ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ।
ওআরএসের জনক বাঙালি চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয় হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। শনিবার রাতে বাইপাসের ধারে একটি বাইপাসের তাঁর মৃত্যু হয়। মানব শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল কমে গেলে মৃত্য প্রায় অনিবার্য। এই সমস্যার সমাধানে তিনি নুন-চিনি মেশানো জল খাওয়ানোর উপায় বার করেন। তাঁর এই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার বহু মানুষের প্রাণ বাঁচান এই প্রচার বিমুখ চিকিৎসক-বিজ্ঞানী। তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও। বনগাঁ সীমান্তে তাঁর পরামর্শে ওআরএস এর সাহায্যে কলেরা আক্রান্তদের সুস্থ করা হয়। প্রথম দিকে ওআরএসের ব্যবহারের স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্ব নিয়ামক সংস্থা। যদিও থেমে থাকেননি দিলীপ। ঝুঁকি নিয়েই তিনি কাজ করেছিলেন। অনেক পরে এই কৃতী চিকিৎসকের হাত ধরেই স্বীকৃতি পায় ওআরএস। তিনি যে ঘরে ওআরএস নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন সেটি সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেও তিনি কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনাও করেছেন। অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে দিলীপ মহলানবিশের জন্ম ১৯৩৪ সালে। পরে দেশভাগের সময় প্রথমে বরাহনগরে, তার পরে শ্রীরামপুরে চলে আসেন। প্র্যাকটিস শুরু করেন গত শতাব্দীর ছয়ের দশক থেকে। তিনি ওআরএস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। এই নিয়ে তাঁর গবেষণাপত্র জন হপকিনস মেডিক্যাল জার্নাল এবং ল্যানসেট পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই বাঙালি চিকিৎসক এক সময় বিশ্ব সংস্থার ডায়রিয়া সংক্রান্ত কর্মসূচির মেডিক্যাল অফিসার হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়ারিয়াল ডিজিজি রিসার্চ-এর ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের ডিরেক্টর হন। দিলীপ ১৯৯৪ সালে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিদেশি সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন এই কৃতী এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন:
যা দেখছি, যেমন দেখছি, পর্ব -১: বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকারি সংস্থা ভারতীয় রেলই দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৭: রান্নাবান্নার ঠাকুরবাড়ি
দিলীপ ১৯৫৮ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। সেখানেই শিশু বিভাগে ইনটার্নশিপ শুরু করে দেন। পরে তিনি লন্ডনে ডিসিএইচ করেন। এমআরসিপি করেন এডিনবরা থেকে। মাত্র ২৮ বছর বয়সে ‘কুইন এলিজ়াবেথ হসপিটাল ফর চিল্ড্রেন’-এ তিনি রেজিস্ট্রার হয়েছিলেন। এই পদে দিলীপই প্রথম ভারতীয়।
তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে ১৯৯১ সালে ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ’ গড়ে ছিলেন। ডাক্তারি পড়ুয়াদের হাতেনাতে গবেষণা এবং ফিল্ডওয়ার্ক শেখানোর জন্য সংস্থাটি তৈরি করেছিলেন। যদিও শিক্ষার্থী পাননি তিনি।
তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে ১৯৯১ সালে ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ’ গড়ে ছিলেন। ডাক্তারি পড়ুয়াদের হাতেনাতে গবেষণা এবং ফিল্ডওয়ার্ক শেখানোর জন্য সংস্থাটি তৈরি করেছিলেন। যদিও শিক্ষার্থী পাননি তিনি।