বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌরভ চক্রবর্তী

দূর দেশের এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে চাষীরা অনেক খাটাখাটনি করে প্রচুর ফসল ফলিয়েছে মাঠে। ধান গম আলু পটল নানা ধরনের সবজি। সবুজ ধান আর মাঠ ভরা ফসল দেখে কি আনন্দই না করছে চাষিরা। এবার তারা ফসল কেটে ঘরে নিয়ে যাবে।

এ দিকে ধানক্ষেতে পাকা ধানের গন্ধ পেয়ে কীটপতঙ্গের মতো ইঁদুরের দলও উঁকিঝুঁকি মারছে। মাঠে ধানের শীষগুলো বাতাসে দুলছিল। তাই দেখে ইঁদুরেরা লাফাতে লাফাতে এসেছে মাঠে। লাইন করে এসে তারা মাঠ ঘিরে ফেলল। কীটপতঙ্গরা গাছের ফসল নষ্ট করতে লাগলো আর ইঁদুরেরা ধানের শীষ কেটে নিয়ে যেতে লাগলো।

অনেক চেষ্টা করেও চাষীরা কীট পতঙ্গদের তাড়াতে পারল না। তাদের সকলকে ধরা সম্ভবও নয়। তাই সকলে মিলে ঠিক করল, ইঁদুরদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানাবে। সকলে মিলে তারা একটা কাগজে লিখল। ধর্মাবতার, আমাদের এই এত পরিশ্রমের ফসল সব কেটে নিয়ে যাচ্ছে কীটপতঙ্গ আর ইঁদুরের দল। আপনি বিচার করুন।

ধানক্ষেতে লকলকে পাকা ধানের শীষ যেই বাতাসে একটু নুয়ে পড়ছে অমনি মেঠো ইঁদুরের দল কট কট করে সেগুলো কেটে মাটির তলায় কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কেউ তা জানে না।
ধান ক্ষেতের তলায় ওদের সুরঙ্গ করা রাস্তা আছে। চাষিরা ধরতে আসার আগেই পালিয়ে সেই গর্তে ঢুকে পড়ে। চাষিরা ইঁদুরদের করা সেই গর্তে মুখ রেখে বলে, ইঁদুর মশায়েরা দয়া করে ধানের ক্ষেত ছেড়ে চলে যান। তারপর হুমকি দেওয়া হল এই জায়গা না ছারলে খুব খারাপ হবে। তাদের তৈরি করা গর্ত ছেড়ে যেতে একেবারেই রাজি নয়।

রোজই তাদের গর্তে মুখ রেখে চলে যেতে বলা হত। এরপর চাষিরা একটা কাগজে লিখল, এখান থেকে পাত্তারি গুটিয়ে দয়া করে অন্য জায়গায় চলে যাও। ইঁদুরদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিটা মাখন আর মধু দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে তারা ইঁদুরের গর্তের ডাকবাক্সে ঢুকিয়ে দিত। পরদিন যখন চাষীরা আবার একটা মধুমাখা চিঠি ফেলতে যেত তখন দেখে আগের চিঠিটা নেই। ইঁদুরেরা সেটা নিয়ে গেছে গর্তের ভেতরে, নয় তো মাঠের কোন ফাঁকা জায়গায়। চিঠির গায়ে লাগানো মধুটুকু তারা চেটে খেয়ে নিতো। চিঠিতে কি লেখা আছে তা তারা পড়তো না, মনেও রাখত না। পরদিন তারা আবার অন্য মাঠে শস্য কাটতে যেত।
আরও পড়ুন:

ছোটদের গল্প: মায়ের আদর

শারদীয়ার গল্প-৪: অস্মর্তব্য

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: কবে আসবে তুমি মননের সে ‘সহযাত্রী’? [০৯/০৩/১৯৫১]

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৬: শারদীয় সংখ্যায় লিখে পাওয়া অর্থ বন্যাপীড়িত মানুষের কল্যাণে

মাঠের আলের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়ায় চাষীদের ছেলেমেয়েরা। ওদের একদিন শখ হল, ইঁদুরের ডাকবক্সে চিঠি ফেলার সাদা কাগজ জোগাড় করে তাতে মধু মাখিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেই সেটা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে যাবে অমনি মধুমাখা চিঠি দেখে ইঁদুরদের সে কি আনন্দ। কেউ মুখ দেখায়, কেউ গলা বার করে তো কেউ মাথা উঁচিয়ে দেখে।

ছোট্ট বাচ্চাদের একটুও ভয় করে না ইঁদুরেরা। তাই ওরা গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়ে সকলের সামনেই। ছেলে মেয়েদের সামনেই ধানের শীষ কেটে সেগুলো নিয়ে লাইন পড়ে ওরা ঢুকে গেল সুরঙ্গের ভিতরে।
খানিকদূরেই বসেছিল একটা ছোট্ট মেয়ে। সে কাটারি দিয়ে একটা গাছেরগুঁড়ি কাটছিল। হঠাৎ মেয়েটা দেখল গর্ত থেকে অনেক ইঁদুর বেরিয়ে এদিক ওদিক পালিয়ে গেল। মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। চিৎকার শুনে সকলের দৌড়ে গেল তার কাছে।

এক গরীব কাঠুরিয়া আর তার বউ দুজনে বেরিয়েছিল শুকনো গাছের ডাল কুড়োতে। ওরাও দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানে। কাঠুরিয়া দেখল আলের ধারে একটা পুরনো তেতুল গাছের গুড়ি। ছোট্ট মেয়েটা সেটা কাটতে পারছে না। কিন্তু চারপাশে অনেক গর্ত হয়েছে। ওগুলো ইঁদুরেরই গর্ত।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩১: স্বাদ-বৈচিত্র্যে অতুলনীয় মাছ চাষে উদ্যোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

পুজোর ছুটিতে সপরিবারে ঘুরতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন? রইল ডাক্তারবাবুর জরুরি পরামর্শ

| শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৮: দশরথের অভিলাষ-রামের রাজ্যাভিষেক সংকল্প

ত্বকের পরিচর্যায়: ফর্সা হওয়ার দৌড়ে না গিয়ে স্বাভাবিক রং নিয়েই সুন্দর ও সুরক্ষিত থাকুন, জানুন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

কাঠুরিয়া এগিয়ে এসে মেয়েটাকে বলল তোমার কাঠ চাই? মেয়েটা বলল হ্যাঁ। কাঠ নিয়ে যাব বাড়িতে তবে রান্না হবে। কাঠুরিয়া বলল আমি কেটে দেব। মেয়েটি বলল দাও। কাঠুরিয়া মনে মনে ভাবল এই গুঁড়িটা কাটতে পারলে অনেক কাঠ পাওয়া যাবে। তা থেকে আমিও কিছু নিতে পারব। কাঠুরিয়া বউকে নিয়ে গাছের গুড়িটা কাটতে বসে গেল। মেয়েটা একটু দূরে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ গাছের গুড়িটা কাটার পর কাঠুরিয়া দেখল মাটির তলায় প্রায় দু’ ফুট গর্ত। ছোট্ট কাঠের টুকরোগুলো যেই গর্তের ভিতর গিয়ে পড়ছে অমনি বড় বড় ইঁদুরগুলো এদিক ওদিক দিয়ে বেরিয়ে চলে যাচ্ছ। কাঠুরিয়া বউকে দেখায়। এরপর এত ইঁদুর বেরোলো যে সকলে ভিড় করে দেখতে লাগলো। তারপর একসময় হুরহুর করে প্রায় তিন চারশো মেঠো ইঁদুর লাইন করে যে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল। সব ইদুর বেরিয়ে যাওয়ার পরে গর্তটা আরও অনেক বড় হয়ে খুলে গেল। কাঠুরিয়া গাছের গুঁড়িটা উপরে তুলল।

সকলে তাকিয়ে দেখে একি, মাটির তলায় বিশাল গর্ত। ভিতরে লম্বা ইঁদুরের রাস্তা। আর তার ভিতরে রয়েছে ইঁদুরদের মস্ত ধানের গোলা। তাতে সুন্দর করে গোছেগোছে সাজানো রয়েছে সমান করে কাটা ধানের শীষ। সারা বছরের ইদুরের খাবার। সকলে দৌড়ে গিয়ে চাষীদের খবর দিল।

সব শুনে ছুটে এল চাষিরা, মাটির নীচে মস্ত ধানের গোলা দেখে চাষীদের আনন্দ আর ধরে না। সবাই মিলে মাটি সরালো। তুলে আনলো অনেক অনেক ধান। শীষ সমেত পাকা ধান খুশি হয়ে গরীব কাঠুরিয়াকে কিছু ধান তুলে দিল চাষীরা। মেয়েটিকেও দিল কিছু ধান। বাকি সব ধান চাষীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। ইদুরেরা চুরি করা মাটির তলায় জমানো ধানের কিছুই পেল না। পালিয়ে গেল অন্য মাঠে।

* গল্প (Short Story) – ধান চোর ইঁদুর (Dhan Chor Indur) : পৃথা বল (pritha-bal) বিশিষ্ট লেখিকা।

Skip to content