শুরু করল।

— এর মধ্যে সাহেব দু-একবার অফিসের অন্য ঘরে কাজে যাতায়াতের পথে আমাকে বসে থাকতে দেখলেন। সন্ধ্যেবেলায় অফিস থেকে বের হবার সময়ও আমাকে দেখে বোধ হয় তাঁর দয়া হল। তিনি আমায় ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন— সারা মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর একজনকে জোগাড় করতে পারলাম। ফর্মে সই করার পর সাহেব জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি সারাদিন একজন ক্লায়েন্ট জোগাড় করার জন্য বসে ছিলে কেন? তোমার এমপ্লয়ারের তো আরও ক্লায়েন্ট রয়েছে। সাহেবকে বলেছিলাম, আমি সারা মাস পরিশ্রম করে একজন ক্লায়েন্টকে রাজি করাতে পেরেছি। এটা না করতে পারলে আমার মালিক ভাবতেন আমি কোন কাজের নই। তাঁর হয়ত অনেক ক্লায়েন্ট রয়েছেন কিন্তু আপনাকে নিয়ে আরও একজন বাড়ল। আমি আমার মালিককে আজকের ঘটনা বললে তিনি বুঝতে পারবেন যে আমি কত সততার সঙ্গে কাজটা করার চেষ্টা করি। আর আপনি যদি আজকের ঘটনা আপনার পরিচিত আর একজন-কেও বলেন তিনি হয়ত ভবিষ্যতে আমাকে একটা কাজের সুযোগ দেবেন।

যুবক যে এতক্ষণ অনর্গল কথা বলে গেল সে একবারের জন্য থামেনি। ভাবেনি। একেবারে মনের ভেতরের উপলব্ধি যেন প্রকাশিত হল। বিনয়কান্তি গালে হাত রেখে যুবককে ভালো করে নিরীক্ষণ করলেন। তারপর বললেন

— এজেন্টের এজেন্সির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন?
— আজ্ঞে হ্যাঁ, ওভাবে আমি পেরে উঠব না।
— চলুন!

এতক্ষণে এই প্রথম যুবক থতমত খেয়ে বলল,
— আঁজ্ঞে কোথায় যাব?
— যে শরীরটাকে সঙ্গে নিয়ে এই জীবনসংগ্রাম সেই শরীরকে অভুক্ত রাখলে কি চলে? চলুন আমারও খাওয়া হয়নি।

যুবক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এমনও হয় নাকি? যে অফিসে কাজের চেষ্টায় এসেছে, সেখানে দুপুরে তাকে খাবার জন্য ডাকছে?
— কী এত ভাবছেন? তবে হ্যাঁ, অস্থির মন শান্ত না হলে ভালোভাবে খাবেন কী করে? একটা মাস আপনি টেম্পোরারি কাজ করুন। বাকিটা পিটারসন সাহেব এলে ঠিক হবে। চলুন!

এই যুবকের নাম তারক নিয়োগী। পিটারসন সাহেব তাকে পাকাপাকিভাবে চাকরিতে নিয়োগ করলেন। বিনয়কান্তিকে বললেন, ছেলেটিকে মনের মতো করে গড়ে নিতে। ক্রমশ তারক নিয়োগী হয়ে উঠলেন বিনয়ের ব্যক্তিগত সচিব। পরবর্তী কালে শুধু বিনয়কান্তি নন গোটা পরিবারের একজন শুভানুধ্যায়ী হয়ে উঠেছিলেন অকৃতদার তারক নিয়োগী। বিনয়কান্তি বা এই পরিবারে — জীবনের সবটুকুই সাফল্য, সবটুকুই আলোর রোশনাই নয়।

তবে সেটা কখনই সিনেমা বা সিরিয়ালের সাজানো চিত্রনাট্যের মত নিয়ম করে ক্রমান্বয়ে জটিলতা ও সাফল্যের নাটকীয় সাপ-লুডো নয়। স্বাভাবিকতা মেনে জীবনের কোন একটা সময়ে সমস্যার জট কখনও জাদুর ছোঁয়ায় পরপর খুলে যায়। আবার আঘাত বা ব্যর্থতার ঘন অন্ধকারও আসে। পরপর। নিরবিচ্ছিন্নভাবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে নুয়ে পড়ে আপাতদৃষ্টিতে বিনয়কান্তি দত্তের মতো আদ্যন্ত সফল একজন মানুষও ঠিক সেভাবেই বারবার অন্ধকারে দিশাহারা হয়ে গিয়েছেন। ধীর-স্থিরভাবে বিনয়কান্তির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সাহায্য করেছেন। সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন এই ছোটখাট চেহারার দৃঢ় মানসিকতার লোকটি। একেবারে শূণ্য থেকে জীবন শুরু করেছিল বিনয়কান্তি। হারাবার কিছু ছিল না। তাই লড়াইটা বাইরে থেকে খুব একটা সঙ্কট বলে মনে হয়নি।

যদিও বিনয় নিজে জানত একজন সহায়হীন, সমাজে কোনও অস্তিত্বহীন, অতি সাধারণের বড় হবার স্বপ্ন দেখাটা কত কঠিন। ফড়েপুকুর গুহবাড়িতে হিসেব লেখা শেষ করে প্রায় মাঝরাতে ভাঁড়ার ঘরে অপমানিত বিনিদ্র রাত-কাটানো বা তেলিপাড়া লেনের ধোঁয়া-গেলা বেয়াব্রু জীবনযাপন কতটা কষ্টকর ছিল। কিন্তু তখন মা ছিল। বসুন্ধরা তাকে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার জন্যে ইস্পাত-কঠিন করে গড়ে তুলেছে। মা এখনও পাশে আছে।

কিন্তু জীবনের এই বৃহৎ পরিসরে পৌঁছে বিনয় বুঝতে পারে এর সবটুকু মার পক্ষে আর সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বিনয়ের সৌভাগ্য সে বসুন্ধরার মত মা আর স্বর্ণময়ীর মতো একজনকে জীবনসঙ্গী পেয়েছে। স্বর্ণ না থাকলেও বিনয়ের অনেক স্বপ্ন অধরা থেকে যেত। কিন্তু শুধু পরিবার তো নয়। তার কর্মক্ষেত্র যে সীমাহীন। সেখানে সঙ্গে যে একজন নিঃস্বার্থ নির্ভীক সহৃদয় মানুষ দরকার। যাকে নির্ভাবনায় বিশ্বাস করা যায়। নির্ভর করা যায়। যে হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলায় না। প্রয়োজনে “না” বলতে জানে। কেন “না”, সেটা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারে। যেভাবে পিটারসনকে বিনয় বলত। তবে বিনয়ের মধ্যে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ছিল, সাফল্যের নেশা ছিল। তারক নিয়োগী সন্ন্যাসীর মত ধীর, স্থির – ধ্রুবক।

তাই বিনয়কান্তি তারক নিয়োগীকে বলতেন, অরিয়ন। কালপুরুষ। গোটা পরিবার বা বসুন্ধরা ভিলার নিঃশব্দ দিকনির্দেশক। গ্রিক পুরাণ অনু্যায়ী অরিয়ন এক শ্রেষ্ঠ শিকারি। এই তারকামণ্ডলকে সারা পৃথিবী থেকে স্পষ্ট দেখা বা চেনা যায়। বহু দশক ধরে অন্ধকারে নৌ-নাবিকেরা কালপুরুষকে দেখেই যাত্রা পথের দিশা ঠিক করতো।

বিনয়কান্তি তারকবাবুকে কাজের লোকসমেত একটা বাড়ি ঠিক করে দিতে চেয়েছিলেন। যাতে একা মানুষের নিশ্চিন্তে অফিস করতে কোন অসুবিধা না হয়। তারকবাবু সে বদান্যতায় আপত্তি করেছিলেন। নিজেই কলেজ স্ট্রিটের একটি মেসবাড়ি খুঁজে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে বিনয়কান্তির নির্দেশেই আজীবন তারকবাবুর মেসের থাকা-খাওয়ার খরচ যোগাত কোম্পানি। শুরুতেই পিটারসেন সাহেব আপত্তি করেননি, পরে বিনয়কান্তির নির্দেশ পরবর্তী প্রজন্ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।

১৯৪০-এ গাড়ি কিনলেন বিনয়কান্তি। বাদামি রঙের স্টুডিবেকার চ্যাম্পিয়ন। রাজসিক চেহারা। বহাল হল ড্রাইভার। প্রথম দিন স্বর্ণময়ী বসুন্ধরাকে নিয়ে ছুটল দক্ষিণেশ্বরে। মা ভবতারিণীর আশীর্বাদ নিতে। ঐতিহ্যশালী বেঙ্গল ক্লাবে বিনয়কান্তি দত্তের মেম্বারশিপ করিয়ে দিলেন উইলিয়ম পিটারসন। টলিগঞ্জ ক্লাব বিনয়কান্তিকে সাম্মানিক সদস্যপদ দিল।
আরও পড়ুন:

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৯: বসুন্ধরা এবং…

নীল চাষের উপাখ্যান

ছোটদের যত্নে: বাজির আগুন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন খুদেদের, কী কী নিয়ম মানতেই হবে জেনে নিন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

উৎসব-মুখর মথুরা: জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ব্রজভূমি দর্শন /২

সেন্ট্রাল প্রেস ক্যালকাটা প্রকাশিত সাংবাদিক জন ব্যারির “ক্যালকাটা ১৯৪০” থেকে সুবর্ণকান্তি জানতে পারল, লর্ড মেকলের পুরনো বাসভবনেই ১৮২৭ সালে সুপ্রতিষ্ঠত হয়েছিল বেঙ্গল ক্লাব। এই লর্ড মেকলে ছিলেন বৃটেনের এক বিশিষ্ট মানুষ। প্রিভি কাউন্সিল মেম্বার, রয়েল সোসাইটির ফেলো, ঐতিহাসিক, হুইগ পার্টির নেতা। এই হুইগ পার্টির কিছু অংশ পরে লিবারেলদের সঙ্গে মিশে যায়। তারা টোরিদের মানে কনজারভেটিভদের বিরোধী। যে কনজারভেটিভ পার্টি এই মুহূর্তে বিলেত শাসন করছে। বরিস জনসনের পদত্যাগের পর টোরিদের নেতা হয়ে লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী। ৪৪দিন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা। পদত্যাগ। আবারও নতুন নেতার খোঁজ চলছে।আর লিবারেলরা গণনির্বাচন দাবি করছে। তবে মেকলে সাহেব এত ভালোর মধ্যেও একফোঁটা গোচনার মতো ভয়ঙ্কর বাঙালি বিদ্বেষী ছিলেন।

১৯০৮ সালে লর্ড মেকলের পুরনো বাসভবন চত্বরে রেনেসাঁ-শৈলীর অনুকরণে নতুন ভবন তৈরি হল ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। ১৯০৮ সালে ৯ লক্ষ টাকা!! গুগল খুলে মোবাইলে অঙ্ক কষতে গিয়ে সুবর্ণ দেখল গুলিয়ে যাচ্ছে। সরাসরি হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ১৯৫৮ সালের ১ ডলার ২০২২ সালে ৮৯.৮১ ডলার। মানে ১৯৫৮ থেকে আরও ৫০ বছর আগে। মোটামুটি একটা হিসেব করতে ঐকিক নিয়ম লাগালে ৬৪ বছরে এক ডলার কমবেশি ৯০ ডলার হয়েছে। তাহলে ৫০ বছরে আরও ৭০ যোগ করলে ১৬০ হয়, কম করে ১৫০ গুণ ধরা যেতেই পারে। তার মানে ১৯০৮ এর ৯ লক্ষ ২০২২-এ কমবেশি সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। টেকনোলজি আজ অনেক খরচ কমিয়ে দিয়েছে না হলে হিসেবটা মোটের ওপর ঠিকই আছে।

বিনয়কান্তির ক্লাব মেম্বারশিপের ব্যাপারে উৎসাহ ছিল না। কিন্তু পিটারসন বিনয়কে বলেছিলেন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে তাঁকে তার পরিচিতির গুরুত্ব ও পরিধি বাড়াতে হবে। আর সেটা একমাত্র সম্ভব এই অভিজাত ক্লাব মেম্বারশিপের মাধ্যমে। পিরামিডের নিচের দিকটা অনেক চওড়া যত উপরে যাওয়া যায় তত জায়গা কমে আসে। শীর্ষবিন্দু একেবারে ছোট। তাই শুধু কৃতিত্ব দিয়ে সাফল্যের চড়াইয়ে কিছুদূর পর্যন্ত পৌঁছনো যায়। বাকি রাস্তার জন্য চাই স্ট্রাটেজি। চাই টেকনিক। বিনয় তো শুধু চাকরি করে আর রোজগার করে বেঁচে থাকতে চায়নি! তার স্বপ্ন কিছু গড়ে যাবার। আগামীর সামনে নিজের দৃষ্টান্ত রেখে যেতে, বিনয়কে এক নম্বর হতে হবে। আর তাই এখন স্ট্র্যাটেজি টেকনিকের সাহায্য নিতে হবে। পিটারসনের মতো জহুরি না থাকলে বিনয়কান্তির ভেতরের উজ্জ্বল হীরের ঠিকরে আসা আলো হয়ত আর কেউ সেভাবে দেখতে পেতেন না।

১৯৪১ সাল। গোটা দেশের সঙ্গে কলকাতাতেও উত্তাল স্বাধীনতা সংগ্রাম। জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ গভীর রাতে ‘তরুণের স্বপ্ন’র রচয়িতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৩৮/২ এলগিন রোড বাড়িতে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ব্রিটিশ পুলিশ ও লালবাজারের গুপ্তচরদের ধোঁকা দিয়ে অন্তর্হিত হলেন। ১৮ই জানুয়ারি স্বর্ণময়ীর কোলে এল আরেক পুত্রসন্তান। স্বর্ণময়ী নাম রাখল তরুণকান্তি। দু’বছর পর বিমলকান্তি জন্মাল ১৯৪৩ সালে। ছেচল্লিশের দাঙ্গার এক মাস আগে জুলাই মাসে জন্ম নিল কনিষ্ঠ পুত্র কমলকান্তি।
আরও পড়ুন:

ইংলিশ টিংলিশ: Preposition-এর মূল নিয়মগুলো জানো কি?

যোগা-প্রাণায়াম: ডায়াবেটিসে ভুগছেন? শরীরে বাড়ছে মেদ? সূর্যপ্রণামেই মিলতে পারে মুক্তি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭: হারিয়ে যাওয়ার আগে এ এক বিফল মৃত—‘সঞ্জিবনী’ [০৮/০২/১৯৫২]

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৭: রান্নাবান্নার ঠাকুরবাড়ি

দাঙ্গার সঙ্গে সেই সময়ের গোটা কলকাতার মানুষের মনে এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু বিনয়কান্তির পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক আতঙ্কময় অধ্যায়। বড় ছেলে গগনকান্তি তখন বছর ১৩। বিনয়ের শরীরটা ভালো ছিল না। তাই সেদিন অফিস করেনি। অফিস থেকে বাড়িতে লোক এসেছিল কয়েকটা জরুরি সই-সাবুদ করাতে। দুপুরের পরে বিনয়কান্তি বেশ সুস্থ। কিশোর গগনকান্তি রোববার ছাড়া আচমকা একটা গোটা দিন বাবাকে বাড়িতে পেয়ে গিয়ে খুব খুশি। মাঝে মাঝে ছুটির দিনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে গাড়ি করে গড়ের মাঠে বেড়িয়ে আসতেন বিনয়কান্তি। গগন সেদিন বায়না ধরল ঘোড়ার গাড়ি চাপবে। আব্দুল বলে এক চেনা ফিটনওয়ালা ছিল। বসুন্ধরা হাতে টানা রিকশা চড়বেন না। গাড়ি কেনার আগে তাই প্রায়ই তার ফিটন ভাড়া করে স্বর্ণময়ীকে নিয়ে বসুন্ধরা হাতিবাগানে কেনাকাটা বা কর্নওয়ালিস স্ট্রিট ধরে সিধে ঠনঠনে সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন। কিন্তু ছোট থেকেই গগন দুরন্ত ছিল তাই তাকে বলা হতো বাবা ফিটন চড়াবে। বিনয় সেদিন আব্দুলকে খবর পাঠালেন কিন্তু গগনকে একাই নিয়ে বের হলেন। গগন গঙ্গা দেখতে চেয়েছিল। বিনয়কান্তি জানালেন, যেখানে অনেকটা গঙ্গানদী খুব কাছ থেকে দেখা যায় সেই জায়গাটা একটু দূরে। আরেকটা ছুটির দিন গাড়ি করে নিয়ে যাবে। আজ তারা শহরের এদিকটা দেখবে। গ্রে স্ট্রিট থেকে কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট ধরে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ হয়ে একটা লম্বা পাক মেরে আসবে। আব্দুল জানাল বিনয় অনুমতি করলে সে আপার সার্কুলার রোড হয়ে রাজাবাজার হয়ে ফিরে আসবে, সেখানে আব্দুলের ফুপার মানে পিসির মেয়ের ঘর। তাকে একটা জিনিস দেবার আছে। তবে বাবুর আপত্তি থাকলে… বিনয় মানা করেনি। গগনের লম্বা রাস্তায় ঘোড়াগাড়ি চড়া নিয়ে কথা। তাতে যদি আব্দুলের উপকার হয় হোক-না। সারা দিনরাত সহিস সওয়ারীর মর্জিমাফিক গাড়ি চালায়। আজ নয় একজন সওয়ারী সহিসের মর্জিমতো গাড়ি চড়ুক।

টগবগ করে ঘোড়া ছোটাচ্ছে আব্দুল। গগন খুব মজা পাচ্ছে। খুশিতে হইহই করছে সে, শুক্রবার বিকেল। সেই তুলনায় রাস্তা একটু বেশিই ফাঁকা ফাঁকা। ‘ভালোই হয়েছে’ মনে মনে ভাবে বিনয়কান্তি। রাস্তা ফাঁকা নাহলে ফিটন চড়ে মজা কোথায়? কিন্তু এই বিকেলবেলা দোকানিরা তাড়াহুড়ো করে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করছে কেন? আব্দুলকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফিটনের গতি কমে এল।

— কী হল আব্দুল?
— ভাবগতিক ভাল ঠেকছ্যে না কত্তা – জানলা বন্দো কইর‍্যা বসেন।

বিনয় খেয়াল করে গগন ভয় পেয়ে গিয়েছে। বিনয়ের মধ্যেও আতঙ্ক কিন্তু সেটাকে চাপা দিয়ে গগনকে কাছে টেনে নিয়ে বিনয় স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে।

— কেন? কী হয়েছে?
— মোড়ে মোড়ে জ্যটলা হচ্ছ্যে কত্তা!! লোকলস্কর চংমং করছ্যে!!

বিনয় জানলা বন্ধ করে দিল। বন্ধ জানলার অন্ধকার ফিটনে বসে বিনয়ের মাথায় বিদ্যুৎ-রেখার মত পরপর কতকগুলো বিষয় ঝলসে উঠল, ক্যাবিনেট মিশন… অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার প্রস্তাব। আর এক পক্ষকে সরকার গড়ার প্রস্তাব দিলে অন্যপক্ষের বিরূপ প্রতিক্রয়া হবেই। ১৯৪০ থেকেই কংগ্রেস, মুসলিম লিগের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

বিনয়ের গাড়ি স্টুডিবেকার – চ্যাম্পিয়ন (১৯৪০)। ছবিঃ সংগৃহীত

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
 

পরের পর্ব আগামী রবিবার

— আব্দুলের কোনও ক্ষতি করবেনা তোমরা। ও আজ নিজের জীবন বাজি রেখে রাজাবাজারে আমাকে আর আমার তেরো বছরের ছেলেকে প্রাণে বাঁচিয়েছে। আজ ও না থাকলে আমি আর আমার ছোট্ট ছেলেটার মৃতদেহ রাজাবাজারে পড়ে থাকত। নিজের গলার তাবিজ খুলে আজ আব্দুল আমার ছেলেকে পরিয়ে দিয়েছিল।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

* বসুন্ধরা এবং (Basundhara Ebong-Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content