শুক্রবার ৪ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শ্বেতির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মুশকিল হল, এই রোগ কার শরীরে কখন হানা দেবে, তা আগে থেকে তার টের পাওয়া দুষ্কর। মারণ বা ঘাতক নয় এমন প্রকার এই রোগ একবার শরীরে থাবা বসালে তা ক্রমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সমস্যা হল, এর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার তেমন কোনও উপায়ও আমাদের হাতের সামনে নেই। একে কেবল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
 

ভিটিলিগো বা শ্বেতি ঠিক কি?

ভিটিলিগো বা লিউকোডার্মা একটি দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের ব্যাধি, যাতে ত্বকের রঞ্জক হারায় এবং আক্রান্ত ত্বক সাদা হয়ে যায়। চুল আছে এমন জায়গায় ভিটিলিগো থাকলে শরীরের চুলও সাদা হয়ে যেতে পারে। এরকম হয় যখন মেলানোসাইট নামক ত্বকের কোষ যা মেলানিন তৈরি করে ত্বককে তার রঙ দেয়, তা ধ্বংস হয়ে যায় বা কার্যকারিতা হারায়।
 

কেন একন হয়?

যদিও ঠিক কী করণে ভিটিলিগোর তা এখনও নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি, তবে এ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে:
● অটোইমিউন ডিজঅর্ডার: অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে, যার জেরে মেলানোসাইটকে ধ্বংস হয়ে ত্বক রঙ হারাতে পারে।
● জিনগত কারণ: পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে শ্বেতি হতে পারে। প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গিয়েছে।
● স্নায়বিক কারণ : মেলানোসাইটের জন্য বিষাক্ত একটি পদার্থ ত্বকের স্নায়ুর প্রান্তে নির্গত হতে পারে। এর ফলেও কারও শ্বেতি হতে পারে।
● মানসিক চাপ : কিছু কিছু ঘটনা যেমন শারীরিক বা মানসিক চাপ দ্বারাও ভিটিলিগো শুরু হতে পারে। এমনকি, মেলানোসাইটের কোনও একটি ত্রুটির কারণে তারা অনেক সময় নিজেদেরও ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়া পরিবেশগত কারণে শ্বেতি হতে পারে। ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অন্যান্য অটোইমিউন রোগ, যেমন হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যালোপেসিয় প্রভৃতি।

 

শ্বেতি সাধারণত কত ধরনের দেখা যায়?

শ্বেতি একাধিক রকমের হতে পারে। যেমন —
: শরীরের বিভিন্ন স্থানে ম্যাকুলস দেখা দেয়।
সেগমেন্টাল: শরীরের একপাশে বা একটি অংশে সীমাবদ্ধ, যেমন হাত বা মুখ।
মিউকোসাল: মুখের মিউকাস ঝিল্লি বা যৌনাঙ্গে হতে পারে।
ফোকাল: একটি বিরল প্রকার, যেখানে ম্যাকুলগুলি একটি ছোট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এক থেকে দু’ বছরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে ছড়িয়ে পড়ে।
ট্রাইকোম: এ ক্ষেত্রে সাদা বা বর্ণহীন হালকা পিগমেন্টেশনের একটি জায়গায় সাধারণত রঙিন ত্বকের একটি স্পট দেখা যায়।
ইউনিভার্সাল: এটি একটি বিরল ধরনের ভিটিলি। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি ত্বকে পিগমেন্টের অভাবে এই সমস্যা দেখা যায়।

 

হোমিওপ্যাথিতে শ্বেতির চিকিৎসা?

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর পূর্ব ইতিহাস, বংশ ইতিহাস, শারীরিক গঠন ইত্যাদি বিচার করে ব্যক্তির জন্য একটি ওষুধ নির্বাচন করা হয়। ব্যক্তির দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে ভিটিলিগোর মতো অটোইমিউন রোগে খুব ভালো ফল দেয় হোমিওপ্যাথি ওষুধ। এই ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষুধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। ভিটিলিগোর ক্ষেত্রে কনস্টিটিউশনাল হোমিওপ্যাথি ওষুধ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। যেমন—
ল্যাকেসিস
সালফার
লাইকোপোডিয়াম
সিপিয়া
পালসাটিলা
সোরাইনাম ইত্যাদি।
 

কী কী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত?

যদি কারও ভিটিলিগো থাকে, তাহলে ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ত্বকে যেন ক্ষতিকারক সূর্য রশ্মি না লাগে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রতি দুই ঘণ্টা পর ফের লাগাতে হবে। এছাড়াও এমন পোশাক পরতে হবে যা আপনার ত্বককে ক্ষতিকারক সূর্য রশ্মি হাত থেকে রক্ষা করে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। যোগাও করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম করা প্রয়োজন।
সুষম ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।
শরীরে জলের যেন ঘাটতি না হয়ে, সে বিষয়ে ঞ্জত রাখতে হবে।
যে কোনও ধরনের নেশা বর্জন করতে হবে।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content