শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


শীত ঘুমের শহর। আমার বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট প্রমোদ-উদ্যান।

প্রথম বরফ দেখার অভিজ্ঞতা, ঘরে না থেকে বাইরে চলে এলাম। বাইরে তাপমাত্রা যে এমন কিছু কম তা নয়। মানে, গায়ে হালকা একটা শীতবস্ত্র থাকলেই চলবে। বেরোতেই মুখে চোখে বরফের ধুলো এসে পড়তে লাগল। কিন্তু কী অদ্ভুত; গায়ে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তারা গলে যাচ্ছিল, আর শুকনো হওয়ার কারণে একটুও ভিজিয়েও দিচ্ছিল না। রাস্তাতেও একফোঁটা জল বা বরফ নেই। বরফ শুধু বাতাসে উড়ছে, আর কোথাও কিছু হচ্ছে না। আমার তো বেশ মজা লাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরেই বেশ কয়েকবার এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করলাম। তারপরে ওই বরফের মধ্যেই হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরে এলাম। প্রায় আধ ঘণ্টা মতো চলেছিল ওই রকম পাউডার স্নো।

সেদিনই বুঝেছিলাম যে, বাড়ির ভেতর থেকে জানলা দিয়ে বরফ পড়ার রূপ দেখতে দেখতে বেশ কাটিয়ে দেওয়া যায় একটা অলস বিকেল বা সপ্তাহের শেষে গোটা দুটো দিনই। দেশে যেমন ছিল বৃষ্টি, এখানে তেমনি এই বরফ। যাদের ভালো লাগে, তারা প্রেমে পড়ে যায়। আর যাদের ভালো লাগে না, তারা অভিসম্পাত করে।

অভিসম্পাত করার কারণও বড় কম নয়। দেখতে সুন্দর লাগলে কী হবে বরফ পড়লে বিবিধ রকমের অসুবিধাও আছে। প্রথম হল ঘরবাড়ি সহ চারদিক বেশ নোংরা হয়ে যায়। বরফ পড়ার সময় বা পড়ার ঠিক পরে অমন সাদা ধবধবে হলে কী হবে, ওর ওপর দিয়ে লোকজন গাড়িঘোড়া চলাচল করলেই সেগুলো কালো হয়ে রাস্তার ধারে জমতে থাকে আর গোটা রাস্তা কাদায় ভরে যায়। তবে আজীবন কলকাতা হাওড়ায় বড় হয়ে ওঠা আমার সেসব খুব একটা খারাপ লাগে না। তবে আসল সমস্যা হল ঘরবাড়ি নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা। বরফ যখন রাস্তায় পড়ে জমতে থাকে তখন রাস্তার ধুলোবালিও একসঙ্গে জমে যায় তার মধ্যে একসঙ্গে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই জুতোর খাঁজে ওই বরফ আটকে যায়। এবার ঘরে এসে জুতো খুলে খানিকক্ষণ রাখলেই সব বরফ গলে জল হয়ে গোটা বাড়ি ধুলো কাদাময় হয়ে একাকার কাণ্ড। তার ওপরে বরফ গলানোর জন্য এখানে রাস্তায় একরকমের নুন ছড়ানো হয়। সেগুলো আরও ভয়ংকর। বেশিদিন পড়ে থাকলে ঘরের মেঝেতে পাথরের মতো আটকে গিয়ে তোলা মুশকিল হয়ে যাবে। তারপরে বাড়িতে যদি গালিচা পাতা থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই।

ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-প্লেটভিলের শেষ প্রান্তে প্লেট নদীর ধারে একদিন।

আমার এই নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে। আমি রোজই বাড়ি থেকে হেঁটেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। আমার বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। শীতকালে রাস্তায় অধিকাংশ দিনই বরফ জমে থাকে। আমি বরফের জুতো পরে অফিসঘরে পৌঁছে সেটাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় খুলে রেখে দিই। আবার সাধারণ জুতো মোজা পরে কাজকর্ম সেরে ফেরার সময় ওই জুতো পরে চলে আসি। এবার ওই রাস্তার জুতোটা কিছুদিন একজায়গায় রাখার পরই দেখি সেখানে পুরো সাদা দাগ হয়ে গিয়েছে। বরফ গলানোর যে নুন রাস্তায় দেওয়া হয়, সেই নুন জুতোর ফাঁক থেকে অফিসঘরে গালিচার ওপর পরে ওই অবস্থা। ঘষে জল দিয়ে কোনওভাবেই তোলা যায় না। অগত্যা শরণাপন্ন হতেই হল রায়ানের, আমাদের কম্পিউটার বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক বা কাস্টোডিয়ান। রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত দায়িত্বই তার হাতে। সেই তখন দিনের শেষে আমার ঘরে এসে ভিনিগার ছড়িয়ে সেই নুন গলিয়ে ঠিক সময়মতো আবার জমে যাওয়ার আগে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে সবটাকে বেশ কায়দা করে টেনে তুলে নিল। সে প্রায় এক ঘণ্টার কাজ। গালিচার ফাঁকফোকর থেকে ওই নুন বের করা, সব পরিষ্কার করা, আমার বেশ অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। শুধু শুধু আমার নির্বুদ্ধিতার জন্য বেচারাকে দিনের শেষে এতক্ষণ অতিরিক্ত কাজ করতে হল। আমি তার পর থেকে একটা প্লাস্টিকের ত্রিপল পেতে রেখে তাতেই জুতো রাখতাম।—চলবে
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content