রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ক্রুজ থেকে দেখা আমস্টারডাম শহর।

গালা ডিনারে বেশি কিছু ছিল না। ছিল দু’ তিন রকমের ওয়াইন, হাঁসের মাংস, স্যালাড, বিশাল এক পিস চিকেন। কিন্তু ডেজার্ট ছিল অসাধারণ। ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা। ঘরে ফিরে খারাপ খবর। দাদা মেসেজ পাঠাল নেদারল্যান্ডসে ট্রেন স্ট্রাইক। কী করে ফিরবো তা হলে? ২৯ তারিখ যাওয়ার টিকিট প্যারিস পর্যন্ত। একমাত্র উপায় বাস। ইউট্রেকটের বাস সব ফুল। একমাত্র উপায় হোটেল থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা সিফল এয়ারপোর্ট। ওখান থেকে বাসে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস। সেখান থেকে ট্রেনে প্যারিস। কিন্তু অনলাইন টিকিট কাটবো কী করে। তানিয়ার মেয়ের বর রত্নদীপই সব ব্যাবস্থা করে দিল। ভাগ্যিস ওরা ছিল।

নতুন আমস্টারডাম।

পরের দিন আমার কাজকর্ম সবই ভালোই হল। মিটিং শেষে ওয়াকিং ট্যুর। শুরু হল ডোম থেকে। জেঠুর মতো একজন লোক আমাদের গাইড। ছোট ছোট রাস্তা দিয়ে ভদ্রলোক নিয়ে চললেন ইউট্রেকট দেখাতে। কবল স্টোনের রাস্তা। শুধু সাইকেল যেতে পারে। এখানে সাইকেলই প্রধান বাহন। প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সাইকেল চালান। রত্নদীপ পই পই করে বলে দিয়েছিল সাইকেল দেখে চলবেন। আমাদের গাইডও তাই বললো। অতটা গুরুত্ত্ব দিইনি। কিন্তু সত্যিই একটু সাবধান না হলে যে কোনও সময় ধাক্কা দিতে পারে। মারা হয়তো যাবেন না কিন্তু চোট লাগতে পারে ভালো মতো। রাস্তায় ছেলে মেয়েরা কম বস্ত্র পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কম বললেও একটু কম বলা হয়। যদিও কিছুক্ষণ দেখার পর সয়ে যায়।
প্রায় আট কিলোমিটার হাঁটার পর যখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই গান কত দূর আর কত দূর গাইতে ইচ্ছে করছে, তখন গাইড নিয়ে এল ক্যানালের কাছে। স্টিমারে করে যাব আমরা ক্রুজে। ক্যানালের দু’ধারে ফুলের গাছ, আমাদের মতো আরও কিছু স্টিমার যাচ্ছে। অনেক ছবি আর ভিডিও তুললাম। পয়তাল্লিশ মিনিটের ক্রুজের পর স্টিমার থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। সেখানে স্ন্যাক্সের বন্দোবস্ত ছিল। আয়োজকরা জানাল ট্যুর এখানেই শেষ। এখন হোটেলে ফিরি কী করে? ওরা বলল, সোজা হেঁটে যাও। দশ মিনিট লাগবে সেন্ট্রাল স্টেশন। ঠিক তার পাশেই পড়বে তোমার হোটেল। এখানে দশ মিনিট মানে চল্লিশ মিনিট। যাকেই জিজ্ঞেস করি সেই বলে এই তো সামনে। শেষে যখন চল্লিশ মিনিট পরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে’ যাবো কিনা ভাবছি, তখন মলটা দেখা গেল।
আরও পড়ুন:

শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?

যোগা-প্রাণায়াম: প্রসাধনী নয়, স্রেফ যোগাভ্যাসে বাড়ান ত্বকের জেল্লা!

পর্ব-১৪: সত্যজিৎ রায়ের চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কান্তিভূষণ বক্সী

দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১২: বেশিক্ষণ থাকলে আরও কী কী হতো কে জানে, মুহূর্তে নৌকা ঘোরাল বনি

ইউট্রেকটের উপর একটা বই খুঁজছিলাম। কোনও স্যুভেনিয়র শপে পেলাম না। ইউট্রেকট লেখা কাপ আছে, টি-শার্ট আছে, কিন্তু কোনও বই পেলাম না। ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেল। এ দিকে বউ মেয়ে চিন্তা করতে শুরু করেছে। ঢুকতেই জিজ্ঞেস করলো, “হোয়ার আর ইউ সো লং? ওদেরও মেজাজ খারাপ। আমস্টারডামের সবথেকে বিখ্যাত ভ্যান গগ মিউজিয়াম ওরা দেখতে পায়নি। সেটা নাকি অন লাইন বুক করতে হয়। এখন তিন দিন অবধি ফুল।

ইউট্রেকটের রাস্তার পাশে পাথরের স্ট্যাচু।

মিটিংয়ের পর একদিন ফাঁকা রেখেছিলাম অ্যামস্টারডাম দেখার জন্য। সকালবেলাই বেরিয়ে পড়লাম। টুরিস্ট সিটি অ্যামস্টারডাম। স্টেশনটা খুবই সুন্দর। মাদ্রাজ সেন্ট্রাল স্টেশনের মতো বাইরেরটা। আমাকে একটা ক্রুজে চড়িয়ে দিয়ে শুভ্রা আর সুমেধা গেল অ্যান ফ্র্যাঙ্ক মিউজিয়াম দেখতে। আমার ক্রুজের নাম লাভারস ক্রুজ। সত্যিই তাই। হেডফোনে শোনা যাচ্ছে বাইরে দেখা সুন্দর বিল্ডিংগুলো সম্পর্কে বিবরণ। প্রাচীন আর নতুনের সুন্দর মিশ্রণ এই শহর। না কোনও বইয়ের দোকান পেলাম না ধারে কাছে। একটা পর্ণ মিউজিয়ামের সাইনবোর্ড দেখলাম। এখানে সব কিছু খোলা মেলা। স্যুভেনির শপে হদিশ পাবেন ললিপপের মতো। অনেকটা হেঁটে সত্যি একটা বেশ বড় বইয়ের দোকান পেয়ে গেলাম। কিনে নিলাম অ্যামস্টারডাম আর নেদারল্যান্ডসের উপর দুটো বই ৫৪ ইউরোতে। এতক্ষণ হাঁটার পর ব্লাডার একদম ফুল। টয়লেট খুঁজছি। পেলাম একটা। কিন্তু এক ইউরো পড়বে। মানে আশি টাকা লাগবে ‘পেচ্ছাপ’ করতে?

ইউট্রেকট শহরে বহুতলের দেওয়ালের গায়ে লাগানো স্ট্যাচু।

রাতে আইরিন আর রত্নদীপের বাড়িতে নেমন্তন্ন। চুটিয়ে গল্প করলাম আর দাপিয়ে খেলাম। ওরা খুব ‘এফেকশনেট’। আমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখালো রাতের আলো ঝলমল ইউট্রেকট শহর। ক্যানালের পাশ দিয়ে হাঁটলাম কিছুক্ষণ। পরদিন সকাল সকাল বের হলাম সিফল এয়ারপোর্টের জন্য। ওখান থেকে আমরা বাস ধরবো ব্রাসেলসের জন্য। একে তাকে জিজ্ঞেস করে বাস স্ট্যান্ড পাওয়া গেল। বাস ছাড়বে ছাড়বে করছে। এ দিকে শুভ্রারা এখনও টয়লেট থেকে ফেরেনি। কী হবে? বাস ড্রাইভার ভদ্রমহিলা বললেন উনি ওয়েট করতে পারবেন না। শেষমেষ ওরা জাস্ট এসে পৌঁছল। সিফল থেকে ব্রাসেলস পৌঁছে গেলাম সাড়ে তিন ঘণ্টায়।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমার দুর্গা

অচেনা টলিউড, পর্ব-২: প্রোডিউসাররা টাকা নিয়ে তৈরি, আর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিচালক!

দিদিমার হাতের লোভনীয় গোকুল পিঠে খুব মনে পড়ে? এ বার নিজেই বানিয়ে ফেলুন, রইল রেসিপি

গৃহসজ্জা: কম খরচে রান্নাঘরকে নতুন রূপ দিতে চান? ভোলবদলে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন

রাস্তায় অনেক উইন্ডমিল পড়লো। ব্রাসেলসে পৌঁছে আমরা একটা ‘হপ অন হপ অফ বাস ট্যুর’ নিলাম। ব্রাসেলসও খুব সুন্দর। প্রাচীন স্থাপত্যের স্বাক্ষর আছে সর্বত্র। সবাই বলে দিয়েছিল ব্রাসেলসে গেলে অবশ্যই গ্র্যান্ড প্যালেস দেখবে। দেখলামও। ওখানে ধারে কাছে ট্যাক্সি বা কোনও গাড়ি যায় না। হেঁটেই গেলাম। দোকানপত্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তারই মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম বিশাল প্রাসাদ গ্র্যান্ড প্যালেস। অসাধারণ সুন্দর। ছবি আর ভিডিও না তুলে থাকা যায় না। না, এবার ফিরতে হবে। যাওয়ার সময় হল বিহঙ্গের। ব্রাসেলস থেকে ট্রেনে করে প্যারিস। এবার সকলের জন্য গিফট কিনতে হবে। দিদির জন্য ভ্যানিটি ব্যাগ, অ্যাপার্টমেন্টের সবার জন্য চকোলেট, কিছু স্যুভেনির কেনা হল। ফিরলামও এয়ার ফ্রান্সে। এবার খাবার ভালো ছিল। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত দুটো। না, প্যারিসের ইমিগ্রেশন আটকায়নি, আটকায়নি ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনও। ‘র’ ছাড়া জ্যোতির্ময় ফিরে এলো এক পিসে প্যারিস, ইউট্রেকট, আমস্টারডাম, ব্রাসেলস ঘুরে।

ছবি: লেখক

ডাঃ জ্যোতির্ময় বিশ্বাস সাহিত্যের জগতে পদচারণা করেন ডাকনামে। ‘সবুজ বিশ্বাস’ নামে তিনি একাধিক সাহিত্যকেন্দ্রিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাচিক শিল্পেও তাঁর প্রবল আগ্রহ। এই মুহূর্তে বাচিকশিল্পে আমাদের রাজ্যে যাঁরা স্বনামধন্য, তাঁরা অধিকাংশই ডাঃ বিশ্বাসের বন্ধুস্থানীয়। ছাত্রজীবনে, এই শহরে এমবিবিএস পাঠকালে একসঙ্গে এ-মঞ্চে, সে-মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি করেছেন। পরে পেশাগত কারণে বিদেশযাত্রা ও গবেষণাকর্মের শেষে শংকর নেত্রালয়ে যোগদানের ফলে সেই বাচিকশিল্পের সঙ্গে সেই যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। চেন্নাই শহরের বাঙালিসমাজের যে কোনো অনুষ্ঠানে অবশ্য এখনো তিনি আবৃত্তি পরিবেশন করেন। ডাঃ বিশ্বাস চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বনামধন্য। ভারতের প্রথম শ্রেণির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। তিনি চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ের অন্যতম ডিরেক্টর।

Skip to content