সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


‘এই, প্ল্যানচেট করবি?’
লায়োনার মুখে এ কথা শুনে চমকে উঠলাম। বললাম, ‘কেন? হঠাৎ প্ল্যানচেট করব কেন?’ সে বলল, ‘একটু অভিজ্ঞতা চাই’। ‘ধুর, তোর সবকিছুর অভিজ্ঞতা চাই,’ আমি বিরক্ত হয়ে বললাম। ‘প্ল্যানচেট তত সহজ নয় মোটেই। অন্ধকার ঘর, টেবিল, চারটে লোক ইত্যাদি চাই।’ লায়োনা বলল, ‘নে, নে, সব ঠিক হয়ে যাবে। চারজন তো আছিই। বসবার ঘরে একটা টেবিলও আছে। এবার ঘর অন্ধকার করে দিলেই হয়।’ আমি বললাম, ‘বেশ তবে তাই-ই হোক।’
পরে ইউহিনা আর অলকাও প্ল্যানটা জানতে পারল।
সেইমতো রাত বারোটায় ইউহিনা আর অলকাকে নিয়ে অন্ধকার করা বসবার ঘরে একটা টেবিলের চারপাশে বসে ধ্যান শুরু করলাম। ধ্যানের ঘোরে কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। খালি খুট খুট শব্দ শোনা গেল আর হঠাৎ কার যেন ‘উহ’ শব্দ শোনা গেল। যেন কেউ নিঃশব্দে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছে। আর এক মিনিট পরে আলো জ্বালতে দেখা গেল, অলকা নেই! ইউহিনা বলল, ‘অত বড় মেয়ে ভ্যানিশ হওয়াটা একটা ভুতুড়ে কাণ্ড!’ কেউ না পারলেও আমি বুঝলাম, অলকাকে নিয়ে যেই হোক পালিয়েছে। তবে কি অলকা ভূতেদের দেশে চলে গেল? সুতরাং অলকাকে পরের প্ল্যানচেটে ডাকব বলে ঠিক করলাম।
পরের প্ল্যানচেটে অলকাকে ডাকা হলে সে বলল, সে এক অন্ধকার গুহায় বন্দী। সে দিন আবার সেই খুট খুট আর উহ শব্দের পর দেখা গেল যে ইউহিনা উবে গিয়েছে!
পরদিন আমি বললাম, ‘লায়োনা, আমাদের কিছু করতেই হবে।’ ‘আমি জানি ওরা কোথায় আছে’, লায়োনা বলল। তারপর বলল, ‘চল আমার সঙ্গে’। আমি চুপচাপ উঠে পড়লাম।
লায়োনা বেরিয়ে এসে তার পর্দাওয়ালা মিনি বাইক বের করল। আর বলল, ‘তুই পিছনে দাঁড়া, আমি কন্ট্রোল করছি।’ লায়োনার বাইকখানা অদ্ভুতধরণের। মাথাখানা আর নীচের অংশকে একটা পোল দিয়ে জোড়া আর একটা ড্যাসবোর্ড নিয়ে যানটি তৈরি। গাড়ি চলল পথে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওরা কোথায় রে?’ ‘ঠিক সময়ে দেখতে পাবি।’
রাত যখন ১২টা বাজে, একটা বিশাল গুহা দেখা গেল। আমি বললাম, ‘এটাই বোধহয় সেই গুহা।’ লায়োনা বলল, ‘হুঁ’। আমরা সেই গুহার মধ্যে ঢুকে টর্চ জ্বেলে চলতে লাগলাম। হঠাৎ আমরা থমকে গেলাম। বহুদূরে যেন একটি মেয়ে গাইছে। গলাটি খুব পরিচিত। আমি কিছু বলার আগেই লায়োনা ফিস্‌ফিস্‌ করে বলল, ‘এ তো অলকা!’ আমি বললাম, ‘শব্দটা ধরে এগিয়ে চল।’ কিছুদূর গিয়ে দেখি এক কোণে একটা মেয়ে বসে একটা লায়ার বাজিয়ে গাইছে। তার মাথায় একটা স্কার্ফ আর গায়ে শাল আর শ্রাগ। আমাদের পায়ের শব্দেই বোধহয় মেয়েটি গান থামিয়ে ঘুরে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথাটা ঘুরে গেল, চোখ ঝাপসা হয়ে এল। আর সেই মুহূর্তেই পাশে ধুপ্ করে একটা শব্দ শোনা গেল। সব অন্ধকার হয়ে যাওযার আগে দেখি যে একটা অতি পরিচিত মুখ, আমাদের দিকে চেয়ে আছে। তবে তার চোখদুটো আগুনের মতো জ্বলছে।
তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরতেই আমি উঠে বসলাম। চারদিকটা অদ্ভুত। লম্বা লম্বা কি সব যেন নীচের দিকে চলে যাচ্ছে। মাটির বদলে চামড়া চামড়া ভাব। হঠাত্ একটা কিসে যেন ঠোক্কর খেলাম। বাপরে, এ তো দেখি ইয়া বড় একটা সিংহের মুখ! পরক্ষণে টের পেলাম, এ তো লায়োনার হেয়ার ব্যাণ্ড! তারপরেই বুঝতে পারলাম, আমি একদম ছোট্ট হয়ে লায়োনার চুলের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। হঠাৎ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল আর পরমূহুর্তে ধুপ করে মেঝের ওপর পড়লাম। তখন নিজে ঠিকঠাক আছি বলে বোধ হল। দেখলাম, লায়োনা একটা লাল শ্রাগ পরে একটা স্কার্ফ মাথায় জড়াচ্ছে। গিয়ে বললাম, ‘লায়োনা!’ লায়োনা ফিসফিস করে বল, ‘ওগুলো পর।’ এই বলে একটা সবুজ শ্রাগ মাথার স্কার্ফ দেখাল। আমি সব পরে নিলাম। সবে বলতে গিয়েছি, ‘কী ব্যাপার!’ তার আগেই লায়োনা বলল, ‘চুপচাপ ফলো কর। এটা সিরিয়াস ব্যাপার।’
আরও পড়ুন:

ছোটদের গল্প: পাঁচ জাদুকর মেয়ে

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৩৬: বসুন্ধরা এবং…

গল্প: খুঁজে ফিরি তাঁকে

অণুগল্প : সৎকার

ছোটদের গল্প: মায়ের আদর

আমাদের সামনে আর পিছনে হঠাৎ অনেক মেয়ে হাজির হল। আমরা এগিয়ে চললাম। আমি পিছনে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম। অলকা আসছে পিছু পিছু। তবে ওর চোখ দুটো জ্বলছে। হঠাত্ কি হল কে জানে? আমার চোখ দুটো গরম হয়ে আবার ঠাণ্ডা হয়ে গেল। পকেট আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আমি আঁতকে উঠলাম। আমার চোখ দুটোও জ্বলছে। হঠাৎ কার যেন গলা শোনা গেল, ‘তোমরা এখন আমার বন্দী। তোমাদের মধ্যে..’। লায়োনার চুলে জাদু ছিল। যতই কেটে ফেলা হোক, সেটা বেড়েই চলে। সে বক্তাকে আর বেশিদূর এগোতে না দিয়ে নিজের একগোছা চুল দিয়ে বক্তার মুখ চাপা দিল। তারপর চুলটাকে দড়ির মতো পাকিয়ে তাকে বেঁধে ফেলল। তারপর হঠাৎ কাচভাঙার শব্দ শোনা গেল। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ স্বাভাবিক হয়ে গেল। বাকি মেয়েরা তখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি, কিন্তু তারা ছত্রাকার হয়ে গেল। মিনিট দুয়েকের মধ্যে আমি, অলকা আর লায়োনা শ্রাগ আর স্কার্ফ ছেড়ে ছুটে গিয়ে বক্তার ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
বাঁধন খুলতে ইউহিনা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। অলকা বলল, ইউহিনা তুই?’ ইউহিনা বলল, ‘আমাকে এরা এদের নেতা করে রেখেছে। ভূতেদের রাজ্যে ভূতেরা অন্যরকম। তোমরাও কয়েক মুহূর্তের জন্য ভূত হয়েছিলে, আবার মানুষ হলে। ভূতেদের রাজা আর নেই।’ এই বলে সে কোনোমতে চোখ মুছল। অলকা বলল, ‘তুই এখান থেকে পালাতে চাস? ইউহিনা মাথা নাড়ল। ‘তবে হাত ধরো সব।’ আমরা হাত ধরে সেই ভিড়ের মধ্যে কোনও মতে ঠেলাঠেলি করে এক কোণে গেলাম। আমাদের মধ্যে লায়োনার অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল। লায়োনার সাহায্যে আমরা সবাই অদৃশ্য হয়ে গেলাম।
আর তারপর এসে পড়লাম সেই ঘরে যেখানে আমরা প্ল্যানচেট শুরু করেছিলাম। ঘর অন্ধকার ছিল। ইউহিনা গিয়ে আলো জ্বাললো। লায়োনা বলল, ‘উফফ, পুরো প্ল্যানচেটের ব্যাপারটাই না হলে ভালো হতো। ‘উত্কট বুদ্ধিটা তুই দিয়েছিলি, ‘আমি বললাম। ইউহিনা আর অলকা বলল,‘ যা বিপদটাই না হল!’

অলঙ্করণ: লেখিকা

* গল্প (Short Story) – প্ল্যানচেট রহস্য (Planchet Rohosyo) : অদ্রিজা মণ্ডল (Adrija-mondal) সেন্ট মেরিজ কনভেন্ট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, সাঁতরাগাছির বাসিন্দা।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content